সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
অনন্দ্য রায়-এর কবিতা
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
অনন্দ্য রায়-এর কবিতা
কবিতা পড়ার আগে
(পুশকিন সনেটের অন্ত্যমিলবিন্যাস)
কবিতা পড়ার আগে খুলে রেখো টুপি ও দস্তানা
তোমাকে অক্ষরগুলি দেখতে পায় যেন সরাসরি
মার্জিনে আঙুল রেখে না-ই যদি ডিঙবে সীমানা
তাহলে কবিতা কেন আমরা উপুড় হয়ে পড়ি?
জানলা খাটের পাশে খোলা রাখি, হাওয়াকে উস্কাই
কামিজে আলগা হয় বোতাম, ঠান্ডাতে সহসাই
শিহরণ ছুঁয়ে যায়, উপমারা আসে কাছে ঘেঁষে
সাদা কাগজেই শুধু ছাপা হয় কবিতা এদেশে
আমি যা বলতে চাইছি এতক্ষণ, বুঝেছ, মিথুন?
মেটাফর নিয়ে আরও ধ্বস্তাধ্বস্তি, যুদ্ধ বালিশের
তোমার পিঠের দাগ, আড়াআড়ি, বলো না কীসের
এনেছি রাত্রির রুটি, মদ আর খুনসুটি, খুন
কবিতা লেখার পর কবি আর বনলতা সেন
কাগজকে নষ্ট করে শব আগলে দাঁড়িয়ে আছেন
ধানচারাদের ফাঁকে
(পার্সিভাল সনেটের অন্ত্যমিলবিন্যাস)
ধানচারাদের ফাঁকে গলে গিয়ে ঘনীভূত রোদ
একাকী খরিশসাপ শুয়ে আছে বেদনার মতো
আমি ভাবছি কৃষিকাজ ইদানীং দারুণ উন্নত
লোককাহিনিতে নাকি ভাদ্রে আছে চাষীর বিপদ
বউটি শাড়ি-শায়া খুলে নিজেকেই মেলে দেয় আলে
পোকাগুলি উলু দেয়, দূরে শাঁখ বাজায় নেউল
আমরা বিশ্বাস করি বৃষ্টিপাতে সেরে যায় ভুল
কাদার প্রলেপ গায়ে, জ্বালা শুরু হয়েছে তুমুল
তাকে কি উদ্ধার করব? চুমু খাব মুখে না, কাঁখালে?
একাকী সিঁদুর-কৌটো পড়ে আছে অপব্যবহৃত
গেল বছরের দাম কুইন্টালে তেরোশো পঞ্চাশ
যদি বাড়ে, মুঠো আরও শক্ত ক’রে ধরে থাকে ঘাস
তাকে কি উচ্ছেদ করব? আমি এক শরীরী খটাশ
আরও বেশি খিদে পেলে সে জরায়ু অব্দি খুলে দিত?
নক্ষত্রবাগানে দেখি
(টকারম্যান-এর সনেটের অন্ত্যমিলবিন্যাস)
নক্ষত্র-বাগানে দেখি ইঁদুরের গর্ত মাঝখানে
একদিকে জবাগাছ, বিপরীতে রঙ্গনের ঝোপ
তার নীচে আলোছায়া দাবার মতোন খোপখোপ
কে খেলে ওখানে রোজ, বিপশের চাল ঠিক জানে?
অথবা হারতে বসলে বোর্ড উলটে কোদালের কোপ
মেরে তছনছ করে, মাটির তলায় তারাবীজ
দেখা যায়, খোসা ফাটছে, উহাকে কী বলে বিজ্ঞানে
আমরা জানি না, স্যার, পিঁপড়ে ও কেঁচোদের টোপ
দেখে জিহ্বা বার করে দাঁডিযেছি ব্রহ্মাণ্ডবিতানে
চূড়ান্ত মুহূর্তে আপনি তবু ঠেলে ফেলে দিয়েছেন
জলে পড়া ইঁদুরের মতো আমি ডুবে গেছি ক্রমে
পাতালে পৌঁছিয়ে দেখি সেখানে মানুষ গিজগিজ
আমার মুখের মতো প্রত্যেকেরই, মনে হয় ভ্রমে
মাথার পেছনে লেখা: ‘জীবনের সমুদ্র সফেন’
সকল বাক্যের আছে
(দোর্ন সনেটের অন্ত্যমিলবিন্যাস)
সকল বাক্যের আছে অভিসন্ধি, নিজস্ব পতাকা
আলোর চরিত্র মতো ছায়া পড়ে শব্দের ফোকরে
আমরা গ্রহের প্রাণী আলো ছাড়া দেখতে শিখিনি
বাংলা অক্ষরমালা, দেখো, তাই কিছু আঁকাবাঁকা
যে পড়তে পারে না বোঝে দু আঙুলে নাড়াচাড়া করে
শরীর সম্মত হয়, তবেই তো পাঠের হ্লাদিনী
হয়তো সে উপন্যাস বা হয়তো বীমার কাগজ
কখনও হারিয়ে যায়, কখনও হঠাৎ করে খোঁজ
আমরা জানতে চাই বলেছেন কী দেরিদা-লাকাঁ
শব্দেরা চৌচির হলে ব্রহ্মজ্ঞানী অভিশাপটাপ
দিয়ে হাত ধুয়ে নেন, কথারা কথার নীচে ঢাকা
থাকে। এত হাল্লা হচ্ছে কোথাও বসেছে আজ খাপ
কিছুই যাচ্ছে না বোঝা, ধ্বনিদের নিরর্থ শলাকা
আজও নীরবতা ছাড়া হয় না কি কথাদের মাপ?
[যে কবিদের নামে সনেটকাঠামোগুলি চিহ্নিত:
আলেকজেন্ডার পুশকিন (রাশিয়া, ১৭৯৯ — ১৮৩৭)
জেমস গেটস পার্সিভাল: (অ্যামেরিকা, ১৭৯৫ — ১৮৫৬)
ফ্রেডরিক টকারম্যান: (অ্যামেরিকা, ১৮২১ — ১৮৭৩)
আলফ্রেড দোর্ন: (অ্যামেরিকা, ১৯২৯ — ২০১৪)]

9 comments:
কবিতাগ খুব সুন্দর
লেখাগুলি খুবই ভালো লাগলো। সনেটের এ হেন মিল কাঠামো
অভিনব
অনিন্দ্যর কবিতা গদ্য সবকিছু পড়লে মনে হয় এই কথাগুলোই " আরও বেশি খিদে পেলে সে জরায়ু অব্দি খুলে দিত? " শুধু জিজ্ঞাসা নয় , নিশ্চয়তা ।
অনেক বার পড়ার দরকার আছে।
চমৎকার....সনেট তো বটেই।
সঙ্গে ভাষা শৈলীর অভিনবত্ব ।
বড়ো সুন্দর। খুব ভাল লাগল। খুব যত্ন সনেটগুলির পরতে পরতে। মুগ্ধ হলাম।
Khub valo laglo
সবকটি লেখাই অপূর্ব
বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। সময় সুযোগ পেলেই পড়ি তোমার কবিতা। ভালবাসা
Post a Comment