Sunday, January 30, 2022
কবিতার ডালপালা
Friday, January 28, 2022
গার্গী সেনগুপ্তের কবিতাগুচ্ছ
নিস্তব্ধতা প্রেমিকের ডাক নাম
বিষণ্ণতাই মেঘেদের প্রিয় মুখ
বেখেয়ালে যদি দিন যায় কার ক্ষতি
অনাময় পেতে জেগে থাকি উৎসুক।
আকাশের বুকে নীলখামে লেখা চিঠি
বৃষ্টিরা জানে ঝরা পাতাদের মন
সূর্যের আলো সব মানুষের ঘরে
উষ্ণতা দেয় আজীবন, অনুখন।
দুর্বোধ্যতা মনোযোগ ভালো বাসে
শূন্যতা গায় সকালের শিসপাখি
সব স্থলভাগ ভাইরাসে আঁকলেও
পৃথিবীর গায়ে শুশ্রূষা লিখে রাখি।।
বিভাস
১.
ধূ ধূ ওড়ে বালি
চর জাগে অনন্তের
চাবি পড়ে আছে
চির গহনের কাছে
মুখ তুলে দ্যাখো
ও আকাশ,ভাঁটিফুল
বলো ভুলে গেলে কেন?
২.
সোহাগী দোতারা
লালমাটি, পথ জানো?
কদমের পায়ে
বাঁশিও আছড়ে পড়ে
পার্বতী নূপুরে-
বিভঙ্গে অনঙ্গ সুর
অষ্টরতি কেঁদে যায়।
৩.
মেঘের শ্রাবণ
নীল চায়, জল চায়
পুড়ে যায় বায়ু-
স্পর্শহীন ধোঁয়া ওঠে
চরাচর ঢাকে
ভুল পথ ভ্রম শিলা -
তবে এসেছিলে কেন!
৪.
পথ, রেখা দাও
দাও পল্লবে বিদ্যুৎ
তারারাও চুপ
হিসেব জানেনা কোনো
ছায়াপথে ফুল-
শোনো, আলো জ্বেলে রেখো।
প্রাণ বাড়ন্ত
সিলিন্ডার প্রতি
এক জীবন আশা -আকাঙ্ক্ষা
ই এম আই এ মূল্য চোকাব।
দুহাতে ছড়িয়েছি গুণিতকে পাপ
সবুজ মুড়িয়ে হাইরাইজের ব্যস্তবাস,
বনজ কঙ্কালে
ভরে দিয়েছি মাটির গর্ভ।
বেলাইনে ঢুকে পড়ছে কার্বন মনোক্সাইড
পাপমুক্তির টীকা ফীকা থাকলে গুঁজে দাও ।
চোখের কর্ণিয়া পুড়ে বোবা বেগুনি রঙ
ফুসফুস হাপর টানা ফ্যাকাশে
এক ছিলিম ও -টু দে মা গো
সুখটান দিই।
বেঁচে যাই যদি,
সবুজ বুনে নেব বুকের ওড়নায়
শিমুলের পায়ে নিঃশর্ত ক্ষমা লিখে দেব
অনাচারী লজ্জিত মানুষ।
লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, মা গো, ইট পেতে...
প্রতিটি শয্যার পাশে
অমেয় প্রেরণা লিখে দিও।
ঘুমহীন কালরাত্রি-
লৌহচূর গেঁথে গেঁথে স্থবির।
সে সব রাত্রির পাশে
জোনাকি- অক্ষয় এঁকে দিও,
শব্দফুল ফুটে থেকো
প্রতিটি ক্ষয়ে যাওয়া নগরকীর্তনে....
Wednesday, January 26, 2022
লিপি চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ
Sunday, January 23, 2022
কবিতার ডালপালা
Kill a
man and you are an assassin. Kill millions of men, and you are a conqueror.
Kill everyone, and you are a god.”
কাব্যের আত্মার কাছ থেকে, প্রেরণাধন্য কবির কাছ থেকে কোন ধরনের সত্য আমরা দাবি করতে পারি? যখন অহমাত্মক বিনয়ের এক জীবন্ত চর্ষায় কবি লিখে চলেন একের পর এক স্বরভঙ্গিমা ! তখন কি কোনো প্রত্যয় কাজ করে তাঁর মধ্যে? নাকি ভাবের পরিখায় নিজেই ঝাঁপ দিয়ে খুঁজে নেন আত্মহননের আকুতি।
কবি রঞ্জিত সিংহের " ব্যাগভর্তি সন্ধ্যাতারা" কাব্যগ্ৰন্থটির পাতা ওল্টাই।
( প্রকাশকাল- আগষ্ট ২০০৯, প্রকাশক- অস্ট্রিক )
কবিতার চলনে অতীত বর্তমান মিশে এক অদ্ভুত আত্মনিরীক্ষা। ভাষা ও চিত্রকল্পের অবয়বে যেন যাবতীয় নির্বাণ ও নৈকট্য। অনুভূমিক কান্ডের মতো নানা চিত্ররূপ থেকে একটার পর একটা অনুযোগ গড়ে তোলে যে জাদুবাস্তবতা তা অনির্ণেয় অথচ আকাঙ্খিত। তেমনই একটি কবিতার দিকে চোখ রাখলাম----
"বস্তু থেকে বাস্তব। আমি কি পঞ্চভূত বর্জিত হব?
তখন কি আমি অবাস্তব?
দেওয়ালে টাঙানো হয়তো একটা ছবি অথবা তাও নয়।
একদিন রাত্রে যাঁকে দেখেছিলাম, স্বপ্নে না জাগরণে মনে নেই,
তিনি কে? বাস্তব না অবাস্তব কেউ?
মনের ভিতর ঝড়। পঞ্চজ্যোতি চোখে তাঁকে আমি যা দেখেছি,
তাকে অস্বীকার করি কি ক'রে।
শাদা লুঙ্গি, শাদা আলখাল্লা, মাথায় শাদা ফেট্টি,
গাড়ি থেকে নামলেন, চতুর্দিকে তাঁর মণ্ডলাকার দৃষ্টি
ছড়িয়ে আশীর্বাদ করে দ্রুত পদক্ষেপে গাছপালাময়,
যেন একটা ফার্ম হাউস, মুহূর্তে অদৃশ্য।
উনি কে? কেউ উত্তর দিল না, শুধু কথাহারা শীতল বাতাসি হাসি।
লোকজন আছে, দেখতে পাচ্ছি, কোথাও তবুও কোনো শব্দ নেই।
আমিই-বা এই স্থানের সন্ধান পেলাম কোথা থেকে?
টুকরো টুকরো ছড়ানোছিটানো অথচ সুরচিত সরল স্থাপত্য।
লম্বাটে,চৌকো,গোল করুগেটের আচ্ছাদন, মাথার দু-দিকের
ঢাল ছেয়ে গাছপালা, সবুজে সবুজ। বেগুনি, হলুদ, গোলাপি
হরেকরকম ফুল, হরেক রঙের প্রজাপতি।
হঠাৎ চোখে পড়ল, মহারাষ্ট্রীয় ভাষায় লিখিত:
'বাবার থান'।
বাবা কে? তারও উত্তর নেই।
প্রধান প্রবেশদ্বারের বাইরে আমাকে কে যেন জোর করে বসিয়ে দিল।
আজও বসে আছি। ফটক তো খুলল না।
এ-দিকে যে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যার গায়ে।"
( বাবা কে? তারও উত্তর নেই )
কবিতাটি একাধিকবার শান্ত হয়ে পাঠ করতে করতে অনুভব করলাম প্রতিটি শব্দ যেন যথার্থ, সঠিক অর্থবোধক এবং স্বচ্ছ চেতনাজাত। কবি কী লিখছেন বা লিখবেন এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলেই কেবল এ কাজ স্বার্থক হয়ে ওঠে। এই প্রসঙ্গে ‘Album of old verses’ বইতে ভালেরি শব্দের যে পূর্ণ শক্তির কথা উল্লেখ করেছেন, "I feel the full strength of every word for having waited for it" অর্থাৎ "সেটাই হচ্ছে কবিতার আসল কথা" এই প্রতিভাবনার ক্রমমুক্তি অনায়াসেই ঘটে রজ্ঞিত সিংহের কবিতায়।
চৈতন্য তীব্র যন্ত্রণাপ্রদ এক অস্তিত্বের নাম। তা সত্ত্বেও চৈতন্য কবির জন্য অপরিহার্য। আর এই চৈতন্যের যতাযথ প্রয়োগের ফলেই অদৃশ্য কিছুও দৃশ্য হয়ে ওঠে। রঞ্জিত সিংহের কবিতায় এই অপরিহার্যতা স্বাভাবিক ও স্বত্যোৎসারিত।
আবার চৈতন্য প্রজ্ঞাপ্রদ। কিন্তু সেই প্রজ্ঞা কবিকে জীবনভর যন্ত্রণায় দগ্ধ করে। তাই কবি বলেন, " বস্তু থেকে বাস্তব। আমি কি পঞ্চভূত বর্জিত হব?"
ভারতীয় দর্শনে পঞ্চভূতের সমষ্টিই এ জগৎ। সে অর্থে মানুষও পঞ্চভূত। ১৩০৩ সালে প্রকাশিত " পঞ্চভূত" প্রবন্ধ গ্ৰন্থে রবীন্দ্রনাথ এই পাঁচটি উপাদানকে নাম দিয়েছেন ক্ষিতি, স্রোতস্বিনী, দীপ্তি, সমীর ও ব্যোম। এই পাঁচ পাত্রপাত্রী মিলে একটি তর্কসভা গড়ে তুলেছে, যার কেন্দ্রে আছে ভূতনাথ। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। এদের পারস্পরিক তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে বরীন্দ্রনাথ অত্যন্ত সুকৌশলে তার নিজস্ব সহিত্যাদেশ প্রকাশ করেছেন। কবি রঞ্জিত সিংহ আলোচ্য কবিতাটিতে যেন তেমনই এক বার্তাবহ অভিসন্ধির প্রজ্ঞা ফুটিয়ে তুলেছেন।
তারপর একদম অন্তিমে ঘটিয়ে দিয়েছেন ঘটমানের তক্ষণশিল্প।
"হঠাৎ চোখে পড়ল, মহারাষ্ট্রীয় ভাষায় লিখিত:
'বাবার থান'।
বাবা কে? তারও উত্তর নেই।
প্রধান প্রবেশদ্বারের বাইরে আমাকে কে যেন জোর করে বসিয়ে দিল।
আজও বসে আছি। ফটক তো খুলল না।
এ-দিকে যে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যার গায়ে।"
আমি শুধু একাগ্ৰ মনোযোগে এই কবিতার দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু উত্তর পাচ্ছি না। আসলে উত্তর যে প্রত্ত্যুতর হয়ে প্রধান প্রবেশদ্বারের বাইরে আমাকে বসিয়ে রেখেছে। পাঠককে বসিয়ে রেখেছে। তাই
রবীন্দ্রনাথের কথাতেই বলতে ইচ্ছে করছে ‘গড়ের মাঠে এক ছটাক শস্য জন্মে না, তবু অতোটা জমি অনাবশ্যক নহে। আমাদের পাঞ্চ ভৌতিক সভাও আমাদের পাঁচজনের গড়ের মাঠ, এখানে সত্যের শস্য লাভ করিতে আসি না, সত্যের আনন্দ লাভ করিতে মিলি।’ (পঞ্চভূত / রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
Friday, January 21, 2022
সোমা দাসের কবিতাগুচ্ছ
খোলামকুচির মত ছড়িয়ে থাকে মেঘ
চারপাশে
অতি সাবধানে পা ফেলে ফেলে
এগিয়ে যাই , পাছে-
মেঘেরা উড়ে এসে জমাট বাঁধে শরীরে!
পাছে- ঢেকে দেয় আমার
প্রস্ফুটিত রূপ,তণ্বী শরীরে ফুটে থাকা উন্নত স্তন
শঙ্খের মুখের ন্যয় প্যাচানো নাভি!
মেপে মেপে ফেলি প্রতিটা
পদক্ষেপ - আমাকে উর্বশী করে তোলে!
পুং জল
ডালিম রঙা গোধূলির রং গায়ে মেখে
এক ঘুমন্ত কুক্কুরিকে চেটে চেটে
কাম নিবৃত্তি করতে চাইছে, যেন
সমস্ত পুংজল ঢেলে দিয়ে
মুক্তি পেতে চাইছে!
কয়েকটি বুনো মাছি ছুটে আসে
শবের গন্ধে...
অবকাশ
সময়ের অভাবে , অলিখিত থেকে গেছো।
সংসার থেকে বাঁচানো অবকাশেও
ছিলেনা তুমি! ছিল-
ঝর্ণার কলধ্বনি, ছিল-
পাতায় পাতায় কানাকানি, কেবল
কোথাও কোনো অবকাশে ই
ছিলেনা তুমি!
জীবাশ্ম
বিস্মিত চোখে অন্ধকার গহ্বরের ভেতর হাত ঢুকিয়ে
কিছু খুঁজতে লাগলে,
একসময় ক্লান্ত মুঠোয় উঠে এলো
কিছু জীবাশ্ম!
প্রদীপে পুড়ে যাচ্ছে এক
ব্যর্থ দিনান্তের শরীর, আর তুমি
মেন্ডোলিনের সুরে মুছে দিতে চাইলে
সমস্ত দস্তখত!
আস্তাবল
অর্ধ জীবিত অবস্থায় পড়ে আছি আস্তাবলে!
অশ্বখুরে লেগে আছে-
গত রাতের রণক্ষেত্রে জয়ের মাটি
তারাই জিভ দিয়ে চেটে
পড়ে থাকা দেহটাকে লাল মুক্ত করছে!
হেমন্তের বনে তখন
শুরু হয়ে গেছে পাতা ঝড়া।
এক.. দুই.. তিন... জানিনা,
জানিনা সে কটা হাত...!