Wednesday, October 6, 2021

শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় যাদব দত্ত

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় যাদব দত্ত 


দীর্ঘসুত্রতা 

ছবি ভাসিয়ে কেউ একজন ডাকছে 
বুকে যা গড়েছো এবার তা দিয়েও তুমি ডাকবে
তোমার মুখের থেকে বেশি জোর এই আলোর 
পথের ধারের কাঁটাগাছ ফু দিয়ে পিছনে ফেলবে 
চমৎকার আসছে যেনে শান্ত বাদাম গাছ কেঁপে
                                কেঁপে উঠলো তাহলে 

আতাগাছে  চালতাগাছে আর কথা নেই 
রোদের নরম পা এখন কেবলই উড়ুউড়ু 
চাইচাই চোখ জল ছড়াচ্ছে আকাশে আর হবে না
ওর শিশির এত সরল দাঁড় করানো যায় 
কেউ বলবে না হাতে হাত রেখেই দুর্বাঘাস হলো 
এঁটো মুখেই অহ্লাদ হলো দিনের প্রথম ফকির 
এই চারকোনা বাতাসে হাঁসের হলুদ পা পেরয় 
বুকের ষোলোআনা সব গানেই ঢুকে যায় 
নিরিবিলিতে ঘুম থেকে আবার ওকে তোলো 
দিনের সমস্ত জট ছাড়ানো ভাতের থালায় 
        

রিখ্টার স্কেল  

দুমদুম এদিক থেকে গিয়ে ওদিকে ফেরা নয় 
মাথার ওপরও গুড়গুড় করে ডাকছে
                                 কাদের ঘরের মেঘ 
চোখ থেকে কষ্টগুলো নামিয়ে রাখতে চাই 
ফুলতোলা চাদরের ভেতর বনের দরোজায় 
সিড়ির শরীর মন এখনো চকচক করে 
রাত পোহালো সরে আসা বলুক মনোভাব 
গালে টোকা দিয়ে ঘুমের নিস্পত্তি হোক 
মহুয়া গাছের মতো টুকটুকে ফুল পড়ুক 
একটু হেলে পড়া দিনের পর দিন দিয়েছো 
জল তবু তোমার এতো মাথা গরম কেন 
বাসকফুলের ইঞ্জিন ধার নাও 
টিয়ার ঝাঁক উড়ে গেলেও কেউ খুঁজে 
                            পাবে না বকবকম 
বাঁশির ফুটো তার চোখ এখনো টনটন 
সকালের ট্রেনে নামলো যে বউরিপাখি 
তার হাবুডুবু হলুদজল কে আর কতটা দেখলো 
পিপাসা ফস্কে যাচ্ছে  স্ক্রাপবুকে 
তবু চমৎকার ধরে রাখো ছায়া কলসি  


শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় অলোক বিশ্বাস

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় অলোক বিশ্বাস


বর্ণালী ঢাবা 

পোকাভর্তি কলমিশাক। পুরনো মাছভাজা। পাঁচমিশালি ডাল। দু'দিনের বাসী তরকারি। খুঁটিতে ধুকন্ত পাঁঠা। সব খাবারে ডালডার গন্ধ। নতুন ধরণের খিস্তাখিস্তি। অশ্লীলতার সংকরায়ন। ঝুলন্ত ক্যালেন্ডারে অর্ধনগ্ন নায়িকা। দুই মদ্যপ খেতে খেতে লিঙ্গ চুলকাচ্ছে। আকন্ঠ খিদের ড্রাইভার বিরক্ত ঢাবার অধর্মে। কিছু কাস্টমারের দেহে নয়া উপনিবেশবাদের চিহ্ন। মালিকের মেজাজে দাস ব্যবসার ইতিহাস। রাঁধুনিরা উনুনকে দোষ দিচ্ছে। টেবিলে উসখুসানো আরশোলা। সমস্ত গ্লাস নোংরা। মালিক ধমকাচ্ছে কাজের মেয়েকে। ঝাড়ুদার ধমকাচ্ছে মাছিকে। রুটি ফুলছে না আগের মতো। ভাত ফুটলেও নরম হচ্ছে না। মুরগী সরবরাহকারী পাওনার জন্য যাচ্ছেতাই ভাষা ছুঁড়ছে। মালিক ভাবছে পেছন ঘরে দু'চারজন উচ্চস্তনের বেশ্যা রাখবে। বিক্রি বাড়বে। লুকিয়ে চুরিয়ে বোতল বেচবে। হঠাৎ কোরে পঙ্গপাল ঘিরে ফেলছে। অভূতপূর্ব মেঘ আসছে। তোলাবাজ দলের সম্ভাবনা আছে। রাত্রে ঢাবাকে শিয়ালেরা দখল নেবে, পুরোহিত বলছে। বর্ণালী ঢাবা প্রত্যেক অঞ্চলে খুব পরিচিত...


বাজার অর্থনীতি 

প্রবহমান পারিবারিক কুয়াশা। ব্রা থেকে অবিরত দুর্গন্ধ। সারা বাড়ি ইঁদুর বিড়ালের গু-তে ভরা। স্তনের রেখায় মাছের আঁশ। স্তনের ভিতরে উড়ছে ধূসর বাদুড়। প্যান্টের পকেট ভর্তি পোড়াবাড়ি। স্যানিটারি ন্যাপকিনে কাক বসছে। কিচেনে ছুটছে বিদেশি মাকড়সা। বেসিনে নার্কোটিক মাখা শুকনো লালথুতু। কাজের মেয়েটা বিদেশি লিপস্টিক মেখেছে। পরিবারের মেয়েটা ডুবছে ব্ল্যাকহোলে। রাত্রে কেয়টিক ঘুম । ঘুমের আগে উল্টোপাল্টা চিন্তা। রাত্রে  বাগানে অস্থির পদশব্দ। বায়োলজিক্যাল যুদ্ধের কানাকানি। চিন্তাগুলো কার্নিশ পেরিয়ে কানাগলিতে হারিয়ে যাচ্ছে। পুরনো চিন্তার জায়গায় অন্য চিন্তা উঠলেও বাক্সবন্দি পেটেন্টে ফেঁসে যাচ্ছে। বিদেশি ওষুধে আর কাজ হচ্ছে না। ডাক্তারকে বলবো, ওষুধের পরিবর্তে অন্যকিছু দিতে। একই ওষুধ কতো বছর চলছে। ওষুধের ওপর অ্যালগি। অন্যকিছু পেলে হয়তো উল্টোপাল্টা চিন্তা থেকে মুক্ত হবে ভাতের হাঁড়ি...


শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় দেবযানী বসু

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় দেবযানী বসু 


শুভাকাঙ্খীরা ভালোবেসে 'জটিলা' ননদিনী 

জটিল জটিলতায় লতায় সুড়সুড়িপাতারা বেড়ে উঠছে না।
ফাইভ জির পরমান্ন ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে দেবতা ও অসুরেরা মিলে। দু দলেরই ফার্স্ট গিয়ারে চলা ডাইনোসর। ঘুমে শুধু গড়িয়ে পড়ি খাদে। তেত্রিশ কোটি দেবদেবী সুদে আসলে বেড়ে জীবনবিমার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের লিঙ্গে যোনিতে পরমাণু বোমা ফাটে রোজ। বারো হাত দেবতার তেরো হাত লিঙ্গ নিয়ে পথশোভা। জেলেরা চাষীরা জলে মাঠে কাজ করে লকডাউনের মানে বোঝে না। ব্রক্ষ্মার ন্যাংটো আত্মীয়রা খবরে খবরে কবরে কবরে খবরদারি করে।কপালে দুলালী দালালী সিঁদূর টিপ। বলির সম্পদ হতে চেয়ে চারণযোগ্যদের চিহ্নিত লাল দাগ পিঠে বয়ে বেড়ায়।





শুভাকাঙ্খীরা ভালোবেসে কুটিলা ননদিনী

ভিতর শরীরে স্বর্ণ চাপা দেখেছি। ক্রিয়াপদের কেন্নোমার্কা পদ।তাই ভর করে হাসপাতাল যাত্রা। তারপর শাটার টিপে আকাশ নামিয়েছি। বিশুদ্ধ সৌন্দর্য রতি রতি মেপে ঘিলুতে বসিয়ে নেওয়া। শরীর থেকে শরীরের দূরত্ব কিছুই না। তারো বেশি ঘিলুর দূরত্ব। সৎ কানামাছি কাউকে ভুল করে ছোঁয় না। পাতা দাও। আসন বানিয়ে নেব। সাগরজল ভেঙে জাহাজবাতি হারিয়ে গিয়েছে। বাঙালি বাঙালি করে হেদিয়ে মরছে হেদুয়ার জলে শ্রয়ডিঙ্গারের ব্যাঙ। গরমাগরম সিঙাড়া ছবি। মাল ছড়ানো মালদাভিস। মাল আমি পুরুষকেও বলি। গভীর সমুদ্রে স্তনের পার্শ্ববর্তী পেশিতে ফ্ল্যাপিং শক্তির রমরমা। রমণীয় রমণ শব্দটি ধাতব ল্যুমিনাকে তুলি বুলিয়ে চলেছে। রঙই শেষ কথা মেনে নিলে হাত তোলো।



শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় অভিজিৎ মিত্র

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় অভিজিৎ মিত্র 



নির্বোধ পঁচিশ

আকাশে এখনো ভাইরাসের গন্ধ
আগুন জ্বলবে
কোথায় দাঁড়িয়েছি বুঝিনি
পেটে রুটির স্বাদ মনে নেই
অক্সিজেন থমকে আছে
শুধু জানি রঙের মিছিলে আমার অধিকার
এ জন্ম কবে কখন হেঁটে ভ্যানিশ হবে
কোনদিন জীবাণুর আদিম থাবা ঘাড়ের ওপর
ধীরে ধীরে শক্ত হচ্ছি
এ জীবনে প্রশ্বাস ছাড়া কিছু চাই না
হঠাৎ শ্বাসহীন আগুন জ্বলবে
আমি আমরা দেখব না
অফুরান চুল্লী লাইন লম্বা হতে হতে দিল্লি অব্ধি
ভোর হলনার দেশে রাজার নীতি নয়
লাইনে লাশ দাঁড়াবে
একশ চল্লিশ কোটির আমি
ভাইরাসের হাতে মুখোশ-হীন ওটু-হীন
বৈশাখের কবিতাখাতা তুলে দিচ্ছি
একশ বছর পরেও সেই কবিতা
হয়ত কেউ কেউ পঁচিশ


পঁচিশের পর বাইশ

পঁচিশের পর যখন বাইশ আসে
আকাশ মুখভার করেছে
বাঁকানদী ডুবিয়ে দিয়েছে অর্ধেক বর্ধমান
দেওয়াল খসে খসে মাটির আধলা
আর আমি জবাকুসুম বলার আগেই
চারপাশ ডেল্টা ঘিরে ধরছে
এক চাপা আতঙ্ক
সবাই ডেল্টা চিনতে চায়,
যে দেশে ভ্যাকসিন নেই
শুধু মাইলখানেক লম্বা কুচকুচে মন কি বাত
ডেল্টা বই খুলে খাতা খুলে
ডি-বাই-ডিএক্স মাপতে শুরু করেছে
আস্তে আস্তে হাসপাতালের গলিতে দেখছি
লুডোর ছক্কা সাপ-মই ফুল-পঞ্জিকা
আর আকাশ জুড়ে অফুরন্ত বাণী
আমি রবি ঠাকুর শিখছি

জানি বাইশ এলেই
সে
মাঝরাতে আকাশের মেঘবাগানে
মিয়া কি মল্লার বাজায়
মুখভর্তি মুখোশের দাগ




শারদীয় সংখ্যা~দীর্ঘ কবিতায় অনিন্দ্য রায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  দীর্ঘ কবিতায় অনিন্দ্য রায়


অশ্বত্থপাতার রাত

 

অশ্বত্থপাতার রাত, প্যাঁচা উড়ে এল ইহলোকে

এদিকে জ্বরের ঘোরে রুদ্ধদল গুণতে ভুল করি

তবে কি হবে না লেখা? লেখা আর হবে না জীবনে?  

দুচারটে অচল কড়ি চাপা থাকবে বালিশের নীচে?

এসব ভাবনায় আরও হাই ওঠে, জলপটি কপালে

শুকিয়ে এসেছে প্রায়, কাগজের মতো মাথাব্যথা   

 

উঠতে গেলে বিছানায় ঠেলে দেয় ধূর্ত মাথাব্যথা

আর কোনও বন্ধু নেই, শত্রু নেই বুঝি ইহলোকে

আবার তো সে-ই হাত রাখে স্নেহে আমার কপালে

আমিও শিথিল হই, নিজেকে দায়িত্বহীন করি

ঘুম আসে ঘন হয়ে, ঢুকে পড়ি ক্রমে তার নীচে

কখনও একম আগে অভিজ্ঞতা হয়নি জীবনে

 

চাঁদ কি উঠেছে আজ? গাছেগাছে পাতার জীবনে

মুখ উল্টে পড়ে আছে জ্যোৎস্না? ওদিকে মাথাব্যথা

তাকাতে দেয় না আর চোখ মুজে শূন্যতার নীচে

একা শুয়ে থাকি, বাজে কোথাও কি ঢোল ইহলোকে

নাকি ভ্রম সবকিছু! দূর থেকে অনুমান করি

নিজের দুর্বল হাত কোনওক্রমে ঠেকাই কপালে

 

একবার দাঁড়াতে চাই, হলে হোক যা আছে কপালে

এমন সুযোগ আসে হয়তো বা সবার জীবনে  

বাতাস ছাড়া তো নেই কেউ, তাকে আলিঙ্গন করি

এবং সে চুমু খায়, মনে হচ্ছে, কমছে মাথাব্যথা

মনে হচ্ছে, চাঁদ থেকে কেউ নেমে এসে ইহলোকে

প্যারাসিটামল রেখে গেছে কোনও অশ্বত্থের নীচে  

 

নিজের শরীর হাতড়ে খুঁজি সেটা অসুখের নীচে

এক বিন্দু, দুই, তিন... বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে

আরোগ্য ছড়িয়ে আছে প্যাঁচাদের চোখে, ইহলোকে  

ট্যাবলেটের মতো ক্ষুদ্র, আগে তবে দেখিনি জীবনে   

নিরাময় মানে আমরা ভেবেছি সেরেছে মাথাব্যথা

তার লোভে জ্বরে পড়ি, তার জন্য কষ্ট ভোগ করি

 

আতিথি বানাই তাকে, দেহমধ্যে যত্নআত্তি করি

আর সে কোশের মধ্যে হিংস্র হয়, চেতনার নীচে

মহাবিস্ফোরণ ঘটে, প্রবল প্রতাপে মাথাব্যথা

অপস্মার হয়ে জাগে হাতে, পায়ে, ঘাড়ে ও কপালে

এমন ঝাঁকুনি, ভাবি, সব চাঁদ ডুবেছে জীবনে

একখানি বিশাল বৃত্ত প্রসারিত ইহলোকে  

 

যথেষ্ট বিক্ষোভ করি, ঘুষি মারি মাথায়, কপালে  

এই যন্ত্রণার নীচে যদি ফোটে কুসুম জীবনে

সেরে যায় মাথাব্যথা, ভোর হয় যদি ইহলোকে