পদ্মপাতার সংলাপ আলোক মণ্ডল
পদ্ম নিয়ে এখন কিছু বললেই এখনই রে রে করে আসবেন সবাই ,বলবেন আপনার হয়ে গেছে! আপনি এবার গেরুয়াসক্ত হচ্ছেন - বৈরাগ্য না হোক এবার পদ্মফুল ধরে স্টেজে উঠতে চাইছেন। না মশাই, বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয় আর সে রকম কোন অভিসন্ধিও আমার নেই, কেননা আমার তেমন কোন চাওয়া বা পাওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া খামোকা ঝুট ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বই বা কেন! সবে অবসর নেওয়া ছা-পোষা বৃত্তের মধ্যবর্তী স্থানে বসবাসকারী মানুষ অত ফুল নিয়ে কী করবটাই বা কি! ঘাসফুল পদ্মফুল! ধম্মকম্ম,পুজো আর্চা কিচ্ছু করিনা! তাই ফুল নিয়ে আর কি করব? তবে আমার ফুল একবারই খুব দরকার পড়ে, সেই পঁচিশে বৈশাখ! কবির প্রিয় কৃষ্ণচূড়া দিয়েই চালিয়ে দিই । আর এ ফুল সে ফুলও নয় যা বিশেষ দিনে বিশেষ মানুষ থুড়ি মানুষী কে হাঁটুমুড়ে হাত বাড়িয়ে দিতে হয়, সেই লাল গোলাপও নয়। সুতরাং ফুল বাদ।কারণ পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না,পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত কর। হৃদয় কুসুম ফুটুক,অপেক্ষায় থাকি।তবে পাপড়ি সমন্বিত সু অথবা দুর্গন্ধিত ফুল একদমই বাদ। যারা "ফুল" তারাই এ বাজারে ফুলের আলোচনা করে! আমি মোটেই তেমন এপ্রিল fool নই, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কুল কুল মাথায় ফুল বাদ দিয়ে একটু পাতার কথাতেই আসি। না তেঁতুলপাতা নয় তেমন সুজন আর কোথায়? ন'জন যে এক সংগে সেখানেই শোবে সে সুজন কই ! ফুল নয়, পদ্ম পাতারই কথা বলছি , পদ্ম পাতা। সেখানে শোয়ার কোন প্রশ্ন নেই।অবশ্য লোককথা ছাড়ুন, সেখানে পদ্মপাতায় কীসব ফেলে দিয়েছিল মহাদেব আর তা থেকেই নাকি লৌকিক দেবী পদ্মাবতী মানে মনসার জন্ম , ঐটুকু পাতাতে ভাবা যায়! ওখানে শোওয়া কেন থাকা,পা রাখা কিংবা বসাও অসম্ভব। মাইকেলের কবিতায় আছে না ধন মান যৌবন পদ্মপাতায় জলের মতোই ক্ষণস্থায়ী টুক করে কখন যে পড়ে যাবে তার ঠিক নেই,শোয়া তো দুর অস্ত!
লাজুক পাতা সন্ধে হলেই চোখ মুদে দেয়, অথচ সারাদিন মেঘ রোদের খেলায় বাতাসকে নিয়ে খেলে, জলকে নিয়ে কত খেলাই না খেলে! কখনো জলকে কোলে তোলে আর টুক করে নমিয়ে দেয়,কখনো বাতাসের সংগে আড়ি করে মুখ ঘুরেয়ে নেয়। বলে যেন,কথা কইব না যাও!গভীর জলের মাছ কখনো ঠুকরে দেয় নাল,কেঁপে কেঁপে ওঠে তার শরীর,ফাজিল ফড়িং উড়ে এসে ওর বুকে বসে আবার উড়ে যায়,আবার আসে যেন ওর মজা শেষ হতেই চায় না! পাতার ছায়ায় নিরাপদ শান্তিতে কত যে সাপ এলেবেলে পদ্মের নালকে জড়িয়ে খেলা করে, নানা রঙের, যেন কত দিনের পুরনো তাদের বন্ধুত্ব, কত আলাপ মধুময়,কত ছোঁয়াবুড়ি খেলা ! না,ফুলের কথা বলব না, এখনই অন্যভাবে নিয়ে নেবেন! সমস্ত পকুর পাতায় ছাওয়া, জল খুঁজুন দেখতে পাবেন না।পাতা শুধু পাতা।পদ্মপুকুর। এক দিকে পাতা সরিয়ে সরু জলপথ, ঘাটের পাথর পার হয়ে জলে নামুন, পেয়ে যাবেন তার নাগাল, ছুঁয়ে ফেলুন, আর আয় সবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি করে নাল ধরে টান মারুন দেখবেন এক সাথে ধরা দেবে অনেকে,যেন ওরা আপনারই অপেক্ষায় ছিল এত দিন! হাতে নিয়ে এক ফোঁটা চোখের জল- না না অযথা চোখের জল ফেলবেন কেন,এক ছিঁটে জল দিন দেখবেন অনেকগুলি মুক্তোবিন্দু টলমল করছে যেন কালের কপোলতলে সমুজ্জ্বল তাজমহল! ঝিরঝির বর্ষায় বই খাতা নিয়ে স্কুল ফেরৎ ছেলেমেয়েরা যখন মাথার ছাতা করে পদ্মপাতা ঢাকা দেয়, আহা! ইচ্ছে করে ওদের মতো হয়ে যাই! চুল ওঠা টাক ঢেকে রাখি পদ্মপাতায়! টিনের ছাদে শিল পড়ার শব্দ কেবলই আতঙ্ক ছড়ায়, ভাবতে পারিনা কোন মোহময়তা কিন্তু পদ্মবনে পাতার ওপর ঝিরি বৃষ্টির মধুর সুর, বড় ফোঁটার বৃষ্টি ধারার আবেগী তান, পাশের গাছগাছালির ওপর জলধারার আওয়াজ মিশে যে অপার্থিব পরিবেশ তৈরী করে তা জয়জয়ন্তী রাগে প্রাণিত আর সারাদিনমান যদি মেঘমল্লারে গান বাজে তবে আর দেখে কে, হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচেরে! তখন বলতে ইচ্ছে করে যেও না দাঁড়াও বন্ধু আরও বল কুকথা,,,
কুকথা যমক অলঙ্কারে সু।সুন্দর কথা। সুন্দর গন্ধ আছে পদ্মপাতায়। বাসমতী না হোক ঢেঁকিছাঁটা, এখন ৫০ টাকা কেজি পাওয়া যায় কিংবা রত্না বা যে কোনও চালের ভাত হোক, একস্ট্রা পদ্মপাতার গন্ধ , খাওয়ার আনন্দই বাড়িয়ে দেয়। তাইতো উদরের ধারণ ক্ষমতার
চেয়ে বেশী খাওয়া হয়ে যায় পদ্মপাতায় খেলে তার ওপর যদি পোনা মাছের ঝাল, ঝিঙা আলুর পোস্তুু আমের চাটনি আর ছাঁচি পেঁয়াজ থাকে তাহলে তো আর কথা হবে না!




