Saturday, June 20, 2020

অলোক বিশ্বাস-এর কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন 
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                 অলোক বিশ্বাস-এর কবিতা


জার্নির অতিথি যারা 

আলোর শেষপ্রান্তটি কোথায়
অন্ধকারের শেষপ্রান্তটিই বা কোথায়
শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা কতো হলে আলো অন্ধকারের 
নিরাকার অবস্থানে পৌঁছতে পারবো আমি।
অন্ধকারের প্রান্তে আলো কিভাবে পৌঁছয়
আলোর প্রান্তে অন্ধকার কিভাবে রচিত হয়
আলো অন্ধকারের নৈকট্য কোন সীমারেখায় এলে 
কাল্পনিকতায় ঘন হয় ফিউচার
বিস্তৃতির ভেতরে খুঁজি কোথা হতে উঠিতেছে অনুভূতিমালা 
চিহ্ন চিহ্নে একাকার হয়ে যাই আমি।
ভাষার প্রক্ষালনে অভিধান বড়ো হলেও, অর্থের 
সম্পূর্ণতা পেতে সে উন্মুখ হয়ে থাকবে আজীবন।
অনেক চিহ্নের অর্থ অধরা থাকাই শ্রেয় মনে হয়
হৃদয়কে অতিথিদের মধ্যে খুঁজতে বেরিয়ে পড়া
আলোর অর্থে অনর্থে অন্ধকারের অর্থে অনর্থে
অন্ধকারের অর্থ শেষ পর্যন্ত অন্ধকার হয় নাকি
কারা বলছে আলোর শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছে তারা
কারা অন্ধকারের শেষপ্রান্তে গিয়ে দিয়া জ্বেলেছে
হয়তো তারা অন্য পৃথিবীর কৃষক
হয়তো তারা অন্য পৃথিবীর শ্রমিক
তারা হয়তো সকলেই কবির শ্রম অর্জন করেছে।
কৃষকের উষ্ণ উপজীব্যর উৎস খুঁজছি আলোয়
শ্রমিকের কল্পনার অর্থোদ্ধার প্রক্রিয়া খুঁজছি
কোনোভাবেই কোনো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি না
একজন অতিথিকে যখন আদর দেওয়া হয়
অন্য অতিথিকে দিলে অন্ধকার ঘন হয় কেন
গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে অন্য গন্তব্যের কথা আসে
প্রক্রিয়ার ভিন্নতা উড়তে থাকে সমস্ত ঘটনায়
তথাপি সব শ্রমেই ভিতরকে স্বচক্ষে আনা
কে বোঝাবে পাগলকে যে-নাকি স্বপ্নে আয়ুষ্মান
ভয়ঙ্কর গতিতে আসছে রাক্ষস তার দিকে।
অথচ তার নবম পৃথিবীর খোঁজ নিরাকারেই।
কে বোঝাবে মাঝি ও মত্ত পালকটিকে
ওই মোহনায় যেও না গো যেও না ডুবে মরবে
মাধুর্য তো ছড়ানো আছে কিনারার স্রোতেই
এতো শস্য এতো পাকা ফল এতো ভিটামিন
দরজা বা জানলায় দাঁড়িয়েই টুপটাপ তুলে নাও।
তথাপি দূরে যাওয়া কেন বাইফোকাল সহকারে
কেন কল্পনাকে দীর্ঘতর করায় কেবলই বিরোধ
তথাপি নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া কেন নীহারিকায়
তথাপি ধর্মের চোখে কবিকল্পনা অর্থহীন কেন
তথাপি জাদুবিদ্যার মন্ডলে অপলক চেয়ে থাকা
তথাপি এক ঝটকায় পঙ্কিল পথে চক্ষুস্থির
যাত্রাপথের কোথাও সকলে বহুবার থমকায়
না থমকালে দেখা যেতো কি পোড়াগন্ধের দেশ
দেখা যেতো কি অন্ধকারের বেদনাগুলি
দেখা যেতো কি আলোর পরাজয় রহিত পৃথিবী
জলশূন্য অথবা বন্যাবাহিত মহিমা দেখা যেতো না।
গুরুর নির্দেশগুলি দেশেদেশে পথবিচ্যুত কিনা
স্ল্যাংগুলি বর্ণময়তা থেকে উদ্ভূত কিনা বোঝা যেতো না 
আলো আর অন্ধকার কল্পনার একাধিক স্তরে না এলে
অতিথিদের থামতে বলি সম্মুখের গুঞ্জন শুনে
হতে পারে সমস্ত আলো পূর্ববর্তী অর্থ হারিয়েছে
হতে পারে পুনরায় অন্ধকার রূপান্তরিত হয়েছে
সম্পূর্ণতাকে জানতে আবারও এক জার্নি চাই
সেই জার্নি কি অসম্পূৰ্ণাতাকেই প্রগাঢ় করবে।
খুলতে খুলতে যাচ্ছি অর্থের ভিতরের অজস্র অর্থ।
যতই আলোকে খুলছি ততোই পরবর্তী অর্থ
হাহাকারকে আলোয় রূপান্তরিত করবে কারা 
উপরে নিচে পূবে পশ্চিমে কল্পনা ক্রমশ নিভিতেছে
মিথ্যা করে বলছি অতি ভালো আছি
মিথ্যা করেই বলছো কোনো হাহাকার লাগেনি 
বলা-কথা ও না-বলা কথার মধ্যবর্তী স্থানে 
কিছুটা অন্ধকার আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঢুকিয়ে রেখেছি
আলোর সঙ্গে প্রকৃতই কতোটা সম্পর্ক গড়েছি
প্রকৃত ভূগোল বলতে যদি কিছুর সন্ধান দাও
প্রকৃত দর্শন বলতে যদি কিছু নির্ভরতা এনে দাও
অন্ধকারের অর্থ বহুবার উদ্ধার হোক বা না-হোক
আলোকেই যদি রীতিহীনতা বলে মান্যতা দিতে চাও, 
সমস্ত ভ্রূকুটি যেন চোখ নামিয়ে কথা বলে
আর কেউ বিস্ময় প্রকাশ করুক বা না-করুক
আলো অন্ধকারের বিদ্যুৎরেখায় বসতে দাও
সমস্ত অতিথিকে, তাদেরকে চিন্ময় মৃন্ময় যাই বলো...

আমাদের চিন্ময়         

পাখিদের গানগুলি কার্যত আমাদেরই গান। 
কাম, বীতকাম, উড়িতেছে চঞ্চল আমাদের গানে। বাড়ি হতে বেরোতেই সুর উঠে আসে কণ্ঠে। সিঁড়ি থেকে নেমে সুরে ধরা পড়ে যাই। সেই সুর কোথায় বিনম্র ডানায় মেলা, সব জানা নেই। নৌকোর গান তথা জলের পরকীয়া, সেও কার্যত আমাদেরই চিন্ময়। পাখি ভোরে জঙ্গল টিলায়, পাহাড়ি গ্রামে একা ঘুরে ঘুরে চেনা অচেনা যাবতীয় চেহারায় যে আনন্দ ভাবিয়াছো, সবই তোমা হতে বিচ্ছুরিত। পথিক নও তুমি, পথিকেরও অধিক। পাখিদের গান পরিবর্তিত হইতেছে দেখো চিন্ময়গুলি বহুবিধ হলে। বহুবিধগুলি তোমারই ভিতরে আছে, এক এক রূপে জন্মিতেছে পৃথিবীতে। চেতনাগুলি নির্মাণ  করিয়াছ বৃষ্টির ঘটনা শুনে। যেখানে ব্যর্থ
আত্মহত্যা, ভাইরাসগুলো ব্যর্থ, সেখান হইতে পুনরায় কোনো গানের উৎস ভাবা যেতে পারে। প্রতিটি বৃক্ষের শরীরে আমাদের শিরা উপশিরা কর্মরত। পাখিগুলি সেইসব বৃক্ষেই জন্মিয়াছে, যেখানে মানুষের কামকলা ক্যানভাস আঁকিয়াছে...

যৌনবর্ষণমুখরতা 

ফিসফিস বিড়বিড় ধুপধাপ কলকল 
বিপবিপ ছিমছাম টুসটুস। 
নিশপিশ ছিমছাম ঘিনঘিন ছলছল 
হেলদোল ঝমঝম ফুসফুস।
খিচখিচ ঝিলমিল টুপটাপ খুটখাট 
ঠাসঠাস ঝুপঝুপ রিমঝিম।
ঘিচঘিচ উসখুস হিসহিস হুটহাট 
ভোঁসভোঁস ধড়ফড় সিমসিম।
টসটস ফোঁসফোঁস গিজগিজ ছাইপাশ 
কড়কড় রাতটাত দুমদাম।
খসখস ল্যাকল্যাক খলবল বাইপাস 
ফুটফাট তুকতাক গুমগাম। 
কাউমাউ ভুলভাল ফরফর ঝিরঝির 
ঝনঝন ঝালাপালা শুনশান।
হাউমাউ ফালাফালা ফনফন শিরশির 
জলটল লেনদেন গুণগান।
চনমন টুকটাক খুচখাচ রমরম 
ঝটপট গুনগুন লুপলুপ।
শনশন দুদ্দাড় ঘেউঘেউ টমটম 
গুবগাব ঝিনঝিন ছুপছুপ।
দিনদিন খানখান চুরমুড় ঝুলঝুল 
গনগন ধুকপুক খিলখিল।
ফিনফিন ধুমধাম টিপটিপ দুলদুল 
টনটন মচমচ হিলহিল।
বাইবাই ধিনধিন গমগম খচখচ 
গুবগুব লজঝড় ফকফক।
ধাইধাই খাইখাই রাশরাশ ফচফচ 
জবজব রসরস ধকধক.....


চোখের রঙ 

মৎস্যজীবী লিখে, পাশে বসালে পদ্মপাতা। লেখার ভেতরে বসালে সবুজের ভেতর দিয়ে হুসহুস বেরিয়ে যাওয়া মাছের ভেড়ি। কিভাবে জানলে মৎস্যজীবির কন্যাই ছিলো আমার অবচেতনের সবুজ ঝড়। যখন বিষয়কে প্রগাঢ় করতে টানছো সবুজের সমস্ত রঙ, তৎসম বিষয়ে যখন তোমার বার্তা পাঠানো শেষই হচ্ছে না, ভাবছি অন্তত দুচারদিন কিভাবে সাবজেক্টলেস হয়ে থাকা যায়। আমি কি পারবো বিষয়ের ভারে সোলার এনার্জির কুমারকে ফুটিয়ে তুলতে। এবং সত্যিই কি পারবো দীর্ঘদিন আমাকে সাবজেক্টলেস করে রাখতে। মৎস্যজীবীকে স্মরণীয় করতে ক্যানভাসে তুমুল সবুজ লিখছো যখন, বলতে দ্বিধা নেই আমি উল্কা হয়ে যেতে চেয়েছি। কোথাও কি বিষয়ের প্রতি  দুর্বলতা আছে আমার। যখন ক্যানভাস সম্পূর্ণ করে ঘুমিয়ে পড়েছ, যেভাবে তোমার ক্যানভাস অসীমে বিকেন্দ্রিক সবুজ হয়ে উঠলো, স্বচক্ষে দেখলাম নিরাকার হয়ে ওঠা কাকে বলে। বিষয় থেকে বিষয়ের বাইরে যাই, আবার ফিরে আসি তাহার ভিতরে। তুমিও তাহাই করো মনে হয়। তোমার পূর্ণতাপ্রাপ্ত ক্যানভাসে আকাশের সবুজ রূপ দেখে ভাবছি কিভাবে বিষয়কে লেখা যায় রাজপথ পেরিয়ে...

1 comment:

Debjani Basu said...

অতনুর নামগন্ধের কবির এই কবিতাগুলো স্তোত্রপাঠ করে পড়তে হবে তবে হৃদয়ঙ্গম হবে।