অরিজিৎ চক্রবর্তী-র
ডারউইনের চিঠি পর্ব~২০
-----" তুই এখনো ফুলটো হয়ে আছিস লীমার জন্য! চোরাস্রোত বয় কেবলই চেতনাময়... হাহাহা..."
---" দাঁত না কেলিয়ে মালটা শেষ কর! শোন বর্তমানে আমার কোনো স্রোতটোত নেই ওর জন্য। সামান্য করুণা আছে। ওর কথা ভাবলে কষ্ট হয়। রাগ হয়! গালি দিতে ইচ্ছে করে। আমি এই বেশ আছি।নিজের মতো স্বাধীন!"
----" আহা! রাগ করিস কেন!"
---" শোন বাল, নেশাটা চটকাশ না! অন্য কথা বল।"
বিকাশ সম্মোহকে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, " মুরগির ঝোলটা বেশ ভালো রেঁধেছে। জমে গেছে বন্ধু! আমি আর মহুয়া নেব না। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।"
----" ঠিক আছে। তাড়াহুড়ো করিস না। মাংস ভালো লাগলে মাংসটাই খা। একটু ভাত দিতে বলি!"
----" তা বলতে পারিস। খিদেও পাচ্ছে বেশ।"
----" ধলু, ধলু রে..." সম্মোহ ধলুকে ডাকে।
----" কত্তা বলেন।"
----" ওকে একটু ভাত আর মাংস দে।"
---" ঠিক আছে কত্তা এখুনি দিচ্ছি।"
---"বিকাশ, তুই কখনো প্রেমে পড়েছিস কারোর!"
----" হ্যাঁ, তোর প্রেমে পড়েছি বারবার!"
----" দুশশশ শালা! নায়িকাদের কথা বল। তোর কৈশোর কালের কিংবা যৌবন কালের কোনো নায়িকা! যে এখনো তোর স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসে!"
---- আছে তো! আলেয়া সেন! জীবনানন্দের বনলতা সেন আর আমার আলেয়া সেন!"
----" বিকাশ আপনি নেশা করেছেন? বিকাশ, তাকে কোথায় খুঁজিয়া পেলেন!"
--- " উনি স্বপ্নে এলেন গেলেন... "
----" বিকাশ আপনি ইহা দেখে শুধু বালগুলো ছিঁড়লেন!"
সম্মোহ আর বিকাশ একসঙ্গে হোহোহোহো... শব্দে হেসে উঠলো। সেই হাসি যেন থামতেই চায় না!
তারপর কখন যে খাওয়াদাওয়া শেষ করে সিগারেটে সুখটান দিয়ে খুনসুটি করে দুজনে তালাইয়ের উপর শুয়ে পড়েছে, তা আর কারো হুঁসে নেই। আর হুঁসে থাকার দরকারটাই বা কি! বরং জীবনে মাঝেমধ্যে এরকম বেহুঁশ হওয়াটাই সঙ্গত! এ্যাতো হুঁশে থেকেই বা কি হলো বিকাশের!
অন্ধকার প্রথমে পাতলা ফিনফিনে হয়ে আছে। আসলে তা সম্মোহের ঘুম। বেশ কিছুক্ষণ ধরে সে বুঝতে পারছিল না যে চেষ্টাকৃত স্বপ্নভঙ্গ, না কোনও বাহ্যিক কারণে তার ঘুম ভেঙে আসছে।সে কি কিছু শুনেছে? কোনও শব্দ? কান্না? নিশ্চিত হতে না হতে আবার চোখ বুজে আসে অবসন্ন অবশিষ্ট ঘুমে।স্বপ্নের বাকিটুকু তখন সে দেখতে থাকে।
ব্লাউজের হুক খুলতেই শেখনি এখনো!
--- শিখিনি তো! তুমি শিখিয়ে দাও!
----অত শেখাতে টেখাতে পারব না! নাও খুলে দিলাম!
সম্মোহ বুকের ভেতর মুখটা গুঁজে দেয়। তারপর মুখের ভেতর মাংসল পিন্ডটা ঢুকিয়ে বাচ্চা ছেলের মতন চুষতে থাকে! লীমা নিজেকে আরো আলগা করে দেয়! তারপর ধীরে ধীরে নাভিতে একটা হালকা কামড় দিয়ে যোনিমুখ চুষতে থাকে। আর ঠিক তখনই লীমা নিজেকে আর সামলাতে পারে না! ... ওওও বেবী...ইইইই... লীমার এই কামোদ্দীপক উচ্চারণে সম্মোহ নিজেকে আরো ঘনীভূত করার চেষ্টা করে! আবার ভয় হয়! অতি উত্তেজনায় যদি বীর্য বেরিয়ে যায়! তাহলেই সব শেষ! হেরে যাওয়া! সম্মোহ তাই নিজেকে সব কিছুর থেকে একটু দূরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে! ভাবনাকে পাল্টে ফেলতে চায়! তবু একসময় নিরুপায় যৌনতার মতো আত্মসমর্পণ করতে হয়! ঘেমো পিঠের উপর লীমার হাত আঁকিবুকি কাটে।
---কত্তা ও কত্তা ওঠেন এবার বেরোতে হবে। আমি সঙ্গে যাব। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এরপর হাতির ভয় আছে! ওঠেন কত্তা!
ধলুর ডাকে ঘুমটা আবার ভেঙে যায়। সম্মোহ চোখ খুলে অনুভব করে লিঙ্গটা শিলনোড়ার মতো শক্ত হয়ে আছে! কিঞ্চিৎ অস্বস্তি কাটিয়ে বিকাশকে ডেকে তোলার চেষ্টা করে সম্মোহ। বিকাশ ঘুমে একেবারে অচেতন।
ধলু বাইকে উঠে বসে। মাঝে ঘুমন্ত বিকাশকে বহুকষ্টে বসিয়ে দিয়ে, সম্মোহ ঠিক পেছনেই উঠে বসে। ধলু বাইক চালিয়ে সম্মোহের বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পাহাড়ি বাঁকের মতন আঁকাবাঁকা রাস্তায় ধলু ছাড়া বাড়ি ফেরা প্রায় অসম্ভব ছিল। মিনিট কুড়ির মধ্যে বহু বিপদের ঝুঁকি নিয়ে সম্মোহ বিকাশকে নিয়ে বাড়ি ফেরে। বিকাশ তখনও প্রায় অচেতন।
বিকাশকে বিছানায় শুইয়ে সম্মোহ বুলির মাকে এক বোতল জল দিয়ে যেতে বলে। বুলির মা জল নিয়ে এলে, বিকাশের চোখেমুখে জলের ছিটে দেওয়া হয়।মাথা ধুইয়ে দেয় ধলু।
----" আজ রাতে আমার বিকাশের রান্না করার দরকার নেই। শুধু ধলুর আর তোমাদের রান্না করো। ধলু রাতে এখানেই থাকবে। কাল সকালে বাড়ি যাবে। ওকে পাশের ঘরটা খুলে দাও। ওখানেই রাতে শুয়ে পড়বে। এখন একটু কড়া করে চা বানিয়ে আমাকে আর ধলুকে দাও।
সম্মোহের কথার বুলির মা মাথা নেড়ে চলে যায়।
---" কত্তা চিন্তা করবেন না। আপনার বন্ধুর ঘুমটা ঠিক মতো হলেই চাঙ্গা হয়ে যাবে। আসলে অভ্যাস নাই তো! তাই নেশাটা ধরে লিয়েছে।"
--- " যাই বল ধলু, মহুয়াটা কিন্তু একঘর ছিল! আমাকেও ধরে লিলো!"
----" কত্তার ভালো লেগেছে এতেই আনন্দ। যাইহোক অনেকদিন পর এলেন এদিকে।"
-----" ঠিকই বলেছিস, আজকাল আর তেমন যাওয়া হয়না তোদের ওদিকটায়। বিকাশের জন্যই যাওয়া। তবে জানিস অনেকদিন পর তোদের ওখানে গিয়ে ভালোই লাগল। যা চা খেয়ে হাতমুখ ধুয়ে বিশ্রাম কর। আমার কাছে একটা বিলাতি আছে, তুই আর লালুকাকা দু'জনে খেয়ে নিস। ওই তাকের ভেতর আছে, নিয়ে যা।"
---- " লালুকাকাকে দেখছি নি! কই গো?"
----" আছে আশপাশে। চলে আসবে। "
সম্মোহ ধলুকে পাশের ঘরে পাঠিয়ে নিজে জামাকাপড় ছেড়ে স্নান করে ফ্রেস হয়। তারপর আলো নিভিয়ে বিকাশের পাশে শুয়ে পড়ে। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত। আজকাল বয়সের ভার এই সব বেলেল্লাপনার ধকল নিতে পারে না।
তবু অনেকদিন পর আজ সম্মোহের আবার ডাইরি লিখতে ইচ্ছে করল। সেই চিরচেনা লালরঙের ডাইরি। সম্মোহ আজকাল কালেভদ্রে লেখে।আজ আবার লিখল...
একটা সময় ছিল যখন আমরা সকলে ছিলাম দারিদ্রের মহিমায় পঞ্চমুখ। দারিদ্রকে অভিশাপ মনে না করে আশির্বাদ বলেই মেনে নিতাম। যেমন কাজি নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, "হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান।" পূর্বে ধারণা ছিল দারিদ্র মানুষকে গুণগত বৈশিষ্ট্য দ্বারা তার অন্তর্নিহিত শক্তি পূর্ণ প্রকাশ করে সমাজে প্রতিষ্ঠা এনে দিত। কিন্তু বর্তমান কালে সাধারণ ধারণা দারিদ্র্য মানুষকে অমানুষ করে তোলে এবং তাঁর অন্তর্নিহিত শক্তি অঙ্কুরেই বিনাশ করে। এই দারিদ্রের পঙ্কিল আবর্ত থেকে আজকালকার সমাজবিরোধী, উগ্ৰপন্থী ও পরস্বাপহারীদের উৎপত্তি। এক সময়কার দারিদ্রের সুফল আজ সমাজঘাতী কুফলে পরিণত।
এতদূর লেখার পর সম্মোহের মনে হলো এইসব জ্ঞান চুদিয়ে কোনো লাভ নেই। শুধু নিজেকে বিজ্ঞ ভাবার গাম্ভীর্য আছে! হাসি পেল নিজের প্রতি। তারপর বিকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, " কমরেড বিকাশ এবার উঠে পড়। আমাদের বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।"

No comments:
Post a Comment