Thursday, September 17, 2020

≈ মানিকলাল সিংহ সংখ্যা ≈ রবীন বসু ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
মানিকলাল সিংহ সংখ্যা
রবীন বসু


নিঃস্ব দাঁড়িয়ে মানবসভ্যতা


অবরুদ্ধ দিন-ঘিরে গতির ঘোড়া থামে

ক্লান্ত বিমর্ষ বিকেল খোলাখুলি কথা বলে

সব পরিচ্ছন্নতা দূষণের দোষ ঘাড়ে নেবে বলে

মধ্যরাতের দরোজা খোলে

মেঘেঢাকা তারার জগৎ অনির্বাণ ইশারায়

কাঁপে, দোল খায় নিরবচ্ছিন্ন আকাশগঙ্গা

রহস্য জড়ানো সেই মধ্যরাত উঁকি মারে

শ্বাসকষ্ট-জর্জরিত পৃথিবীর প্রাণ

আরোগ্য সন্ধানে যাবে ভিনগ্রহের সবুজে

নির্মল বাতাস বুকে ভরার আকুতি জাগিয়ে

থেমে-থাকা ঘোড়ার লাগামে দেয় টান 


গতির মাঝখানে নিঃস্ব দাঁড়িয়ে মানবসভ্যতা… 



≈ মানিকলাল সিংহ সংখ্যা ≈ সুজিত রেজ ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
মানিকলাল সিংহ সংখ্যা
সুজিত রেজ


বালসেমি

ভোরের বালক আমি এই পঞ্চাশেও
নগন শরীর জুড়ে তিস্তার ঝলা
দেবতার গ্রাস রুখে হাঙরের ঢেউ
কুলকুচি করে ফেলি জিরাফের গলা

নিজেই ছেয়েছি ঘর পাখির পালকে
উড়ো মেঘ সুরে গায় অনন্তসঙ্গীত
লয় তালে শিহরিত আদিম পুলকে
ব্রহ্মনাদে মিশে যাই আমি আচম্বিত্

তারপর জ্বর আসে মোহশূন্য গৃহ
ইড়া পিঙ্গলার টানে প্রাকৃত স্খলন
ওঙ্কার সাধন মন্ত্রে গভীর নিস্পৃহ
শুক্রবিলে ঘূর্ণিপাক অমৃত মন্থন


≈ মানিকলাল সিংহ সংখ্যা ≈ কাজল সেন ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
মানিকলাল সিংহ সংখ্যা
কাজল সেন

ঝুরোগল্প~কাঠি

চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় বছর দশেক আগে। বয়স গড়িয়ে গড়িয়ে সত্তরেরকোঠায় পৌঁছেই গেল। আর বছর দু’য়েক গড়ালেই বাহাত্তুরে বুড়ো ছেঁকে ধরবে তাঁকে। ভেবেছিলেন, অবসর জীবনে কোনো ব্যস্ততা রাখবেন না। লোক লৌকিকতা সযত্নে পরিহার করে চলবেন। কোনো কিছুতে মাতামাতি তো মোটেই নয়। শুয়ে বসে গড়িমসি করে কাটাবেন জীবনের বাকি সময়। বিগত জীবনে অনেক কাঠি দিয়েছেন অনেকের পেছনে। আর নয়! প্রথম কাঠিটা তিনি দিয়েছিলেন তাঁর স্কুলজীবনের সহপাঠিনী ও প্রথম গার্লফ্রেন্ডকে। তখন দুজনেরই নিতান্তই কাঁচা বয়স। প্রতিদিন বদলে বদলে যাওয়া শরীর সম্পর্কে অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক কৌতূহল। সেই কৌতূহলের বশেই একদিন স্কুল ছুটির পর স্কুলেরই এক নির্জন কামরায় তিনি গার্লফ্রেন্ডকে বোঝাতে চেয়েছিলেন কাঠির কার্যকারিতা। গার্লফ্রেন্ড কিছু বোঝার আগেই ব্যথায় অতিষ্ট হয়ে চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করেছিল। আর সেই চিৎকার শুনে স্কুলের দ্বারোয়ান দৌড়ে এসে ব্যাপারটা অনুমান করে তাঁকে বেধড়ক ঠেঙিয়েছিল। এরপর আরও বেশ কয়েকটি কাঠি দেবার সাফল্যে তিনি আনন্দিত হয়েছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় বিষণ্নও হয়েছেন। তবে জীবনে তিনি মোক্ষম কাঠি দিয়েছেন তাঁর শ্বশুরকে। বিয়ে উপলক্ষ্যে শ্বশুরের কাছে কোনো পণ দাবি করেননি ঠিকই। কিন্তু শ্বশুরের মেয়েকে সুখে রাখার জন্য একটা ফ্ল্যাট, ফ্ল্যাট গোছানোর যাবতীয় আসবাব, অলঙ্কার ও একটা গাড়ি দাবি করেছিলেন। জামাইয়ের এহেন কাঠিতে, বলা বাহুল্য, শ্বশুর পাছায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিলেন। অবশ্য তখনও বাকি ছিল শ্বশুরের মেয়েকে কাঠি দেবার। তাও আবার তাঁর একটি মেয়েকে নয়, দু’দুটি মেয়েকে। বড়মেয়ে তো জামাইয়ের বউ, তাকে কাঠি দেবার আইনত অধিকারী তিনি। কিন্তু শ্বশুরের ছোটমেয়েকেও তিনি রেহাই দেননি। ব্যাপারটা জেনে বৌ হতবাক, শ্বশুর রুদ্ধবাক, আর একমাত্র শ্যালিকা ইতিপূর্বে অনস্বাদিত সুখস্পর্শে স্মিতবাক।
কর্মজীবনে একই দিনে অফিসে যোগদান করেছিলেন তিনি, ব্যানার্জীবাবু, কৌশলপ্রসাদ ও আবদুল আনসারী। মাত্র বছর তিনেকের মধ্যে বাকি তিনজন সহকর্মীকে ডিঙিয়ে কী করে যে তিনি প্রোমোশন পেয়েছিলেন, তা এক রহস্য। নিন্দুকরা বলে, তিনি নাকি তাঁদের পেছনে কাঠি দিয়েছিলেন, মানে তাঁদের নামে মিথ্যে রিপোর্ট করে ফাঁসিয়েছিলেন! তবে তাঁর মাস্টারস্ট্রোকটা ছিল রীতিমতো মারকাট্টা। একটা বিশাল অঙ্কের টাকা তছরুপের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। রীতিমতো তদন্তকমিশন বসেছিল। কিন্তু তদন্তের শেষে সবাই জানতে পারল, তিনি পাঁকাল মাছের মতো পিছলে বেরিয়ে গেছেন এবং তাঁরই দুই ওপরওয়ালা ফেঁসে গেছেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি স্বীকারও করেছিলেন, এটাই ছিল তাঁর আসল মাস্টারস্ট্রোক।
বিগত দশ বছর ধরে তিনি অবশ্য নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন নিজের ভেতরে। বহির্জগতের কোনো কিছুতেই আর আকর্ষণ বোধ করেন না। কোনো কিছু আর প্রাপ্তিরও আশা করেন না। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোথাও আসা যাওয়া করেন না। কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা করেন না। স্বামী-স্ত্রী নিজেদের ঘরে নিজেদের নিয়েই থাকতে ভালোবাসেন।সেদিন স্বামী-স্ত্রী সন্ধ্যেবেলায় বসেছিলেন বাড়ির লনে। গেটের সামনে একটা ট্যাক্সি এসে থামল। ট্যাক্সি থেকে নামল ছোটজামাই। জানালো, তাঁর ছোটমেয়ে পাড়ার একটি কমবয়সী ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে।


≈ মানিকলাল সিংহ সংখ্যা ≈ হারাধন চৌধুরী ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
মানিকলাল সিংহ সংখ্যা 
হারাধন চৌধুরী


 অসংখ্য অতৃপ্ত আত্মা ভিড় করে আছে 

ঘুম ভেঙে গেলে তোমার মন খারাপ
হয়ে যায় খুব
ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় তোমাকে
নিজেকে সাজাতে
সেই নরকে যেতেই হবে—মরো, বাঁচো
বেশ সেজেগুজে
অসংখ্য অতৃপ্ত আত্মা ভিড় করে আছে
ফোঁটা ফোঁটা ঘামে
তাদের তেষ্টা মেটাবে তুমি, হাসি মুখে
কাঁকড়ার খোলাটা
কেড়ে নেবে এমনটা পিশাচ নয় তারা
বয়ে নিয়ে যাও
তুমি সেটা নদীর নীচে নিপুণ হাতে
শাঁস জমানোর
ম্যাজিক তোমার জানা, জানে কালো ছায়া
ছায়াদের আয়ু
শূন্য খোলার চেয়ে দীর্ঘ কি? তা জানো না
ঘুমের দেশের
ওয়েব সার্চ ইঞ্জিনেও পাও না উত্তর


≈ মানিকলাল সিংহ সংখ্যা ≈ হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
মানিকলাল সিংহ সংখ্যা
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়


চশমাটা খুলে গেলে 

স্বেচ্ছায় চশমা সরিয়ে রাখা সহজ হয়ে ওঠে
যদি স্বপ্নের গভীরে অস্পষ্ট কন্ঠস্বর
ভেসে না ওঠে
উড়ে যাওয়া পাখি কার্যকারণহীন না ডাকে
আমাদের দীর্ঘ গন্তব্যের ভেঙে পড়া গাছ
পদ্মপুকুর, পিপড়েদের গমন পথে
বাধা হয়ে না দাঁড়ায়
এমনকি বহু দূর থেকে
স্বগোতক্তির মতো ছায়াপথে দৃশ্যমান নক্ষত্রের
ধোয়াময় আলো মনখারাপের কথা না বলে
স্বেচ্ছায় চশমা সরিয়ে রাখা সহজ হয়ে ওঠে
যদি সবকিছু ভুলে যাওয়া যায়
প্রাত্যহিক জীবনের সামান্য বেচে থাকার সময়েও সীমাহীন অপমানে
জর্জরিত করা না হয়
সহজ হয়ে ওঠে
চশমায় ভেসে ওঠা অশ্রু...