উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান সাহেব ও সুরের দেবী লতাজী.....
" কমবখ্ত কভী বেসুরি নহীঁ হোতী "
পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়
লতা মঙ্গেশকরের মতে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খানের মতো শিল্পী প্রতিদিন জন্মান না।
লতাজী বলেছেন "আমার পরম সৌভাগ্য,আমি সামনে বসে উস্তাদজীর গান শুনেছি। উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করতেন। বলতেন "লতা তুম মেরী বেটি হো " ।
উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান সাহেব লতাজীর পিতা পন্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকরের মৃত্যুবার্ষিকীতে একবার সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
লতাজী স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছেন "আমার মনে আছে উস্তাদজী প্যান্ডেলে সামনের সারিতে বসেছিলেন আর আমি মঞ্চে গাচ্ছিলাম। আমার কপাল ঘামে ভিজে গেছিল এবং পা কাঁপছিলো। যাইহোক,কোনো রকমে আমি গান শেষ করি,ধড়ে প্রাণ ফিরে আসে। আমি গান গাওয়ার সময় কখনো নার্ভাস হতাম না। কিন্তু সেদিন ভীষণ নার্ভাস বোধ করছিলাম,'কেননা খান সাহেব সামনে বসেছিলেন। আমার পর উস্তাদজী এমন সঙ্গীত পরিবেশন করেন আকাশ বাতাস গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে। খান সাহেব প্রথমে খেয়াল গায়িকিতে একটা রাগ শোনান,তারপর অভূতপূর্ব,অকল্পনীয় সঙ্গীত প্রদর্শন করেন। তারপর উস্তাদজী ঠুমরি পেশ করেন,ঠুমরিতে উনি সারা বিশ্বে অদ্বিতীয় ছিলেন। পন্ডিত দীনানাথজীর স্মৃতিতে আয়োজিত এই সমারোহে খান সাহেব রাগ ও ঠুমরির পর গ়জ়লও শোনান। সে এক স্মরণীয় অনুষ্ঠান ছিলো। "
খান সাহেব লতাজী সম্পর্কে বলেছিলেন "কমবখ্ত,কভী বেসুরি নহীঁ হোতী। ওয়াহ্! ক্যায়া অল্লাহ্ কী দেন হ্যায় " ।পন্ডিত যশরাজজীকেও খান সাহেব লতাজী সম্পর্কে একথা বলেছিলেন।
লতাজী আরো বলেছেন .."আমি পন্ডিতজীকে বলেছিলাম যে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান সাহেব আমাকে ' কমবখ্ত 'বলেছিলেন। একথা শুনে পন্ডিত যশরাজজী বেশ জোরের সঙ্গে বলেছিলেন.."হ্যাঁ ,উস্তাদজী তোমাকে 'কমবখ্ত ই বলেছিলেন। " লতাজী বলেন 'এমনিতে তো 'কমবখ্ত 'এর অর্থ ভিন্ন,কিন্তু খান সাহেবের মতো মহান শিল্পীর এটা কোড,যেটাকে আমি আমার মহা সৌভাগ্য মনে করে থাকি। সুর সঙ্গীতের এতো বড় মহান শিল্পী আমার সম্পর্কে বলেছিলেন। আমি সুরেই গাই,সুর থেকে কখনো বিচ্যুত হই না। উস্তাদ খান সাহেবের উক্ত বাক্যটি আমার কাছে পরম আশীর্বাদ স্বরূপ। "
(কমবখ্ত ...সাধারণ অর্থে বলা হয় 'হতভাগী ')



No comments:
Post a Comment