|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কৃষ্ণ রায়
স্বপ্ন
সুরেশ জানে তাঁর দৌড় কদ্দূর। কিন্তু তাঁর নিজের সন্তানের ছোটো ছোটো স্বপ্ন গুলোকে সে সবসময় চায় পূরণ করতে। পূরণ করতে চায় তাঁর জন্য একটা রিমোট কনট্রোল গাড়ি কেনার শখ। পূরণ করতে চায় মহাদেবের ছেলের হাতে থাকা সুন্দর ঘড়িটার মতো একটা দামী ঘড়ি রতনও পড়ুক। রতন সেসব কিছু বোঝে না। সে বায়না করে শুধু। বায়না করতে কোনো ক্ষতি হয়না।
স্কুল থেকে বাড়িতে এসেই মাকে বলল, মা, মা, আজকে আমাদের স্কুলের দোকানটাতে একটা নতুন চকলেট এসেছে, চকলেট সঙ্গে না গিফ্টও পাওয়া যায়। আকাশ একটা রকেট পেয়েছে আজ। মা আমাকেও কিনে দেবে?'
- হ্যাঁ, বাবা, দেব। তোর বাবা আসুক আগে তারপর তোকে টাকা দেব।'
রতন খুশি হল খুব। এই খুশিটুকুই তাঁর জন্য বরাদ্দ। আর তারপর কিছু নেই। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রতন। মা অপেক্ষায় বসে থাকে। সুরেশ অনেক রাত করে বাড়িতে ফেরে। কাজ থেকে ছুটি হয় অনেক দেরি করে। আজকাল সেই কাজ ছাড়া কোনো কাজও নেই সুরেশের। বাড়িতে এসে রমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পায় না সে। পরিস্কার হয়ে খেতে বসে। খায়। তারপর ছেলের পাশে ঘুমিয়ে পড়ে সুরেশ। অন্যদিকে রান্না ঘরে বেঁচে যাওয়া ভাত খেয়ে বাসন মাজতে থাকে রমা। খুব সকালে আবার উঠতে হবে তাঁকেও। তারপর কাজে যেতে হবে। অনেক রাত পর রমা ছেলের ডানদিকে ঘুমোতে যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সুরেশ কোনোরকমে মুখ ধুয়ে ভাত খেতে বসে। রমা আরও অনেক আগে ঘুম থেকে উঠেই রান্না করে রাখে। রতনের যখন ঘুম ভাঙে তখন সে দেখে বাবার সাইকেলটা আর নেই। বুঝতে পারে বাবা কাজে চলে গেছে। আর সে টাকা চাইতে পারবে না। সে মায়ের কাছে টাকা চায় না। কারণ মা বলে দিয়েছে, মাস শুরু হলে পরে তাঁকে মা একটা নতুন স্কুলের ব্যাগ কিনে দেবে। তাই সে মায়ের কাছে এখন আবদার করে না।
সকালে ঘুম যখন ভাঙল রতনের তখন সে দেখে যে তাঁর বিছানার পাশে একটা নতুন স্কুলের ব্যাগ আর একটা রিমোট কনট্রোল গাড়ি। সে এইসব দেখে অবাক হয়ে গেল। সে এক মুহূর্তের জন্য চমকে উঠল।
সে কখনো ভাবতে পারেনি যে, সত্যি সত্যিই সে এগুলো পাবে। রতন বিছানা ছেড়ে বাইরে এল। দেখল, বাবা মা দুজনেই আজ বাড়িতে। কেউ কোথাও যায়নি। সে এই দৃশ্য দেখে যারপরনাই খুশি হল। সে এইরকম একটা দিনের কথা কখনো ভাবতেই পারে না। কারণ সে জানে, বাবা যেখানে কাজ করে সেখানে এক সপ্তাহ পর পর টাকা দেয়। মা যেখানে কাজ করে সেখানে তিরিশ দিন পরে টাকা দেয়। মা এসব তাঁকে বলেছিল। কিন্তু আজ তো পনের তারিখ মাত্র। যা হোক, আছ তাহলে সেও আকাশের সামনে গিয়ে রিমোট কনট্রোল গাড়িটা চালাতে পারবে। স্কুলের চঞ্চলকে দেখাতে পারবে তাঁরও নতুন ব্যাগ আছে।
হঠাৎ করে রতনের মা, রতন ওঠ, ওঠ' বলতেই রতনের ঘুমটা ভেঙে গেল।