Thursday, April 15, 2021

১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~পৃথা চট্টোপাধ্যায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||    

পৃথা চট্টোপাধ্যায়

শব্দের ব্যালকনিতে


সময়ের ভিতরে চুপচাপ পড়ে আছে
মনোটোনাস অজাগর দিন

ফর গডস শেক আর প্রশ্ন না
মেধার কাছে যাও
হৃদয় নিয়ে তো ভাবো নি
ফ্লাইওভার থাকলেও রাস্তা পারাপারের জন্য সময় নষ্ট করো নি কখনো

এত নিবিড় গন্ধের পারফিউম আজ এক্সপেক্ট করিনি তোমার কাছে
তাহলে এলার্ট থাকতাম আলবাৎ
টারকোয়েস ব্লু টি-সার্টে বেশ লাগছিল তোমাকে
তন্বী তৃণার ওপিনিয়ন চেঞ্জ করার দরকার ছিল না
আনওয়ান্টেড কোনো টেস্ট করা অর্থহীন ও জানে
বিলিভ করতে শেখো প্লিজ্
ভার্জিন শব্দটির আর নিম্ন মানের কাটাছেঁড়া
নাই বা করলে
নিজের মনকে পিউরিফাই করো

চলো না একদিন দীঘার শালবনে অথবা গনগনির পলাশ উৎসবে মুক্তি খুঁজে আসি





১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~পার্থ সারথি চক্রবর্তী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||  

পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

ঘুম বিষয়ক 


জেগে থাকা আর ঘুমের মাঝে দেখি
এক চিলতে ফারাক কিংবা তাও নয়
এ নিয়ে তর্কের মাঝে উঠে আসে-
না-বোঝা সম্মিলিত জ্ঞানহীন চিৎকার 
  আর ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, ট্যালকম পাউডার 
কিছু কথা শোনা যায়, বোঝা যায় না 
বুঝতে চাইলে, শোনাই যায় না 
আসলে এক অর্থহীন ইজমের চাষ করছি 
   মন ও বিবেক জুড়ে, হাতে শুধু-
   খালি চায়ের কাপ; মন কঙ্কালসার



১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~তুলি রহমান

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা || 

তুলি রহমান

অলৌকিক সুঘ্রাণ

কে তুমি?
মনোরম চারণভূমি পেরিয়ে,হরিৎক্ষেত্র ছাড়িয়ে
এসেছো আমার জলসীমায়?
কে তুমি?
অগণন সূর্যালোকে দগ্ধ বৃক্ষের ছায়ায়
নিজেকে সুসজ্জিত করো অলৌকিক সুঘ্রাণে
তোমার অভয়ার্ত চোখ
চোখে সর্বনাশের রূপকল্প গ্রন্থিত
কে তুমি?
চাঁদের সীমায় হেঁটে যাও জ্যোৎস্নাপথে
রেখে যাও এক দীর্ঘছায়া
আমার জলসীমায়
অদৃশ্য ছায়ার মন্ত্রমুগ্ধ পথে ছড়িয়ে পড়ে 
জলশব্দ অনাবিষ্কৃত সত্যাগ্রহের কক্ষে
নিজেকে হারাই তোমার ছায়াবিম্বে।





১-লা বৈশাখ সংখ্যা || গল্পে~সোমা ব্যানার্জী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||     

সোমা ব্যানার্জী

পাপী
" ও রঘু মিঞা বাড়ি আছো না কি"
" যাই কত্তা--"
রঘুমিঞা ঘরের চাল ছায়।
সামনে ঝড়বাদলের দিন 
আমনধানের খড়ে চাল ছেয়ে নেয় সব্বাই
রঘু এখন বড় ব্যস্ত,
একদিন কাজ জুটলে দু' কুনকে চাল আসে ঘরে
মাথার উপর চাল না থাক হাঁড়িতে দুটি চাল তো থাকে।
সাতসকালে  দুটি পান্তা খেয়ে কাজে বেরোয়
আজ সেটুকুও জোটেনি-- ঘরে চাল নাই এক ফোঁটাও।
রঘুর ঘরের চালে আধখানা তেপ্পল ঢাকা
রুগ্ন বৌটা দাওয়ায় শুয়ে গোঙ্গায়
খোলা ছাদের নিচে আঘনের হিমে জ্বর বাড়ে।
সেই কবে আম্ফানের ঝড়ে জীর্ণ চালখানা উড়ে গেছিলো
আজও ঢাকা পরেনি তার জীর্ণ সংসারের কঙ্কাল -
রঘুর বৌ ছেঁড়া কাঁথাখানা গায়ে টানে
জ্বরের ঘোরে তারা দেখে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে।
শূন্য হাঁড়ির  মাঝে একমুঠো চাল খুঁজতে খুঁজতে 
রঘু পরম মমতায় বৌয়ের মুখখানার দিকে অপলক চেয়ে থাকে,
তার সে হলদে ডুরে শাড়ির বৌ আজ
যেন ঝরে পরা বর্ণহীন পাতার মত।
ঝড়ের পরে নেতারা এসেছিলো
চিঁড়ে গুড়ের সাথে সারি সারি তেপ্পল-

আনাড়ি রঘু লাইনে দাঁড়িয়ে পিছোতে পিছোতে
 যখন হাজার ইঁটের লাইন পেরিয়ে 
সেই টেবিলের সামনে হাজির হলো তখন তেপ্পল ফুরিয়েছে,
নেতা বাবু বলেন" ফুরিয়ে গেছে রে রঘু
 আবার আসবে তখন নিস"
দুর্বল শরীরে রঘু মাথা নাড়ে " হ' কত্তা"
সেদিন আর আসেনি।
গাঁয়ের বড় বাবুদের উঠোনে ধান শুকোয় সে সরকারি তেপ্পলে
শুধু রঘুর মাথার চাল আজও ফাঁকা।
রঘু শিমের মাচায় জল ঢালে
শিমের সবুজ পাতাগুলি অবুঝের মত শূণ্য ঘরের চাল ঢাকতে চেষ্টা করে 
এক আকাশ সবুজ ভালোবাসা। 
" ও বাবু,  দুকাহন খড় দ্যন না,  
রুগ্ন বৌটা যে এবার বর্ষার জলে ভিজবে"
" উফ্ জ্বালালি রঘু, দেখছিস গোয়ালঘরটা ছাইতে হবে
যেই দেখলি খড়গুলান জমা আছে
 অমনি নোলা বেড়ে গেলো তর"।
মনের ভেতর জেদ চাপে রঘুর
রুগ্ন বৌটা অনেক কষ্টে তুলসীতলায় পিদিম জ্বালে,

আজ অনেকদিন পর উঠোনে ভাতের গন্ধ-
সারাদিনের পরিশ্রমে পাওয়া দুমুঠো চাল।
সে গন্ধ জ্বালা ধরায় রঘুর মনে
আধঢাকা হোক তবু তো তার ঘর
দুদিন পর পেটে গরম ভাত,
বৌটা অঘোরে ঘুমায়।
রাতের অন্ধকারে বাবুর বাড়ি ঢোকে রঘু
উঠোনে তখনো পরে আমনধানের খড়
কয়েক বোঝা খড় মাথায় নিয়ে
 রঘু দৌড়ায় বাড়ির দিকে--
বাবুদের পোষা কুকুরটা আজ হেরে গেছে রঘুর কাছে।

"ও বৌ ওঠ-- ওঠ না
দ্যখ খড় আনসি-- চাল ছাইবো রে
তরে আর বর্ষায় ভিজতে হইবো না
ও বৌ ওঠ না"
রঘুর রুগ্ন বৌটা আজ আর তারা দেখে না,
ছেঁড়া মাদুরে মোড়া শরীরটা আজ অন্তিম যাত্রায়।
রঘুর কানে বাজে বৌয়ের গলা
যেন খয়েরে রাঙানো ঠোঁটে কানেকানে বলে 
" সেই আনলা খড়-- কিন্তু এতো দেরি করল্যা ক্যন?"
ও রঘু-- কাঠ কিনতে হইবো তো
ট্যকা আছে? বৌরে পোড়াবি ক্যমনে?"
ঘরের খোলা চালের বাঁশ ক'খানা খুলে নেয় রঘু, সিম গাছটা চাল না ঢাকার  লজ্জায়  মরেছে
একে একে সাজায় চিতা
দুআঁটি খড়ে আগুন ধরিয়ে বৌয়ের মুখে দেয় রঘু।
পরজন্মে আর যাই হস না ক্যন বৌ
তর মাথায় যেন চাল থাকে রে--
তরে যেন খোলা আকাশে শুইতে না হয়।

রঘু আজ মাঠে ঘাটে খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ায় 
সেদিন  বড়বাবু হেঁকে বলেন--
" ও রঘু-- বাদলের দিন আসছে রে
চালখানা তো ছাইতে হয়। কবে যাবি?"
" আমি আর চাল ছাই না গো কত্তা
রঘু ঘড়ামি মইরা গ্যসে গিয়া"
পাগলের মতো হেঁটে চলে নদীর পাড় ধরে।
সারাজীবন সৎ কাম করলাম আল্লা
দুবোঝা খড় চুরির এমন শাস্তি দিলা তুমি--
 এ কেমন বিচার তোমার
কতশত পাপী ঘুইরা বেড়ায়
তুমি শুধু আমারেই দ্যখলা।




১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~শীর্ষেন্দু পাল

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||   

শীর্ষেন্দু পাল

আনন্দ লহরী

এইসব শীতেদের কাছে আমার কিছুই বলার নেই
চলে যাওয়ার সময় পাতাদের কানে
ফুল ফুটে ওঠার কথা চুপিসাড়ে বলে
জলকষ্ট শুরু হবে এসময়
যন্ত্রণা উর্ধ্বগামী এ কথা কি সকলেই জানে
যত বিদীর্ণ হয় মাটি
অগ্ন‍্যুৎপাত হয় গাছেদের খোঁপায়
দূর থেকে দেখা যায় আনন্দ লহরী...
রাঙা হাসি নেমে আসে মেয়েদের গালে
ফুল ফোটানোর যত আর্তনাদ কথা
আশ্চর্য রেখে গেছে তার নিপুণ খেয়ালে।