Saturday, June 20, 2020

সুশীল হাটুই-এর কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                         সুশীল হাটুই-এর কবিতা

আপেলের গৃহযুদ্ধ

সাবানের সঙ্গে গল্প করে
নীল স্নানঘর জ্যোৎস্নায় ভেসে গেল।

জানতেই পারিনি আপেলের গৃহযুদ্ধ শুরু
হয়ে গেছে।

জানলে কী-ই-বা করতাম?

এই যে কাচের গ্লাসে লাল রং-এর সালসা,
এই গ্লাস আমি কখনো কভারড্রাইভ
করেছি?

বুঝতেই পারি না,
চাতক কেন মেঘতন্দুরি ভালোবাসে, আর
কেনই-বা আয়নার প্রচ্ছদে রূপের
অহংকার?

আজ দেখতে পাচ্ছি,
ফ্রক-কিশোরীর আঙুলে রক্ত। জাগরণ
দেখে হিংস্র ঘুম,

ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। 


জুডাসের ছায়া

দাঁতের ফু'য়ে সধবা আপেলটি
নিভে গেল।

তারপর থেকেই জুডাসের রোগা ছায়াটি
শিস দিচ্ছে :

এরপর কেউ 'নিউটন সংহিতা' পড়বেই না।

ডাঁসানো-পেয়ারাগুলি কাঠবেড়ালির নকশি-
কাঁথা ভালোবাসে।

আঙুরগুলি শেয়ালের বিষাদযোগ থেকে
খুঁজে নেয়, T-20-র উল্লাস।

কিশোরী শশাগুলি কেন কম্পিউটার
জানে না, সেই প্রশ্ন ওঠার আগেই,

জুডাসের ছায়াটি দৌড়োচ্ছে।

একটা লাশ পড়ার পর, সবুজের ভিতর
মশাল জ্বেলেছে,

আপেলের রৌদ্র-সেনা। 

ডার্ক ফ্যান্টাসি

আজ আমি সত্যি কথা-ই বলছি :
শীতের জ্যোৎস্না মাখা দুপুর আমাকে
একটা ডিভান উপহার দিল।
আমি ডিভানের ডি থেকে ডিওডোরেন্ট
ভা থেকে ভায়োলিন আর ন থেকে
নখের খিদে অনুবাদ করলাম।
আমি ডিভান পেয়ে আর কী করতে পারতাম
তা নিয়ে কাগজ এবং কলমের মধ্যে দূরত্ব
থাকতে পারে।
তবে দূরত্বকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে পৌঁছে দিতে
আর্কিমিডিসের সূত্র কতটা সক্রিয়
আমি সে-সব ভাবিনি।
কেননা ফুলদানির নক্ষত্র উপাসনা
থেকে জেনেছি, ডিভানের ওপর আলোকবর্ষ
হয়ে থাকা দুটি বিন্দুকে,
একটা ডার্ক ফ্যান্টাসি-ই ফেভিকলের
রাষ্ট্রনীতি শেখাতে পারে,

ম্যাক্সিম গোর্কির টেবিলল্যাম্প

আমার ডটপেনটি বিকেল হলেই
গোলাপফুলগুলিকে ফ্লাইংকিস পাঠায়। কিন্তু
জানি না, কেন সে সন্ধে হলেই টেলিভিশনটিকে
ভাম্পায়ার বলে ডাকে।
আমি এখন দেখছি, টেলিভিশনটি রাগে
গরগর করছে।
ওয়াশিংমেশিনের দুটো চোখ লাল,
ফ্রিজ থেকে বেরিয়ে আসছে ভয়ংকর হাসি,
এ.সি. রুমে উড়ে বেড়াচ্ছে প্রতিশোধের
ইস্তাহার।
আমাকে ফিশফিশ করে নিঃসঙ্গ মাউথ-
অর্গানটি বলল,
ম্যাক্সিম গোর্কির ফেলে যাওয়া টেবিলল্যাম্পটি
মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে সকলকে
সঙ্ঘবদ্ধ করছে।
মাউথঅর্গানটি আরো বলল,
ওই টেবিলল্যাম্পের ম্যাসেজ যে-সব আঙুল
ডিলিট করছে,
শীতের আগেই সেই আঙুলগুলিকে মৃত
ঘোষণা করা হবে। 



অনন্দ্য রায়-এর সনেটের কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন 
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                          অনন্দ্য রায়-এর কবিতা

কবিতা পড়ার আগে

(পুশকিন সনেটের অন্ত্যমিলবিন্যাস)

কবিতা পড়ার আগে খুলে রেখো টুপি ও দস্তানা  
তোমাকে অক্ষরগুলি দেখতে পায় যেন সরাসরি
মার্জিনে আঙুল রেখে না-ই যদি ডিঙবে সীমানা
তাহলে কবিতা কেন আমরা উপুড় হয়ে পড়ি?
জানলা খাটের পাশে খোলা রাখি, হাওয়াকে উস্কাই
কামিজে আলগা হয় বোতাম, ঠান্ডাতে সহসাই
শিহরণ ছুঁয়ে যায়, উপমারা আসে কাছে ঘেঁষে
সাদা কাগজেই শুধু ছাপা হয় কবিতা এদেশে
আমি যা বলতে চাইছি এতক্ষণ, বুঝেছ, মিথুন?
মেটাফর নিয়ে আরও ধ্বস্তাধ্বস্তি, যুদ্ধ বালিশের
তোমার পিঠের দাগ, আড়াআড়ি, বলো না কীসের
এনেছি রাত্রির রুটি, মদ আর খুনসুটি, খুন
কবিতা লেখার পর কবি আর বনলতা সেন
কাগজকে নষ্ট করে শব আগলে দাঁড়িয়ে আছেন


ধানচারাদের ফাঁকে  
(পার্সিভাল সনেটের অন্ত্যমিলবিন্যাস)

ধানচারাদের ফাঁকে গলে গিয়ে ঘনীভূত রোদ
একাকী খরিশসাপ শুয়ে আছে বেদনার মতো
আমি ভাবছি কৃষিকাজ ইদানীং দারুণ উন্নত
লোককাহিনিতে নাকি ভাদ্রে আছে চাষীর বিপদ

বউটি শাড়ি-শায়া খুলে নিজেকেই মেলে দেয় আলে
পোকাগুলি উলু দেয়, দূরে শাঁখ বাজায় নেউল
আমরা বিশ্বাস করি বৃষ্টিপাতে সেরে যায় ভুল
কাদার প্রলেপ গায়ে, জ্বালা শুরু হয়েছে তুমুল
তাকে কি উদ্ধার করব? চুমু খাব মুখে না, কাঁখালে?

একাকী সিঁদুর-কৌটো পড়ে আছে অপব্যবহৃত
গেল বছরের দাম কুইন্টালে তেরোশো পঞ্চাশ
যদি বাড়ে, মুঠো আরও শক্ত ক’রে ধরে থাকে ঘাস  
তাকে কি উচ্ছেদ করব? আমি এক শরীরী খটাশ
আরও বেশি খিদে পেলে সে জরায়ু অব্দি খুলে দিত? 


নক্ষত্রবাগানে দেখি
 (টকারম্যান-এর সনেটের অন্ত্যমিলবিন্যাস) 

নক্ষত্র-বাগানে দেখি  ইঁদুরের গর্ত মাঝখানে
একদিকে জবাগাছবিপরীতে রঙ্গনের ঝোপ
তার নীচে আলোছায়া দাবার মতোন খোপখোপ
কে খেলে ওখানে রোজবিপশের চাল ঠিক জানে?
অথবা হারতে বসলে বোর্ড উলটে কোদালের কোপ
মেরে তছনছ করেমাটির তলায় তারাবীজ
দেখা যায়খোসা ফাটছেউহাকে কী বলে বিজ্ঞানে
আমরা জানি নাস্যারপিঁপড়ে ও কেঁচোদের টোপ
দেখে জিহ্বা বার করে দাঁডিযেছি ব্রহ্মাণ্ডবিতানে 
চূড়ান্ত মুহূর্তে আপনি তবু ঠেলে ফেলে দিয়েছেন 
জলে পড়া ইঁদুরের মতো আমি ডুবে গেছি ক্রমে 
পাতালে পৌঁছিয়ে দেখি সেখানে মানুষ গিজগিজ 
আমার মুখের মতো প্রত্যেকেরইমনে হয় ভ্রমে  
মাথার পেছনে লেখা: ‘জীবনের সমুদ্র সফেন
  

সকল বাক্যের আছে
 (দোর্‌ন সনেটের অন্ত্যমিলবিন্যাস) 

সকল বাক্যের আছে অভিসন্ধিনিজস্ব পতাকা
আলোর চরিত্র মতো ছায়া পড়ে শব্দের ফোকরে 
আমরা গ্রহের প্রাণী আলো ছাড়া দেখতে শিখিনি 
বাংলা অক্ষরমালা, দেখোতাই কিছু আঁকাবাঁকা
যে পড়তে পারে না বোঝে দু আঙুলে নাড়াচাড়া করে    
শরীর সম্মত হয়তবেই তো পাঠের হ্লাদিনী 

হয়তো সে উপন্যাস বা হয়তো বীমার কাগজ  
কখনও হারিয়ে যায়কখনও হঠাৎ করে খোঁজ 

আমরা জানতে চাই বলেছেন কী দেরিদা-লাকাঁ
ব্দেরা চৌচির হলে ব্রহ্মজ্ঞানী অভিশাপটাপ 
দিয়ে হাত ধুয়ে নেনকথারা কথার নীচে ঢাকা 
থাকে। এত হাল্লা হচ্ছে কোথাও বসেছে আজ খাপ   
কিছুই যাচ্ছে না বোঝাধ্বনিদের নিরর্থ শলাকা   
আজও নীরবতা ছাড়া হয় না কি কথাদের মাপ?


[যে কবিদের নামে সনেটকাঠামোগুলি চিহ্নিত:
আলেকজেন্ডার পুশকিন (রাশিয়া, ১৭৯৯ — ১৮৩৭)
জেমস গেটস পার্সিভাল: (অ্যামেরিকা, ১৭৯৫ — ১৮৫৬)
       ফ্রেডরিক টকারম্যান: (অ্যামেরিকা, ১৮২১ — ১৮৭৩)
       আলফ্রেড দোর্‌ন: (অ্যামেরিকা, ১৯২৯ — ২০১৪)]

রথীন বন্দোপাধ্যায়-এর কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন 
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                   রথীন বন্দোপাধ্যায়-এর কবিতা

বিছানা 

১।
পূর্বদিকের জানলা দিয়ে প্রথম সূর্যের আলো পড়ে তোমার মুখের সবচেয়ে নরম অংশে যেখান থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের joint venture এবং ক্রমশ আরও নরম হয়ে ওঠা সীমাহীন সবুজ মাঠ উজ্জ্বলতম প্রথম ভোরের নরম রোদের প্রশ্রয়ে পাঁচ সাত খাট বালিশ কার্লন এসমস্তকিছুর সমষ্টি যাকে আমরা বিছানা বলি সে কিছুতেই আর বলতে চায় না ভোর হল দোর খোল খুকুমণি ঘুম ঘুম চোখে শুধু লিখে যায় ভুলভাল নামতা

২।
এখানে ক্লান্ত শরীর
এখানে শরীরের সাথে শরীর
মন ডুবে যায় ঘুমের গভীরে
ক্লান্তির ভিতরে সান্ত্বনা পায় শিরা ও ধমনী
তুমুল রক্তস্রোত বিছানো শুধুমাত্র তুমি আমি আর তুমি

৩।
স্বপ্নে একটা বিছানা দেখেছিলাম।
বিছানায় শুয়ে একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম।
বিছানার এক পাশে একখানা স্বপ্ন শুয়েছিল।
তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, কে আমার----
স্বপ্ন বলেছিল, নেমকহারাম,
তার সুরে সুর মিলিয়ে সেদিন বিছানাও বলেছিল, অকৃতজ্ঞ কোথাকার,

৪।
অন্ধকার। তবুও এক নগ্ন আলো
নগ্নতা। অন্ধকারেও দৃশ্যমান
দৃশ্য ১ : শরীর শরীর
দৃশ্য ২ : কুসুম
            তোমার মন----
সমুদ্রফেন কার্লন। বিশ্বযুদ্ধ শেষ
অতঃপর ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলন
ডুবছে ডুবছে গাঢ় নীল ঘুমের অতল
বিছানায়
দৃশ্যের ভিতরে দৃশ্য জন্মায় 


অলোক বিশ্বাস-এর কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন 
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                 অলোক বিশ্বাস-এর কবিতা


জার্নির অতিথি যারা 

আলোর শেষপ্রান্তটি কোথায়
অন্ধকারের শেষপ্রান্তটিই বা কোথায়
শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা কতো হলে আলো অন্ধকারের 
নিরাকার অবস্থানে পৌঁছতে পারবো আমি।
অন্ধকারের প্রান্তে আলো কিভাবে পৌঁছয়
আলোর প্রান্তে অন্ধকার কিভাবে রচিত হয়
আলো অন্ধকারের নৈকট্য কোন সীমারেখায় এলে 
কাল্পনিকতায় ঘন হয় ফিউচার
বিস্তৃতির ভেতরে খুঁজি কোথা হতে উঠিতেছে অনুভূতিমালা 
চিহ্ন চিহ্নে একাকার হয়ে যাই আমি।
ভাষার প্রক্ষালনে অভিধান বড়ো হলেও, অর্থের 
সম্পূর্ণতা পেতে সে উন্মুখ হয়ে থাকবে আজীবন।
অনেক চিহ্নের অর্থ অধরা থাকাই শ্রেয় মনে হয়
হৃদয়কে অতিথিদের মধ্যে খুঁজতে বেরিয়ে পড়া
আলোর অর্থে অনর্থে অন্ধকারের অর্থে অনর্থে
অন্ধকারের অর্থ শেষ পর্যন্ত অন্ধকার হয় নাকি
কারা বলছে আলোর শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছে তারা
কারা অন্ধকারের শেষপ্রান্তে গিয়ে দিয়া জ্বেলেছে
হয়তো তারা অন্য পৃথিবীর কৃষক
হয়তো তারা অন্য পৃথিবীর শ্রমিক
তারা হয়তো সকলেই কবির শ্রম অর্জন করেছে।
কৃষকের উষ্ণ উপজীব্যর উৎস খুঁজছি আলোয়
শ্রমিকের কল্পনার অর্থোদ্ধার প্রক্রিয়া খুঁজছি
কোনোভাবেই কোনো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি না
একজন অতিথিকে যখন আদর দেওয়া হয়
অন্য অতিথিকে দিলে অন্ধকার ঘন হয় কেন
গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে অন্য গন্তব্যের কথা আসে
প্রক্রিয়ার ভিন্নতা উড়তে থাকে সমস্ত ঘটনায়
তথাপি সব শ্রমেই ভিতরকে স্বচক্ষে আনা
কে বোঝাবে পাগলকে যে-নাকি স্বপ্নে আয়ুষ্মান
ভয়ঙ্কর গতিতে আসছে রাক্ষস তার দিকে।
অথচ তার নবম পৃথিবীর খোঁজ নিরাকারেই।
কে বোঝাবে মাঝি ও মত্ত পালকটিকে
ওই মোহনায় যেও না গো যেও না ডুবে মরবে
মাধুর্য তো ছড়ানো আছে কিনারার স্রোতেই
এতো শস্য এতো পাকা ফল এতো ভিটামিন
দরজা বা জানলায় দাঁড়িয়েই টুপটাপ তুলে নাও।
তথাপি দূরে যাওয়া কেন বাইফোকাল সহকারে
কেন কল্পনাকে দীর্ঘতর করায় কেবলই বিরোধ
তথাপি নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া কেন নীহারিকায়
তথাপি ধর্মের চোখে কবিকল্পনা অর্থহীন কেন
তথাপি জাদুবিদ্যার মন্ডলে অপলক চেয়ে থাকা
তথাপি এক ঝটকায় পঙ্কিল পথে চক্ষুস্থির
যাত্রাপথের কোথাও সকলে বহুবার থমকায়
না থমকালে দেখা যেতো কি পোড়াগন্ধের দেশ
দেখা যেতো কি অন্ধকারের বেদনাগুলি
দেখা যেতো কি আলোর পরাজয় রহিত পৃথিবী
জলশূন্য অথবা বন্যাবাহিত মহিমা দেখা যেতো না।
গুরুর নির্দেশগুলি দেশেদেশে পথবিচ্যুত কিনা
স্ল্যাংগুলি বর্ণময়তা থেকে উদ্ভূত কিনা বোঝা যেতো না 
আলো আর অন্ধকার কল্পনার একাধিক স্তরে না এলে
অতিথিদের থামতে বলি সম্মুখের গুঞ্জন শুনে
হতে পারে সমস্ত আলো পূর্ববর্তী অর্থ হারিয়েছে
হতে পারে পুনরায় অন্ধকার রূপান্তরিত হয়েছে
সম্পূর্ণতাকে জানতে আবারও এক জার্নি চাই
সেই জার্নি কি অসম্পূৰ্ণাতাকেই প্রগাঢ় করবে।
খুলতে খুলতে যাচ্ছি অর্থের ভিতরের অজস্র অর্থ।
যতই আলোকে খুলছি ততোই পরবর্তী অর্থ
হাহাকারকে আলোয় রূপান্তরিত করবে কারা 
উপরে নিচে পূবে পশ্চিমে কল্পনা ক্রমশ নিভিতেছে
মিথ্যা করে বলছি অতি ভালো আছি
মিথ্যা করেই বলছো কোনো হাহাকার লাগেনি 
বলা-কথা ও না-বলা কথার মধ্যবর্তী স্থানে 
কিছুটা অন্ধকার আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঢুকিয়ে রেখেছি
আলোর সঙ্গে প্রকৃতই কতোটা সম্পর্ক গড়েছি
প্রকৃত ভূগোল বলতে যদি কিছুর সন্ধান দাও
প্রকৃত দর্শন বলতে যদি কিছু নির্ভরতা এনে দাও
অন্ধকারের অর্থ বহুবার উদ্ধার হোক বা না-হোক
আলোকেই যদি রীতিহীনতা বলে মান্যতা দিতে চাও, 
সমস্ত ভ্রূকুটি যেন চোখ নামিয়ে কথা বলে
আর কেউ বিস্ময় প্রকাশ করুক বা না-করুক
আলো অন্ধকারের বিদ্যুৎরেখায় বসতে দাও
সমস্ত অতিথিকে, তাদেরকে চিন্ময় মৃন্ময় যাই বলো...

আমাদের চিন্ময়         

পাখিদের গানগুলি কার্যত আমাদেরই গান। 
কাম, বীতকাম, উড়িতেছে চঞ্চল আমাদের গানে। বাড়ি হতে বেরোতেই সুর উঠে আসে কণ্ঠে। সিঁড়ি থেকে নেমে সুরে ধরা পড়ে যাই। সেই সুর কোথায় বিনম্র ডানায় মেলা, সব জানা নেই। নৌকোর গান তথা জলের পরকীয়া, সেও কার্যত আমাদেরই চিন্ময়। পাখি ভোরে জঙ্গল টিলায়, পাহাড়ি গ্রামে একা ঘুরে ঘুরে চেনা অচেনা যাবতীয় চেহারায় যে আনন্দ ভাবিয়াছো, সবই তোমা হতে বিচ্ছুরিত। পথিক নও তুমি, পথিকেরও অধিক। পাখিদের গান পরিবর্তিত হইতেছে দেখো চিন্ময়গুলি বহুবিধ হলে। বহুবিধগুলি তোমারই ভিতরে আছে, এক এক রূপে জন্মিতেছে পৃথিবীতে। চেতনাগুলি নির্মাণ  করিয়াছ বৃষ্টির ঘটনা শুনে। যেখানে ব্যর্থ
আত্মহত্যা, ভাইরাসগুলো ব্যর্থ, সেখান হইতে পুনরায় কোনো গানের উৎস ভাবা যেতে পারে। প্রতিটি বৃক্ষের শরীরে আমাদের শিরা উপশিরা কর্মরত। পাখিগুলি সেইসব বৃক্ষেই জন্মিয়াছে, যেখানে মানুষের কামকলা ক্যানভাস আঁকিয়াছে...

যৌনবর্ষণমুখরতা 

ফিসফিস বিড়বিড় ধুপধাপ কলকল 
বিপবিপ ছিমছাম টুসটুস। 
নিশপিশ ছিমছাম ঘিনঘিন ছলছল 
হেলদোল ঝমঝম ফুসফুস।
খিচখিচ ঝিলমিল টুপটাপ খুটখাট 
ঠাসঠাস ঝুপঝুপ রিমঝিম।
ঘিচঘিচ উসখুস হিসহিস হুটহাট 
ভোঁসভোঁস ধড়ফড় সিমসিম।
টসটস ফোঁসফোঁস গিজগিজ ছাইপাশ 
কড়কড় রাতটাত দুমদাম।
খসখস ল্যাকল্যাক খলবল বাইপাস 
ফুটফাট তুকতাক গুমগাম। 
কাউমাউ ভুলভাল ফরফর ঝিরঝির 
ঝনঝন ঝালাপালা শুনশান।
হাউমাউ ফালাফালা ফনফন শিরশির 
জলটল লেনদেন গুণগান।
চনমন টুকটাক খুচখাচ রমরম 
ঝটপট গুনগুন লুপলুপ।
শনশন দুদ্দাড় ঘেউঘেউ টমটম 
গুবগাব ঝিনঝিন ছুপছুপ।
দিনদিন খানখান চুরমুড় ঝুলঝুল 
গনগন ধুকপুক খিলখিল।
ফিনফিন ধুমধাম টিপটিপ দুলদুল 
টনটন মচমচ হিলহিল।
বাইবাই ধিনধিন গমগম খচখচ 
গুবগুব লজঝড় ফকফক।
ধাইধাই খাইখাই রাশরাশ ফচফচ 
জবজব রসরস ধকধক.....


চোখের রঙ 

মৎস্যজীবী লিখে, পাশে বসালে পদ্মপাতা। লেখার ভেতরে বসালে সবুজের ভেতর দিয়ে হুসহুস বেরিয়ে যাওয়া মাছের ভেড়ি। কিভাবে জানলে মৎস্যজীবির কন্যাই ছিলো আমার অবচেতনের সবুজ ঝড়। যখন বিষয়কে প্রগাঢ় করতে টানছো সবুজের সমস্ত রঙ, তৎসম বিষয়ে যখন তোমার বার্তা পাঠানো শেষই হচ্ছে না, ভাবছি অন্তত দুচারদিন কিভাবে সাবজেক্টলেস হয়ে থাকা যায়। আমি কি পারবো বিষয়ের ভারে সোলার এনার্জির কুমারকে ফুটিয়ে তুলতে। এবং সত্যিই কি পারবো দীর্ঘদিন আমাকে সাবজেক্টলেস করে রাখতে। মৎস্যজীবীকে স্মরণীয় করতে ক্যানভাসে তুমুল সবুজ লিখছো যখন, বলতে দ্বিধা নেই আমি উল্কা হয়ে যেতে চেয়েছি। কোথাও কি বিষয়ের প্রতি  দুর্বলতা আছে আমার। যখন ক্যানভাস সম্পূর্ণ করে ঘুমিয়ে পড়েছ, যেভাবে তোমার ক্যানভাস অসীমে বিকেন্দ্রিক সবুজ হয়ে উঠলো, স্বচক্ষে দেখলাম নিরাকার হয়ে ওঠা কাকে বলে। বিষয় থেকে বিষয়ের বাইরে যাই, আবার ফিরে আসি তাহার ভিতরে। তুমিও তাহাই করো মনে হয়। তোমার পূর্ণতাপ্রাপ্ত ক্যানভাসে আকাশের সবুজ রূপ দেখে ভাবছি কিভাবে বিষয়কে লেখা যায় রাজপথ পেরিয়ে...

বাপন চক্রবর্তী-এর কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                      বাপন চক্রবর্তী-এর কবিতা
স্বার্থ

কীভাবে ফুরিয়ে গেল স্বার্থ,
সেকথা বুঝিনি আজও। 
রিক্সাদুপুরের পথে এইসব ভাবনা লেখা হয়...
লেখা হয় 
        শরীর ফুরিয়ে আসা বসন্তের ডাকও...
ছায়াবসন্তের পথে হননপ্রহর।
এবং দুপুরগুলি অপরাহ্ণহীন।

দেখি এবছর ডিসেম্বর মাছের ঝোলের মত রৌদ্রময়

ফুরিয়ে এসেছে স্বার্থ। এখন বিকেল। 
গেরস্থালি এলোমেলো সন্ধের নেওরে...


মাছ

মেঘের ত্বকে ঠোঁট ছোঁয়াতেই
অস্পষ্ট আর্তনাদ ফুটে উঠেছিল... 
এখনও দুপুরবেলা। 
আত্মসমর্পনের অনেক ভিতরে 
বিকেল তৈরি হচ্ছে ধীরে। 
আজও স্তব্ধতার বাইরে একফালি বারান্দা। 
বারান্দার হাওয়ায় দুলছে
অগোছালো আর্দ্রতা... 
মধ্যরাতে আরও বাইরে 
মাথা নিচু করে থাকে বৃষ্টিরাত।
এখনও বৃষ্টি হচ্ছে...
অন্ধকার ঘাঁটতে ঘাঁটতে 
বাড়ি ফেরার সময় 
সারা আকাশে সেই অতীতের গন্ধ
বিছানা বালিশে ভিজে কুয়াশার মাছ…


হত্যাপর্ব

বিকেলের হত্যাপর্বে পেনড্রাইভের ক্লান্তি হল।
ঘুম শেষ হওয়ার আগেই,  কে যেন অনেক দূরে 
বৃষ্টি হয়ে হাওয়ায় হাওয়ায় ঝরে গেল...
পথের পেন্সিল থেকে ছায়াটুকু নিয়ে
রহস্য গল্পের দিকে একা হেঁটে যাওয়ার রোদ্দুরে 
জড়িয়ে ধরেছি ওকে শীতঘুম দিয়ে...



বীজ

বর্ষাদিন,    
             তোমাকে দিলাম বৃষ্টিবীজ,

জীবনের শস্যের ভিতর বেড়ে ওঠো।
জলের আত্মায় মিশে যন্ত্রণার মত
               এবার কি তুমি কাঁদবে?

পিনাকীরঞ্জন সামন্ত-এর কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন 
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                   পিনাকীরঞ্জন সামন্ত-এর কবিতা


এ কেমন কবিতা !

বস্তুবাদ দর্শন মাথায় নিয়ে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলাম - সন্ধ্যার আকাশে আলোর রোশনাই যথারীতি । 
পকেটের বাজেট সু নিয়ন্ত্রিত এবং পূর্ব পরিকল্পিত । কিছু নেশার নিমন্ত্রণ কার্ডও সযত্নে গচ্ছিত ।

রঙিন শপিং মল এখান থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে । গিড় চলছে । হঠাৎ
 বলা নেই, কওয়া নেই, মেয ঝড় বৃষ্টি নেই, পাণ্ডুলিপির বিবর্ণতা নেই -
গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লো মাঝ রাস্তায় ।
বললাম - কী হলো ?
গাড়ির সহজ উত্তর - 
বোকাচোদা - দেখছিস না আমি পাঙচার হয়েছি ।

ফিলটারড উইলস মুখে নিয়ে সন্ধ্যার আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম -
এ কেমন কবিতা !


চোখ

সূর্যোদয় হয় না - পৃথিবী ঘোরে এটাই ফিলোজফি এইটুকু জানি । মাধ্যাকর্ষণ কোনো প্রেমিকা না হলেও
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ভালোবাসাকে পূর্ণ মর্যাদা দ্যায় । আমার কোনো সেরকম চোখ নেই যে 
কোনো বিন্দু থেকে আমি পূর্ণতার দিকে যাবো ।।


অন্ধকার

স্লিপিং কাউন্টারে রেখেছি আমার নিজস্ব ভেন্টিলেটর
নিঃশব্দ রজনীর
ব্লাডসুগার স্বপ্নে দেখেছি যাবতীয় মায়া 
অতঃপর
আমি ক্রমাগত হেঁটে যাচ্ছি উড়ন্ত প্রজাপতির নগ্ন শরীরে ।
নেপোটিজম শব্দটি মাঝে মাঝে আমাকে ইশারা করে
বলে আয় -
মহাকালের ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে রাখ তোর নাম - অন্ধকার ।।


বর্তমান

লকডাউন, অন্তরীণ, মাস্ক, পজিটিভ, নেগেটিভ, করোনা থেকে ভারত চীন চুমোচুমি - এইসব যাবতীয় থেকেই
একটি সাপ বেরিয়ে এলো -
ফণা তুলে জিঙ্গাসিল - হারামজাদা - এখন বলৃ কে তোর বাপ ?
আমি বললাম - ক্ষমা কর মোরে

আমি ম্যাস-কিউলিন সিঙ্গুলার জেন্ডার এবং থার্ডপারসন । কবিতাহীন এক অদ্ভুত রকমের সে-কিউলার ।।




দেবযানী বসু-র কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন 
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                        দেবযানী বসু-র কবিতা

নিষিদ্ধ সিদ্ধতায় 

শিশ্নরসবিধৌত অসমতলগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। এত ছটফট করে সঙ্গম করা হাত পা কথায় কথায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়। জমিনদার শিকড় হোক প্রেমের। যাবতীয় যোনি এলিস ইন ওয়ান্ডার ল্যান্ডের কী-হোল। ভিক্ষের সানকি পাতা চৌদোলা । দিনের আসবাবপত্র রাতে ভূতগিরি করে। এই স্বরের জন্য কি পুরোনো অভ্যেস কিছু নীরবে ফিরে আসছে? নিজের হাতটা শত্রু হল। ভালো করে মোমছাঁচ লাগানো হয় নি। লিঙ্গগুলো স্বয়ংক্রিয় গিটার। কর্ক ওপেনার সাহায্য করে এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ারে যেতে। সাখিয়ারা যৌনতার সাদাকালো তীব্রতায় আক্রান্ত। একমাত্র দাবনাবাজানো ঘোড়ারা মেয়ে ঘোড়াদের পাশে থাকে। যৌনমুখর দিন যোনিচেরা চিৎকারে ফিরিয়ে দেয়।


একটি মডিফায়েড মৃত্যু চেয়ে 

ঠান্ডা অক্টোবরের জন্য অপেক্ষা অলাভজনক
আমরা এখনই কেঁপে উঠছি নাক ও গলার ভিতর
হাতে পায়ে খ্যাপলা জালের ঠাট্টা
শ্বেতবরণ মরণের কবর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে
অথবা বিদ্যুৎ মুষড়ে পড়ছে কনকনে ব্যথায়
কুলোঝাড়া দুয়েকটা ফিরে আসা বটপাকুড়কে প্রণাম
মুড়িমুড়কিরা থালা উপছে হারিয়ে গেছে
বদলে টুমিনিটসনুডলভুক চাট্টি নক্ষত্র টিমটিমে আলো দেয়
অক্টোবরের ফাঁকি ছড়িয়ে পড়ছে যোজনায় যোজনায়
দোয়াড়িতে স্রোত পর্যন্ত আটকে দিচ্ছে চকচকে বুট
ব্যাঙাচি থেকে ব্যাঙ হতে এক যুগ খরচা হল
কোলকাতা হাওড়ার ইড়া পিঙ্গলা সুষুম্নায় জোর টান লেগেছে
কাশতে কাশতে ধমক দিচ্ছি আর মরে যাওয়া আটকানোর উপায় নেই
সূর্পনখা চটিজুতো কিনে রাখি অপঘাতে মৃত্যু যদি ধরো


জীবনবাড়ি 

এক তীব্র ধুলোয় ধুলো প্রজাপতিদের পাখা
বাংলার স্তনবৃন্তে কঠিনতা দেয় মা হারা পোষ্যরা
হরপ্পার কবরপেটানো হাওয়া গলায় চেপে বসছে
আমাদের সুড়ঙ্গ খোঁড়া জীবন নুড়িপাথরের গাজোয়ারি মেনেছে
ঘুমের আগে খাবলা খাবলা অন্ধকার তুলি
আবার জড়ো হয়
মাথা নিচু করে প্রেমের কবিতা সাগরযাত্রা করছে
ঘুর্নিঝড় এখন সিরিয়াল কিলার
প্রসবিত শিশুর অভ্যাসে তারা গা মোচড়ায়
রোজ প্রদীপের আলো আর আলেয়ার আলো মারপিট করে
ভ্যাপসা গন্ধে মশগুল কবন্ধ গাছেরা
প্রাকৃতিক লীলায় মজে থাকি
দলে দলে শহর নগর গায়ে নমঃশূদ্র পান্ডুলিপি
পা দিয়ে আকাশ স্পর্শ করাটা ততটা দোষের নয় আর
মৃত ভাইরাসের কলার টোন গলায় ছুটছি
গাছ থেকে সম্ভাব্য ঝরাপাতা ছেঁটে দিচ্ছে মালিক ও মালী দুজনেই
ক্যাবলা হাসি ফুটিয়ে আদালত ও ইমারত উড়িয়ে দিচ্ছি

বাঘবন্দী ঘর 

রাক্ষসখোক্কসদের পরিপাটি করে খেতে দি
ভুল আর বিভ্রম ছুঁয়ে যাযাবর প্রেম ভালো আছে
যে নেই তার হাজার টনের ভূত ঘেঁষে বসে
পরিশ্রম সব খাবি খেয়ে উঠল মাথায়
ছিন্ন ভিন্ন মাংসের টুকরো সব গ্ৰন্থাগারে জমা পড়েছে
কুকুরের দন্তহীনতা তাও কাঁদাচ্ছে আমাকে
হিংস্র রঙের উপর রঙ চড়িয়ে সকাল হয়
প্রেস ওটের রূপকথায় চলতে চলতে পা শক্ত
খালি ঝুলি দরবেশ এক ছিলিম হেমন্ত ফুঁকে ঝুঁকে থাকে স্তনের উপর
ফোয়ারায় গুঁজে দিয়েছে দরবেশ অশ্বশক্তির শয়তানি
ভিডিওতন্ত্রে এসে ঘাস বোঝে সামান্য স্ন্যাপশটে সে কেন অতখানি দুলেছিল
পুরষ্কৃত আমাদের অকারণ মৃত্যু
শরীরের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু পালা করে গান গায়
তছনছ খাবার টেবিল
টেবিল তাঁর দ্বিতীয় মিসাইলের সন্ধানে উজানে  যাবে
অভিবাসী কান্না ছাড়পত্র ভিজিয়ে দিয়েছে


চুপ করোনা চলছে 

ছিলেকাটা বাসনকোসনের সংসার বহুমাত্রিক।
নাটকের গান্ডুচরিত্রটি ঘসেমেজে লম্বা করতে থাকি। নিত্য বর্তমান কিছু অঙ্গীকার চুপচাপ সরিয়ে ফেলছে। জুতোর তলায় গজানো নতুন দ্বীপ দুটো হট্ট হট্ট ঘোরাচ্ছে। ব্যাগাটেলে বোর্ড এর গান বাঘের সাঁতার দিঘিতে খুঁজে পেলাম। ঠিক সময়ে ঠিক বানান মনে পড়ে না বলে কাঠুরিয়া পাখির মনখারাপ লিখতে পারিনা। তামাশা ঝুলে থাকে চোয়ালে। বাঘের বৃদ্ধাবাসে   আমার জায়গা হল। প্রেমের অপরাধ যত অ্যাসিমটোমেটিক। একটা সময়ের পর ঢ্যাড়শের বিচি আর হজম হয় না। একটা সময়ের পর কুমিরের চোখ নয় নাকের কান্না চোখে পড়ে। বাকি তো রাখতে হবে ভুলজীবনের ঠিক ও ঠাক। আপনি পিছমোড়া করে বাঁধলেন আমাকে। লকের আপ ও ডাউন একজীবনে সুহৃদ সুহৃদ।


সৌমিত্র রায়-এর কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন 
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
               সৌমিত্র রায়-এর কবিতা
                                   


আটপৌরে কবিতায় চীন

   সভ্যতায়~ চীনের~ প্রভাব~
                 ||  সস্তায়~
ভূমণ্ডলের~ শ্রেষ্ঠত্ব | সংকট~ অস্তিত্বের... 

রাত ৯টা০৩ ; ১৯-০৬-২০২০; মেদিনীপুর



শব্দব্রাউজ || দরজার পর্দাটা দুলছে

মেদিনীপুর ; ১৯-০৬-২০২০ ; রাত ৯টা০৭ || অফিস থেকে ফিরলাম | দৈনিক প্রকাশ | জরুরি ফোনালাপ সেরে স্নান | এখন শব্দে শব্দে শব্দব্রাউজে...

শব্দসূত্র: চোখে চোখ রেখে কথা

চোখে ধরা দেওয়া মুহূর্মুহূ মুহূর্তদের গভীরতা মাপছে চোখের ভেতরকার চোখ; কথাটা লিখতেই হেসে উঠলো এণ্ড্রয়েডের আলো; সেই দৃষ্টিমাপক শক্তির দিকে তাকিয়ে আছে মাছবাক্সের রঙিন মাছগুলি; আমি তাকিয়ে আছি টিভির সংবাদচ্যানেলের দূষিত দৃশ্যের বিনোদনে; ভেতরকার চোখ, তুমি কি দেখলে, হাত নেড়ে ডেকে উঠলো ব্যালকনির শূন্যতা, দেখলে? কবি নিজের নির্বাচনে দেখে চলেছে একের পর এক লিপিবদ্ধ শব্দের গভীরে থাকা শব্দের গভীরতর দৃশ্যস্রোত, অলীক ঢেউয়ের জন্মমৃত্যু...

চোখ তার ঢাকনার প্রতি কৃতজ্ঞতায় রচনা করে চলে স্বআবিস্কৃত ঘটনাবলি ; মাছেদের একটির চোখে চোখ পড়তেই লেজের ঝাপটে উত্তাল হয়ে উঠলো মাঝঘরের বদ্ধ সমূদ্র; শান্ত, গতিহীন মেনে নেওয়া মানিয়ে নেওয়া এই সমূদ্রে কীভাবে সভ্যতার দৃষ্টি পড়ে গেল; রঙিন পাথরগুলি বলছে 'না তাকানোই ভালো, সমূদ্র উত্তাল হয় মানুষ ভুলভাবে তাকালে', আমি জানি পাথরের এই জীবনদর্শন ভুল...

রেখে দেওয়া কাজ; এইসব চাউনির ভেতর ঢুকে পড়ছে অনর্গল; মোট পাঁচটি কবিতা লেখার কাজ বাকি আছে; চারটি যাবে ওয়েবজিনে গুচ্ছকবিতায়; দ্বিতীয় কবিতাটির স্বনির্মাণকালে কিচেন থেকে আসা রান্নার গন্ধ সিলিং ফ্যানের হাওয়ায় ছিন্নভিন্ন; দরজার পর্দাটা দুলছে; চোখ উঠতে পারছে না কবিতার শব্দস্বাদের রান্নাবান্না ছেড়ে; নানান রকম পদ; রেখে দেওয়া কাজ তোমাকে মগ্ন রেখেছে অনন্য এক আনন্দে...

কথারা ঠোঁটের সীমা না পেরোতে পারলে গোল পাকায় কথাদের ভেতরকার কথায়; এই কবিতাটি শোনালো ডেকে ওঠা কলিংবেল; প্রতিবেশী বন্ধুর কিছু কথা আছে; তার চোখের দিকে তাকাতেই হেসে উঠলো সে; কবির ব্যস্ততাটি বুঝে নিতে দেরী হয়নি তার ভেতরকার চোখের; আমার কবিতার লিপিবদ্ধ মুহূর্তরা সমস্বরে বলে উঠলো শুধুই উপরে উপরে নয় সৃষ্টির সবকিছু ভেতরে ভেতরেও গভীর থেকে গভীরতমভাবে সম্পর্কিত; 


শব্দ'১ || হারা বৈ, জেতা কৈ? (১~শব্দের কবিতা)

বৈ#ঠক



চ্যাটমোড ৷ দূরত্ব ৷ সামাজিক~


মেদিনীপুর; রাত ১০টা ১৭; ১৯-০৬-২০২০~
|
ছেদ | যথাযথ হোক | হতাশা | উধাও হবে )#( হয়নি তো ৷ হতাশাগ্রস্ত ৷ না জমাট বাঁধা রাত } বাতিস্তম্ভরা~ রাস্তাজুড়ে~ ছড়াচ্ছে~ সমান্তরাল আলো
|
ম্লান৷ ঝিঁঝিঁর৷ পাহারাদারি৷ রাতবাইকের চাকায় @ তোমাকে সমান্তরাল আশাবাদ ব্যক্ত করে যেতে হবে~
|
গাছেরা চুপ৷ কুঁড়িরা প্রস্তুত৷ ফাঁকা ধূপদানি৷ পোড়া ধূপ৷ এখনো ভীষণ রকম জীবিত৷ দাপিয়ে ৷ গন্ধে~ কোনো না কোনো গন্ধে বিভোর থাকে ৷ দৃশ্য৷ প্রতিটি~
   |
কয়েকটা টব ; ব্যালকনির খাঁচা; অপেক্ষারত ফেসবুক লাইভ; হ্যাঙারে ঝোলানো পাঞ্জাবী; কাঠের বুকস্ট্যান্ড~ ভাঙতে চাইছে~ জমাট বাঁধতে চাওয়া~ অনেকের অন্ধকার~ 
         |
@ লাইভে~ ভার্চুয়াল সেলিব্রেশনে~ 
       |
লকডাউন উঠে গেছে হে~ চলো | সাবধানে | তথাপি... কাছাকাছি এলে, তুমি, আমি, তাকে কি জমাটবাঁধা বলে? না হে, জড়ো হওয়া বলে~
         |
আমি আর ৷ শূন্যের # তারা ৷ ওই~ তফাৎ তফাৎ থেকে ৷ আলোভাষা লেনদেন করি~ একে | বলে | চ্যাট~
     |
শব্দ ৷ দাঁড়ি ৷ কিংবা কোনো স্পেশাল ক্যারেক্টার ৷ চ্যাটমোডে মাতে ৷ সামাজিক দূরত্ব মেনে ৷ আলাদা ৷ যে যার মতো~ এই ভালো ৷ 

অনুপ দত্ত-এর কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন 
১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                             অনুপ দত্ত-এর কবিতা

ইয়ার দোস্ত

যতটা চাই ততটাই দিস ওম
নিজেকে পুড়িয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছি ধীরে
সেই সব চাওয়া আমির আমির ভিড়ে
কত কী হারানো পুড়ছে বুকে হোম ৷

এ কথা ভালো ব্যস্ত সময় আজ
অবিরাম যেন থাকে এই সরবতা
কখনও যেন না আসে নীরবতা 
সময় গভীর উৎফুল্ল কারুকাজ ৷

দিনের পরে দিনকে সাজাই ভরে 
হয়তো মনে ভাসছে সেই ইথার
কী করে কই, ওরে বন্ধু ইয়ার 
তোকে যে বড় দেখতে ইচ্ছে করে ৷

দিন গেল কী রাত গেল এখন ভাবা এসব কিছু নয়
ফিরে এসে ডাক দেখি তোর জন্য সবকিছু জীবনময় ৷



কে সে ?

ডাক কি আসবে
সে কবে ?
কার কাছে যাবে
সে কে ?
যদি চাও ভুলে যাবে
সে কেন ?
সুখের কান্না আছে
সে দুঃখ ?
যারা গেছে নিজস্ব জলে
সে অন্তর্জলী ?
 ৹
সে কে ?তার চোখ নেই
কান নেই
তার নাক বন্ধ
কেবল স্মৃতি নিয়ে
অস্থির বাঁচা যায় ?
কে সে ?কিন্তু
যাবে কোথায় ?

অন্ধকার ও আলো’র কাহানী


হাজার অজুহাত চাই এ জগতে,পেতে এক বাঁচার দলিল

হয়তো বা খুঁজে পাবে সে বেঁচে থাকা সবুজ ভ্রূণেরা ৷

পরতে পরতে খাদ্যাভাবে  নড়বড়ে জীবন ক্লোরোফিল

অভাবে চুমু খায় জ্যোৎস্নার লিকলিকে শুভ্র কনেরা ৷

আহা, মেঘেরা কেঁদে যায় অঝোর মানুষের শোকে

বৃষ্টি তার চটুল স্বভাবে  মাতে নিতম্ব দোলা আবেগে

এখন জীবন ব্যস্ততায় সময় বেশী কাটে আঁধার পরখে

জীবন সঙ্গী তাই দূরে থাকে বিশুদ্ধ অভিমান ও রাগে ৷

অন্ধকার আড়াল করো পৃথিবীর কাছে এই ভিক্ষা চেয়েছি

ততটাই উজ্জ্বল আলো ফিরেছে তার নিজস্ব জগতে

সমস্ত আলো ভুলে বাস্তবিক অন্ধকার গায়ে মেখেছি

জানা অজানায় মেখেছি সে আঁধার জীবন পরতে ৷

কিন্তু আলো কি একটুও জানে অন্ধকার ছাড়া বাঁচার মানে

জৈবিক নিয়মে আলো ও আঁধার শরীরে মিশে যেতে জানে ৷



তোমার শরীর গন্ধ আঘ্রাণে~


দ্বীপান্তরের মাঠ পেরিয়ে একা
ফিরতে হবে তোমার কাছে এসে
জানি তুমি দাঁড়িয়ে আছো বেশে
তোমার চোখে মায়াকাজল আঁকা৷

সমস্ত কিছু ছিল অগোচরে
কত কি আছে কত বাকী খানিক
নিত্য বেশে নিত্য রাখা মানিক
সাজাতে হবে ভীষণ আড়ম্বরে৷

ভালবাসার আধার আছে খুব
গহন মাখা উদাস আঁখি মেলে
সূর্য্যভরা উদ্দীপনা পেলে
ভালবাসার সুপ্ত দেবে ডুব৷

সবকিছু তাই ভেবে নিয়ে জাগি মন কত কি জানে
চোখে উদাসী বৈরাগী তোমার শরীর গন্ধ আঘ্রানে৷