কর্কট অর্পিতা বোস
আয়নার সামনে বসলো আজ বহুদিন পর সুচন্দ্রা।নিজেকে দেখছে, মাথায় হালকা চুলের আভা, গায়ের রঙ কেমোর প্রভাবে পুড়ে গেছে, টানা টানা চোখ আজ জল ছলছলে, বাঁশির মতো নাকে হীরের চাপা নাকছাবির দাগ,তবে নাকছাবি নেই। তার ঠোঁটের ওপরে এই তিলটা দেখে অতীন একসময়ে পাগল হয়েছিল, কমলালেবুর কোয়ার মতো গোলাপি ঠোঁটগুলো তার আসল রঙ হারিয়ে বিবর্ণপ্রায়। সুচন্দ্রার গলাকে বন্ধুরা বলতো মরাল গ্রীবার উপযুক্ত উদাহরণ , সেই গলাতে অতীন আর তার নাম লেখা একটা ছোট্ট হার্টশেপের পেনডেন্ট থাকতো, আজ নেই, অপারেশনের আগে খুলেছিল, আর পরা হয়ে ওঠেনি ।
সুচন্দ্রার চোখ আয়নাতে নিজেকে মাপতে মাপতে নামছে। গলার নীচে এসে চোখ আটকালো।মনে পড়ছে গতরাতে
অতীনের কথা, কী আছে তোমার? নিজেকে আয়নাতে দেখেছো? তুমি ফূরিয়ে গেলেও আমি তো ফুরিয়ে যাইনি।
দীর্ঘশ্বাসটা চোখ বেয়ে নামতে থাকে। একদিন এই অতীন তার শরীরে খুঁজে পেত কবিতা, আর আজ!
অবশ্য এই কথাগুলো সে বুঝতে পারছিল অতীনের বাবহারে ।যত রোগটা তার শরীরে জাল বিস্তার করেছে,
তত বদলেছে অতীন।
তবে কী সবটাই শরীর? মন বলে কি কিছুই নেই?
নাহ্, আর না। মাথাটা একটা সিল্কের স্কার্ফে জড়ালো,মুখে হালকা প্রসাধন, বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই পোষাক
পরে আয়নার সামনে আবার নিজেকে দেখলো।নাহ্ ! তার অঙ্গহানির খুঁত বোঝা যাচ্ছে না। বান্ধবী পৃথার
সহযোগিতায় পাওয়া নতুন চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা হাতব্যাগে নিয়ে দরজাটা লক করে।
ট্রলিটা নিয়ে ক্যাবে উঠে ভাবে বিজ্ঞান শারীরিক অসুস্থতার সম্পূর্ণ নিরাময় করতে পারলেও সমাজের কর্কট রোগের
কোনো চিকিৎসা করতেই পারে নি। মোবাইল বের করে অতীনকে মেসেজ করে,
--জীবনের সূচনা হোক নতুন করে ..

No comments:
Post a Comment