Tuesday, April 26, 2022

সৈকত ঘোষ-এর নির্বাচিত সিরিজ কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  সৈকত ঘোষ-এর নির্বাচিত সিরিজ কবিতা



একটা বিন্দু। এক বুদবুদ। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বিন্দু থেকে আলফা বিটা গামা পার্টিকেলস ছিটকে পড়ছে ডিমের কুসুমের মতো ফ্রায়িংপ্যানে। সেই বুদবুদ থেকে একটা বিস্ফোরণ। তীব্র মেটালিক। মস্তিষ্কের প্রতিটি গ্রন্থিকে প্রবল ভাবে নাড়িয়ে দিল...

জরাসন্ধের বিছানা 

১.

সময় পেছন দিকে হাঁটলে গ্লাসের জলে
ছায়ার প্রলেপ পড়ে
অন্ধকার আমাদের পরিভ্রমণ করে রোজ
কয়েকটা সংকেত ধরে এগিয়ে গেলে 
যুক্তাক্ষরগুলো ভাঙতে শুরু করে
দহনপর্বে আরও একবার কেন্দ্রচ্যুত ভগবান

মেঘ দিশা খোঁজে না 
চোখ থেকে গড়িয়ে নামে নীল অপরাজিতা 


২.

ভূ-ত্বকের নিচে ক্রমাগত বিস্তার পাচ্ছে অধিকারবোধ 
আমাদের জামাগুলো খুলে নিলে 
হ্যাঙারে ঝোলে হাওয়াই দ্রাঘিমা 

প্রতিটা পাথরে আমি রূপভেদ খুঁজি 
হিমাঙ্কের নিচে মৌলিক হয় নিশ্বাস 
সময়কে ধ্রুবক ধরলে প্রতি অণু নিউক্লিয়াস 
পৃথিবীর পালস রেট ধরে রাখে 

জলের আঁচলে তুলে নিই ছায়ার গ্রাফচিত্র 
নতুন শহরের মানচিত্রে তোমাদের মুখগুলো আঁকা হোক 


৩.

আগামীর যন্ত্রণা কাঁধে হামাগুড়ি দিচ্ছে বিসর্গেরা
সন্ধিবদ্ধ রুমাল জানে তার ব্যপন ক্ষমতা 

একটা ছায়াপথ থেকে খসে পড়ছে সমবাহু গান 
রুপোলি চিৎকার বর্গভেদে বৃত্ত আরও আণবিকে জল 
আনুপাতিক বিভাজন থেকে বসন্তকাল জন্ম নিলে 
সেখানে কোকিলের আনুগত্য থাকে না 

বৃষ্টিরও ঝোক থাকে শ্লীলতাহানির
প্রতি অণু দুঃখের সমীকরণ আগামীর গান শুনেছে 
রহস্য কেবল অনুমানে দানা বাঁধে তা নয় 
অনেক চিন্তাশীল মাথা এক হলে মেরুকরণ স্পষ্ট হয় 


৪.

একচোখ বন্ধ করলে জলের পৃষ্ঠটান 
দরজা সূত্র অতিক্রম করে,

গাছ মাটি পাথর ম্লান হাসে 
ছোটোবেলায় শোনা শিকারি গল্পটার মতো
সৃষ্টির আদি যুগে ফিরে যায় মানুষ 

আত্মজীবনী লিখতে বসলে 
একটার পর একটা সরলরেখা আমাকে ছেদ করে যায়
বিন্দুগুলো জুড়তে বসে সময়ের যমজ

স্মৃতিরা হাইপার সেনসিটিভ 
এডিটিং টেবিলে একটা এল ই ডি আলো
মানচিত্র থেকে ঘুম নিয়ে আসছে 


৫.

ইমেজ অনেকটা নতুন রুমালের মতো 
বুক ভরে শস্যের ঘ্রাণ নিতে নিতে 
কখন আবিষ্ট হয়ে যায় 

তোমার হাসি দেখে বোঝার উপায় নেই 
কেয়ার এবং শেয়ার শব্দদুটো আক্ষরিক অর্থে 
কতখানি ভার বহন করে 

ছাতার নিচে হাঁটলে বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটা
কফিকাপে গিয়ে ঠেকে। এর বেশি হলে 

শহরের সমস্ত যানবাহন অবাক চোখে তাকায়
ফায়ারঅ্যালার্মে বুঝি 
আমার গালনাঙ্কে ভিজে উঠেছে পকেটের রুমাল...


৬.

বালিঘড়ি উলটে দিলে 
ভরকেন্দ্র কোমর থেকে নখে স্থানান্তরিত হয়

জোনাকি লেখে নির্ঘুম সংলাপ
স্ক্র্যাবার খুঁটে তুলছে মৃত হাসি কোষ
ঢেউ থেকে রেহাই পায়নি পতঙ্গরাও

আরশিতে রাখা ঘুম সুযোগ বুঝে ঠিক ঠোঁট ফুলিয়েছে
প্রতিটা স্ট্রোকে জলের চিহ্ন ফুটিয়ে তোলে কাগজ
কিছুক্ষণের জন্য সময় ও দূরত্ব গলাগলি
এটা কোনও কোটেশন নয়

প্রতি রাতে বিষণ্ণতার হাজারো এক উপকরণ
কাটা জিভের আরও গভীরে নামছে...


৭.

দেয়াল বন্ধুরা টিসার্টে উঠে এলে 
মিছিলে হাঁটা ছাতারা লজ্জা পায় 
টি আর পি যাই বলুক 
রোজকার মতো সূর্য প্রনাম ধরে রেখেছে মেগাসিরিয়াল

ধর্মের কল কি বাতাসে নড়ে ?
এ প্রশ্নের উত্তর খুজতে যতই সাপ্লিমেন্ট দাও 
ভিটামিনের অভাব পুরো করতে পারেনা ক্রিয়াপদ 

জীবনে যতবার কিছু বলতে গেছি
অসঙ্গতি থেকে গেছে সে বলায়
দূরত্বের স্কেলে কোনোকিছু বিশ্লেষণ করলে 
অক্ষমতাই কেবল প্রকাশ পায় 


৮.

কার্নিশ ধরে দাঁড়াতেই আমার সামনে আসে 
সেই সুগার-ফ্রি মেম 

'ক' এ কাক 
'গ' এ গোরু 
'র' এ রুবারু...

ফ্রেমটা ব্ল্যাকআউট হতেই 
ধারাবিবরণী 

ব্যাকরণে 
        উলটো শয়নে 
                 শির্ষাসনে
                          হাই সেনসেক্স


৯.

ছায়াময়তা থেকে উঠে আসে সবুজ সন্ধে 
সোনালি চতুর্ভুজ চৌকাঠ ডিঙিয়ে শুষে নিচ্ছে উত্তাপ 
ম্যাগনেটিক স্পর্শে আকর্ষণ থাকে না 
গ্রিক পুরাণে বৃষ্টি দেবতা এতটাও স্পর্শকাতর নয় 

চৈত্র সেলে একে অপরের মেরুদণ্ড বেচে দিচ্ছে 
দাড়ি কামানো কুকুরেরা পোজ দিয়ে দাঁড়ালে
জেলিফিশের বুকে মধ্যরাত নেমে আসে 

কোথাও কোনো ঘুলঘুলি নেই, কোথাও নেই জলীয় মিছিল 
দেয়াল চিত্রে পরীক্ষামূলকভাবে আঁকা হচ্ছে যাযাবর জীবন 


১০.

পেছন দিকে দৌড় শুরু করলে আলটিমেটলি
যেখানে পৌঁছানো যায় 
যেখানে শরীরের কোনো আকার থাকে না 

আমার সামনে দপদপ করছে ফিলামেন্ট 
মাথার ভিতর থেকে গ্রে-ম্যাটারগুলো ছড়িয়ে পড়ছে 
ম্যাজেন্টা কালিতে 

প্রত্যেকটা অক্ষর থেকে চক্রাকারে বেরিয়ে আসছে 
অতিরিক্ত আলো 
অভ্যেস বসত পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ শেষে 
কবিতা লিখতে বসলেই একটা প্রশ্ন বারবার 
সামনে আসে 

অনিচ্ছুক চাষিরা কি সভ্যতার ভাগ পাবে না ?


১১.

অবাধে যন্ত্রণারা চরাচর করে মস্তিষ্কে
অসময়ে বিভাজ্যতার নামতা লিখতে বসলে
মুখের চারপাশে খণ্ডে খণ্ডে ভেসে ওঠে 
জীবনের পাইগ্রাফ 

প্রায়শই আমি দিকভ্রান্ত হই
শেষ বিকেলে যখন পাখিরা ঘরে ফিরে যায়
আমার শরীরে ভিড় করে নাগরিক ধোঁয়াশা

প্রত্যেকটা ঘুম কোনও এক আণবিক স্তরে
নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে


১২.

মেঘেদের বর্ণমালা শুষে নিচ্ছে শহুরে লীনতাপ 
পরজীবী চরিত্রেরা পূর্বজন্মের ইতিহাস আঁকড়ে 
প্রজনন করবে এটাই তো স্বাভাবিক 

যেহেতু আমাদের সভ্যতা নদীমাতৃক তাই 
মেয়েদের ডেনিম থেকে শুরু হয় অ্যানাটমির ক্লাস

আলো নিভে গেলে আমি ঘ্রান নিতে থাকি 
আসেপাশের সমস্ত শূন্যপদ কী এক অজানা টেন্ডারে
লুফে নিচ্ছে খানদানি 'খ' 


No comments: