Thursday, March 24, 2022

প্রভাতহীন~যশোধরা রায়চৌধুরী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   যশোধরা রায়চৌধুরী   

প্রভাত চৌধুরী এক স্টিম ইঞ্জিনের নাম

১৯৯৫ সাল। কলকাতার লিটল ম্যাগাজিনের এলাকায় কবিতা পাক্ষিক তখন একটা সদ্য উঠে আসা ঝলমলে নাম। পাতিরাম
থেকে একটা সংখ্যা কিনলাম, সাম্যব্রত জোয়ারদার নামে এক কবির লেখা পড়ে কেমন ছিটকে গেলাম। নিজের কিছু লেখা
খামে করে পাঠালাম ছাপান ঠিকানায়। বাস্তব অর্থে সে ঠিকানা আমাদের বাড়ি থেকে হাঁটা পথ।
কয়েকদিন পর কোন এক সকালে বাড়ির দরজায় কড়া। আমি প্রভাত চৌধুরী, কবিতা পাক্ষিকের সম্পাদক। সেই শুরু।
তারপর কত অসংখ্য সন্ধ্যা হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সেই বাড়িতে। বৌদির মধুর উপস্থিতি ও ঘন ঘন চা সাপ্লাই, রোগা ,
ধনুকের ছিলার মত টানটান, লম্বা, কোলকুঁজো, তখনো চুল না পাকা চির যুবক ভাবে ভাবুক প্রভাতদার কবিতা পাক্ষিক
করে পৃথিবী কাঁপানোর সংকল্প, আর পাশাপাশি সর্বদা স্মিত- শান্ত নাসের হোসেন, ছটফটে তরুণ রজতেন্দ্র। অসংখ্য
কবি সাহিত্যিকের আনাগোনায় জমাট সেই একতলার ঘর। সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, রবীন্দু বিশ্বাস, সৈয়দ
কওসর জামাল, কানাইলাল জানা, নিখিলকুমার সরকার, অসংখ্য আরো নাম মনে পড়বে আমার, যাদের সংগে দেখা, আলাপ
সবটাই প্রভাতদার সূত্রে....কথায় কথায় কবিতা উৎসব , বিশেষ সংখ্যা, এটা ওটা সেটা। সারাক্ষণ কিছু না কিছু আয়োজনে
থাকতেন প্রভাতদা।

আমার প্রথম বই পণ্যসংহিতা প্রভাত চৌধুরী ও কবিতা পাক্ষিকের অবদান। এটি ছিল এক রকম প্রচ্ছদে ( সাদা কমলা
রঙের আল্পনার মত পাড়) কবিতাপাক্ষিক কবিতামালা সিরিজের একটি। ১৯৯৬ তে। ১৯৯৮ তে পিশাচিনীকাব্য বের করলেন
সেও প্রভাতদা। আমার জীবনের প্রথম দুটি বইই কবিতা পাক্ষিক প্রকাশনার। পিশাচিনীকাব্যের প্রচ্ছদ নিয়ে জল্পনা,
কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে নী এর থেকে নেমে আসা প্যাঁচানো বিনুনিসহ, প্রভাতদারই সংগে বসে পরিকল্পনা, বানানো।
সেই বই গৃহীত হয়েছিল কৃত্তিবাস পুরস্কারের জন্য। প্রভাতদার সে কী আনন্দ। গর্ব।
ছোটদের সাফল্যে গর্বিত। হ্যাঁ প্রভাতদা হতে পারতেন।
কবিতা পাক্ষিক পত্রিকাটি নয়ের দশকের সময় চিহ্ন। ইতিহাসের অংশভূত হয়ে রয়ে যাবে। প্রতি পনেরো দিনে একটি চটি
কাগজ বেরুত। তখনো ডিটিপি আসেনি। টাইপ সেটিং করে সেই কাগজ বের করা হত। প্রুফ দেখা হত। প্রভাতদা আর তাঁর
লেফটেনেন্টরা সমস্ত কাজটি করতেন নিপুণ হাতে। নাসের হোসেন অন্যতম লেফটেনেন্ট। এই কদিন আগে নাসেরদা চলে
গেলেন। যাবার দুদিন আগেও কবিতাপাক্ষিকের প্রুফ দেখেছেন।
এর বাইরে ওই অসংখ্য বই করেছে কবিতা পাক্ষিক । প্রকাশনা হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা কবিতার জগতের
একটা মুভমেন্টের, সময়চিহ্নের উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এর ভেতরে প্রভাতদা নিজের কবিতা লিখেছেন, নিজের গদ্য
লিখেছেন। ওয়ান ম্যান মেশিন। স্টিম ইঞ্জিনের মত কর্মময়।

২০০০ পরবর্তী সময়ে প্রভাত চৌধুরী পটলডাঙায় একটা ডেরা বানালেন। আমরা গেলাম প্রথম এক সন্ধের আড্ডায় । ছোট
খুরির চা, কাগজের ঠোঙার মুড়ি, প্রচুর কবিতা সংক্রান্ত কথা, সেই আড্ডা ছিল প্রাণচঞ্চল।


বস্তুত, এই লেখা লিখতে গিয়ে বুঝতে পারছি, প্রভাত চৌধুরী আদতে ছিলেন লড়াইখ্যাপা লোক। একটা বিষয়, একটা ভাবনা ,
একটা বিশ্বাসকে ধরে, এগিয়ে যেতে পারতেন মাইল মাইল। সেই অসম্ভব প্রাণবন্ততাটাই ছিল ওঁর মূলধন। ফলত শত্রুও
বানিয়েছেন ও বাড়িয়েছেন বিস্তর আমাদের এই ছোট্ট কবিতাজগতে। বাংলা কবিতার জগতে যেখানে অসংখ্য দল, অসংখ্য
ছাতা, প্রভাতদা নিজস্ব বিশ্বাসের, ভাবনার বিষয়ে লড়ে গেছেন শুরু থেকে। ভাবনাটা ছিল পোস্ট মডার্ন লেখালেখি নিয়ে।
ভাববিশ্ব কে পোক্ত করার জন্য সমীর রায়চৌধুরী বা আরো কিছু তাত্ত্বিক ভাবনাচিন্তা, পড়াশুনো করা লোকজনের
আগমন ঘটেছিল বৃত্তে।

মুশকিল ছিল প্রভাতদা নিজে যেমন লিখতেন, সবাইকে তেমন লিখতে বলতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা "বড়" হতে থাকি ,
অনেকেই বৃত্ত থেকে সটকে পড়ি। কারণ ডিক্টেশন পছন্দ নয়। প্রভাত চৌধুরী কি তাই বলে ডিক্টেটর ছিলেন? তা নয়।
অনেক তর্ক বিতর্কের পরও , আমার চোখে প্রভাতদার বিশাল হৃদয়টাই পড়ে। প্রভাতদা বলতেনও, যশোধরা, বা অমুক,
এরা আমার চোখের সামনে কবি প্রসিদ্ধি পেল, প্রতিষ্ঠা পেল, জগত বড় হয়ে গেল... তাই পাক্ষিকের তাঁবু থেকে বেরিয়ে
গেল..। কিন্তু তা নিয়ে কোন মনোমালিন্য হল না। বইমেলার পর বইমেলায় প্রভাতদার স্টলে গিয়ে বৌদির বানানো জলখাবার
খেয়ে এলাম। আমার বেটার হাফ তৃণাঞ্জনের সম্পাদিত বড় সড় ফরাসি কবিতার অনুবাদের বই শূন্য তাপাঙ্কের নীচে , সেও
করলেন প্রভাতদা, ২০০৫ নাগাদ। সে বইতে অনুবাদ করলেন শরৎকুমার, বিজয়া, উৎপলকুমার, তুষার চৌধুরীরা।
"পুস্তানিটা দেখ তৃণাঞ্জন!" কত উত্তেজনা নতুন বই নিয়ে।

তারপর আমরা সময়ের অমোঘ নিয়মে অনেকটাই সরে এসেছিলাম। কিন্তু পাক্ষিকের ময়দানে এল আরো অসংখ্য নতুন
কবি, প্রভাতদার যে একটা ক্রমশ বড় করে চলা সতরঞ্চি ছিল। ২০১৬ থেকে কবিতা পাক্ষিক সাপ্তাহিক হয়েছিল।

মনে পড়ে ছোট ছোট অনেক স্মৃতি। আমাদের প্রথম দিকে দেশে আর কবিতা পাক্ষিকে যখন এক সঙ্গে কবিতা বেরুচ্ছে,
প্রভাতদা একবার বলেছিলেন, দেশ-কে তোমরা দেশের মত করে লিখে দাও, আর কবিতা পাক্ষিকে দাও নিজেদের
বিপজ্জনক, ভাষা ভাঙচুরের লেখাগুলো। একই সঙ্গে দু রকম লিখছ তোমরা। এই সব সময়েই , আমাদের অন্যান্য যাঁরা
অভিভাবক, অন্য কবিরা, তাঁরাও ত আমাদের ক্রমাগত বলছেন, নিজেকে শুধু পোস্ট মডার্ন ছাপ্পা দিয়ে ছেপে ফেলবে না,
যশোধরা। নিজেকে কোন খোপে আটকে দিও না। এতে ক্ষতি। হয়ত শুনছি সেইসব কথা। হয়ত নিজের নিয়মেই বেরিয়ে যাচ্ছি
সেইসব ডেসক্রিপশন, প্রেসক্রিপশন থেকেই। তবে এটা ঠিকই যে নব্বই দশকের লেখা যে ভাষা ভাঙ্গচুরের লেখালেখি,এই
বিশ্বাস থেকে আমরা এক গোছা ছেলেমেয়ে লিখেছি, আর প্রভাতদার প্রচুর ইন্ধন ছিল এতে। আমার এও মনে পড়ে
সিনেমাহলের নাম ব্যবহার করে যে সিরিজ তা কবিতা পাক্ষিকেই প্রথম বের হয়, এসব নিয়ে, উত্তরা পূরবী উজ্জ্বলা বা
মিনার বিজলি ছবিঘর এক একটা কবিতার শীর্ষ, এইটার ভেতরে যে পোস্ট মডার্ন প্রবণতা আছে তা নিয়ে প্রভাতদা
আলোচনা করছেন সর্বসমক্ষে... এই প্রশ্রয়..এই স্বীকৃতি কত অনায়াসে পেয়েছিলাম তখন। কানাইলাল জানার আলিপুর
জেলের ভেতরের কোয়ার্টারের ছাতে মলয় রায়চৌধুরীর কবিতার সঙ্গে আলাপ, পড়তে এলেন মল্লিকা সেনগুপ্ত... এইসব
অনুষ্ঠানে নতুন কবি হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছি, প্রশ্ন করছি, আলোচনা করছি, অনেকটা খুলে দেওয়া। বহরমপুরে কবিতা

পাক্ষিকের উৎসব হয়েছিল, সেখানেও মঞ্চে ডেকে নিচ্ছেন প্রভাতদা, ঘোষণা করতে বলছেন। হয়ত "পাড়ার মেয়ে" বলেই
এতটা আপন করে নিতে পেরেছিলেন, কোথাও ছিল ওই ছোটদের কাছে টানার অমোঘ উৎসাহ, গর্ব। নব্বইয়ের অসংখ্য
নতুন কবির সঙ্গে আমার আলাপ প্রভাতদার সূত্রেই। রিমি দে, জপমালা ঘোষরায় এদের সঙ্গেও এই নব্বই দশকেই আমার
আলাপ হয়েছিল। ইন্দ্রাণী দত্ত পান্নার নাম মনে পড়ছে। সে কোথায় জানা নেই এখন।

সাম্যব্রত, জয়ন্ত ভৌমিক, প্রসূন ভৌমিক, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবাশিস মুখোপাধ্যায়, পিনাকী ঠাকুর, মৌলি মিশ্র,
রোশনারা মিশ্র, সুদীপ্ত মাজি, তাপস কুমার লায়েক, এদের সঙ্গে এই ১৯৯৫-৯৬-৯৭ -৯৮ জুড়ে জুড়েই দেখা-লেখা-ঘোরাঘুরি।
এই জমজমাট সময়টা প্রভাত চৌধুরী ও তাঁর কবিতা পাক্ষিকের স্মৃতির সঙ্গেই ওতোপ্রোত।

সাংঘাতিক বড় সংগঠক ছিলেন এই মানুষটি। আজ দেখছি, নব্বইয়ের বহু কবির জীবনে প্রথমবারের জন্য কবিতাজগতের
উদ্ভাস, কবিতার সঙ্গে আজীবন লগ্ন হবার সূচনাবিন্দুতে ছিলেন প্রভাত চৌধুরী।


এখনো অব্দি সব স্মৃতিই সম্পাদক-আহবায়ক-সংগঠক প্রভাত চৌধুরীর কথা।
তবে কি কবি, গদ্যকার প্রভাত চৌধুরীর কথা বলব না আমরা? হয়ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বইগুলি নিয়ে ফিরে পড়ব
আমরা। একেবারে প্রথম জীবনে প্রভাতদা লিখতেন না পোস্ট মডার্ন। তখনকার পর্বটি তাঁর সমসময়ের অন্যদের মতই
ছিল। পরে নিজেকেও আমূল পাল্টে নিলেন।
সম্বোধন
প্রভাত চৌধুরী
“Don’t call me poor, call me by the class-name, the working class” – Com. S. A. Dange
জন্মপত্রিকার কোনো ছত্রে, পংক্তিতে
কোথাও
দরিদ্র নামে চিহ্নিত হইনি।
শুধু আলোর দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে
দেখেছি –
আগুন, ঝলসে গ্যাছে শরীর।
চতুস্পদে হেঁটে
বৃষ্টিপাতে শরীর শীতল করতে গিয়ে
বুঝেছি –
‘এই শ্রাবণের বুকের ভিতর’
বিদ্যুৎ, ঝলসে গ্যাছে হৃদয়।

নিদারুণ অন্ধতার শ্রমে ঘামে
আর মাত্র কিছুক্ষণ বাঁচতে চেয়ে
জেনেছি –
নাম, আমার শ্রেণীর নাম
যে নাম আমার জন্মপত্রিকায় লেখা আছে।
এইটি ১৯৭২ এ লেখা প্রভাতদার। কিন্তু এই ধরণ সচেতনে ছেড়ে দেন তিনি এর পর।

৯০ দশক পরবর্তী কবিতার নমুনা রইল কয়েকটি। তাঁর লেখা নিয়ে ঘনিষ্ঠ আলোচনা এবার শুরু হোক। এতদিন ঔৎসুক্য সহ
খানিকটা কৌতূহল ছাড়া আর কীই বা জুটেছে তাঁর? এবার পাঠক তাঁকে ব্যক্তির আবরণ সরিয়ে পড়ুক।

তোমাকে আমি যে লেখা বলি, তা তুমি
এখানে কম্পোজ করো, না? যেগুলো না বলি,
সেগুলিকে কীভাবে কম্পোজ করবে?
কম্পোজ করার কথা কম্পোজিটরের। একজন কবি
যখন কম্পোজ করেন, তাঁর মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে
শীতের রোদ্দুর এবং কমলালেবুর গন্ধ
যারা হাতে দস্তানা পরেন
তাঁদের জানা হয় না কমলালেবুর খোসার সঙ্গে
শীতের রোদ্দুরের গভীর বন্ধুতার কথা

আমি শীতকালের জন্য অপেক্ষা করি
শীতের রোদ্দুরের জন্য অপেক্ষা করি
কমলালেবুর গন্ধের জন্য অপেক্ষা করি

আমাকে অপেক্ষা করতেই হয়

আমি কখনই ঈশ্বরের জন্য অপেক্ষা করিনি
আমি কোনোদিন কোনো বাজিকরের জন্য অপেক্ষা করিনি
আমি অপেক্ষা করেছি শীতকালের জন্য।

শীতকালকে আমি বইকাল নামে ডাকি (শীতকাল=ব‌ইকাল – প্রভাত চৌধুরী)

( ১)

কদিন আগে যে আগরতলার মাটিতে, হাঁটাহাঁটি করেছি
আজ সকালের দিকে আগরতলার মানচিত্রে হাঁটতে গিয়ে দেখি
কোথায় গেল সেই জলাশয়, সেই ফিঙেটি
জলাশয় এবং ফিঙে না থাকলেও দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি
একটা এয়ারোড্রাম, তার ডানায় কিছু একটা লেখা আছে
আরো দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি একটা রবার বাগান
কিন্তু আদতে মানচিত্রে তো এতসব দ্যাখা যায়না
যাঁদের চোখের ভেতরে আরো একটা চোখ থাকে, তাঁরাই
দেখতে পান
আমার ডানচোখের রেটিনায় ছিদ্র আছে, যার ডাকনাম ফুটো, আমি
বাঁচোখ দিয়েই সব দেখি
বাঁদিকের রাস্তা, ডানদিকের জলাশয়, ঊর্দ্ধ-আকাশের ফিঙে
আর রাস্তার উপর পড়ে থাকা কোনো একটা ছিপি
সবই দেখি বাঁচোখ দিয়ে
আমার বাঁচোখের ভিতরে আর কতগুলো চোখ আছে কখনও গুনে দেখিনি

(২)

অনুপম বলেছিল – আপনি তো ফেসবুকে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন
কথাটা শুনতে যতটা মধুময়
কিন্তু বাস্তবে ততটাই লৌহবৎ
কেননা ফেসবুকে হাঁটার জন্য যে কোয়ালিটির পা প্রয়োজন
আমার পা সেরকম নয়
শৈশব থেকেই আমার পা বাটা-র জন্য উৎসর্গীকৃত
বাটা থেকে চেষ্টা করে টাটা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব
কিন্তু ফেসবুক
তাছাড়া ফেসবুকের জন্য যে ফেসলুক প্রয়োজন
সেই দেখাও আমার নেই
তাহলে, দেখাব কী
(অনুপমকে যা বললাম – প্রভাত চৌধুরী)

No comments: