Tuesday, February 25, 2020

সম্পাদকীয় নয় কিন্তু...

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।








সম্পাদকীয় নয় কিন্তু...
অভিজিৎ দাসকর্মকার
   
আমার নয় আমাদের সকলের  প্রয়াস। প্রতি মাসের ২৫ তারিখ সাধারন সংখ্যা।আর  মাসের ১৫ এবং ৩০ তারিখ "এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা " প্রকাশিত হবে। 
    
আমরা সবসময় উন্নত মানের লেখাকেই প্রাধান্য দেবো।টিকে থাকার লেখা। ভাঙার লেখা। ভেঙে নতুন ডিকশন তেরির লেখা।
যে লেখা পড়ে বাঙালির ভাত ঘুম উড়ে যাবে। উঠতে বসতে ভাতে বাধ্য হবে এই লেখাটিতে এমন কেনো শব্দ,দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনা সব পাঠক হিসাবে আমাকে ধ্বণিত করছে।হ্যালুসিনাজড হয়ে পড়ছি।মনের অজান্তেই চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে।  

পুরনো পোশাকে আমরা কি এই সময় সাজতে চাইবো রোজদিন?
পুরনো কি-প্যাড দেয়া ফোনে আমাদের চাহিদাগুলো মিটবে এই ডিজিটালে? 
তাহলে সাহিত্যেই বা কেনো আম পাতা জাম পতা, চাঁদ ফুল নক্ষত্র থাকবে? থাকুক তবে তাদের নবনাইজড করে রাখবো... 

এগুলো আমার বিশ্বাস।চাপালাম না। কারণ বিশ্বাস  আর মানা নিজের উপর... 

অলোক বিশ্বাস

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









আবু হাসান শাহরিয়ার-এর কবিতা প্রসঙ্গে কিছু প্রতিক্রিয়া    অলোক বিশ্বাস
বহু কবিতা গ্রন্থের রচয়িতা বাংলাদেশের কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। তিনি আমার সমসাময়িক লেখক। আমাদের জন্ম একই বছরে, ১৯৫৯। কবিতা ছাড়াও তিনি প্রকাশ করেছেন অনেকগুলো কবিতা বিষয়ক আলোচনা গ্রন্থ, কয়েকটি সম্পাদনা। তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতা সমগ্র। প্রামাণ্য শামসুর রাহমান ইত্যাদি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বইয়ের মধ্যে আছে অন্তহীন মায়াবী ভ্রমণ, এবছর 
পাখিবন্যা হবে, হাটে গেছে জড়বস্তুবাদ, তোমাদের কাচের শহরে, ইত্যাদি। তাঁর সাম্প্রতিক কবিতার বই 'অসময়ে নদী ডাকে' প্রান্তিক মানুষের সহজ জীবন যাপনের আবহমান ধারার মতো আন্তরিক এবং অকপট। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত এই কবিতার বইতে পাঠক পেয়ে যাবেন কথোপকথনের প্রাঞ্জল ভাষা--- 'কত কী খোয়া তো যায়; ট্রেনও গেলে যাবে/ ছটা বেজে পনেরোয় পৃথিবীতে কত কিছু ঘটে'(ছ'টা বেজে অনন্ত পনেরো)। আবু হাসান শাহরিয়ার বিষয়কে যথেষ্ট প্রাধান্য দিয়েছেন বলেই, বিষয়ান্তর বা বিষয়হীনতার প্রসঙ্গ ভাবার অবকাশ খুঁজিনি তাঁর কবিতা পাঠের সময়। পাগলাভোলা রোমান্টিক ভিশনভরা চাঞ্চল্যের পরিচয় পেয়েছি তাঁর কবিতায়। নৈসর্গিক বিস্ময়গুলোর প্রতি তাঁর সানন্দ আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায় 'অসময়ে নদী ডাকে'র কবিতাগুলোতে। সেই আকর্ষণে নিসর্গের অন্তর্নিহিত আত্মাটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি মগ্নচৈতন্যে। ভালবাসেন স্যাটায়ার লিখতে। কবিসত্তা বিষয়ে গরিমাও কাজ করে কখনো যা অভিব্যক্ত হয়েছে কোনো কবিতার পঙক্তিতে। তাঁর 'শাদাছড়ি' নামক কবিতায় এগিয়ে থাকা আত্মঅহংকারী কবিমনের তীব্রতা প্রকাশিত এরকম পংক্তিতে--- 'আবার হাওড়ে গেলে লঘুচিত্ত কবিদের নাওয়ে ওঠাব না/ ছেঁদো কবি এঁদোজলা খোঁজে।' উল্লিখিত কবিতাগ্রন্থে একটি কবিতায় তিনি 'চাক্ষিক' শব্দটা ব্যবহার করেছেন। যদিও অনাভিধানিক এই শব্দটির ব্যবহার বা প্রয়োগের কৌশলমাত্রা আমার পছন্দের বাইরে থেকে গেলো। পর্যবেক্ষণের মেধাও তাঁর কবিতার উপাদানশক্তি হয়ে ওঠে, তিনি সেই উপাদানের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে লিখছেন--- 'ভাষার আদিতে ধ্বনি; আমার বসতি ধ্বনিমূলে।' আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতায় খুঁজে পাই বাক্যের ধ্বনিগুণ এবং তা জারিত অন্যান্য কাব্যগুণের স্পার্ক নিয়ে। পৃথিবীর যাবতীয় রূপ, যাবতীয় সুর কবির চেতনাকে রাঙায়, সন্নিবিষ্ট হয় কবিতায় এবং তার বহিঃপ্রকাশ দেখি 'অসময়ে নদী ডাকে' কবিতার বইয়ে। চা বা কফিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জীবনের নিজস্ব বহুরৈখিক বিস্তার অভিব্যক্ত হয়েছে 'চা না কফি' কবিতায়। অপর কবিতা ভাবনা থেকে উঠে আসা হৃদয়নিষ্ঠ উচ্চারণের সক্রিয়তা স্পষ্ট হয়েছে 'ঢেউভাষা' নামক কবিতায়--- 'অভ্যাসবশত আমি নদীর রচনাবলি পড়ি/ পাঠে পাঠে আসমুদ্র ঢেউভাষা শিখি/ শব্দে দিই ধার।' তাঁর এক পংক্তির কবিতা--- 'আমি নই; অন্য কেউ বেঁচেছিল আমার শরীরে' (আত্মা)। এক পংক্তির কবিতার পরিসর পাঠকের ভাবনায় সম্প্রসারিত হতে থাকে মাত্র লেখাটির প্রতি তাকিয়ে থাকলেই।  স্থানিকতাকে কবি গুরুত্ব সহকারে দেখেছেন। তাঁর স্বপ্নাদেশ, পাঠকের প্রতি, ছায়ালিপি ইত্যাদি কবিতার পাঠ অপর অভিজ্ঞতার স্মারক। কী অসাধারণ পংক্তি দেখেছি 'পাঠকের প্রতি' কবিতায়---'কবি কি সমাস নাকি, পা দোলাবে ব্যাকরণ গাছে ?' কিছু কবিতা টানা গদ্যে। টানাগদ্য কবিতার গতিরূপ স্বাভাবিকভাবেই অন্য কবিতার থেকে আলাদা হবেই।।  'শহীদ কাদরী' নামাঙ্কিত কবিতায় তিনি লিখছেন--- 'কবিরা রাখাল ছিল এই দেশে, এখন ভিখিরি'--- বেশ স্ট্রাইকিং। অগ্রজ কবি শামসুর রাহমানের প্রতি হার্দিক নিবেদনের প্রকাশ ঘটেছে এভাবে---'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা/ তার নামে আজও মাঠে ভাঁটফুল ফোটে/ ঘাটের হিজলও মিছিলে শামিল হয়।' 'অসময়ে নদী ডাকে' কবিতাটির ভেতরে চাপা বেদনাজনিত দীর্ঘশ্বাস মরমিয়া ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে হৃদয়ের বেদনা-পরবর্তী উল্লাস--- 'আমার সাঁতারু-মন নদীর শৃঙ্গাররসে ভাসে।' পশ্চিমা ধরণের  বিনির্মাণ ও বহুরৈখিকতা খোঁজার দরকার পড়ে না তাঁর কবিতায়। বরং বাংলার চিরকালীন পুনঃনির্মিত অন্তর্লীন বহুত্ববিন্যাসি ধারা অনুভব করেছি আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতায়। পেয়েছি বাংলার স্বপ্রকৃতিজাত গীতিকবিতার স্পর্শবিন্যাস। 'শুভরাত্রি' কবিতার শেষ দুই পংক্তিতে লিখছেন---' সারাদেশই  বধ্যভূমি; সারাদেশই রায়ের বাজার/ পরশু অনেক দূর; কালই গুলিবিদ্ধ হতে পারি'। কবিতাটি পড়ে মনে ঝলকে গেলো হুমায়ুন আজাদ লিখিত সেই ঐতিহাসিক গ্রন্থটির কথা 'আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম'?


পিনাকীরঞ্জন সামন্ত

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










হাইপারটেনশন     পিনাকীরঞ্জন সামন্ত  


ভাবছি কবিতাই এমন কিছু শব্দ প্রয়োগ করবো যা আমিষ বা নিরামিষ নয় এবং যথারীতি সেই মেহেদী বা মেহেরপুরের রঙ মাখানো উড়ন্ত চাকতির থেকে একমুঠো রোদ এবং বাতাসের গন্ধ ছড়াবে । পাখিরা আসবে 
গাছে - ধ্বনি এবং ধ্বনিতে কলরব মাখানো সঙ্গীতের মুর্ছনায় ভুলে যাব আমার পাপবিদ্ধ ইতিহাস -  
আর ক্ষণকালের আবর্তনের ভিতরে নদীর উচ্ছাসে জেগে উঠবে আমার অন্ধকারের প্রশ্ন -গান্ধারী তুমি কি একটিবার
চোখ খুলবে এবার ! হয়তো ইচ্ছেটা জাগবে পুনর্বার আমার না জানা সকল পূর্বপুরুষের যৌন বিস্তারের আসল পাণ্ডুলিপি । 

হঠাৎই এই সময় চমকালো মেঘ, বৃষ্টি এলো, 
আর আমার ভাবছি ভাবছি মনের দোলনাটি 
ক্রমশ দুলতে দুলতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল 
এক ঝলক বিদ্যুতের মতো

মনে হলো --
আমি যথার্থই একজন হাইপারটেনশন 
রুগী-কাম একটি শুকনো নদী এবং প্রশ্ন আসে 
এমত অবস্থায় - শব্দের কল্লোলিত স্রোত 
আসবে কী করে ?

নাসির ওয়াদেন

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









কাগজ      নাসির ওয়াদেন


           রাগে গজগজ করতে করতে ফিরে যাচ্ছে আনিস ।রাতের গন্ধ গায়ে লাগিয়ে ভোরের কুয়াশা মেখে পাঁচ কিলোমিটার পথ ধাওয়া করে সাইকেল বেয়ে এসে লাইন দিতে হয়েছিল । বেলা গড়িয়ে দুপুর পার, মাথার সূর্য তখন বাইশ দিনের ওম দেওয়া ঘোলাটে, পোক্ত ছানার রূপ পায়নি যেন । একরোখা রোদ বারবার মুখ লুকোচ্ছে, মেঘকে হিংসে করে । উত্তুরে শীতল হাওয়া ভাসিয়ে নিয়ে যায় ইলশেগুঁড়ির ছানাদের। বৃষ্টির হালকা মেজাজ, দোতলার মেয়েটির মুখে রবীন্দ্র সংগীতের সুর, জানালার শিক ভেদ করে ভেসে আসে পিচরাস্তার বুকে ।
   ' যদি নাই হবে, খামোখা হয়রানি কেন ভাই ?
দীর্ঘ লাইন মাথা যখন ছুঁল পোস্টাপিসের বাবুর কাছে, বাবু বলে দিল,' তিনমাসের পর এসো। মগের মুলুক পেয়েছে । আমরা সব ভেড়ারদল! '
      বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা এসে যাবে তাদের।  'ভুল!  ভুল করবে ওরা, আর তাপ সইব আমরা, কী আজব দেশ রে ভাই ।'
রাগে ততক্ষণে তার রক্তচাপ বেড়ে গেছে । তার পাশে সাইকেল চড়ে যাচ্ছে আবির । দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, পাশাপাশি বসবাস ,  আনিসের দাদু আর আবির দাদু দেশ ছেড়েছে সেই  সাতচল্লিশ সালে । আজ ওরা দুজনেই গত। ওপারের জল, হাওয়া তাদের ভাল লাগেনি, তাই পাড়ি দেওয়া । কোথায় যেন বেসুরো আওয়াজ ভেসে আসছে আজ , কালিমালিপ্ত হচ্ছে ভোরের ভালবাসার বাতাস, নিশ্বাস প্রশ্বাসে বিষের গন্ধ । কে ছড়ায় ---
   আবার ভুল । আধার কার্ড । ভোটার কার্ড । ঠিকঠাক না হলে নাকি সমূহ বিপদ, অসম পরিণতি । আঁতকে ওঠে আনিস,  বলে, ' আর বাঁচা যায়?  আমার বাবা জন্মাল এ দেশে, আমি জন্মালুম, আমার ছেলে, তার ছেলে গত মাসে,এখন নাকি  আমাদের সবাইকে প্রমাণ দিতে হবে।
  'ঠিক বলেছিস আনিস,  বলল আবির, আমাদেরও তো ভয় করে ভাই!  আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেটের কোন দামই নাই। নতুন জন্ম সার্টিফিকেটের প্রয়োজন ।এই পঞ্চাশ পেরোনো মানুষ কোথায় পাবে বলতো ?'
  -- সেটাই তো মোদ্দা কথা ভাই।
  -- তাকিয়ে দেখ আসাম।গোটা রাজ্য পুড়ছে, আগুন জ্বলছে, কারো কোন হুশ আছে?
এখানেও কি আগুন জ্বলবে ?  পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আমার বাড়ি কি সুরক্ষিত থাকবে ?
--তুই ঠিকই বলছিস আবির। জন্মালাম এখানে , আর এখন বলছে, প্রমাণ না দিলে কাম্পে পচে মরতে হবে ।
      ওরা  চলছে পিচরাস্তার উপর দিয়ে সাইকেল চড়ে । দুপাশের সারি সারি গাছ, পাখির কলকাকলি,ছন্দস্বর, মাঝেমাঝে রোদের লুকোচুরি । দূরে সবুজ প্রান্তর, রবিফসলের ঢেউ, শরীরের অঙ্গে সোনার গহনা ।
    পিচরাস্তার শেষ, এখন কংক্রিটের রাস্তা । রাস্তার চেহারা পাল্টে গেছে, জীর্ণশীর্ণ রাস্তা হাড়মাস পেয়ে উল্লসিত ।সৌহার্দ্য আর ভালবাসা মুড়ে আছে সোনার বাংলা । সেই সকালবেলায় সূর্য ওঠা, রাখালিয়া সুরে সুরে সূর্যের অস্তাচল গমণ, পাখিদের ঘরে ফেরা, কোন বাধা নেই, কোন বেড়া নেই, আছে শুধু সুন্দরের ঘ্রাণ, অনন্ত ভালবাসা দিগন্তের ভাঁজে ভাঁজে হরিৎ বাতাসের সুগন্ধি।
       মোবাইল বেজে উঠলো আনিসের। ওপার থেকে কন্ঠস্বর শোনা গেল, 'চাচা নেই! আক্রাম চাচা গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে ।
    আনিস বিহ্বল হয়ে পড়ে । গত কয়েকদিন ধরে আক্রাম চাচা অস্থির ছিল । দাদুর আমলের বাড়ির দলিল, জমির কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছিল না । দু’হাজারের বন্যায় সব ভেসে গেছে, ভেঙে গেছে আশ্রয়টুকুও। সরকারি সাহায্যে ছোট একটা আস্তানা গড়েছে।
    দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আনিস, আবিরও , দুজনেই ।এর শেষ কোথায় !

আলোক মণ্ডল

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










টোলট্যাক্স কালেকটর শ্রীকৃষ্ণ    আলোক মণ্ডল

এখন টোলট্যাক্স আদায়-চিত্র চোখ সয়ে গেছে,জাতীয় সড়কে,রাজপথে।পথ সারাই,আর দেখভালের জন্যেই এ আদায়। যুক্তি সম্মত,বিশেষত যে দেশে সরকার স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবহনের দায় ঝেড়ে ফেলে ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় সেখানে ট্যাক্স সেস কত কি নিতে হয় তার ইয়ত্তা নেই । কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ কেন টোল ট্যাক্স সংগ্রহ করতেন বুঝে উঠতে পারি না, তিনি তো সব কিছুরই দেখভাল করতেন,স্বয়ংভূ  বিশ্ব সম্রাট। ট্যাক্স সংগ্রহ করা তো তাঁর কাজ নয় ! তবু তিনি করেছেন,বেশ উৎসাহের সাথেই!  এ বিষয়ে জেলার কবি চণ্ডিদাস কী বলেন? তিনি তাঁর একটিমাত্র কাব্যগ্রন্থ " শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন কাব্যে" (এখন অর্ধ শতাধিক কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ করেও অনেক কবি তাঁর ধারেকাছেও যেতে পারেন নি।) দেখাচ্ছেন, শ্রীকৃষ্ণ রাধার কাছে টোলট্যাক্স  দাবী করছেন এক্কেবারে দু'কোটি টাকা! ভাবতে পারেন,দু'কোটি টাকা ! আর দিতে না পারলে, যমুনা পেরিয়ে মথুরার হাটে দুধদই বেচতে যেতে দেবেন না! সে যে লেবেল থেকেই সুপারিশ আসুক না কেন তিনি টাকা না পেলে ছাড়বেনই না! এমনই কঠিন তাঁর ফরমান! 
বিকল্প পথ একটা অবশ্য আছে ,সেটা শ্রীকৃষ্ণই বাতলে দিয়েছেন। এখন কোন্ পথ শ্রীরাধা নেবেন সেটা নির্ভর করছে তিনি কী ভাবে পরিস্থতি ট্যাকেল করছেন তার ওপর। তবে আশ্চর্য হই এই ভেবে, এতো মোটা অঙ্কের টোল এযুগেও কি এককভাবে কারো ওপর চাপানো হয়েছে!তাও আবার নিছক এক জন সামান্য গোয়ালিনীর ওপর!যে যমুনা পেরিয়ে দুধ বেচে খায়! যাক সে কথা , কবি চন্ডিদাস বলছেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুু নেই। দাবীটিও নাকি যুক্তি সংগত এবং বিকল্প পথটি ন্যায়সঙ্গত।
আসুন দেখি, কী করে এ্যাতো টাকার দাবী নাহ্য হোল! কবি বলছেন, শ্রীকৃষ্ণ অনেক হিসেব করেই ট্যাক্স ক্যালকুলেশন করেছেন, কোথাও ভুল বা অবাঞ্ছিত কিংবা গোপন হিসেব নেই। তাঁর হিসেব মতো শ্রীরাধার মাথায় যে কুসুম মালা তার দামই ১ লক্ষ টাকা,কেননা তা স্বর্গের পারিজাত ফুলের মালা। তাঁর চুলের দাম ২লক্ষ যে চুলে শম্পা বনের ঢেউ,এখন হলে হয়তো ঐ চুলে বিদিশার রাত্রির অন্ধকার খুঁজে পেতেন।সতী সাবিত্রীর মতো তাঁর মাথার সিঁথির সিন্দুরের দাম ৩ লক্ষটাকা,পূর্ণশশির মতো শ্রীরাধার মুখের দাম ৪ লক্ষটাকা,কেননা ঐ মুখশ্রী অনন্ত সৌন্দর্যের আয়না,নীলোৎপল নয়নযুগলের দাম ৫ লক্ষটাকা,কেননা ঐ চোখের ইশারায় কত যুবকের বুকে ওঠে তোলপাড় ঢেউ, গড়ুঢ়ের মতো নাকের দাম ৬ লক্ষ টাকা,দু'টি কান যেখানে সারাক্ষণ দুলে হাসি কান্নার মতো রত্ন মানিক্য তার দাম ৭ লক্ষটাকা, মানিক্যজয়ী রাধার দাঁতের দাম ৮ লক্ষটাকা কারন ক্লোজআপের ঝকঝকে দাঁতে হাসির চেয়েও উজ্জ্বল! বিম্বফলের মতো তাঁর অধরের দাম ৯ লক্ষটাকা,কেননা সেই অধরে লেখা আছে চিরন্তন চুম্বনের স্মৃতিকথা, কুম্বসম কণ্ঠের দাম ১০ লক্ষ,পদ্মের সরু নালের মতো অর্থাৎ মৃণালের মতো নির্মেদ শ্রীরাধার দু'বাহুর দাম ১১ লক্ষ টাকা,চাঁদের মতো শ্বেতশুভ্র নখের দাম ১২ লক্ষ, শ্রীফলের মতো সুঢৌল তাঁর স্তনযুগলের দাম,১৩ লক্ষ টাকা কেননা তা চিরন্তন প্রেমের লীলাভূমি! ক্ষীণতম( জিরো ফিগার) শ্রীরাধার কটিতট(কোমর)-র দাম ১৪ লক্ষটাকা, কদলীসম ঊরুদ্বয়ের দাম ১৫ লক্ষ, চরণযুগল ১৬ লক্ষ,  যে চরণে ভুল করে ফুল ভেবে প্রজাপতি উড়ে এসে বসে এবং হেমপাট নিন্দিত শ্রীরাধার জঘন-এর দাম ৬৪ লক্ষটাকা।  তাহলে,যোগ করে দেখুন,কোথাও ভুল আছে কি?  সর্বমোট ২ কোটি টাকা টোলট্যাক্স হচ্ছে তো? 
শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধার কাছে এই দাবীটুকুই করেছেন এবং তৎকালে এটা বাস্তবসম্মতও ছিল। নগদে ঐ টাকা দিতে না পারলে অবশ্যই বিকল্প পথও ছিল এখনও যেমন আছে। তবে সংগ্রাহকের উপর নির্ভর করছে, তিনি কোন ধরনের বিকল্প দেবেন। আমাদের রাধাই বা কোন পথ বেছেছিলেন,সে বিষয়ে আমি আর কিছু বলছি না,  খোঁজ পেতে "শ্রীকৃষ্ণকীর্তন"কাব্যের' দানখণ্ড' পাঠ করুন, বিকল্প পথের সন্ধান পেয়ে যাবেন।