Wednesday, December 25, 2019

চিঠি-অনুরূপা পালচৌধুরী













৩য় দফার চিঠি___        অনুরূপা পালচৌধুরী  

জানি ভীষণ ভালো আছো। তাই কেমন থাকার জরুরী প্রশ্নে আর বিব্রত করবো না। কথা ছিলো তোমার হাতের লাল সিঁদুরগোলায় পাঁপড়িচাটের মেঠো গন্ধে পৌঁছে যাবো সেই হাজার বছরের পুরনো গাছতলাটায়। মহানায়কের নগরবন্দী ইতিহাস চুঁইয়ে পড়ছে আজো রাণীকুঠীর ফুটপাত বিছানো সন্ধ্যায়। তোমার শহরের সেই সন্ধ্যারা কি জড়ো হয় বিজয়গড়ের উল্লাসে? বড্ড বোকা তুমি। আড়াল করতে পারোনি নিজেকে চাবুকের গোপনসরায়। আজো যাদবপুর যাই। 8B অটোস্ট্যান্ডটায় দাঁড়াই।আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে।অসাড় পায়ে দালানকোঠা পেরিয়ে তোমার যাতায়াতের পথ আটকাই। সিগারেটের ধোঁয়ায় ব্যালকনি ভিজলে ছাপিয়ে ওঠে আমার ঠোঁট। আরো একটু পিঠে হাত বোলাই। আমার মতো কেউ কি এখন ঘুম পাড়ায়? এখন তোমায় আদর করে কে ? মনে পড়ে কি সেসব রাতের খামবন্দী জোনাকির কান্না!

আসলে মৃত ঠিকানায় চিঠি পৌঁছায় না কিন্তু চিঠিগন্ধের আমরণ কামড়ের দাগটা থেকে যায়। যেদিন স্বেচ্ছামৃত্যুর পরয়ানা জারি করলে আমি মৃত্যুকে কৌটবন্দী করলাম নিশাচর ঘরের ডিভানে। অমরত্বের দাবী রাখলাম তোমার নো ম্যানস ল্যান্ডের ক্যাফেইন ট্যাবলেটে। ১টা উর্বর চাঁদের আধাআধি আলো খুনে ধীরেধীরে উদ্ধত হলে তুমি। খুন হলাম যাবতীয় আমি এবং আমার আকন্ঠ অস্তিত্ব পানে তুমি অমরত্ব পেলে। আমি মৃত্যুরূপে দাঁড়িয়ে বারংবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি গড়ানো দুপুরগুলির মুখে কিন্তু মৃত্যু হতে পারিনি। বিপরীতে জন্ম নিচ্ছে বিধ্বংসী আলোর উল্কামুখী আগুনের পালস্।  আস্ত জলোচ্ছ্বাসের গলায় বেঁচে থাকার স্বাদটা এখন নিত্য বাড়ে। দেখতে চাই তোমার অভিশপ্ত মাটির শিকড়হীন ফুসফুসে দীর্ঘজীবী তুমিটাকে। অভিশাপ কখনো দিই না বরং ঈশ্বরকে বলি, দীর্ঘবছর আয়ুর দরে তোমার হলুদ চৈত্রের পাঞ্জাবীরা মরসুমি মুখ লিখুক কলকাতার অলিগলি।

অবশেষে বলি, ১টা সূর্যখনির শীতঘুম তোমার আঙুলে পুষছি, শুধু চির বরফের আগুনদারি পেরোবার গর্ত বেড়িয়ে গুনছি মটি অবধি।


                                       ইতি
                          আপাত অপার অত্যন্ত 


No comments: