Thursday, March 24, 2022

প্রভাতহীন~দেবযানী বসু

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  দেবযানী বসু

কবি প্রভাত চৌধুরীর মূল্যায়ন ও...

স্মৃতিচারণ --১

কবি প্রভাত চৌধুরীর মূল্যায়ন ও স্মৃতিচারণ অনেকেই করছেন করেছেন করবেন। এই প্রবহমানতা সহজে ও তাড়াতাড়ি থেমে যাবে না। আমিও সামান্য স্মৃতিচারণ করব। কারণ ওনার সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও একসঙ্গে কবিতার পথ চলা আমার জীবনের সামান্য শেষ অধ্যায় জুড়ে বিদ্যমান।
উনি একজন যাদুকর ছিলেন আমার কাছে। কৃত্তিবাস থেকে প্রকাশিত 'দেবযানীর স্বীকারোক্তি ' বইটি ওনাকে দেবার পর (নতুন কবি, নতুন আবেগ) উনি পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখে মুচকি হেসে রেখে দিলেন। বুঝলাম ওনার কাছে সেরকম পদের হয় নি। এর আগেকার কথা হল ২০০৬ সাল নাগাদ বইমেলায় কবিতা পাক্ষিকের স্টলে ঢুকে পড়েছিলাম আচানক, হঠাৎ। কেউ চেনে না জানে না আমাকে আমিও কাউকে চিনি না। যূথিকা বৌদির সঙ্গে সামান্য পরিচয় হল। পরে যা কবিতা লিখে পাঠাই তা আর ছাপা হয় না। অতএব হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়ি গেলে খাতায় কলমে ওনার আদর্শ মতো কবিতা লিখতে শিখিয়ে দিলেন। বইপত্র দিলেন। আস্তে আস্তে কবিতা পাক্ষিক পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ল। নাসের দার কবিতার ভক্ত ছিলাম আমি।
প্রভাত দার আমন্ত্রণে শান্তিনিকেতন গেলাম সঙ্গে পাপড়ি ভট্টাচার্য ছিলেন। রঞ্জন মৈত্রকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। আমি আমার ধারাবাহিক কবিতাই পাঠ করেছিলাম। এখন ভাবি সবাইকে মানিয়ে নিয়ে চলার অসম্ভব এক শক্তি ছিল ওনার যেটাকে সাংগঠনিক শক্তিও বলা যায়। ওখানে অলোক বিশ্বাস এর সঙ্গে পরিচয় হল। এভাবে আমার বন্ধু পরিধি বেড়ে চলছিল। কবিতা পাক্ষিকে আমার সিঁড়িভাঙা কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে এর চাইতে আনন্দ আর কিছুই ছিল না।
গোপাল মল্লিক লেনে একটা ছোট্ট ঘর ছিল কবিতা পাক্ষিকের অফিস। ওখানে কবিতা নিয়ে আলোচনা কবিতা পাঠ ইত্যাদি হত। ইন্দ্রানী দত্ত পান্নাকে ওখানেই প্রথম দেখি।  মাঝে মাঝে তর্ক বিতর্ক হতে কবিতায় মেসেজ থাকবে কি থাকবে না নিয়ে। উনি মেসেজ রাখার পক্ষপাতী ছিলেন। ওখানেই সোমক দাসের সঙ্গে পরিচয় হল। একান্তর পত্রিকার অরূপ। এখনকার বাংলা দৈনিক ই-পত্রিকার সৌমিত্র রায়। অথবা রাজদীপ পুরী। সভা শেষে মেট্রো করে আমি ও প্রভাত দা গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরতাম।
প্রভাত চৌধুরীর কবিতায় পেয়েছি সীমাহীন আকাশ। কল্পনার দৌড়। শিশুর কৌতুক ও কৌতূহল। প্রতিবাদী চরিত্র। ওপেন এন্ডিংয়ের যাদু। আর রাইজোমেটিক বিস্তার।  'পোস্টমডার্ন মানচিত্র' বইটি আমার মতো নতুন লিখতে আসা এক পথিকের কাছে কম্পাসের কাজ করেছিল।
শান্তিনিকেতনে কয়েকদিন থাকার সময়ে জনক ঝংকার নার্জারির সঙ্গে একটি সন্ধ্যা কাটল আমাদের। প্রভাতদার কবিতা কবিতা খেলাটা ছিল মজার। মানে একটা লাইন উনি বলবেন তার খেই ধরে পর পর আমরা এক এক লাইন বলে কবিতাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব। চমৎকার সন্ধ্যা ছিল সেটা। ছিল ঠাকুরদাস চট্টোপাধ্যায়। সবার সঙ্গে মজাদার কথাবার্তা বলে ট্রেনে মজলিসে ঘরে জমিয়ে রাখতেন।
বারবার বলতেন কবিতায় লেখায় টেকনিকটাই আসল। এটা বিজ্ঞানের যুগ। আমাদের জীবনযাত্রা যেমন পাল্টাচ্ছে কবিতা লেখার রীতিও তেমনি পাল্টাবে। ওনার কবিতায় পেয়েছি আনন্দময় এক কবিতা পুরুষকে। কবিতা পাক্ষিক থেকে অনেক বই কিনতাম। এভাবে যশোধরা রায়চৌধুরীর পিশাচিনী কাব্যটা সংগ্ৰহ করেছিলাম। যেহেতু আমি যাত্রীদলের পিছে থাকা এক পথিক আমার কাছে প্রভাত চৌধুরীর সান্নিধ্যে আসা এক বিরাট ব্যাপার। পথ চলতে গিয়ে  তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন এমন অনেকের সাক্ষাৎ পেয়েছি। তবু আমার মনে হয়েছে উনি আমার চন্ডাল গুরু।
পটলডাঙার বাড়িতে মাঝে মাঝেই গেছি। ওনার জন্মদিনে ভোজনের আয়োজনে অংশ নিয়েছি স্বতঃস্ফূর্তভাবে। যূথিকাবৌদি, মুরারীদার স্ত্রী, রীতা মিত্র সবাই কেমন আপন করে নিতেন।  অমিত কাশ্যপ রুদ্রর কিংশুক ছিলেন পরিচিত মুখ। পরবর্তী কালে সভাঘরে আয়োজিত জন্মদিনের উৎসবে গিয়েছিলাম। পটলডাঙার বাড়িতে কবিতাপাঠ গান বৌদির হাতের রান্না সবকিছুর ভাগ পেয়েছি । সঙ্গে শান্তিময় মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে রবীন্দ্র  কণ্ঠে রবীন্দ্র  কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত।।। যেটা লক্ষ্যনীয় ছিল তা তাঁর  প্রাণময়তা ও ডিক্টেটরশিপ। মানে প্রভাতদার কথাই শেষ কথা। মানে নিজেকে সবসময় আপডেট করে রাখা। কবিতাকেও আপডেট করে রাখা। ওনার আমন্ত্রণে প্রথম জীবনানন্দ সভাঘরে কবিতাপাঠ করা। পটলডাঙার বাড়িতে গৃহপ্রবেশ উৎসব হয়েছিল তাতে উপস্থিত ছিলাম। আজ সে সব দিনগুলো বড় মনে পড়ছে।
আমার রক্তে বোকামি থাকার দরুন অত সমালোচনার দৃষ্টিতে ওনাকে দেখি নি, চালাক মানুষদের প্রতি স্বতন্ত্র মুগ্ধতা থাকা সত্ত্বেও। একটা মানুষ তাঁর মধ্য বয়স থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত কবিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন আর শত শত শিষ্য তৈরি করলেন এর চাইতে আশ্চর্যজনক আর কি। শূন্যদশক প্রথমদশকের কবিরা পর্যন্ত তাঁর  সাহচর্য লাভ করেছে। তাদের মনেও রয়ে গেল মুগ্ধতা। কতোটুকুই বা জেনেছি ওনাকে। মাত্র কয়েকটা বছর জীবনের। কবিতার জগতে যেখানে আমি হিমেল কুয়াশায় ঢাকা একটা ক্ষীণ দিগন্তরেখা। শুনেছি সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে ওনার হাওয়া ৪৯ এর সঙ্গে ওনার সখ্যকথা। দেখেছি তরুণতম প্রজন্মের সঙ্গে মত কষাকষিতে জড়িয়ে পড়া, মন নয় কিন্তু। এত দীর্ঘদিন ধরে ধৈর্য্য ধরে পত্রিকা সম্পাদনা আর কবিতার নতুন রীতিতে তাদের দীক্ষিত করে তোলা এ সবই কবিতাকে নিখাদ ভালোবাসার দৃষ্টান্ত। যূথিকা বৌদির মতো কর্ম সঙ্গিনীর সাহচর্যে জীবন কোথাও স্থির সরলরেখায় দাঁড়িয়ে ছিল না হলে এ কর্ম যজ্ঞ চলতে পারত না।
পরাবাস্তবের কবি জীবনানন্দ দাশকে কবি প্রভাত চৌধুরী এলিয়টপন্থী বিষণ্ণতার কবি বলেই নামাঙ্কিত করেছেন। প্রভাত চৌধুরীর কবিতায় অন্যায়ের প্রতিবাদ আছে কিন্তু কোথাও সেই মিনমিনে অন্তর্লীন বিষণ্ণতা নেই। জীবনের অস্ত্যর্থক দিকটি সদহাস্যময় চৈতন্য দিয়ে তুলে ধরেছেন।
স্মৃতি প্রচুর বিশ্বাসঘাতকতা করছে আমার সঙ্গে, আজ না বেশ কিছু বছর ধরে স্মৃতিহীনতায় ভুগছি , বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে। ফেসবুকে আলগা ঝুলে আছি। তাই ধান ভাঙতে শিবের গীত হয়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ নিজের কথাই বলে যাচ্ছি।
কবি প্রভাত চৌধুরীর সঙ্গে কবিতা পাক্ষিকের দল সহ বর্ধমানে কবিতা পড়তে গিয়েছিলাম কারা আয়োজন করেছিল আজ আর মনে নেই। গৌরাঙ্গ মিত্র নাসেরদা মুরারীদা ও আরো অনেকে ছিলেন। সারাদিন কবিতাপাঠ চলেছিল। আমার বড় মেয়ে আমার সঙ্গে গিয়েছিল। অবশ্যই আমার জীবনে আনন্দের দিন ছিল সেদিন।
এরপর ১৯১১ তে আমার পঁচিশ বছরের বিবাহ বার্ষিকী উৎসব হয়েছিল। গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় , গল্প কলকাতার পাপড়ি ভট্টাচার্য, শান্তিময় মুখোপাধ্যায় অলোক বিশ্বাস  সুইন হো স্ট্রিটের কবি তাপস রায় গ্ৰাফিত্তির  শুভঙ্কর দাশ সহ আরো অনেকে নিমন্ত্রিত ছিলেন। প্রভাত চৌধুরী ও যূথিকা বৌদিও এসেছিলেন। সেই উৎসবের ছবি কবিসমূহ ফেসবুকে বহুদিন বিশেষ ভাবে প্রদর্শিত ছিল।
পোস্টমডার্ন তত্ত্বের কচকচির ভিতর ঢোকা আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি। তবে প্রভাত দার মুক্তমনা আকাশ টপকানো একটা চেতনা কবিতা লেখার সময়ে মাথায় কাজ করত। তাতেই বাংলা কবিতায় ব্যতিক্রমী কবিদের সংসর্গে এসে পড়ি।
সবাই বলে লেখা থেকে যাবে, আমরা থাকব না। আমরা বাংলা কবিতায় টীকা টিপ্পনী রূপে  থেকে যাই আর না যাই , এই যে লিখলাম জানলাম অক্সিজেন নিলাম এর দাম চাই না। এ অমূল্য।

স্মৃতিচারণ -২

একবার স্থির হয়েছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি দর্শন করতে যাব। সবাই দল বেঁধে  জোড়াসাঁকো গেলাম। কবিতা পাক্ষিক পত্রিকার পঞ্চশততম সংখ্যার প্রকাশ উপলক্ষে। এই সংকলন দু খন্ডের ছিল। আমি সোৎসাহে এই সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিলাম নিজেকে।  প্রভাত দা ও যূথিকা বৌদি সুন্দর ঘোড়ায় টানা গাড়ি চড়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়ি পৌঁছলেন। ওখানে একটা ক্লাবঘরে কবিতাপাঠের আয়োজন হয়েছিল। সোনালী বেগম , রোশনী ইসলাম এর সঙ্গে পরিচয় হল মুখোমুখি। প্রভাত দার কবিতা পাক্ষিক গোষ্ঠীর আলোয় নিখিল সরকার, নীলিমা সাহা , জ্যোতির্ময় মুখার্জি, সৌমিত্র রায়, ক্ষেপচুরিয়াস পত্রিকার জুবিন ঘোষ এদের মতো বন্ধুলাভ হয়েছে।
ইতিমধ্যে আমি বারীন ঘোষাল নতুন কবিতা অপর কবিতা ইত্যাদি নানারকম টার্মস ও জগতের সঙ্গে পরিচয় করতে শুরু করেছিলাম। দুই দিকের দুই দিকবারণের অভিঘাতে তৈরি হয়েছিল আইভরি খাতা। অভিঘাত সহ্য করার শক্তি জন্মাল। আইভরি খাতা পেয়ে বারীন দা খুশি হয়েছিলেন। প্রভাত চৌধুরী অলোক বিশ্বাস ধীমান চক্রবর্তী বারীন ঘোষাল এই চারজনের নাম উৎসর্গ পত্রে ছিল। প্রভাত দা তাতে খুশি হন নি। কি যে বলেছিলেন মাথার উপর দিয়ে গিয়েছিল আর এখন তা মনেও নেই। এখন শুধু ঢেউরেখা রয়ে গেছে,  আমি কোনো সন্ধিক্ষণ পেরিয়ে চলে যাচ্ছিলাম সে সময়ে। ঐভাবে শব্দ ভাঙাভাঙির শব্দ গড়াগড়ির ব্যাপারটা যাস্ট ওনার ভালো লাগে নি। যাই করোনাবিচ্ছিন্নকালে সবাই যে যার মতো দূরে সরে গেছি। উনি বাংলাদেশ গেলেন। পুরস্কার পেলেন। সে সব দূরে থেকেই জেনেছি। শারীরিক ও মানসিক নানা কারণে আমি আপাতত অকর্মণ্য।
করোনার আগে পর্যন্ত পটলডাঙার বাড়িতে মাঝে মাঝে গেছি। প্রায়ই বলতেন যূথিকা বৌদির খুব ইচ্ছে করছে আমাকে দেখার। যূথিকা বৌদি চিন্তা করেন। ইত্যাদি। আমার কবিতা সম্পর্কে আশাবাদী ছিলেন। বলতেন দেবযানী কবিতা নিয়ে গভীর চিন্তা করে।(খুব লজ্জা পেতাম) কবিতা ওর হাতে খুলবে। তবে সামান্য হলেও অভিযোগ ছিল যে আমি কবিতা ক্যাম্পাসের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় কবিতা পাক্ষিকের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ইত্যাদি। যখনই গেছি আনন্দে ঝলমল করে উঠে বলেছেন এই যে বিদেশিনী এসেছ! এই বিদেশিনী সম্বোধনটা আমাকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নিয়েছে। বইমেলায় গেলে কবিতা পাক্ষিকের স্টলে একবার ঢুঁ মারবই।
এ ছাড়াও আমরা যে কোনো পত্রিকার বাণিজ্যিক সাফল্যের আশা করি। সে দিক দিয়ে প্রভাতদার পত্রিকা পরিচালনা সম্পাদনা  বিক্রিবাটা ইত্যাদি সম্পর্কে পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল আশ্চর্যজনকভাবে প্রশংসনীয়। ব্যাপক মনোযোগ লাগে , ধৈর্য্য লাগে, টিম পরিচালনার ক্ষমতা এগুলো মাত্রাতিরিক্ত ভাবে প্রভাত চৌধুরীর মধ্যে ছিল।  কাগজ প্রিন্টিং দাম নকশা ইত্যাদি সম্পর্কে খুব জ্ঞান ছিল ও যত্ন নিতেন। এ সম্পর্কে কোনো এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছিলেন।
প্রভাত দাকে নিয়ে বিশেষ তাঁর  কবিতা লেখার রীতি নিয়ে আমার এক অনুজ কবি( বয়সে অনুজ কিন্তু কবি হিসেবে অগ্ৰজ) অতনু গাঙ্গুলি খুব সুন্দর করে লিখেছেন সেটুকু উদ্ধৃতি দিতে লোভ হল : --
সবার কবিতাই কমবেশি পড়ে বড় হয়েছি কিন্তু প্রযুক্তি উতকর্ষের সাথে, পুঁজির মুক্ত গতির সাথে শব্দবিন্যাসের যোগ আছে। কবিতাও পালটে যায়। শব্দকে তুরীয় আনন্দে ছুঁড়ে দিতে পারলে সে ফালাফালা হয়ে দিকবিদিকে ছোটে - তার প্রমাণ সমীর রায় চৌধুরী ও তার সঙ্গী প্রভাত চৌধুরী। বাকি কবিতার বচন যেমন কবিতা হবে এলোমেলো, ছেঁড়া-খোঁড়া শব্দের সমাহার। সেগুলি এই পথের ডেরিভেটিভ।প্রভাতদার নোটবই বইটি পড়লেই মালুম হবে যে সব বিষয়ের উপরই কবিতা লেখা যায় অথচ তা একরৈখিক নয়।  সরল কিন্তু মালটি-লেয়ারড। প্রিজমাটিক।অথচ শব্দের কোহিশন আর এডিহিশনের মধ্যে ফাঁক আছে। প্রভাতদা একটা কথা প্রায়ই বলতেন - আগে মানুষ যাত্রাপালার এক গল্প সারারাত ধরে দেখতেন আর এখন মানুষ আঙ্গুলের চাপে খেলা থেকে সংবাদ থেকে সিনেমা অবাধ যাতায়াত করে। কবিতা পাল্টাবে না কেন? তাই নোটবইয়ের শেষে দেখিয়েছেন একটি শব্দের কত সমাহার এবং তার মধ্যে জোড়ের ফাঁক কিভাবে থাকে। তার কবিতার একটা লক্ষ্যণীয় যে - একটি লাইনের কেন্দ্রীভূত শব্দ পরের লাইনে অপসারী দৌড়ে কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে আবার এইভাবে শব্দের খেলা গোটা কবিতা জুড়ে মেলে দ্যায়। প্রভাতদার নোটবই একটি বাংলা কবিতাকালের দিশারী।বাংলা কবিতায় এত দীর্ঘদিন ধরে একটা সমান্তরাল আলোকদীপ্ত কবিতা পত্রিকা বহন করে চলেছেন কবি প্রভাত চৌধুরী যে এর সারবত্তাকে অস্বীকার করা যায় না।

ই পত্রিকা সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোলের অভিজিৎ এর অনুরোধে একটি সাক্ষাৎকার পর্ব আমার প্রকাশিত হয়েছিল। প্রভাত দা সেই কাজটির প্রশংসা করেছিলেন।  ওনার প্রশ্রয়ে ওনার ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছি এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। বারীন দা খুব কৌতুক করতেন অবাক বোধ করতেন প্রথমে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তারপর প্রভাত চৌধুরী তারপর বারীন ঘোষাল তথা কবিতা ক্যাম্পাস নতুন কবিতার সঙ্গে পথ চলা, শেষে সমীর রায়চৌধুরী মলয় রায়চৌধুরীর সংস্পর্শে আসা এতগুলো কোণ ছুঁয়ে রইলাম আমি কি করে!!
কবিতা সফর আমার স্বল্পদিনের খদ্যোতসম জীবন বিস্তার , সব কবিদের যাত্রাপথের শেষেই আছি, থাকতে চাই। প্রভাত দার জ্বালানো দীপালিকাটি বহন করে চলেছি এটাই শেষ কথা। এটাই শেষ কথা যে পোস্টমডার্ন মানচিত্রের ক্যাপ্টেন হুররার একার হাতে তার আইডিয়ালিজমটা আর নেই। ছাত্রছাত্রী ও অনুগামীদের হাত থেকে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।



No comments: