Saturday, May 30, 2020

মন্দিরা ঘোষ

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
মন্দিরা  ঘোষ

উপক্রমণিকা


দীর্ঘ মনখারাপের উপমা থেকে 
একটি উদ্দেশ্যহীন বিকেল বুকের 
 চৌচির ধরে হেঁটে  বেড়ায়

একটাও তাবিজফুল তুলতে পারি নি
যা দিয়ে বদলে ফেলা যায় আগামীর  সূচিপত্র 
  জন্মকোষ্ঠীর আঁকাবাঁকা রেখায়
ভুল পদক্ষেপের উচ্চারণ
ফেরতের ওল্টানো পাতায় নস্টালজিক
 বিজ্ঞাপন 

ক্যাফেটরিয়ার জেনেরিক নাম 
ভালোবাসা রেখেছিল যে
তার হাত ছুঁয়ে দেখার লোভ থেকে গেল আজীবন 

একটা নোঙরহীন জাহাজের হাতছানিতে
আজও নীল থেকে লাল হয় ভাবান্তর
 উপক্রমণিকার মেঘ তৈরিতে
ব্যস্ত হয়ে পড়ে রাতের ভূগোল



রুদ্র কিংশুক

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।

পত্রিশিয়া কোলাইতি(Patricia Kolaiti, 1976) গ্রিসের কবি। ১৯৭৬  খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম আথেন্সে এবং বড় হওয়া আগিনা দ্বীপে। কবিতার পাশাপাশি শিল্পকলার নিয়েও পত্রিসিয়ার নিবিড় চর্চা। তাঁর সাহিত্য চর্চায় প্রভাব পড়েছে তার বিচিত্র বিষয়ে লেখাপড়ার জ্ঞান, অনুভব ও অভিজ্ঞতার । এক জায়গায় পত্রিশিয়া বলছেন :
I am trying to evade language. I wish to denude the poem. Until language remains as something indifferent or minimal.
কবিতার শরীর থেকে শব্দ-অলংকারের সমস্ত বাহুল্য বর্জন করে প্রতিটি শব্দকে কবিতাশরীরে অপরিহার্য করে তোলার প্রয়াস পাত্রিসিয়ার কবিতায় পরিলক্ষিত। কবিতা ও পারফর্মিং আর্টকে মেশাতে চেষ্টা করেছেন। কবিতাকে মনোগ্রাহী করে তোলার জন্য  এই পারফর্মিং আর্টের শরণাপন্ন হওয়া । এই মিশ্রণের অভিব্যক্তিকে পত্রিশিয়া কর্পোরিয়েলাইজেশন বলে অভিহিত করেছেন।

                                         রুদ্র কিংশুক


পাত্রিসিয়া কোলাইতি-র কবিতা
মায়ের ভালোবাসা

মা মেয়ের হাঁটু ভেঙে ভেঙে দেয়
প্রথমে একটা 
পরে আরও একটা 
তখন, মা অনেকগুলো পরীক্ষা চালায় 
মেয়েকে বাসায় পদ্মাসনে
"উঠে বস", সে তাকে বলে 
মেয়ে বলে ---আমি পারছিনে 
মা তার বগলে হাত দিয়ে তাকে তুলে ধরে 
তাকে দাঁড় করায় এবং হঠাৎ হ্যাঁচকা টান
তার হাতে 
সে পরীক্ষাটা চালায় দু-তিন বার 
প্রতিবার মেয়েটি পড়ে যায় ন্যাকড়ার পুতুলের মতো।
তারপর মা মেয়েকে কোলে নেয়
"আমর ছোট্ট সোনা" সে বলে
"আমার মিষ্টি মেয়ে"
তাই তখন
---কী করতে হবে?
"আমি হব
তোমার ক্রাশ এখন থেকে"।

 রূপকথা

তোমার কি কখনো ছেড়ে যাওয়া উচিত, শেয়াল বলে,
আমি মিস করবো তোমার হাসি 
আর  মধ্যশীতে শারীরিক উত্তাপ।

 আর আমি সেই থেকে এর সঙ্গে আছি

যেটা ঘটেনি 
যখন সেটা ঘটা উচিত ছিল 
আর এটা এখন যখন ঘটতে চলেছে 
এটা আর ঘটতে পারে না।

ছোট্ট সৈনিক: জীবনী- সূত্র

পাথর অথবা প্রস্তরিত গাছ 
যখন ছোটো ছিল সে আর তার বোন গড়ে তুলেছিল
একটা হাসপাতাল ছোট প্রাণীদের জন্য ।

মানুষের কাজ

তারা পাথরের মধ্যে থাকে 
আর পাথর হয়ে যায় 

জলে পরিণত হয় 
যাতে বৃষ্টি না পারে ঠোকরাতে 

কারণ সেটা ছাড়া 
তাদের পাল্টানোর আর কোনো 
ছালবাকল নেই 
নিজেদের ভেতর 

 গোলাপি ভয়

সর্বদায় আমি
মজার বিষন্ন গাছ

সে আমার আমার মিস্ট্রেস নয় 

তোমার জন্যই
আমি জ্বেলে রেখে দিলাম
শীতের নক্ষত্র 

 বিদায়, রক্ষিতা

মা 
বরফ-ঠান্ডা জল 
বাতাস 
জোয়ারের থেকে শক্তিশালী

কার্তিক ঢক্

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                                  কার্তিক ঢক্ 



নবান্নের নগ্নভাত 

হলুদ গোলাপটির ভীষণ গোলাপি ঘ্যাম -
আয়নাভাঙা অহংকার...
সুতোর মসৃণতা বোঝো না! 

কতোটা আর্সেনিক আর
কতো পার্সেন্ট আয়রন থাকলে
জলকে পাণীয় বলা যায়! 

মাইক্রো ওভেনে প্রিয় ব্যাঞ্জন চড়িয়ে-
কতো ডিগ্রি আঁচ হলে পুড়ে হয় ছাই! 
হাপুস নয়নে পড়ে থাকে নবান্নের নগ্নভাত...

হৃদয়ের  নাব্যতা কমে গেলে
শুকিয়ে যায় টবের নীল অপরাজিতা! 
মৌমাছি শরীরে  শুধু কি হূলের হুল্লোড়?
কিঞ্চিৎ মধুওতো রাখে ঠোঁটে করে...

বাপন চক্রবর্তী

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                                  বাপন চক্রবর্তী 




চিল্কা


শরীরেই ছিল সেই দ্বীপ... 
বালি।  বালি পার হয়ে ছোট ছোট ঢেউ। 
ছায়ার অমলেটে নুন... আর তপ্ত হাওয়া।

অবশেষে স্ক্রিনসেভারের মত নিভে এল অপরাহ্ণবেলা 

সারাদিন হাওয়ায় ঘুরেছে যার অতীতের কথা 
তার কোনও নৌকা ছিল না
সুখের বালুকা সব উড়ে গেছে মিথ্যে হাওয়ায়...

কাজল সেন

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                                কাজল সেন
চোর

 চোরটাকে আমি চিনি  অনেকদিন থেকেই চিনি। নাম মনে হয় শ্যাম। মানে আমি ঐ নামেই চিনি। শ্যামের অন্য আরও অনেক নাম থাকতেই পারে। চুরি করতে গেলে মাঝে মাঝে ধরা পড়তেই হয়। ধরা পড়লেই বাধ্যতামূলকভাবে যেমন পিটুনি খেতে হয়, তেমনি প্রশ্নের উত্তরে একটা নামও বলতে হয়। বারবার ধরা পড়লে একই নাম বলতে কেমন যেন সম্মানে বাধে। তাই নাম পাল্টাতেই হয়। কখনও শ্যাম, কখনও রাম, কখনও বলরাম। তা শ্যাম নামে আমি যে চোরটাকে চিনি, তাকে আমি শ্যাম নামেই চিনি। তার আরও কী কী নাম আছে তা আমার আদৌ জানা নেই।

তো সেদিন কী হলো, শ্যাম আমার বাড়িতেই চুরি করতে এলো। তখন মধ্যরাত্রি। শীতকাল। কৃষ্ণপক্ষ। চুরির সব থেকে উপযুক্ত সময়। কিন্তু শুধু উপযুক্ত সময়ে এলেই হয় না, চোরকে আগে থেকে জেনে নিতে হয়, বাড়িতে কে কে আছে! তারা যদি ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে তাহলে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে! তাছাড়া তাদের মধ্যে কেউ স্পোর্টসম্যান বা উওম্যান আছে কিনা, মানে পালানোর সময় ছুটে তাকে ধরতে পারবে কিনা! এসব বিচার বিবেচনা করেই হয়তো শ্যাম সেদিন রাতে আমার বাড়িটাই বেছে নিয়েছিল।

বাড়িতে আমি একাই ছিলাম। বৌ তার দাদার বাড়ি গেছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর একমাত্র ছেলে পুনেতে পড়াশোনা করছে। সুতরাং নিশ্চিন্ত হয়েই শ্যাম পাঁচিল টপকে আমার বাড়িতে ঢুকেছিল। একটু দম নিয়ে নিপুণ কায়দায় ভাঁড়ার ঘরের তালা খুলে মশলাপাতির কৌটোগুলো নাড়াচাড়ার খুটখাট শব্দ শুনে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি বুঝতে পেরে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে ভেতরের বারান্দায় পাতা ডাইনিং স্পেসে এসে বসলাম। বারান্দার লাগোয়া ভাঁড়ারঘর। শ্যাম টের পেয়ে শশব্যস্তভাবে বারান্দায় আমাকে লুঙ্গি পরে বসে থাকতে দেখে রীতিমতো হকচকিয়ে গেল।
-স্যার আপনি! জেগে আছেন এই মাঝরাতে?
-হ্যাঁ শ্যাম, আজকাল রাতে ভালো ঘুম হয় না। জেগে জেগেই কেটে যায়।
-সে কী! রাতে আপনি জেগেই থাকেন? তাহলে আমি কখন চুরি করতে আসব?
-না না, তুমি কিছু ভুল করনি। এটাই তো চুরির সঠিক সময়!
-ধ্যাত! কী যে বলেন স্যার! চুরির আবার সঠিক বেঠিক সময় হয় নাকি! সুযোগ পেলেই চুরি করা যায়। আমি তো সকাল দুপুর কিছুই মানি না। তবে রাতটা হচ্ছে স্পেশাল ব্যাপার।
-তা তুমি আমার বাড়িতে এসেছ মশলা চুরি করতে? দেখ, গিন্নি আমার কী কী মশলা গুছিয়ে রেখেছে। যতটা দরকার নিয়ে যাও। শেষ হয়ে গেলে, আমার গিন্নি ফিরে আসার আগে আরও একরাতে না হয় কষ্ট করে এসো।  
-আসলে স্যার, অন্য কোনো মশলা নয়, পোস্ত চুরি করতে এসেছিলাম। ছোটমেয়েটা পোস্ত খাবার জন্য কান্নাকাটি শুরু করেছে, অথচ বাজারে যা দাম!

বিদায় নেবার আগে শ্যাম কাছে এলো। বললাম, ক্লাস এইটে উঠে পড়াশোনা ছেড়ে দিলি। পকেটমারার ট্রেনিং নিলি। এখন দেখছি তোর ডিমোশন হয়েছে। ছিঁচকে চোরের কাজ করছিস!
-সে কী স্যার, আপনি চেনেন আমাকে?