Friday, February 4, 2022

সৌমী আচার্য্যের কবিতাগুচ্ছ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||       সৌমী আচার্য্যের কবিতাগুচ্ছ 



ধরতে গেলে ধরা দেয় না

উত্তাপ পেরিয়ে নড়বড়ে সাঁকোর গাঁয়ে 
চুপ করে দাঁড়াতেই সে এল
আক্ষেপে চোখ রাঙিয়ে ফিসফিস করল সময়, ব্যর্থতার মতো
সে আমার হাত ধরে পথ দেখাল 
যতদূর চোখ যায় শুধু জল 
তার গভীরে ছায়া চিরকেলে বসতের
ঈশ্বর হেঁটে গেলেন কাদা মেখে
সে রয়ে গেল আমার ভেতর অলৌকিক সুতো হয়ে 
আমি জানতাম আজীবন বইব কখনো বলতে পারব না সে আমার 
তেমন যুতসই অক্ষর ছেদ যতি কোনদিন জোগালোনা বলেই
পথ ফুরালো বলতে পারলাম না 'কবিতা আমার'

হারিয়েছে পথ 

নীল সন্ধ্যার বুকের ওপর শেষ হাত রেখে আমি সে ও আমরা চলে গিয়েছিলাম।তখনো ঠোঁটের কষে কথারা আলাপে মত্ত ছিল আর অকারণে একটা লম্বা লেজওলা ঘুড়ি ভোঁকাট্টা হয়েছিল। বিস্ময়ে বড় বড় চোখে আকাশ,ঘুড়ি আর মায়া কিশোরকে নাগালের বাইরে যেতে দেখেছিলাম।বুকের ভেতর ঢাক বাজলে ভায়োলিন সঙ্গত করে,কোন সংগত কারণে জানিনা।তবে আরও বহু বার তার বদলে যাওয়া ঠিকানায় হেঁটেছি― স্বপ্নে।

এখন গাঢ় কালো রাতের দাপট।হাসনুহানার গন্ধে সাপ আসে।বাস্তু ঘুঘু টিকিট কাটে ট্রাভেল এজেন্সির।ঠোঁটের কোণে জটিল হিসেব। 'একটু আস্তে অপরের স্বার্থ বুঝে চলুন' ক্যাকোফোনি।বোকা কিশোর সাইকেলের ট্রিংট্রিং শুনিয়ে ডাকে আজো।পা বাড়াতে পারলেই পৌঁছাতে পারি।তবু...


অনিবার্য সংঘাত ও আত্মপ্রচার

আমার আবেগে বাবার রাগী চামড়ার বেত বা 
মায়ের ঝাঁজালো অভাবী গলা নেই 
আছে বটের মত ছড়ানো জড়ানো বুড়ি মায়া
আমার ভেতরেই লুকনো ঘরটায় 
তবু রোজ খিটখিটে অভ্যাস হয়ে মরি বাঁচি
                             মাথাভর্তি কিলবিলে পোকা

এক দুই পাঁচটা করে পিষে মারি বেছে বেছে
                                                        মনে মনে 
পিছল ঘর বারে হনুমান হয়ে যাই 
ডুগডুগি হাতে দাঁড়িয়ে যারা 
তারাও আমার আবেগে নেই 
আছে হাসিমুখে নোনা জল সাঁতরে যাওয়া একটা মানুষ আমার ভেতরে খোলা বারান্দায়


অপেক্ষায় নেই কেউ 

দীর্ঘ সময় বসে থেকেছি চুপ করে
পাটাতন নামানো 
কাদা পেরিয়ে চলে যাওয়া যায় সফল পথের ভেতর 
তবু বসে আছি 
একরোখা কথাগুলো যায় আসে 
আয়নার ভেতর দেখি সত‍্যের মত নিষ্ঠুর ছবি
মুখোশের রং গলে ছেঁড়া খোঁড়া মুখ 
বাঁশি বেজে ওঠে ডেকে যায় 'ওগো পার করো'
চেয়ে থাকি ভ্রম ওঠে ধীরলয়ে 
আমি বসে থাকি,কুয়াশার মত
দেখি কাদাজল ধুলো নিয়ে ঘুমিয়ে আছি
আর ফেরা হবেনা বলেই শুয়ে থাকি একেবারে চুপ 

অভিসার সেই পথেই

সুচেতনের বাড়ির পাশ দিয়ে যে নদী গান শোনায়
আমার ঘাটে এলেই কেবল গুমড়ায়
ঢোঁক গিলে খাওয়া শব্দের হাহাকারের মত
না ফেরা অতীতের হাওয়ার খসখস শুনি নুড়িতে নুড়িতে
সে পথ ধরেই হেঁটেছি,সুচতেনের দিকে
স্হায়ী আবাসে পৌঁছাতে কতদিন লাগে
দশ বিশ অথবা হাজার বছর 
নীচের দিকে গড়িয়ে দিয়েছে সম্ভাবনার আলো
তবু মাথা বিকোয়নি,যে মাথার দাম শূন‍্য
তার বাঁচা মরা সবটাই ভাঁওতা
নদীর রঙ বদলালেই মাথা তুলে 
সুচেতনের পাশেই রয়ে যাব
হতে পারে মুক্তির মত রঙ থাকবে সেই ঠিকানায়



No comments: