রিপোর্ট রিতা মিত্র
আজ মহুয়ার ফোন পেয়ে রাইমার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি খেলে গেল মুহুর্তের জন্য।
সে ফিরে গেল পাঁচ বছর আগের সেই দিন গুলোতে যখন সে বেঙ্গালুরু তে TCS চাকরি পেয়েছে। তার মতো আরো জনা কুড়ি তরুণ তরুণী
এক সাথে ট্রেনিং নিচ্ছে। তার মধ্যে একজন যুবকের উপর নজর আটকে গেল। প্রায় প্রতিটি দিন রাইমার দৃষ্টি সেই তরুণটিকে খুঁজে বেড়ায়।
একদিন ছেলেটি সামনে এসে বলল আমি সোহেল খান।আপনার নাম? রাইমা যেন বোবা হয়ে গেছে। কী হল? নাম বলতে আপত্তি আছে?
তাহলে থাক।
না-না এমনটা নয় রাইমা নিজেকে একটু সামলে উত্তর দিল। আমি রাইমা, বলে হ্যান্ড শেকের জন্য হাতটা বাড়াল।
ক্রমে ক্রমে আলাপ, আলাপ থেকে প্রেম। কিন্তু রাইমা হিন্দু বাড়ির মেয়ে। তার বাড়ির প্রবল আপত্তি এই সম্পর্ক নিয়ে। বাড়ির আপত্তি অগ্রাহ্য
করে একদিন রাইমা আর সোহেল নিকাহ করল। দিন ভালোই যাচ্ছে আনন্দ করে ঘুরেফিরে।
এক বছর পর হটাৎ শাশুড়িমা ডেকে রাইমা কে বললেন ' আমি তাড়াতাড়ি ঠাকুমা ডাক শুনতে চাই' ।
রাইমার গাল লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। সোহেল কে সে বলল শোনো এবার আমাদের সংসারি হতে হবে।
দিন যায়, সময় বয়ে যায় কিন্তু যে খবরের আশা রাইমা করে তা আর হয় না। ডাক্তার দেখিয়ে অসুধ খেয়ে কোনো ফল হচ্ছে না।
আজকাল কথায় কথায় সোহেল খুব রেগে যায়, খুব খারাপ ব্যবহার করে। তার উপর শাশুড়িমার গঞ্জনা আলাদা। আমার ছেলের জীবন নষ্ট
করে দিল। কত ভালো ভালো ফিস্তা এসেছিল নিজেদের জাতের মধ্যে। কিন্তু না সোহেল শুনলে না। এবার দ্যাখ।
মাস ছয় পরে সোহেল বলল রাইমা কে দেখো এমন করে চলা যায় না। আমার পরিবারের লোকজন বলছে যদি তাড়াতাড়ি তুমি আম্মি না
হতে পারো তাহলে তোমাকে তালাক দিতে হবে।
রাইমার মাথায় বাজ পড়ল যেন।
রাইমার এক আত্মিয় কোলকাতা এক বড় গৌতম খাস্তগীর কথা বলল। রাইমা আর সোহেল ডাক্তারের কাছে গিয়ে সব খুলে বলল, এবং এখন
পর্যন্ত যা অসুধ খেয়েছে তাও দেখাল। সব শুনে ডাক্তার বাবু তাদের দুজনকেই কিছু টেস্ট করার পরামর্শ দিলেন। রিপোর্ট পেতে সপ্তাহ খানেক
লাগবে।
আজ সকালে থেকেই ঘরের আবহাওয়া থমথমে। কিছু দুর সম্পর্কের আত্মিয় এসেছেন বাড়িতে। তেমনি গঞ্জনার বহর বেড়েছে। থাকতে না পেরে
রাইমা বলে ফেলল সোহেল কে কি গো তুমি কিছু বলতে পারতেন না? কোথাকার কে আত্মিয় এসে আমাকে কথা শোনাচ্ছে আর তুমি দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে মজা দেখছ। এক কথা দু কথায় আবহাওয়া গরম হয়ে গেল। শাশুড়িমা বললেন তুমি বাড়ী ছেড়ে চলে যাওয়ার। আমি ছেলের আবার
নিকাহ দেবো। কথা কাটাকাটির মধ্যে হটাৎ মেঘ ছাড়াই বজ্রপাত, 'তালাক, তালাক তালাক। আমি তোমাকে তাকাল দিলাম রাইমা।
রাইমা কাঠের মতো শক্ত হয়ে গেল। নিজের কানের উপর বিশ্বাস হলো না। যার উপর ভরসা করে মা বাবার অমতে বিয়ে করলো সে আজ
একটি বারের জন্য তার কথা চিন্তা না করে , এমন সিদ্ধান্ত
নিয়ে নিল। রিপোর্ট এর অপেক্ষা ও করতে পারল না।
আজ মহুয়ার ফোন পেয়ে রাইমা জানতে পারল, আগামী কাল সোহেল আবার নিকাহ করছে। পাত্রিক পক্ষ বেশ পয়সা আলা। হবু শশুর মশাই
একজন রাজনেতা।
বিকেল পাঁচটায় সময় রাইমা সেজেগুজে সোহেলের বাড়ির দিকে রওনা হলো ।
বাড়ির বাইরে গাড়ির লাইন । সদর দরজা পার করে ভেতরে যেতে লাগল। অনেকে রাইমা কে দেখে কানা গুলো আলোচনা করতে আরম্ভ করলেন।
হটাৎ রাইমা কে সামনে দেখে সোহেল একটু ঘাবড়ে গেল। 'তুমি এখানে?' 'ভয় নেই'রাইমা উত্তর দিল। আমি তোমাকে তোমার নিকাহ উপলক্ষে
গিফ্ট দিতে এলাম। এই নাও। বলে একটা খাম এগিয়ে দিল সোহেল দিকে।তারপর রাইমা বেরিয়ে এলো অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে। খাম খুলে দেখার
পর সোহেল বুকের বাঁ দিকটা চেপে ধরল। ওর শরীর অস্থির লাগছে ঘাম দিচ্ছে। জল-জল বলে অজ্ঞান হয়ে গেল সোহেল। বিয়ে বাড়িতে হুলস্থুল
কান্ড পড়ে গেল ,ডাক্তার ডাকো, ডাক্তার কেউ উঠল। সোহেল বোন ফাতিমা দাদার হাত থেকে কাগজ খানা নিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখল। তারপর
নিজের আম্মি কে ডেকে বললেন এই নিকাহ বন্ধ করো। যদি বাঁচতে চাও। সোহেল হটাৎ ডুকরে কেঁদে উঠল 'আমাকে মাফ করেদিও রাইমা,
আমি গুনাহ করেছি,। ' আমার দোষ তুমি মাথা পেতে নিয়েছ। কত গঞ্জনা সহ্য করছো। ' আল্লাহ আমাকে তার শাস্তি দিল।
সোহেলের বোন আম্মি কে বলল যে ভাভিজি না সোহেলর মধ্যে ত্রুটি আছে। সে কোনো দিন বাপ হতে পারবে না।