ত্রিওলে/ ট্রিওলেট হল আট লাইনের এক স্তবকের কবিতা, যার প্রথম লাইনটির চতুর্থ আর সপ্তম লাইনে এবং দ্বিতীয়টির অষ্টম লাইনে পুনরাবৃত্তি ঘটে। অন্ত্যমিল-বিন্যাস ক খ ক ক˚ ক খ ক˚ খ˚ ( ˚ চিহ্ন পুনরাবৃত্তি বোঝাতে ব্যবহৃত)।
এর জন্ম মধ্যযুগীয় ফরাসি কবিতায়, ফ্রান্সের উত্তরভাগে পিকার্দি অঞ্চলে।
বাংলায় এই ফর্মের প্রথম রচয়িতা বীরেন্দ্রচন্দ্র বসু, তিনি এর নাম দিয়েছিলেন তেপাটি।
১
স্নানের দিকে জানলা খুলে রাখি
জল এখনও কলেজ পড়ুয়া তো
কুয়োর পাড়ে চোখেরই গুস্তাকি
স্নানের দিকে জানলা খুলে রাখি
লেবুগাছের আড়াল থেকে নাকি
উনিশ-কুড়ি দেখেদেখেই স্নাত
স্নানের দিকে জানলা খুলে রাখি
জল এখনও কলেজ পড়ুয়া তো
২
বিকেল ভাঙছে আজও
মদে ফ্রস্টেড কাচে
উদাসীন এস্রাজও
বিকেল ভাঙছে আজও
যেমন ইচ্ছে সাজো
মাধুর্য ঠিক আছে
বিকেল ভাঙছে আজও
মদে ফ্রস্টেড কাচে
৩
পিছুডাক
ফিরে যাই
মুনস্ট্রাক
পিছুডাক
উড়ে যাক
স্মৃতি ছাই
পিছুডাক
ফিরে যাই
৪
দীঘির পাড়ে কাদের বাড়ি?
রোদের ছাদ ও ছায়ার বেড়া
পেছনে তার মেঘের সারি
দীঘির পাড়ে কাদের বাড়ি?
আমরা কদিন থাকতে পারি?
আমরা দুজন শ্মশান-ফেরা
দীঘির পাড়ে কাদের বাড়ি?
রোদের ছাদ ও ছায়ার বেড়া
৫
মুখোমুখি সারাদিন বসে আছ চুপ
আমাদের নীরবতা ছিঁড়ে দেব কাকে?
ক্রমাগত পিন প’ড়ে মাঝখানে স্তূপ
মুখোমুখি সারাদিন বসে আছ চুপ
কাগজের আঁকিবুকি বোবা অনুরূপ
ফাঁকা রেস্তোরাঁ জুড়ে কে যেন কু ডাকে
মুখোমুখি সারাদিন বসে আছ চুপ
আমাদের নীরবতা ছিঁড়ে দেব কাকে?
শ্রী মহাদেব
৬
শীত ছিল চিৎকৃত
গান একা পিকনিকে
কেউ কাছে যায়নি তো
শীত ছিল চিৎকৃত
গান আরও অভিভূত
যায় মোহনার দিকে
শীত ছিল চিৎকৃত
গান একা পিকনিকে
৭
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি ভোর থেকে
মাথা গোঁজার কিছুটি নেই শুধু ব্যাঙের ছাতা
তলায় ঢুকে পড়ছি সাথে ব্যাঙ্গমিকে ডেকে
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি ভোর থেকে
অঝোর জলে আফ্রোডিজিয়াক মিশিয়েছে কে?
একটি ফোঁটা জিভে ছুঁতেই কাণ্ড ঘটে যা তা
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি ভোর থেকে
মাথা গোঁজার কিছুটি নেই শুধু ব্যাঙের ছাতা
৮
আলোরা নাচে আর ছিটিকে পড়ে রাত
পায়রা উড়ে যায়, কাঁপছে থিয়েটার
টিকিট না কেটেও এসেছি দৈবাৎ
আলোরা নাচে আর উল্টে পড়ে রাত
আমাকে দেখে তুমি মঞ্চে নাড়ো হাত
জানি না প্রয়োজন আদপে কী এটার
আলোরা নাচে আর ছিটকে পড়ে রাত
পায়রা উড়ে যায়, কাঁপছে থিয়েটার
৯
কবুতর নিয়ে লেখা সোজা
কঠিন সেটাকে মুছে ফেলা
(হয়তো করতে পারে ওঝা)
কবুতর নিয়ে লেখা সোজা
আজ তাকে ধরেই হল যা
বেজে ওঠে ছ’টি ভুভুজেলা
কবুতর নিয়ে লেখা সোজা
কঠিন সেটাকে মুছে ফেলা
শ্রী মহাদেব
১০
আমারও পতাকা ছিল কোনও একদিন
গুমোট শহরে মামুলি, অনালোচিত
ওড়াতাম রোজ বেহায়া, অসমীচীন
আমারও পতাকা ছিল কোনও একদিন
প্রতিবেশী ছাদে কেউ কি দৃষ্টিহীন
এসে দাঁড়াত ও সংকোচ খুলে দিত
আমারও পতাকা ছিল কোনও একদিন
গুমোট শহরে মামুলি, অনালোচিত
১১
নজরুলগীতি
ছুঁতে পারি না তো
চোখে-চোখ রীতি
নজরুলগীতি
নীল শাড়ি স্মৃতি
স্থির, অভিজাত
নজরুলগীতি
ছুঁতে পারি না তো
১২
নিজেকে মেল করার মতো সারা দুপুর
সারা দুপুর, সারা দুপুর মেলানকলি
মনে কেবল একটি লেখা ঘুরছে দু ফু-র
নিজেকে মেল করার মতো সারা দুপুর
উপন্যাসের বিশাল খাটে একলা উপুড়
পড়ছি শুয়ে শূন্য পাতার গ্রন্থাবলী
নিজেকে মেল করার মতো সারা দুপুর
সারা দুপুর, সারা দুপুর মেলানকলি
১৩
একটি পানপাতা, ইচ্ছে ছিল শুধু হাত রাখার
অথচ সে নিজেই ফস্কে উড্ডীন শহরময়
বোঝে না প্রেম বলে কাকে ও কার নাম বলাৎকার
একটি পানপাতা, ইচ্ছে ছিল শুধু হাত রাখার
আমারও একা লাগে, বরোজে ঢুকি তাই নির্বিকার
অচেনা গাছগুলি শরীর ছুঁয়ে যায়, পুলক হয়
একটি পানপাতা, ইচ্ছে ছিল শুধু হাত রাখার
অথচ সে নিজেই ফস্কে উড্ডীন শহরময়
১৪
হাতের পানীয়ে অশান্তিগুলো একটা পোকার মতো
ভাসছে, তুমিও খাচ্ছ না, শুধু ধরে আছ ক্যাজুয়েলি
দেখি কব্জিতে সদ্য বাতিল সম্পর্কের ক্ষত
হাতের পানীয়ে অশান্তিগুলো একটা পোকার মতো
তোমার গ্লাসে যে আঙুল ডোবাব অতটা অসংযত
হতে পারছি না প্রথম আলাপে, পোকাটা কীভাবে ফেলি!
হাতের পানীয়ে অশান্তিগুলো একটা পোকার মতো
ভাসছে, তুমিও খাচ্ছ না, শুধু ধরে আছ ক্যাজুয়েলি




1 comment:
অসাধারণ লাগল। সহজপাঠছন্দে লেখা এই প্রয়াস খুব ভালো লাগল
Post a Comment