Thursday, April 15, 2021

১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~স্বপন রায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||   

স্বপন রায়

রিয়ার ভিউ

জল পড়ছে      পাখি উড়ছে
দুটোই রিয়া

 
একটু আগে বিকেল সাপ্তাহিকে ঢুকেছে
       রিয়া মেজাজ না হারিয়ে কাকে যেন বলল
ধন্যবাদ
তারপর সময় নিল     পড়ছে আর উড়ছে
লোকাল দেখার দিন


দিনভর যা বলবো 
                তার অনেকটাই  ইমেল না হতে চাওয়া মৌসিনরাম
রিয়া সেখানে
রিয়ার টেকনিকও সেখানে

 
ছাতা খুলি
জল পড়ার শব্দে পাখি উড়ে যায়





১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~দেবযানী বসু

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||    

দেবযানী বসু

মায়াসরণীতে দুগ্ধবতী

শব্দসন্ধান দিয়ে রাখতে পারি বাম্পার সাজানোর নিয়মে।
বুড়ো আঙুল থেকে দশ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে দুগ্ধবতী গাভীরা
পঞ্চশস্যের সাধনা করছে আমৃত্যু।
কোটি টাকার চোট খাবার দুঃখ আদি তমাল গাছে লটকেছি।
ঘিমাখা মুখশ্রীটুকু দেয়ালে ঝোলানো।
আমাদের সহ্যশক্তি পাহাড়ে চড়া বেলুন ভোগে ল্যান্ডিংহীনতায়।
ঝরাতারারা পৃথিবীর হিম মেখে মহাকাশে ফিরে গেল।
কখনো কখনো সিঁড়ির ভাঙা আলোর সঙ্গে কথা বলেছিল।
একরাশ থকথকে দই দুঃখটুকু জমাট বাঁধিয়ে দিয়েছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ পেয়ে কম্পিউটার বটবৃক্ষ হয়ে আছে। 
জল চিরকাল খেলার তকমা পেল।
হাততালি পেল।
লটারির টিকিট পেল না।
শিহরণে কাঁপা হাতের রোঁয়ারা কাউকে আঘাত করে না ।
যাবতীয় ব্যতিক্রম মুরগিখামারের শৃগাল ব্যক্তিত্ব। 
বাঁশঝাড়ের শিরশির চন্দ্রমা ফেসিয়াল চুরি করে নামাচ্ছে চাঁদ থেকে।
অপেক্ষা কর যতদিন না ফিরি।


'আশা করি ভুলে যান নি' সংখ্যার জন্য



১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~মাসুদুল হক

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||    

মাসুদুল হক

ঘাসের ঘটনা 

প্রতিটি মিলন অসংখ্য মৃত্যুর সম্ভাবনা নিয়ে
                                               জেগে ওঠে 
বসন্তরাতের পাতার শয্যায়
আমি আমার মাঝে জেগে আছি...

আমার শরীর এক অনিরাপদ নিদ্রায় আটকে আছে।
আমার বাহু এখানে ক্লান্ত এবং আমার মাথাও রয়েছে এবং আমার পাগুলো আমার সত্তার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে বলে মনে হয়,
তবে আমার হৃদয় পূর্ণ নয়।

বনপোড়া ছাইয়ের ভেতর রোদ নিয়ে জেগে আছি 
প্রথম বৃষ্টি ফোঁটা জলের অপেক্ষায়... 
আসুক ঝড়, জেগে উঠবো
ফাগুন শেষে প্রথম ঝড়ের ঘটনায়।




১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~মোস্তফা মঈন

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||        

মোস্তফা মঈন

শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি—

কটা নতুন জন্মের জন্য

আজ আমি ভুলে যেতে চাই সবকিছু

আমি ভুলে যেতে চাই তুমি আমার শত্রু ছিলে

ভুলে যেতে চাই ছুরির দাগ, বন্দুকের নল

শত্রুর মুখ

 

যুদ্ধে আহত হয়েছিল যারা

তাদের শুশ্রূষা দিতে দিতে মরে যেতে চাই

একটা নতুন জন্মের জন্য

একটা নতুন পাখিময় সবুজ পৃথিবীর জন্য

আমি ভুলে যেতে চাই

তুমি আমার শত্রু ছিলে

শিশু রাসেলকে হত্যা করেছিলে

আমার বুকটা ঝাঁঝরা করে দিয়ে সিঁড়ির গোড়ায়

আমাকে লাশ করে দিয়েছিলে!

 

আমি এই রক্ত দিয়েই

তোমাদের ভালোবাসার মূল্য দিতে চাই

 

আমার দেহ থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের নাম

বাংলাদেশ

আমার দেহ থেকে আকাঙ্ক্ষার নদীগুলো বয়ে যায়...

আমার দেহ থেকে গড়িয়ে পড়া লাল অক্ষরে লেখা

লাল-সবুজেরদেশ

বাংলাদেশ 





১-লা বৈশাখ সংখ্যা || গল্পে~রঞ্জন মৈত্র

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||   

রঞ্জন মৈত্র

খিদের ওপারে


দুপুরে রিকশাস্ট্যাণ্ডেও কেমন ঘুমের ভাব। আলস্যটা প্রায় দেখতে পাওয়া যায়। ধারে কাছের দেশির ঠেক, গাঁজার জমায়েত, সাট্টার পেনসিল, যেন নেই। রিকশার উপর তেড়ে বেঁকে ব'সে চালক গান শুনছে। পানের দোকান থেকে আসা মহম্মদ রফির কবেকার সব গান। পরনের পোশাক, শরীরের হাড় গোড় পেশী বেশ গরীব গরীব। একটি গল্পের জন্য আজকাল দু' হাজার টাকা পাওয়া যায়। প্লটের খোঁজে হদ্দমুদ্দ হওয়ার ফাঁকে এই স্ট্যাণ্ড, ওই রিকশাঅলা। তার বাড়িটি দরমার বেড়ার হলে ঠিক হয়। দরজা ঢেউ খেলানো টিনের। এইটুকু বাবুয়ানিই যেন। টালির চালে ফাটল থাকলে ভালো, যা পয়সার টানাটানিতে ঠিক করা যাচ্ছে না। এবার গল্পটা দু' রকম হওয়া সম্ভব। এক, সারাদিন রিকশা টেনে সন্ধ্যায় দেশি এবং জুয়া। বাড়ি ফিরে যে কোন ছুতোয় ঝামেলা পাকিয়ে বউ পেটানো। তারপর রাত বাড়ে। যেমন সম্ভব পেট ভরে। এরপর কে মারলো আর কে মার খেলো সব গুবলেট হয়ে যায় বিছানায়। পরে পরে বাচ্চা হয়। তাদের ঠিকমতো পোশাক পড়াশোনা জোটে না। তবে বাচ্চা হতেই থাকে। এবং দ্বিতীয় রকম, ক্লান্ত শরীরে রিকশাঅলা টিনের দরজার বাইরে বসে খানিকক্ষণ। হাত পাখা চালায়। মাটির উনুনের পাশ থেকে ঘামে চুবচুবে লাল রঙের বউ মাঝে মাঝে পাশে আসে। জলের গ্লাস। সস্তার চা। বিড়ি। তারপর ওই কোনরকমের পেট ভরানো। বিছানায় অল্প চাঁদের আলো ভাঙা টালির ফাঁক দিয়ে। বর্ষাও তার নিয়মে আসবেই। তার আগে টালি সারানোর পয়সা জোগাড় নিয়ে খানিক আলোচনা। রাত আরও বাড়ে। দুজনে টালির ফাঁক দিয়ে ভাঙা চাঁদ দেখে একটু আধটু।  ভাবে, বাচ্চাদের খুব ভালো করে বড় করবে। অনেক বড়। গাড়ি, বাড়ি। ফুলের টবে সাজানো ব্যালকনিতে বসার চেয়ার হবে নিজেদের জন্য। হাতে সুন্দর কাপে সুন্দর চা। আর সেই চায়েও কখনও জ্যোৎস্না এসে পড়বে, রোদ কখনও। 

সবজির নূন্যতম দাম ৫০টাকা কেজি। মাছের ২০০। চালের হু হু করে বাড়ছে। আটার চিনির সর্ষের তেলের দরমার বেড়ার ঢেউ টিনের, বাড়ছে। অটো এবং টোটোর পাঞ্জা কষাকষির মধ্যে রিকশাস্ট্যাণ্ডে প্রায় সারাক্ষণই মাঝদুপুর। কাস্টমার টানাটানি করতে হয়। এবং খুব পরিচিত ছাড়া বাকি অন্যদের সাথে ভাড়া নিয়ে দুগগিবাজি না করলে সবদিক সামলে বাঁচা অসম্ভব হয়ে যায়। মদ জুয়ায় ওড়ালেও যায়, না ওড়ালেও যায়। ভাঙা টালির উপর সস্তার প্লাস্টিক। কালুর ঘুগনির দোকান, বণিকের মুদী দোকান, কানাইয়ের সাইকেল সারানোর গুমটি, কোথাও একটা ঢুকিয়ে দিতে পারলে বাচ্চাটা সংসারে কিছু আনতে পারবে। একদম ভোগে চলে যাবে তার চেয়ে তো ভালো।

তো গল্পটা মোটামুটি তৈরি। দুটো রকমেরই পাঠক আছে। তারপর বর্ষা আসে, শরৎ শীত মৌরলা মাছ। পত্রিকা আসে। দু' হাজারের চেক। চড়াই ঘুঘু রিকশা এসব দেশ থেকে উঠে যাবে যে কোনদিন।  নিয়মে বসন্ত আসে, গ্রীষ্ম। কোথাও মহম্মদ রফির গান বেজে যায়, অনেক পুরোনো সব গান।