Wednesday, October 6, 2021

শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় বাপন চক্রবর্তী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় বাপন চক্রবর্তী



ঐশ্বরিক

মহাজাগতিক সেই মলমের স্বাদ নিয়ে পাগল হয়েছ

মধ্যবর্তী গ্রীষ্মকাল ক্রমশ উত্তপ্ত হল রোমকূপগুলি

বিকেল গড়িয়ে এলে, কলমের সব কথা লেখা হল হলুদ পাতায়

সবদিকে রৌদ্রগাছ সবদিকে অনি:শেষ হাওয়া...

যেভাবে শরীরে সেই তরলের গ্রীষ্মদিন ধারন করেছ

সেইভাবে, যৌনতা শব্দটি ওরা, সকালে ভাতের সঙ্গে খায়...

শাশ্বত মাছের ঝোল; আর থাকে অভ্যাস শব্দটি...

অভ্যাস পকেটে নিয়ে রোজ রোজ গ্রহণ বর্জন;

গ্রহণ করেছ যেই তখনি তুচ্ছাতিতুচ্ছ দেহ

যাত্রাশেষে জলযানে বারংবার পীড়িত হয়েছে

আশ্চর্য নদীর গন্ধ যেভাবে মাংসের মধ্যে পাও

সেভাবে ঈশ্বর আজ বিকেলের পরাজিত জলে




স্মৃতি থেকে উদ্ধৃত


মনে হয় অন্ধকারে সে আমাকে ছুঁয়েছিল। আর আমি

জ্যামিতি বাক্সের মধ্যে কী খুঁজেছিলাম, এখন আর মনে পড়ে না।

এভাবেই বৃষ্টি আসে। স্যাঁতস্যাঁতে মুহূর্তে ভরে যায় সবকিছু...

মনে হয় অন্ধকারের মধ্যে, বৃষ্টির চেয়েও বেশি কোনও আর্দ্রতায়

সে আমাকে লিখে ফেলেছিল। 

তারপর মেঘলা হাওয়া দীর্ঘদিন আমাদের মুছে চলেছে...

এভাবেই সে বর্ষাকালের ভিতরে মাছ হয়ে ঘুরে বেড়ায়...



শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় নীলিমা দেব

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  কবিতায় নীলিমা দেব


জলের গজল


 

আমির খস্রুর মতো খোলা বিশ্রাম হবে হয়তো পাখির কেউ

ফুরসৎ হয়ে থমকে থাকা বেহিসাব

 

জলগুলি রেখে নির্দিষ্ট সাঁতার যে কারণে একা  

 

ছোট-ছোট জল বড়-বড় জলে প্রসব করে অজস্র শরত  

এভাবেই পাখির লোকাল

যেদিকে প্রস্তুতি নেয়, সেদিকেই নুইয়ে আছে লণ্ঠন

 


দুমুঠো মা কিতাব জুড়ে সন্ধ্যা   

 

শব্দের অনেক আগেই নীল   

 

 গ ও জলের গ্যাপে

               উপচে পড়ে অল্প অল্প নাবিক…

 

 


শরত ঝরায় সত্যিই ভালো

 

 

দেহে শাড়ীর কোনো নৌকোমি নেই

 

 বেড়ে চলা আঁচল

               যেকোনো শুরু ছাড়াই অন্তিম  

 

 রেডি জল কিছুতেই শিশির শিখছে না  

কোনো না কোনো ভুলের মধ্যে শেষ হয়ে গেলো সূর্য

 

আড়াই চালে দৌড়ে আসে বৃষ্টির নকল

তেঁতুলের জলের আগে পরে কিছু নেই

 

মিসিং ঘোড়া ঝরে ঝরে পরছে আঁচলের সংক্ষিপ্তে

না উলু না শঙ্খ

সমস্ত লাল ভিটের দিকে শীঘ্র ...



শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় বিশ্বজিৎ দাস

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় বিশ্বজিৎ দাস


হুল

মৃতদের ঘুম বাতাসে সবুজ হয়ে ওঠে
ওরা জানে, সমস্ত শিরার শেষ চেষ্টা আর
সব মাংস রক্তের উস্কানিতে লাফায় না যে!

ওরা এমনি এক জীবনের ছবি দেখেছিল
ওখানে স্বপ্নের লালা শুধুমাত্র আমড়াফল!
কোনো ভ্রান্তি নেই, সোজা হাঁটুমুড়ে বাস্তবতা

যে পারুক এই আলো খুঁজে পোড়াক অস্তিত্ব।
ডাগর চোখের কাছে একটা পোড়া সাপ নিয়ে
হাসতে থাকে মমি হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত...





গিরগিটি 

বিশিষ্ট নাগরিকের পিঠে হলদে তিল
দেশজুড়ে মাংস রপ্তানি নিয়ে হুল্লোড়
কেবল পায়রার পায়ের শব্দে বিশিষ্ট ভয় পান!

অথচ তামাটে মুখে লালমাটি স্বাদ
কত সাধ করে ঝাউগাছ, নাগরিক হে
তোমার প্রেমের দেশ, আহা গহীন রক্তশূন্য যে!

ঠিক নেই, সেই কবে গেয়েছিলে গান
বার্থটব আর টেবিলে নিঃসঙ্গ জল
এখন আশ্বিন মাস, এখন আকাশে দেখো চিল!



শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় অনুপ মণ্ডল

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় অনুপ মণ্ডল 



স্থানিক

হারিয়ে যাওয়া পালতোলা জলযান ও উঠোনের কুলগাছটার সঙ্গে
একই সরল রেখায় অবস্থান করার সুবাদে
একটা সুউচ্চ নারকেলগাছ
বহুদিন ধরে আমাকে ছায়া প্রদান করে চলেছে
সকালে উঠেই
সবার অলক্ষ্যে আমি রোজ নিভে যাওয়া চুল্লি থেকে
একটা করে সাদা পাপ চুরি করে আনি
আমার ভেতর মানুষের অবশিষ্ট বিষাদ ক্রমশ ঘন হয়ে উঠছে
আচমকাই একটা হরিণ
লাফ দিয়ে পার হয়ে গেল মাঝের সংকীর্ন পরিসর

পচা ডোবায় অতীত গল্পগুলোর সঙ্গে
একটা ছাইরঙা বেড়াল
আদরের সঙ্গে নীল রঙ মিশিয়ে আমাকে কেবলই ভয় দেখায়
চারজন মানুষ কফিনবন্দী একটা লাশকে কাঁধে তুলে নিয়ে
দ্যাখো,হনহন করে এদিকেই এগিয়ে আসছে
হারিয়ে যাওয়া জলযানের ঠিকানা লোকটা বোধহয় ঠিকই জানতো




একটা আত্মহত্যা এবং...

আত্মহত্যাকালীন অন্তর্বর্তী চোঁয়াঢেকুরে জীবন যেটুকু জেগে ওঠে
তা' এক সমাধিস্থ গহ্বর বিশেষ
হাত নেই পা নেই
চোখনাকমুখজিভত্বক কিছুই থাকে না
এক পাশে কাত হয়ে পড়ে থাকে মাথা
উদর ও উদরপূর্তি বিষয়ে
কাঁকড়াদের পরিযায়ী হওয়ার প্রশ্নই বারবার উঠে আসে
হাট থেকে কেনা ছিটের লাল ব্লাউজ ও জ্যালজেলে একটা সায়া
শূন্যে ঘুরে যাচ্ছে তখনও
ভোর না হতেই সব শ্বাপদ, পোকামাকড় এমনকি
বেঁজি ও খটাশও বাগানের চৌহদ্দি ছেড়ে চলে গিয়েছিল

পুলিশ আসতে দেরিই হল
উত্তরপশ্চিম কোণ বরাবর বাগানে ঢোকার চেষ্টা করতেই
বড়বাবুরই প্রথম নজরে এল
বাগানের পুরোনো বাসিন্দা অতিবৃদ্ধ এক গোসাপ
বর্ষার জলকাদা মেখে
ধীরে,অতি ধীরে বাগান থেকে নেমে চলে যাচ্ছে চিরকালের জন্য




শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় অনুপ দত্ত

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় অনুপ দত্ত 


হাজার বছর তোমার কথা ভেবে
(কবি জীবনানন্দ দাসকে প্রণাম জানিয়ে)

হাজার বছর তোমার কথা ভাববো বলে

বহু পথ হেঁটে সাজিয়ে রেখেছি সোনার কড়ি,

অন্ধ সময় হাজার বছর বিস্মৃত প্রায়

তবুও এক, ঘুমে থাকা সোনার স্বপ্ন গড়ি ৷


তোমার কথায় ঠোঁটের পাশে উষ্ণ বাতাস

শরীর অসাড় এখনও মরণ জাগা বোধ,

হাজার বছর পাখীর ডানায় সন্ধ্যা নামে

রোজ হাঁটা-পথে পালায় হিংসা বোধ ৷


হাজার বছর মৃত্যু নামে অনেক মারণ ঝড়ে

কত কিছু দেখি নিজের হিসেবে বন্ধ পোশাক খুলে,

গাছেরাও হয়তো নতুন পাতায় ভরায় সবুজ আঁখর

বহু পথ হেঁটে আমিও ঘুরেছি তোমায় ভাববো বলে ৷

 

পরিচয়-হীন হাজার বছর বর্ষামুখর দিনে

যা কিছু জমিয়েছি তোমার আঙ্গুল পরশ দিয়ো,

এগুলোই আমার তোমাকে পাওয়ার সোনার কড়ি

হাজার বছর  হেঁটে এরাই আমার পরম আত্মীয় ৷



অশ্রু মিলিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি জলে


এই জয়পুর শহরে এখন বর্ষাকাল

বেশ বর্ষাকাল ৷ আমাদের ট্যাক্সি -চালক

যুবরাজ ‘টোমার’ তাই বলছিল –

“গতবার সাব শুধু গরম ছিল ৷ ঐ যে

আপনারা বলেন ‘দারুণ অগ্নিবাণে রে ৷

ফুটিফাটা জমিন ৷ কোই গাছ নেহি

না জঙ্গল আছে ৷ শুধু গোলাপি পাথরে

হাজার হাজার মৃত প্রজাপতি লাশ ৷”

 

এবার জয়পুর দেখে মনে হল

নদীখাতে মুখ নামাতে পৃথিবী যেন

চমকে উঠলো ৷ আর অনেক

আগেই বর্ষা নামলো ৷

গোলাপি শহর – এখন সবুজে স্নান করে দাঁড়িয়ে ৷


গাড়ী থেকে দেখা গেল

অনেকেই ছাতা না নিয়ে হাঁটছে

ব্যাগে রাখা হয়তো ৷ ছাতা খুলছে না – মনেহয়

মরুভূমি আবৃত দেশে বৃষ্টি ভিজতে

ভাল লাগছে ৷

শুধু একজন – বৃষ্টি ভিজে ভিজে চলেছে একা

সবার থেকে সে আলাদা৷

তা দেখে

যুবরাজ ‘টোমার’ বলছিল –

'”কাল রাতে যার  বালি-বাড়ী ভেসে গ্যাছে

কোন নদী পাড় বার-জলে

সে একা অশ্রু মিলিয়ে দিয়েছে আজ গোলাপি শহর বৃষ্টি জলে “৷