যোগীর সারেঙ্গি বাজছে সোনালি বেগম
পূর্ব উত্তর প্রদেশের গোরখপুর।মাটির দাওয়ায় বসে মুসলিমযোগী আলি রাজ সারেঙ্গি বাজাচ্ছে।রামায়ণের গল্পগাথা সুর করে গেয়ে চলেছে। যোগী জহুর এবং কারিমুদ্দিনও এসেছে। এদের পরণে কমলারঙের টিলেঢালা পোশাক, মাথায় কমলা কিংবা লাল রং-এর পাগড়ি।
কিছুক্ষণ পর পথের
ধুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওরা হেঁটে যাবে পৃথিবীর পথে। এরা ইসলামধর্মে বিশ্বাস
করে আবার গোরখনাথকেও অনুসরণ করে। এই সুফি
মুসলিমযোগীর সংখ্যা বর্তমানে বেশ কমে আসছে। গোরখপুর, দেওরিয়া, কুশিনগর, বলরামপুর,
আজমগঢ়-এ বেশিকিছু মুসলিমযোগী-পরিবারের বসবাস।
আলিরাজ দু-সপ্তাহ পর
ঘর ফিরছে আজ। ওর বউ মুন্নি জায়নামাজের পাটি অর্থাৎ নামাজের মাদুর গুছিয়ে ঘরের কোণে রেখে দেয়। ওরা সারাদিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে।আবার বাবা গোরখনাথকেও পুজো করে।
‘হিন্দু ওমুসলিম বা অন্য যে কোনো ধর্মের মধ্যে
কোনো পার্থক্য নেই।কারণ সকলেরই দাতা অর্থাৎ ভগবান একজনই হয়’,
মুন্নি বলে, ‘জন্ম আর মৃত্যু আমাদের সবারই
একইভাবে হয়ে থাকে।’
মুন্নি কখনও স্কুলে যায়নি। সে নিজেও মুসলিমযোগী পরিবারে জন্মেছে। বাবা এবং স্বামীর গেয়ে যাওয়া সমস্ত গানের মধ্যে সে
স্বচ্ছ জীবনদর্শন খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু সময়ের
সঙ্গে তাল মিলিয়ে এইসব সুফি যোগীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভেতরে এবং বাইরে
নানানভাবে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে তারা।
‘মুসলিমরা আমাদের গ্রহণ করতে চায়না। আবার হিন্দুরাও আমাদের পছন্দ করছে না’ মুন্নির চোখে মুখে আতঙ্ক।
‘আগে মানুষজন আমাদের গান শুনে উপহার, খাবার-দাবার দিত’ যোগী কারিমুদ্দিন-এর
আক্ষেপ।
‘আমরা নিজস্ব সম্পত্তি রাখায় বিশ্বাস রাখি না, হে গোরখনাথ’ মুন্নির জোড়াতালি
সালোয়ার-কামিজ স্পষ্ট দারিদ্র্যের
জানান দেয়।
মাটির ভাঁড়ে সকলকে
চা-পরিবেশন করছে মুন্নি। সঙ্গে মুড়ি পেঁয়াজ কাঁচালঙ্কা।
‘ছেলেবেলায় কত গান গাইতাম। সুফি-গান,
নাচ আর সঙ্গে সারেঙ্গি বাজাতাম। আমার বাপ
জহুর একজন পুরোদস্ত্তর যোগী। আর আমি এখন
দিনমজুরের কাজ করি। ভাবো তো,
কেমন দিনকাল বদলে যাচ্ছে চাচি!’
মাটির দাওযায় সন্ধ্যা নেমে আসছে। সূর্যর শেষ আলোয় তখন কমলা রং-এর ছটা আরও
বেশি তীব্র আরও বেশি মমতাময় মানবিকতায় ছড়িয়ে যাচ্ছে।

1 comment:
সহজ ও সুন্দরের সহবাস এমনি মধুর। ধন্যবাদ।
Post a Comment