Tuesday, February 25, 2020

ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









বাসে     ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য


কোনরকমে বাসে উঠলাম । দৌড়ে উঠলাম; অফিসের তাড়া ।
বাস দেখি দাঁড়িয়ে পড়লো । ঠুং করে আওয়াজ হলো; এক ভদ্রলোক বাসে উঠবেন । হাতল ধরে আগে ভালো করে ' ফু ফু' করে ঠোঁটস্থ সিগারেটটি শেষ করে  তবে উঠলেন । বাস তার পরেই নড়লো একটুখানি  ।..
 ততক্ষণে সিগনাল ডাউন এবং রক্তচক্ষু .. ! বাস স্থানুবৎ ; চালক নীচে চা খেতে চলে গেল । কন্ডাক্টর খৈনী ডলতে শুরু করেছে । এক বয়স্ক ভদ্রলোক উঠেই ' বরিষ্ঠ নাগরিক ' সীটে বসতে গিয়ে দেখলেন, আগে থেকেই একজন বৃদ্ধ সেথায় বিরাজমান ।..
  এক বাদামওয়ালা বাসে উঠে হাঁকতে থাকে-" বাদাম ! বাদাম ! কলকাত্তার ভালো বাদাম ।..খেলেই ছুটবেন ঘোড়ার মতো !!"

বিপাশা ভট্টাচার্য

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










আত্মহত্যা বিষয়ক  বিপাশা ভট্টাচার্য

.
শেষ ঘুমে যাবার অাগে কার মুখ মনে পড়ে? প্রিয়জন, সন্ততি, গেরোস্থালি... নিভু নিভু ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন হতে
হতে ভাবি, কতকালের চেনা ঘরদালান, প্রিয় মুখ, পুকুরের জলে ভেসে থাকা কচুরিপানাগুলি, লাল শালুক আর
পদ্মের ফুটে থাকা, উঠোনজুড়ে কুমিরডাঙা, আমসত্ত্ব, তেঁতুলমাখা, আর যা কিছু বালিঘড়ির ছিদ্র গলে পড়ে
গিয়েছে চুঁইয়ে, আমার অস্তিত্বের অপর প্রান্তে মুঠোভরা রোদ্দুর কপালে মেখে নিই, জ্বরে পোড়া শরীরের তাপে
বিছানাবালিশ তেতে ওঠে ক্রমশ... যেটুকু চেতনা ছিল অবশেষ, সেটুকুও ফুরিয়ে আসতে থাকে বিদায় রাগিণীর সুর
বাজে কানে বন্ধুদের আরোগ্যকামনাকে বাহুল্য মনে হয় অযত্নে, অবহেলায় যে গাছ বেড়ে উঠেছে আপন খেয়ালে,
হঠাৎ সার জলে সে নিজেকে বড় অপ্রস্তুত বোধ করে হেমন্তের শেষ রোদ পশ্চিমমুখী, আমার সত্ত্বাকে সে
বারবার হাতছানি দেয় সঙ্গী হতে... এমন সুখের অস্তাচল... রোদ পড়লে ঘুম জড়িয়ে আসে চোখে একটা ঘোরের
মধ্যে কেবলই মনে হয় এই ঘুম যেন আর না ভাঙে... আত্মহত্যার ১০৮ টি উপায় নামক কোনো বই লিখে ফেলব
ভাবি... শূন্য কলস বেজে যায় পশ্চিমী সূর্য ঠায় বসে অস্তের প্রতীক্ষায়

.
আমার ঘরের কোণে থাবা গেড়ে বসে থাকে মৃত্যু জুলজুল চোখে চেয়ে থাকে আমার রুগ্ন শরীরখানির দিকে তার
সাথে আমার রোজকার খেলাধুলো চোর-পুলিশ জীবনজুড়ে সমস্ত বাজি হেরে এসে আজ মৃত্যুর সঙ্গে মহাকালের
খেলায় নেমেছি পাহাড়ের খাদ থেকে পুঞ্জিভূত অন্ধকার পাকিয়ে পাকিয়ে ওঠে হেমন্তের হাওয়ায় ভেসে এসে ওরা
বসত গড়ে আমার চোখের পাতায় জীবনবিমুখ অন্ধ চোখের কোলে জমে ওঠে বিষাদের কালিমা অবাঞ্ছিত প্রাণ
নালিশ জানায়, অহেতুক দীর্ঘতর হয় বেঁচে থাকা চোখের থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া প্রিয়জন জানে, অসুখ আর
সারবে না কোনোদিন

মহ. ওলিউল ইসলাম

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










স্মৃতির আয়না      মহ. ওলিউল ইসলাম


হয়তো তোমার মনে আছ,
কিংবা নেই;
--- মটর বাবুর বাগান বাড়ির বিকেল সময় গুলো।
এখনো হৃদয়ের সোনার খাঁচায় তালাবন্দি|
--স্মৃতি গুলো পুষে রেখেছি সোহাগ-আদরে|
তোমার সেই দো'ফলা চুলের লাল ফিতার ফুল।
শুভ্রকোমল আলতা রাঙা পা,
এক পায়ের কেতা দেখিয়ে শরীর নাচিয়ে----
ছল্ কিত্ কিত্-তা খেলা|
আমি টায়ার দৌড়ের খেলা ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতাম।
--সে যে কি সুখ!!
এখনো খুঁজি |
মনে আছে,কষ্টও হয়।
--সেভনি একবার হক্কে করে তোমাকে তেদ্দা করে দিয়েছিলো।
বুঝতে পেরেছিলাম তুমি দুঃখ পেয়েছিলে|
তোমার পাকমাটির বাঁধ দেওয়া খেলা ঘর থেকে মাটির পুতুল চুরি করেছিলাম।
যাদের তুমি শখ করে আলতা ও সাফিনা বলে ডাকতে।
তোমার খেলার ঘর 'মুনতোর' দিয়ে
বন্ধ করে রাখতে|
---"অলম্ কাঠি,বলম্ কাঠি ---যে যাবি তার বুক্কে কাঠি"|
এই ছিলো  'মুনতোর'|
বলতে--"যে এই ঘরে ঢুকবে,  ভূতে তার বুকের হাড় ভাংগবে রাতে"।
তবুও আমি তোমার আলতা -সাফিনা কে নিয়ে পালিয়ে ছিলাম।
জান?আমি তাদের কত আদরে রেখেছিলাম !
তাদের খাওয়াতাম,গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতাম।
বলতাম "সাফিনা ঘুমাও,তোমার মা আসবে এখুনি|আব্বুকে বকা খাওয়াবে তোমরা?
আমি তোমার পুতুল ছেলে-মেয়ের আব্বাও হয়েছি।কি আনন্দ!!
--দুই দিন কেঁদেছিলে আলতা সাফিনার জন্য|
ঐ হারামজাদা লালকা না বল্লে আমি ধরা পড়তাম না,আলতা সাফিনা কেও ফেরত দিতাম না।
তারাতো আমার কাছে ভালই ছিলো।
তোমার পিসিকে দিয়ে মার খাইয়ে কেড়ে নিয়ে ছিলে আলতা সাফিনা কে।
মনে আছে, যাওয়ার সময় তোমার পিসির সেই ডর জাগানো বাণী।
--"জাস অই পাড়া দিয়্যা,তোকে উল্ট্যা কোর‍্যা টাংভো"।
আমি ছ'দিন যাইনি।তোমাকে দেখার জন্য মন ছট্ ফট্ করেছে।
আর তখনি পিসির কথা মনে পড়েছে।
হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলে।তখন বোধ হয় ক্লাস ফাইভ।শুনেছিলাম লালকার মুখে,তুমি নাকি শহরে চলে গেছো।
তোমার খালাজানের কাছে। ওখানেই নাকি থাকবে।
দাদির মুখে শুনেছি, তোমার মায়ের  ক্যান্সারে মৃত্যুর পর তোমার আব্বু তোমাকে আর আগের মতো ভালোবাসতো না।
--কিছু দিন পরে গাঁয়ের রজিনা বেওয়া কে বিয়ে করেছিলো।
তার পরে তো ওরা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে|
ছোট্ট নিহা কে কতদিন খুজেছি|
পাই নি।
কবে কবে তুমি নিহারীকা বেগম হয়ে গেছো। ফিরেছো গাঁয়ে।
সতেরো ক্লাস পাশ হয়েছো।আমি ফাইভ থেকে আর যেতে পারিনি আগে।বাপজান পড়ালো না।খুব কেঁদেছি।
ওই চায়ের দোকানে হাতলুড়কা বানালো।
কিন্তু অপেক্ষায় ছিলাম তুমি একদিন আসবে।
--কিছু কথা বুকের ভেতর জমে আছে সে গুলো বলে একটু হালকা হবো।
আমিও বড় হয়েছি,আর তুমিও-----।
এখন আর বুঝতে-বোঝাতে অসুবিধা হবে না।
কিন্তু পোড়া কপালে কয়লার গুড়ো। শুনলাম এক নাম করা আইনজীবীর এক মাত্র ছেলের বৌ হতে চলেছো।
আমার জমানো কথা গুলো তালা বন্ধই থাকলো।
আমি জানি নসিব খারাপের কোনা চিকিৎসা  নেই, ঔষধ নেই।
তবে আমার হৃদয়ে ভালোবাসা যেটুকু আছে সব তোমারি নামে।
মন বলছে আর একটু অপেক্ষায় থাকতে।জানিনা সামনে কি অপেক্ষা করছে।
অন্য মেয়ে কে বিয়ে করা বড় বেইমানী হবে হয়তো।
--তুমি সুখে থাকো, তাহলেই আমি শান্তি পাবো।
একদিন গল্পের ছলে আমার এই মনের কথা তোমাকে  শোনাবোই।
সেই মুহুর্ত কবে আসবে জানিনা।
অপেক্ষায় আছি।

রাম সরেন

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









অন্ধকূপ হত্যা          রাম সরেন


"ভাই সত্যি কী সিরাজ উদ দৌলা অন্ধকূপ হত্যা করেছিল" রাহুল সুমিতকে জিঞ্জাসা করল। সুমিত বলল-- "আমার তো মনে হয় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, নবাবের সন্মান খর্ব করার জন্য হলওয়ে একটা কাল্পনিক গল্প ফেঁদে ছিল মাত্র, না হলে তার বর্ণিত ঘরের মাপ অনুযায়ী কখনই ওরকম ছোট ঘরে ১৪৬ জন থাকতে পারে না সেটা আমাদের ভারতীয় ঐতিহাসিকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, তবে এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে।"
এই ঘটনা নিয়ে রাহুল বেশ আগ্রহ প্রকাশ করল, সে তার শিক্ষকের কাছে ব্যাপারটা বিস্তারিত জানতে চাইল কিন্তু শিক্ষকের জবাবেও তার মন ভরল না। রাতে দু-চারটে বই ঘেঁটেও তার মনের মতো জবাব সে পেল না।তাই সেটার কথা আর না ভেবে সে ঘুমিয়ে পড়ল, বিঞ্জান বলে " যে বিষয়টি আমাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে সেটি সম্পর্কিত স্বপ্নই রাতে আমারা দেখতে পাই।" রাহুলের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটল।সে ঘুমোনোর পর সেই স্বপ্নই দেখতে লাগল। সে দেখল যে -  ইংরেজরা দুর্গ তৈরি করতে ব্যস্ত তারা নবাবের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। খবরটি নবাবের কাছে যেতেই তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন এবং তিনি ইংরেজদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন তবে ইংরেজরা তা অমান্য করে দুর্গ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল, এদিকে মুর্শিদাবাদে সিরাজ তার আত্মীয়দের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্ব লিপ্ত হয়, আত্মীয়দের এক অংশ সিরাজকে নবাব হিসাবে মেনেনিতে পারছিল না, এর মূলে ছিলেন ঘাসেটি বেগম। বেগতিক দেখে সিরাজ ঘাসেটি বেগমকে ঢাকায় নজর বন্দি করে রাখেন। এদিকে আরেক চক্রী রাজবল্লভ তার পুত্র কৃষ্ণদাসকে নওরাজেস মহম্মদের ধনসম্পত্তি নিয়ে কোলকাতায় পাঠিয়ে দেন এবং তিনি ইংরেজদের কাছে আশ্রয় নেন। সিরাজ কোলকাতার গর্ভনর ড্রেককে আদেশ দেন সে যেন কৃষ্ণ দাসকে ফিরিয়ে দেয়, কিন্তু ড্রেক সেই আদেশ অমান্য করলে সিরাজ অসন্তুষ্ট হন এবং ক্ষুদ্ধ হন । শেষে সিরাজ কোলকাতা আক্রমণ করেন, নবাবের আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে গর্ভনর ড্রেক সহ ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গে আশ্রয় নেন।  সেখানেও নবাবের সৈন্যরা আক্রমণ করে, ড্রেক সেখান থেকেও পালিয়ে যান, তবে হলওয়ে কিছু সৈনিক নিয়ে সেখানে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল তবে শেষে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। নবাবের সেনা বন্দিদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছিল কিন্তু হলওয়ে অভিযোগ করেন যে তার সেনাবাহিনীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু সময় পর ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ পুনরায় উদ্ধার করলে হলওয়ে প্রচার করলেন যে একটি ছোট ঘরে নবাবের সৈন্যরা ইংরেজদের বন্দি করে যার ফলে বহু ইংরেজ মারা যায় এবং এটিকে তিনি নাম দিলেন "The black hole tragedy." বা " অন্ধকূপ হত্যা।"  নবাব যখন এই মিথ্যা শুনলেন তখন খুব কষ্ট পেলেন কারণ যে কাজ তিনি করেননি তারা নিয়ে তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
রাহুল স্বপ্নের মধ্যেই গর্জে উঠল " এটা মিথ্যা, হলওয়ে মিথ্যা বলছে।" পাশের ঘর থেকে রাহুলের মা ছুটে এসে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করল--" কি হল ওমন চেঁচিয়ে উঠলি কেন ?"
--"না ও কিছু না তুমি শুয়ে পড়।"

পাপিয়া মহাপাত্র

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









নিরুত্তর      পাপিয়া মহাপাত্র     


ছোট্ট একটা টেলিফোন। নিস্তব্ধতা । সিগারেটের ধোঁয়া। ঘন অন্ধকারে হাতছানিতে একটা চেনা গলার আওয়াজ ।
"হ্যালো, তুমি বলছো । "
স্তব্ধ সময় । থমকে গেলাম আমি । সিগারেটের প্যাঁচানো ধোঁয়ার আস্তরণ পেরিয়ে এল আমার ফেলে আসা  
সেই অতীত ।
 ফের এলো " আমি বলছি"।
 নিরুত্তর আমি টেলিফোন হাতে ।
জানালার ফাঁক দিয়ে এক মুঠো হলুদ আলো সারা শরীরে লেপটে নিয়ে বসে রইলাম । 
দূরে ঘন কুয়াশার গম্ভীর আস্তরণের ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসছে একটা প্রান।
হেঁটে চলেছে , নেচে চলেছে ,গেয়ে যাচ্ছে নিজের খেয়ালে ,
তখনও টেলিফোন হাতে আমি চুপ করে জানালার এপাশে।
"পেয়েছি পেয়েছি " 
চিৎকার করে বলি "পেয়েছি আমি পেয়েছি।"
এখন আমি বাঁচব নীলাঞ্জন ---- তোমায় ছাড়া