জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্টের বিরোধিতা আমার মনবলকে কতটা দুর্বল বা এগিয়ে দিয়েছে
আফজল আলি
বিষয়টা হচ্ছে জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্টের বিরোধিতা আমার মনোবলে কতটা দুর্বল করেছে বা এগিয়ে দিয়েছে ।। এটা ব্ল্যাকহোলের সম্পাদক অভিজিৎ দাসকর্মকারের বেঁধে দেওয়া টপিক। কাজেই আমাকে এটা নিয়েই বলতে হবে ।
এর আগে অভিজিৎ এর আহ্বানে - জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট লেখার তাগিদ - এই বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক লিখেছিলাম । ওখানে অনেক কথা বলা আছে । কিন্তু কনসেপ্টের বিরোধিতার বিষয়টা লিখতে হবে ভাবিনি । প্রায় তিন বছর আগে যখন জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্টের ধারণাটি আমার মধ্যে অস্বচ্ছ ভাবে তৈরি হচ্ছিল তখন নিজেও ভাবিনি এরকম একটা অজানা বিষয়ের উপর বই লিখতে পারব। জিরো বাউন্ডারির বিষয়টি আমার কাছে ছোট্ট একটা ধারণা বা দুটি শব্দবন্ধ হিসেবে এসেছিল। পরবর্তীতে সেটা নিয়ে গভীরে ভাবতে ভাবতে আরো স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ আকার নিয়েছিল। এগুলো আগেই বলেছি । যখন আমি কনসেপ্টটি লিখছিলাম , প্রাথমিকভাবে 20-25 পাতার দুটো পর্ব লিখে বাংলাদেশের ছোটকবিতার website থেকে প্রকাশ পেয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম কেই বা পড়বে , দু দশজন পড়লে বা জানলেই আমার হবে। এর বেশি চাহিদা বা আশা ছিল না । কিন্তু প্রকাশের পর দেখলাম 50-60 জন থেকে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ল যা আমার ভাবনার অতীত। তখন বিরোধিতার ব্যাপারটা আমি ভাবতেই পারিনি । একটা WhatsApp group খোলা হয়েছিল । সেই WhatsApp group সূত্রেই অনেক তরুণ কবি এসেছিল । তখন তারা জিরো বাউন্ডারিকে সমর্থন করেছিল । তার মধ্যে ছিল রূপম শাল্যদানী , জোতির্ময় মুখার্জি , রাহুল গাঙ্গুলি সহ একাধিক । অনেকে গদ্য লিখেছিল জিরো বাউন্ডারি নিয়ে , কেউ কেউ আলোচনা করেছিল ফেসবুকে । বেশ রমরম করে চলছিল । কিছু দিন পর দেখলাম আমার স্নেহভাজন দু একজন জিরো বাউন্ডারি WhatsApp group e থাকা বা না থাকা নিয়ে হঠাত্ ই কনসেপ্ট তথা আমার বিরোধিতা শুরু করল । হয়তো আমার ও ব্যক্তিগত কিছু ত্রুটি ছিল , আমি তাদেরকে বোঝাতে পারিনি। ক্রমে ক্রমে বুঝতে পারলাম খেলাটার কেন্দ্রবিন্দুটি ছিল অন্য কোথাও । যখন পুরোপুরি জানলাম তখন খুব আঘাত পেয়েছিলাম । পরে ভাবলাম আমিও সেই সিনিয়র কবি তথা আমার কবিতা জীবনের অন্যতম গুরু এবং অভিভাবকসম মানুষটিকে হয়তো আঘাত দিয়েছি হয়তো , হয়তো বা আমার অজান্তেই। কিন্তু আঘাত বলতে নতুন একটা কনসেপ্ট লেখা । আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি বোঝাতে কিন্তু পারিনি। ঠান্ডা মাথায় ভাবলাম আসলে জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট লেখাটাই মূল কারণ এই বিরোধিতার । কিন্তু মজার বিষয় এই সব বিরোধীতার মধ্যেও আমি তথা জিরো বাউন্ডারি গ্রুপ নতুন নতুন তরুণদের কাছে পেয়ে যাচ্ছিল জিরো বাউন্ডারি WhatsApp group টির মাধ্যমে । একটা প্রেরণা এবং শক্তির জায়গা তৈরি হয়ে যাচ্ছিল । সঙ্গে পেয়েছিলাম রুমা ঢ্যাং অধিকারীকে যে সম্পূর্ণ একা web magazine টি প্রকাশ করছিল। সঙ্গে পেয়ে গেলাম সুকান্ত ঘোষাল রণজিৎ পান্ডে অনুপ বৈরাগী এবং আরো অনেক । পরে এলো অভিজিৎ দাসকর্মকার সংযুক্তা পাল অনুরূপা এবং তীব্র গতিতে চলতে লাগল জিরো বাউন্ডারির কাজকর্ম । যদিও তা খুব আহামরি কিছু নয় । আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু হয় । আহামরি নয় , তবে ব্যতিক্রমী । ক্রমে ক্রমে দেখলাম কীভাবে জিরো বাউন্ডারি একটা কাঠামোর রূপ নিয়েছে। আমার আত্মজন এবং স্নেহের মানুষদের সেই বিরোধীতার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম । আমি কষ্ট পেয়েছি , কিন্তু সেই সঙ্গে নতুন নতুন এত তরুণ কবিদের সমর্থন পেয়েছি যে আমার কষ্ট বড়ো আকার ধারণ করতে পারেনি। WhatsApp group এ প্রতিদিন নতুন নতুন কবিতা পড়া, সেগুলো সম্পর্কে মতামত দেওয়া , নিজের কবিতা লেখা , কবিতা বিষয়ক গদ্য লেখা এবং জিরো বাউন্ডারি সম্পর্কে গদ্য লেখা , web magazine করা এ সব কাজ করতে করতে কীভাবে সময় চলে গেছে বুঝতে পারিনি । জিরো বাউন্ডারি গ্রুপ থেকে উঠে এসে অনেকে সরে গেছে , অনেকে শত্রুর মতো আচরণ করেছে , অনেকে আবার নতুন করে আপন হয়েছে। আঘাত পেলে দুরকম প্রতিক্রিয়া হয় । কেউ শেষ হয়ে যায় , আবার কেউ নতুন উদ্যোম পায় । আমার ক্ষেত্রে এ সব কিছুই হয়নি । আমি আমার দৈনন্দিন এবং সময়ের সাপেক্ষে কবিতা সংক্রান্ত কাজগুলো করি । এর ফলে যতটুকু যা হবার হয়েছে । এখন তো print magazine ও বেরুচ্ছে । তবে আমার নিজের উপর বিশ্বাস ভরসা ছিল বা আছে । আমি একা পথ চলি না । সবাইকে নিয়ে চলি । তাই সুখ দুঃখ share হয়ে যায় । ভেবেছিলাম 5-10 জনের কাছে পৌঁছাতে পারলে অনেক , এখন তো ফেসবুক তথা আমাদের কাজের মাধ্যমে ( ছোট হলেও ) 10000 মানুষের কাছে পৌঁছে গেছি । প্রতিষ্ঠা পেয়েছে জিরো বাউন্ডারি । এটা নিশ্চয় নেগেটিভ নয় । আমি বুঝতে পেরেছিলাম জিরো বাউন্ডারির বিরোধিতা করছে মানে এর সারবত্তা আছে । যার ভিতরে সারবত্তা থাকে না তার বিরোধিতা হয় না । মানুষের মধ্যে কাজ করলে , সেটা সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করলে তবেই বিরোধিতা আসে । তবে আমি তো চিন্তা চেতনার প্রসারতা নিয়ে কাজ করেছি , মানুষের উপর অত্যাচার করার মতো কিছু করিনি যে মানুষ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিরোধিতা করছে । যারা বিরোধিতা করছে , তাদের ভিতরে এমনটা কাজ কীভাবে আফজল আলি একটা কনসেপ্ট লিখল , কেন আমি বা আমরা পারলাম না । কনসেপ্টের ভালো মন্দ সমালোচনা সব সময়ই স্বাগত । এদের বিরোধিতা ভিন্ন রকম । জিরো বাউন্ডারির গ্রুপকেই ভেঙে দেওয়া । তিন বছর হতে চলল ।

No comments:
Post a Comment