Tuesday, February 8, 2022

পিয়ালী বসুর কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  পিয়ালী বসুর কবিতা




স্মৃতি

ফেলে আসা সময়ের জলপ্রপাত জুড়ে 
এখন নিভৃত মনখারাপিয়া মনোটনি |


একা

দেশভাগ, দ্বি -জাতি তত্ত্ব পেরোনোর পর
স্বাভাবিক প্রাত‍্যহিক জীবনে চিহ্নিত হওয়া |



উপেক্ষা

চারপাশে একরাশ দূরত্ব ভেঙে পড়ার পর
পরস্পরের হাত ধরে ক্রমশ নিভে আসা |


দোসর 

যৌথ চাদরের মধ‍্যে 
নিরাময়ের একটি আলোক সেতু জেগে থাকে |


নিয়তি

জীবন যখন উন্মুখ ক্ষরণ
আর, অনির্দিষ্ট যন্ত্রণার অভিমুখে এগিয়ে চলে |


Sunday, February 6, 2022

কবিতার ডালপালা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   অরিজিৎ চক্রবর্তী

কবিতার ডালপালা (পঞ্চম পর্ব )

মানুষের সমস্ত সৃজনই সময়-শাসিত। সময়ের স্বর যেমন বদলায় অভিব্যক্তির ধরনও নিশ্চিতভাবে বদলে যেতে থাকে। বাস্তব ও কল্পনার যুগলবন্দিতে সময়ের ভাষা যত রূপান্তরিত হয়, কবিতার শিল্পভাষায় তত মাত্রান্তর ঘটে। নান্দনিক বোধ তাই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে নিরন্তর নতুনভাবে প্রতিফলিত হয়। সেই প্রতিফলনের পরিগ্রহণ গ্রহীতার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। বাংলা কবিতার চারণভূমি যেহেতু নানা অঞ্চলে সম্প্রসারিত, পাঠকবর্গের উপলব্ধিও বহুমাত্রিক, স্থির ও বহমান সময়ের মধ্যে সেতু রচনা করতে গিয়ে কবিতা আপন প্রকরণ ও অন্তর্বস্তু কতভাবে বিনির্মাণ করছে, তারই বিশ্লেষণী পাঠ আলোচনা করার প্রস্তাবে আমি কবি তিলোত্তমা বসুর কবিতার দিকে আচ্ছন্ন হলাম। তিলোত্তমার কবিতার সময়শীলিত শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের দ্বিরালাপে অনির্বচনীয় নান্দনিক আলো কীভাবে জ্বলে ওঠে, তারই হদিশ  পেতে " জার্নি" কাব্যগ্ৰন্থটির ( প্রকাশক- ধ্যানবিন্দু, ২০১৫ ) একটি কবিতার পাঠ নেওয়া জরুরি।


যদি ক্ষমার আয়না দেখ -- আমি আফ্রোদিতি।
শরীরে গোলাপ-ক্ষত।
দারুন বিরহ থেকে চুমুর স্পঞ্জই পারে
কাঁটার পাহারা মুছে দিতে!
এমন ঘোরাও তুমি নাগরদোলায়
চামচে চামচে এত প্রেমের সিরাপ
যদি ঢালো...
চলো তবে গুহাজীবনেই ফিরি--
বুনোফুল অজানা বেনামী।
বুকের চাতালে প্রেমের মজলিশ রোজ বসে
বিনুনি এলিয়ে দিয়ে বসেছি অলস
সোলাঙ্কি-কুমারীর বেশে।


ঘোরে সূর্য আমার নির্দেশে
ইচ্ছে গতিতে যেন অক্ষ ঘুরছে
তারাদের ফুলঝুরি কুড়িয়ে কুড়িয়ে
বাতাসে ছড়িয়ে যায়
বর্শা ভলকেরা স্তব্ধ মেরুদেশে...
যেন ছমাস ঘোষিত চাঁদ, তার লুকোনো জ্যোৎস্না বারোমাস !
এসো আমার ইগলুতে...


হাওয়া মোরগেরা ভোর থেকে ডাকে।
খামার বাড়িতে ঘোড়া ছুট দেয়
সোনালী গমের ক্ষেতে...
তোমার পায়ের গোছ
আলগোছে বুকে তুলে দেখি 
শস্যের দানা লেগে আছে ,
লেগেছে দিগন্ত ধুলো
সরল সবুজ ঘাসে উপত্যকা ঢাকা।
রাত শেষে কেন
আমার স্কার্টের ঘের পেয়ে বসে
দর্জির খ্যপামি ?
স্কার্ফ যায় উড়ে... হু হু অলি মন খারাপের
তুমি কি মার্চের সাইকেলে !


জানি খেলতে এসেছ... খেলো...
দাবা হোক ক্যারম বা লুডো
নিজেকে চালিনা আর ঘুঁটি
সাদ কালো লাল পয়েন্টেরা সময়ের
কেন হারাবে আমাকে ? -- চিটিং মানি না মোটে
সবুজ ঘাসের সঙ্কেতে চুপিচুপি
উড়ে আসি...


এসে দেখি ক্ষমার আয়না !
চুমুর স্পঞ্জে সব মুছে দিলে কিনা !
লজেন্স লজেন্স গন্ধ খাতার পাতায়
বোতাম খুলতে কি অবাক--
এদেশে এখনো
ম্যাপ আঁকা বাকি !! 

( আফ্রোদিতি)


গ্রিক পুরাণের প্রেম, আনন্দ, আবেগ এবং সৌন্দর্যের দেবী হলেন আফ্রোদিতি।  হেসিওডের থিওগোনি অনুসারে আফ্রোদিতির জন্ম সমুদ্রের ফেনা থেকে। ইউরেনাসপুত্র ক্রোনোস তার পিতার লিঙ্গ কর্তন করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে সেই লিঙ্গ থেকে শুক্র সমুদ্রের জলে মিশে আফ্রোদিতির জন্ম হয়। এই আফ্রোদিতির অনুষঙ্গ আত্মস্থ করেই তিলোত্তমা কবিতাটির মুক্তি ঘটালেন। যৌনতা মৌনতা ও তারুণ্যের বোধ থেকে এই কবিতা পৌঁছে গেছে নিসর্গনিবিড় আবেশের স্নিগ্ধতায়। চন্দ্রকলার পরিবর্তনের মতো ঋতুচক্র যেন জীবনচক্রকে, বিকাশের বৃত্তে অবস্থিত সব চাপকে, সৃষ্টি ও শিল্প সৃষ্টির ছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। তাই কবি বলেছেন, "যেন ছমাস ঘোষিত চাঁদ, তার লুকোনো জ্যোৎস্না বারোমাস ! / এসো আমার ইগলুতে..."। কবিতাটি বৃত্তবদ্ধ পরিবর্তন এবং নিরন্ত পুনর্জননের প্রতীক হয়ে এসেছে। একই সঙ্গে ঊষরতা-উর্বরতার 
শরীরী অনুবর্তনে কবি ঘটিয়ে ফেলেছেন রতি ও আরতির প্রতিমান। সংযুক্তি ও বিযুক্তির নিরিখে যা একেবারেই বিপরীতমুখী ভাবনার দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত শমিত হয়, "বোতাম খুলতে কি অবাক-- / এদেশে এখনো ম্যাপ আঁকা বাকি !! " অর্থাৎ একটা আকাঙ্ক্ষা। একটা প্রশ্নবোধক অতৃপ্তি। সব আছে, তবু কবি যেন জীবন অভিমুখী দূরত্ব-দ্যোতনার সঞ্চার ঘটাতে চাইছেন ! স্পষ্টভাবে বলতে গেলে তিলোত্তমার কবিতার এই অর্জন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ও ইঙ্গিতবাহী।

সেই ইঙ্গিতের পরিকল্পিত মগ্নতা খুঁজে পাই "বন্ধু" নামের কবিতাটিতে। পরিকল্পিত মগ্নতা বললাম এই কারণেই যে, কবিতাটি আসলে একটা সেলফ
পোট্রেটের মতো। কবি নিজেকে নিজেই নিয়োজিত করেছেন।

"অথচ প্রেমের তাপ লাল শাড়ি পরায় আমাকে।
 
যাজ্ঞসেনী, হোম থেকে দেখি পাঁচ স্বামী।
আছেন যদিও ওঁরা তবু সখা তুমি কেন?
কেন যে স্মরণ করি তোমাকেই বিপদভঞ্জন!
আর শাড়ির আবেশ এসে ঢেকে দেয় নগ্ন
না পাওয়া আমার। পাঁচ স্বামী পাঁচ ইন্দ্রিয়ের মতো।
তুমি তবু ষষ্ঠইন্দ্রিয় জন, পদ্মমধুতে গুন্ গুন্ ,
নীল উড়ে আসা টান চৌকাঠ ডিঙানো...
 
ফুলের বাগানে যাই। সরোবরে জ্যোৎস্নায়।
এই কি আমার কুঞ্জ? আজীবন নিজেকে শাসন, তবু,
তুমি বন্ধু কতটা আপন কেউ তা জানে না।"

( বন্ধু )

যজ্ঞের অগ্নি থেকে তিনি উৎপন্ন হয়েছিলেন বলে তার নাম যাজ্ঞসেনী। সে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যা দ্রৌপদী। কবিতার শুরুতেই প্রেমের উষ্ণতা আর লাল শাড়ির দৃশ্যকল্পে আমরা একটা আশ্চর্য অনুভবের প্রান্তদেশে পৌঁছে যাই। চলে আসে যাজ্ঞসেনীর মতন এক অমর চরিত্র। কিংবা চরিত্রের অস্থিরতা। একেবারে শেষ লাইনে, "তুমি বন্ধু কতটা আপন কেউ তা জানে না।"এই কবিতার গভীরতা অনুধাবন না করতে পারলে পাঠক হিসেবে ব্যর্থতাই স্বীকার করে দিতে হবে। যেন সহজিয়া পথের কুঞ্জে ফুল ফোটান কবি। অতীতকে ভিতরঘর থেকে বাইরে নিয়ে আসেন তিনি। অথচ আজীবন নিজেকে শাসন করেন তিনি। আমরা অদ্ভূতভাবেই খুঁজে পাই আজ্ঞাবহ নিখোঁজের পর্যাঙ্ক ! কবির আবেগ এখানে নিয়ন্ত্রিত আর চিত্রকল্প শুধু চিত্র নয়, অন্য অনেক কিছুর ভাসক।

তিলোত্তমার কবিতা প্রসঙ্গে বলতেই হচ্ছে, গহনভাবনার ডুবুরি কবি কাব্যের আবাহনে জগৎ-সংসারের যাবতীয় অসুন্দর ও আবর্জনাকে প্রত্যাখ্যান করতে করতে বোধের উত্তুঙ্গ মহিমার দিকে এগিয়ে যান। বিশেষত তিনি আঁধি ও স্খলনের মধ্যেও ঐতিহ্যের চিরায়তনে আস্থা রাখেন।


হয়তো আস্থা রাখেন বলেই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অস্থিরতা অনতিক্রম্যতা কবিতার উপপাদ্যে প্রযুক্ত হয়। অথচ কবিতার মতো শক্তিমান অবাস্তব আর কী আছে? কয়েকটি ধ্বনি দিয়ে অথবা চিহ্ন দিয়ে পরপর সাজিয়ে তোলা একটি পরম্পরা, একান্তই আর্ত গঠন একটি, কী মায়ার খেলায় জড়িয়ে ফেলেছে মানুষকে। যেমন ইউক্লিড জ‍্যামিতির axiom-গুলি অথবা পিয়ানোর সংখ্যাসংক্রান্ত axiom গুলি। প্রথমে গুচ্ছকে ধারণ করার জন্য আছে বিন্দু, সরলরেখা ইত‍্যাদি জ‍্যামিতিক অবাস্তব বস্তগুলি। আর দ্বিতীয় গুচ্ছের জন্য বিমূর্ত পূর্ণ সংখ‍্যার দল। এইভাবেই বাস্তব বস্তু থেকে কল্পনায় এবং তার পরে সে কল্পনার বাণীরূপ। তাই কবিতা হলো নিয়মবদ্ধ সিমেট্রি থেকে মুক্ত হবার একটি রিক্ত কৌশল।

Friday, February 4, 2022

সৌমী আচার্য্যের কবিতাগুচ্ছ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||       সৌমী আচার্য্যের কবিতাগুচ্ছ 



ধরতে গেলে ধরা দেয় না

উত্তাপ পেরিয়ে নড়বড়ে সাঁকোর গাঁয়ে 
চুপ করে দাঁড়াতেই সে এল
আক্ষেপে চোখ রাঙিয়ে ফিসফিস করল সময়, ব্যর্থতার মতো
সে আমার হাত ধরে পথ দেখাল 
যতদূর চোখ যায় শুধু জল 
তার গভীরে ছায়া চিরকেলে বসতের
ঈশ্বর হেঁটে গেলেন কাদা মেখে
সে রয়ে গেল আমার ভেতর অলৌকিক সুতো হয়ে 
আমি জানতাম আজীবন বইব কখনো বলতে পারব না সে আমার 
তেমন যুতসই অক্ষর ছেদ যতি কোনদিন জোগালোনা বলেই
পথ ফুরালো বলতে পারলাম না 'কবিতা আমার'

হারিয়েছে পথ 

নীল সন্ধ্যার বুকের ওপর শেষ হাত রেখে আমি সে ও আমরা চলে গিয়েছিলাম।তখনো ঠোঁটের কষে কথারা আলাপে মত্ত ছিল আর অকারণে একটা লম্বা লেজওলা ঘুড়ি ভোঁকাট্টা হয়েছিল। বিস্ময়ে বড় বড় চোখে আকাশ,ঘুড়ি আর মায়া কিশোরকে নাগালের বাইরে যেতে দেখেছিলাম।বুকের ভেতর ঢাক বাজলে ভায়োলিন সঙ্গত করে,কোন সংগত কারণে জানিনা।তবে আরও বহু বার তার বদলে যাওয়া ঠিকানায় হেঁটেছি― স্বপ্নে।

এখন গাঢ় কালো রাতের দাপট।হাসনুহানার গন্ধে সাপ আসে।বাস্তু ঘুঘু টিকিট কাটে ট্রাভেল এজেন্সির।ঠোঁটের কোণে জটিল হিসেব। 'একটু আস্তে অপরের স্বার্থ বুঝে চলুন' ক্যাকোফোনি।বোকা কিশোর সাইকেলের ট্রিংট্রিং শুনিয়ে ডাকে আজো।পা বাড়াতে পারলেই পৌঁছাতে পারি।তবু...


অনিবার্য সংঘাত ও আত্মপ্রচার

আমার আবেগে বাবার রাগী চামড়ার বেত বা 
মায়ের ঝাঁজালো অভাবী গলা নেই 
আছে বটের মত ছড়ানো জড়ানো বুড়ি মায়া
আমার ভেতরেই লুকনো ঘরটায় 
তবু রোজ খিটখিটে অভ্যাস হয়ে মরি বাঁচি
                             মাথাভর্তি কিলবিলে পোকা

এক দুই পাঁচটা করে পিষে মারি বেছে বেছে
                                                        মনে মনে 
পিছল ঘর বারে হনুমান হয়ে যাই 
ডুগডুগি হাতে দাঁড়িয়ে যারা 
তারাও আমার আবেগে নেই 
আছে হাসিমুখে নোনা জল সাঁতরে যাওয়া একটা মানুষ আমার ভেতরে খোলা বারান্দায়


অপেক্ষায় নেই কেউ 

দীর্ঘ সময় বসে থেকেছি চুপ করে
পাটাতন নামানো 
কাদা পেরিয়ে চলে যাওয়া যায় সফল পথের ভেতর 
তবু বসে আছি 
একরোখা কথাগুলো যায় আসে 
আয়নার ভেতর দেখি সত‍্যের মত নিষ্ঠুর ছবি
মুখোশের রং গলে ছেঁড়া খোঁড়া মুখ 
বাঁশি বেজে ওঠে ডেকে যায় 'ওগো পার করো'
চেয়ে থাকি ভ্রম ওঠে ধীরলয়ে 
আমি বসে থাকি,কুয়াশার মত
দেখি কাদাজল ধুলো নিয়ে ঘুমিয়ে আছি
আর ফেরা হবেনা বলেই শুয়ে থাকি একেবারে চুপ 

অভিসার সেই পথেই

সুচেতনের বাড়ির পাশ দিয়ে যে নদী গান শোনায়
আমার ঘাটে এলেই কেবল গুমড়ায়
ঢোঁক গিলে খাওয়া শব্দের হাহাকারের মত
না ফেরা অতীতের হাওয়ার খসখস শুনি নুড়িতে নুড়িতে
সে পথ ধরেই হেঁটেছি,সুচতেনের দিকে
স্হায়ী আবাসে পৌঁছাতে কতদিন লাগে
দশ বিশ অথবা হাজার বছর 
নীচের দিকে গড়িয়ে দিয়েছে সম্ভাবনার আলো
তবু মাথা বিকোয়নি,যে মাথার দাম শূন‍্য
তার বাঁচা মরা সবটাই ভাঁওতা
নদীর রঙ বদলালেই মাথা তুলে 
সুচেতনের পাশেই রয়ে যাব
হতে পারে মুক্তির মত রঙ থাকবে সেই ঠিকানায়



পিনাকী রায় (কনিষ্ক)-র কবিতাগুচ্ছ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   পিনাকী রায় (কনিষ্ক)-র কবিতাগুচ্ছ


পুতুল পুতুল জীবন খেলা

দুর্গাকে গলিয়ে বানিয়েছে কালী
কালীকে গলিয়ে জীবিকা
রেলিং পেরোলে আমার জমি
কাঁটাতার পেরোলে দেশটা।

বই-খাতা জ্বালিয়ে মিড ডে মিল
পায়ে পায়ে জমা অভিজ্ঞতা
রং তুলিতে জীবন আঁকি
উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
এঘর ওঘর বিবেক শূন্য
ফুটপাত জুড়ে স্রষ্টা।

পুতুল পুতুল জীবন খেলা
জীবন জনম চেষ্টা

অনন্তকাল বাঁচার আশা
দেখি কি হয় শেষটা।


চালচিত্র

জীবনের সাদা ক্যানভাসে
ভালোবাসা প্রাণ এঁকে দেয়,
প্রেম আঁকে নীল জোছনা।
গহীন গাছের ছায়া
আবেগ আঁকে প্রেমে ডুবে থাকা
সাময়িক অবয়ব।
হাবুডুবু সাদাকালো যৌবন
বেঁচে আছি ভালোবেসে,
জীবন আঁকে ভালোবাসার আশায়।
সূর্য পরবাসে গেলে
চারিদিকে জোছনা থৈথৈ।

গভীর নিম্নচাপ

শহুরে অভিজাত্যে "তিনটে কিনলে একটা ফ্রী"।
অন্যদিকে প্রকৃতির রোষে
দুর্দশা, লাঞ্ছনা আর ত্রাণের খিচুড়ি।

স্বপ্নের ঘোর কেটে চোখের পিচুটি সরিয়ে অন্তকঙ্কাল নাচে।

আমার কি এখানেই থাকার কথা ছিল?
কিন্তু ওরা যে অপেক্ষারত
হাতে কাশফুল শিউলির সাজি।

কাদামাখা রাস্তায় আলতা পায়ের ছাপ
রক্তের মতো থকথকে জমাট,
সাদা খোল লাল পেড়ে শাড়িটাও কাদায় লুটোয়।

 নদীর চরে মুখ থুবড়ে বিবস্ত্র শরৎকাল।
বিষ্ণুর নাভিমূল থেকে
ভেসে আসছে গোঙানির আওয়াজ।

আগামী দুদিন গভীর নিম্নচাপ।

রূপকথা

তুমি যাকে ভাতের সংস্থান করে দিয়েছিলে
সে আজ তোমার মুর্তির নিচে
প্রস্রাব করে গেল।

তুমি এখন চকচকে মিনার, হত প্রাণ নাগালের বাইরে।

জাগো আধা শহর
জাগো এক ডানাওয়ালা পরীরা
জাগো মানুষের চিন্তার স্রোত
নাভি থেকে উঠে আসুক কুচকাওয়াজ।

আকাঙ্ক্ষা ও ভয়ে স্নায়ু আর রক্তের বাক্যালাপ বন্ধ।

সিংহ রাশি কপর্দকশূন্য ভাষাহীন মানুষটা
আজও শুয়ে আছে
রূপকথা জন্ম নেবে বলে।


পবিত্র নগ্নতা

শিরদাঁড়া বরাবর স্রোতস্বিনী
গিরিখাত হয়ে উপচে পড়ে যৌবন প্রান্তে।
আবির রঙা স্তনে সূর্যমুখীর উদ্ভাস,
স্বচ্ছ মসলিনে আবৃত বিবেক থেকে
উঁকি দেয় চিহ্নিত মনুষ্যত্ব।

মুক্তির পথ ধরে যোনিদ্বর খুলে
 নেমে আসে প্রাণের অনর্গল ধারা।
না, ওই শরীর স্পর্শের নয় অনুভবের
পার্থিব  মায়া কাটিয়ে আত্মার অধীনে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রতিটি রোমকূপে।
কামাগ্নির কবলে কূপ খনন করে
সভ্যতার আলিঙ্গনে সযত্নে লালিত হয়
মরমী সত্য।


Tuesday, February 1, 2022

মোহনা মজুমদারের কবিতাগুচ্ছ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   মোহনা মজুমদারের কবিতাগুচ্ছ



আবছায়া

ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসে যতি চিহ্ন !
আলপথ বরাবর ভেসে যায় সমান্তরাল আবেশ ।

ফেরিঘাটে আলটপকা মেঘ 
          ঢাক্কা মারে , কুঁকড়ে আসে -
               আবার ফিরে যায় শূন্য গর্ভে ।

চৌকাঠে গচ্ছিত রেখেছি হিরন্ময় মূহুর্ত ,
পাটিসাপটার মতো দলা-পাকানো ।
বাঁধ ফেটে রক্ত ঝড়ছে !
        বেগুনী কিংবা নীলচে সবুজ ।

তুমিও কি কখনো ফিরবে বলে 
খাদের কিনারায় এসেছিলে ?
মায়াবী ছায়াতপে জড়িয়ে নিয়েছিলে 
নিরাশক্ত শীতলতা ।

ছায়ার গা বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে  উপাস্য হোমগন্ধ !
অসম্পৃক্ত রক্তাক্ত ।


কলঙ্করেখা


এইটুকু বরাদ্দ থাক !
সেই কোন জন্মে এক টুকরো আকাশ
     পাহাড়ের বুকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম ।

পাহাড়তলি জুড়ে বর্নিল প্রহেলিকা -
বড্ড অভিমানী ! নাকি সংযমী !
বুজতে পারিনা ঠিক ।
তাই ক্যালকুলাসে আয়ুর হিসেব কষি ।

কিছুটা রশ্মি ঢোক গেলার মতো স্যাচুরেটেড হয় ,
প্রতিফলন আর প্রতিসরনের মাঝামাঝি 
এইটুকুই ফারাক দৃশ্যমানতায় ।
ভিজিয়ে দেয় গোটা একটা পরিসর ! তারপর ? 

কৌমার্য টুকু নিংড়ে আবাহন করি 
                           একটুকরো কলঙ্করেখা ।


প্রহেলিকা

আলোর ভেতর একাত্ম হবো ভেবে 
একমুঠো জোনাকী পুড়েছি শোকভষ্মে ।

ইলিউশন ! ইলিউশন ! 
তারপর এ্যাক্রিলিকে আশ্রয়হীন সমাবেশ ।
পেলব স্বপ্নের মতো ।

শিকড়ের কাছাকাছি থাকার প্রবনতা 
ক্রমশ গতি পরিবর্তন করে চলেছে ।

অন্ধকার গুলে স্যাচুরেটেড ছায়ার ভীড় !
তুমি কি ছদ্মবেশী গুটিপোকা ? নাকি দাহ্য ?
এসো , গুড়ো গুড়ো রৌদ্র জড়ো করে 
ক্যালোরিমিটারে উষ্ণতা মাপি ।


প্রতিবিম্বের ঠোঁট

অতঃপর 
হুসস করে উড়ে যায় রামধনু রঙ ।

অ‌্যাবস্ট্রাক্ট আর্টে অনুরাগ আঁকবো ভেবে
একবার আয়নার সামনে এসে দাঁড়াই ।
আকাশে উড়ছে প্রতিবিম্বের ঠোঁট !

তুমি কি জানো ভালোবাসি বলতে
কতোটা গোলাপি প্রলেপ প্রয়োজন ?

 খোলস খুলে দি -
ভেতরে ঘুমোচ্ছে অন্ধ ক্লিওপেট্রা  ।
তার বিছানার পাশে স্তব্ধ আয়ু 
                               গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ।

রঙেদের কান্না পায় ।

কবিতার গা জ্বরে পুড়ে যায় ।
সঙ্গে পোড়ে রঙিন খড়কুটো ।

শূন্য ঝিনুকে তখন মুক্তো সোহাগের গন্ধ লেগে..


আধপোড়া চোখ

কুয়াশার ওপর ড্যাম্প পড়ে -
স্যাতস্যাতে বৃষ্টিস্নাত চোখে 
স্ক্রল করে করে ঢেকে রাখা ইরোশন এবং 
শূন্যতার মেটামরফসিস , অথচ কী শান্ত ভঙ্গিমায় 
ঢেলে দিয়েছো সম্মোহন ।
একেই কি বিকেন্দ্রীকরণ বলে ?

ভাতের থালায় ক্ষুধার্ত জিভের প্রতিবিম্ব !
তথাগত নাকি ভ্রম ?
গুড় চেটে খাই ।
মধ্যবিত্ত সন্ধ্যায় সিরিয়ালে মুখ লুকানো রাজনীতি 
থম মেরে আছে ।
আর তুমি গলা ফাটিয়ে শূন্য মঞ্চে 
ফ্যাসিবাদ বিরোধী কবিতা পাঠ করো ।