Saturday, May 30, 2020

অনিন্দ্য রায়--হাইকু অনুবাদ

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।

জন মার্টন-র হাইকুর অনুবাদ : অনিন্দ্য রায়

ইংরেজি ভাষায় হাইকু ও হ্রস্বকবিতায় অন্যতম নাম জন মার্টন অধ্যাপনা করেন পূর্ব ইলিনোয়িস বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির অনুমতিক্রমে বাংলায় অনূদিত তাঁর কয়েকটি হাইকু এখানে প্রকাশিত হল
                                 


হাইকু     জন মার্টন

কাটা-গুঁড়ির গর্ত 
অতল
পুকুর এখন


ভিসুভিয়াসে
ওই ছদ্মবেশি গিরগিটি
তোমার ভেতরে মুদ্রিত


২০০০ বছর
পাথরের একটা বাঁকানো বেঞ্চি মনে পড়ে
বা পড়ে না বসে পড়ো


খাড়াইয়ের ধারে পাথরবাডির
ওই অন্ধকার জানলাগুলি
সবকিছু কেমন মানিয়ে যায় 


এখন
কত যে বিদায়
বৃষ্টি থামল


কুয়াশায় উজ্জ্বল ছাদগুলি
জল ফুটতে দেওয়া হয়েছে
শাক্যমুনির একটি কবিতা


পম্পেইয়ের ওই দম্পতি
দেখে তোমার ভেতর দিয়ে
আর লিখে রাখে  


সেই স্বপ্নের ভেতর শুনেছ
ঢেউ ভাঙছে নীচে পেতলের একটা বাঁশি 
পেয়ে গেছ তুমি  

সুশীল হাটুই

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
সুশীল হাটুই


রোদের জীবাশ্ম

বৃশ্চিকরাশির কলমটির সঙ্গে
কন্যারাশির ফুলদানিটি গন্ধের গতিবেগ
নিয়ে কথা বলছে।

অথচ দ্যাখো ডাস্ট-অ্যালার্জির ভয়ে যে-সব
জানালা সারাদিনে ১ বার-ও
চোখ খোলেনি, তারা কেমন আয়নার
ভিতর গ্যালাক্সি খুঁজছে।

হারমোনিয়ামের হরস্কোপ থেকে
স্পষ্ট হয়ে উঠছে, সারোগেসি শব্দটি
মৎস্যগন্ধা দুপুরের বুকপকেটে কখনোই
পৌঁছতে পারবে না।

কিন্তু তাই বলে কেন অমিত্রাক্ষর ছন্দের
অক্ষৌহিণী সেনা নদীর গৃহযুদ্ধের পাশে
ভোকাট্টা ওড়াল?

আজ মিডনাইটব্লু-র কথা বাদ-ই দিলাম,
কিন্তু যে ফ্লুরোসেন্ট-ব্লু ল্যাম্পটিকে
জোনাকিরা চাঁদের যমজ বলে জানে---

রোদের জীবাশ্ম দেখার পরই তাদের
ভুল ভাঙছে,

অমাবস্যায় কিশোরী ল্যাম্পটি আলো দিচ্ছে...

সোনালি বেগম

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                                      সোনালি বেগম


নিবিড়প্রেমবন্ধন

নীলাভ সবুজ শ্যাওলা থেকে শুরু জীবনের
জয়গান। নীল আকাশের পাখি সবুজ অরণ্যে
পাখা মেলে মেলে বাঁধভাঙা চাঁদের হাসি।
পৃথিবীর অন্তরে লাভার স্রোত। বৃষ্টির
ধারায় ভিজে যাচ্ছে ঝলমল
সূর্যের আলো। আরো নিবিড় প্রেমবন্ধন।


মহাজাগতিকসুন্দর

সমুদ্র ভেদ করে জেগে উঠছে আইসল্যান্ড।
ভয়ংকর ডাইনোসর যুগ শেষ হয়ে পৃথিবী
আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে।
ধুলোর ঝড় উঠলে বৈশাখ মনে হয়। এরপর
অঝোর বৃষ্টির ধারা জড়িয়ে ধরে তখন।
কসমিক বম্বিং মহাজাগতিক বস্তুর
আঘাত সহনে ক্ষত-বিক্ষত পৃথিবী।
তীব্র গতিতে ছুটে আসছে উল্কা
আকাশের বুকে।

অলোক বিশ্বাস

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                                   অলোক বিশ্বাস 


বাংলাদেশের কবি রিঙকু অনিমিখের কবিতা প্রসঙ্গে 

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কবি রিঙকু অনিমিখ। জন্ম ৫ই এপ্রিল ১৯৮২। 
পাবনাবাসী হলেও বর্তমানে বাস ঢাকায়।
সম্ভবত বাংলাদেশের শূন্য দশকের কবি। ইতিমধ্যে তাঁর পাঁচটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে : বিমূর্ত মিউজিয়াম। নিষিদ্ধ সাইরেন। বসন্ত এসে ফিরে যায়। দল বেঁধেছি একা। রিঙকু অনিমিখের প্রেমের কবিতা। সম্পাদনা করেছেন জীবনানন্দ দাশের অগ্রন্থিত প্রেমের কবিতা ও অন্যান্য। কবিতা লেখা ছাড়াও তিনি একজন চিত্রকর এবং ভাস্কর্য শিল্পী। চারুকলায় তাঁর অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার। ফলতঃ তাঁর কবিতায়ও রঙ তুলির টান। কবিতায় তিনি একটি অন্ধকারের মধ্যে কল্পনা করছেন এমন  মহাবিস্ফোরণ, যে বিস্ফোরণে আলোকিত হবে অন্ধকার। প্রতিটি মানুষ খুঁজে পাবে দেশলাই আর পাহাড়ের গা থেকে হিমোগ্লোবিনের লাভা নেমে আসা। এই কল্পনায় উদ্ভটত্ব নেই। তৃতীয় বিশ্বের মানুষ হিসেবে তৃতীয় বিশ্বের বিশেষভাবে চিহ্নিত ছবি ধরা পড়ে তাঁর কবিতায়।

টি.এস.এলিয়টের কথা, কবি তাঁর নিজের সম্পর্কে লিখতে গিয়ে, তাঁর সময়কেই লেখেন--- 'A great poet, in writing of himself, writes of his age.' কতো কবির কবিতায় 'পাখি' এসেছে বিভিন্ন প্রতীকে, উপমায়। 'পাখি' এসেছে ধ্বনি প্রতিধ্বনি সহকারে। কবি রিঙকু অনিমিখ পাখির অন্যরূপ দেখলেন যা মানুষের পক্ষে যায় না, বিপক্ষে যায়। কৃষকের উদ্বেগের কারণ এই পাখি। কৃষকের সোনার শস্য ধ্বংস করে পাখিরা। কবি অনিমিখ কয়েনের উল্টো পিঠে লেগে থাকা সর্বনাশটি প্রত্যক্ষ করলেন মানবদরদী হৃদয়ানুভূতি নিয়ে। গ্রন্থের বিভাব কবিতায় কবির যে ভিন্ন উপলব্ধি দেখেছি 'পাখি' সম্পর্কে, তাঁর 'আমেরিকা' কবিতায় সেই ভিন্ন উপলব্ধি পাঠক পাবেন। তৃতীয় বিশ্বের মানুষ দখিনা বাতাস বা পুবালি বাতাস ভালোবাসেন। নদীর হাওয়া গায়ে লাগিয়ে যাঁদের মন দুলে ওঠে উল্লাসে, সেই মানুষই দেখতে পাচ্ছেন, তাঁর ভালো লাগার বাতাস কতোটা সন্ত্রাসী।  কবি পশ্চিম আকাশের মেঘে ও বাতাসে অ্যাটম বমের ভয়ের দৃশ্য দেখতে পান। তৃতীয় বিশ্বের মানুষের উদ্বেগ এঁকেছেন কবি রিঙকু অনিমিখ তাঁর কবিতায়।

ধর্মের বিভীষিকা যে কী মারাত্মক ভাইরাস, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ ভালো জানে। বিষয়টাকে খুব সহজ ভাষায় এঁকে দিলেন কবি---'ঘর নেই-- সব দরোজা বন্ধ/ধর্মের এক চোখ-- সে ও আজ অন্ধ/মানবতা ছিন্নভিন্ন/শান্তির সাথে ধর্মের সংযোগ বিচ্ছিন্ন।' মানুষের জীবনে ধর্মীয় কুসংস্কার যে কতো বড়ো অভিশাপ, সেটা কবি শিল্পীরা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করছেন। 'ধর্মই আজ অধর্মের মূল'--- লিখলেন অনিমিখ। তিনি দেখতে পেয়েছেন, 'আকাশজুড়ে ধর্মের বিভীষিকা।' একটু আগে বাতাসের কথা হচ্ছিল। ধর্মের বিভীষিকা মানুষের নিঃশ্বাসের বাতাসে আগুন ধরায় আর নিঃশ্বাসে ঘা সৃষ্টি করে, কবি দেখতে পান। যে বস্তুর মধ্যে প্রচুর ইতিবাচক, সেই বস্তুই কখনো পরিবর্তিত হয়ে নেতিবাচক, কবি দেখতে পান। তাঁর 'তাচ্ছিল্য' কবিতায় এর নমুনা দেখলাম। প্রাণধারণের জল ভূমিকে বন্যায় প্লাবিত করে দিলে, সেই ভূমিতে মানুষের আর কোনো কর্তৃত্ব থাকে না--- 'সব জলের হাতে চলে যায়।' অথচ এই জলকেই মানুষেরা কতো তাচ্ছিল্য করে। জলের সঙ্গে তুলনা করে সস্তা দরের তুলনা টানে। বাতাসকেও উপেক্ষা করে, কারণ বাতাস চোখে দেখা যায় না। কিন্তু কবির চোখ দেখছে কতো জায়গা দখল করে নিচ্ছে বাতাস। আলোচনায় একটু আগেই দেখেছি, কবি বাতাসকে সন্ত্রাসী বলেছেন। তিনি 'আমেরিকা' শব্দ ব্যবহার করে আসলে বাতাসের সাম্রাজ্যবাদী রূপ দেখতে চেয়েছেন। একই বস্তুর মধ্যে কবিরা দেখতে পান, দ্বৈত সত্তা বা আরো কোনো তৃতীয় সত্তা।

রিঙকু অনিমিখ তাঁর ৭ লাইনের কবিতা 'অন্তরালে'-তে লিখছেন, আপাতভাবে যা ঘেন্না ও ভয়কে নিরূপিত করে, সেটাই আবার কবির প্রিয়কে স্বর্গে নিয়ে যেতে  পারে। একটি শুয়োপোকা দেখে কবির বা অন্য কারো উপরিতলের হৃদয় ভয়ে কুঁকড়ে
যাচ্ছে। সেই সময় কবি প্রাণী জীবনের 
বর্ণবৈচিত্র্যের দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখছেন এই শুয়োপোকাই মেটামরফসিস প্রক্রিয়ায় বর্ণিল প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
সেই প্রজাপতি আবার যখন অন্য এক সিগনেচারে পরিণত হচ্ছে, তখন কবি লিখছেন--- 'যার চিত্রল ডানায় ভর করে/তুমি স্বর্গে যেতে পারো।' কিন্তু এই স্বর্গ কোন স্বর্গ ? ধর্ম  নিরূপিত স্বর্গ নয়। এই প্যারাডাইস সুন্দরের প্যারাডাইস, কবি কল্পিত অনন্য অনুভূতির নাম। 

কবি রিঙকু 'মিতভাষী, বলেন কম, বোঝান বেশি'--- কথাটা তাঁর কবিতা সম্পর্কে প্রযোজ্য। তাঁর সহজ করে বলার মধ্যে দূরের আলো আছে। সুদূরপ্রসারী চিন্তায়ন আছে। তাঁর সহজ বাক্যের দিকে তাকিয়ে থাকি অনেকক্ষণ--- 'ক্ষুদিরাম বিপ্লবী ছিলেন না/ছিলেন আলো---', বাক্যটি লিখে ড্যাশ দিলেন আলোটিকে প্রসারিত করতে। তাঁর কবিতার উপভোগ্যতা আছে এই কারণে যে তাঁর বলাগুলো সবই ইঙ্গিতবাহী। সেই ইঙ্গিত সাধারণ পাঠকের অভিজ্ঞতা ব্যবস্থার সঙ্গে বিট্রে করে না। 'আলামত' কবিতার অন্তিম দুটি পংক্তিতে (পারফিউম আর প্রস্রবণের গন্ধে/ঢেকে যাচ্ছে শহরের নিশ্বাস) আর্বানাইজেশনের প্রকৃতি বিরোধী সংকটের চেহারাটি সুন্দর এঁকে দিলেন। ড্রয়িংরুমের সুদৃশ্য ফুলদানিতে মানুষেরা সাজিয়ে রাখছে এমন ফুল, যে ফুলের গন্ধ নেই। শহরের কৃত্রিম আচরণ, কৃত্রিম হৃদয়, কৃত্রিম ভালোবাসা প্রলম্বিত হয়েছে এই পংক্তিদ্বয়ে। দেখতে পাচ্ছি, কবি রিঙকু অনিমিখ ছোটো ছোটো কবিতায় আঁকছেন বড়ো ক্যানভাস। তাঁর 'বসন্ত এসে ফিরে গেছে' গ্রন্থটি স্পষ্টভাবে সেই মানসকেই প্রকাশ করে। ১,২,৩ লাইনের কবিতায়ও কনসেনট্রেটেড হয়েছে কবির দেশচিন্তা, প্রেমচিন্তা। বর্তমান বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের লেখায় কবিতার অন্যতর স্বাধীনতার রূপটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নতুন শতাব্দীতে। সেখানকার তরুণ কবিরা কবিতার নিজস্ব এসথেটিক্স নিয়ে অনেক বেশি ভাবনাচিন্তা করছেন আজকে।

রথীন বন্দোপাধ্যায়

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
রথীন বন্দোপাধ্যায়

দূরত্বগুলো বুঝে নেবার পর

আমার আর ম্যানিকুইনের মাঝের দূরত্ব = ০

ন' তলা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে ঝুঁকে থাকা আমার সাথে নীচে কংক্রিটের  দূরত্ব = 4.6 sec.

আহামরিমরি আমার জীবিত মাধবীলতা আর সাইক্লোনে উপড়ে যাওয়া প্রবল নিম গাছটির মাঝের দূরত্ব = আবহাওয়া দপ্তরের এক‌টি ঘোষণামাত্র

এক বৈশাখে আমার দেখা হওয়ার সাথে জ্যৈষ্ঠতে পরিচয়ের মাঝের দূরত্ব = অনির্ণেয়

খাদের ন্যূনতম কিনারে এক‌টি রঙিন পালকের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা আমি আর খাদের গভীরতম মৃত্যুগর্ভান্ধকারের দূরত্ব = পিসার হেলানো মিনারে গ্যালিলিওর এক্সপেরিমেন্ট 

সদর দরজার বাইরে মিনিটের পর মিনিট কলিং বেল-এ আমার বিশ্বস্ত আঙুলের সুদীর্ঘ শ্রম থেকে দরজার ওপারের দূরত্ব = সন্দেহ

আমার           আমার            আমার                  আমার 

এবং নিরুপায় এই আসক্তি শরীর শরীর আমার এবং যে দামি পার্কার পেনটি দিয়ে লিখছি সেটিও বড় প্রিয় সাদা পৃষ্ঠায় লিখে যাওয়া আমারই আপেক্ষিক জীবন মনকুসুম আর ইলেকট্রিক চুল্লির মাঝের দূরত্ব = একটা স্টেথোস্কোপ

এইসমস্ত যাবতীয় দূরত্ব থেকে যে হোমা পাখিটি উড়ে যাবে প্রকাণ্ড শূণ্যের ভিতরে ভাসিয়ে দেবে তার আগামী প্রজন্ম

সেই বিষয়টি না হয় হাইজেনবার্গের আনসার্টেইনিটি প্রিন্সিপাল-এর সাহায্যে,