Thursday, April 15, 2021

১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~অমিত চক্রবর্তী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||      

অমিত চক্রবর্তী

জট, এনট্যানগলমেন্ট

 

একটি কিশোর ফোটন একবার লাইব্রেরী মাঠে

সামান্য ছুঁয়েছিল এক কিশোরী ফোটনকে, সেই জট, এনট্যানগলমেন্ট

রয়ে যায় বিশ্বে, যেন কোয়ান্টাম ফিজিক্স আদর করে

আগলে রেখেছে দুটি সরল প্রাণ, জীবন এসে এক ঝটকায়

সরিয়ে দিলেও। “এত লিখি তোকে, তুই শুধু নিশ্চুপ,

তাই তোর নাম দিচ্ছি কথামালা।“এই ভাবে শুরু হয়েছিল

বিনিময়, আলতো ছোঁয়া দিয়ে শেষ যার।

সম্ভাবনা রয়ে যায়। আচ্ছা, বাবুল যদি থাকতো সন্ধ্যের চায়ে,

শোনাত কি কবিতা আবার? কথামালা, কাজলখোঁপা             

এইসব নিটোল শব্দ কি ঝঙ্কার তুলত

চেতনায় – ট্রেবল যেমন পিংপং খেলে কাঁচের দেওয়ালে?

যন্ত্রনা রয়ে যায় সঙ্গে। বাবুল যদি না লেখে, যদি মুখ গুঁজে পড়ে থাকে

ডিপ্রেশনে,  মন্দাভূমি আঁকড়ে? সেই জট, সেই টান

এনট্যানগলমেন্ট, পেরোবে কি পৃথিবীর অর্ধ গোলার্ধ? ছোঁবে কি তাকে?

কোয়ান্টাম ফিজিক্স আসবে কি শেষ রক্ষায়, আকুলতা নিয়ে?





১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~দেবাশীষ সরকার

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||    

দেবাশীষ সরকার

মায়াবী কুয়াশা অরণ্যে


ভাষা দিবসে আমার অব্যক্ত ভাষারা

পেয়েছিল কাঙ্খিত শব্দ ধারা ।

আগন্তুক স্পর্শে চোখ মেলে পারিজাত ;

চিৎকার করে বলে উঠি , ভালোবাসি ভালোবাসি ....

আঁধারের বুকে প্রতিধ্বনিত হতে হতে 

অস্তগামী রাতে ভেসে আসে , রাজি রাজি ......

আমার বিবর্ণ আকাশের নেভা তারাদের বুকে

জ্বালিয়ে দিই  রং মশাল । 

জলপরীর দেশে জাফরানি রং ঢালি চাঁদের গায়ে ,

স্বেত শুভ্র দেহের গলনাঙ্কে গড়িয়ে পড়বে ধীরে ধীরে ;

জোনাক আলোতে রোপণ করি আগামী নবান্নের ধান । 

কে জানে , তোমার দৃষ্টি পথে শ্রাবণ বেঁধেছিল বাসা 

নিরবে নিভৃতে ; চোখ ছুয়ে ধানের শীষ বুকে আসে প্লাবন

আমি ভেসে চলি অজানার হাতছানিতে ,

আর.......... 

তুমি হারিয়ে যেতে থাকো মায়াবী কুয়াশা অরণ্যে ।



১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~ইন্দ্রাণী পাল

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা || 

ইন্দ্রাণী পাল

পেরেক


ঘাটের সিঁড়িতে রোজই ঝুঁকে আসে একটা বেড়াল
তারও চোখে ধূসর লোভ, জলের দিকে
হঠাৎ তার মুখটা লম্বা হতে হতে আকাশ আর মধ্যাহ্নের
মাঝখানের ফাটলটা ভরাট করে দেয় আর বেড়ার ওপাশে
হেমেন মন্ডলের বউয়ের ভারী শরীরটা নড়েচড়ে ওঠে।
এক সুড়ঙ্গ থেকে আর এক সুড়ঙ্গের অন্ধকার মাপতে মাপতে
এগিয়ে আসা পায়ের শব্দ শোনা যায়।

আন্তর্জাতিক তারিখরেখার ওপারে সময়ের হিসেব ভুল হয়
অথচ ছাইরঙা স্যুট আর ট্রাউজার পরা লোকটা রোজই ঘাড়ে
পাউডার মেখে বিকেলের হাওয়া খেতে বেরোয়।
জলসীমার ওপারে জাহাজের ভেঁপু বেজে ওঠে একটা হলদে হয়ে যাওয়া কাগজ হাওয়ায় ওড়ার বৃথা চেষ্টা করে
এইসব টুকরো টুকরো দৃশ্যের পেরেক ঝুড়িতে কুড়োতে কুড়োতে
দিনের শেষে বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছে কিশোরী মেয়েটা।




১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~মানস চক্রবর্ত্তী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||     

মানস চক্রবর্ত্তী

একবার ভালোবেসেই দেখো 


একবার ভালোবেসেই দেখো না 
একবার ভালোবেসেই দেখো 

বসন্ত আসেনি বলে আপসোস করেছিলে 
একদিন , একেলা তোমার অস্থিরতা | 
শীত নয় বনে 
শীতকাতুরে দিন ছিল তোমার নিজের মনে 
একবার ভালোবেসেই দেখো না |  


গান গাইছে শান্ত পাখি 
পথের ধুলোয় আটকে গেছে 
তোমার করুণ অক্ষিদুটি , 
সম্পর্কে সাক্ষী রেখো 
উঠোন জুড়ে নকশা এঁকো 
একবার ভালোবেসেই দেখো না 
একবার ভালোবেসেই দেখো 
একবার ভালোবেসো |  



Monday, January 18, 2021

| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  অরিজিৎ চক্রবর্তী    

ডারউইনের চিঠি ( পর্ব- ১ )

----" চল, তোর বাড়িতেই যাই আজ।"

---" এই যে বললি,কার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে যাবি !"

---" বলেছিলাম, এখন বলছি যাবো না। তোর কোনো অসুবিধা আছে?"

---" একেবারেই না। আমার আবার কিসের অসুবিধা!"

বিকাশের চোখ তখন লুকনো জলে চকচক করছে।আর সম্মোহ তার প্রিয় বন্ধুর হাতের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা ছড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে লিন্ডসে স্ট্রিটের মুখটাতে। আর ভাবছে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা পৌঁছে যাবে বিকাশের বাড়ি। তারপর বিকাশের মন খারাপের অন্ধকারে সামান্য হলেও আলো জ্বালিয়ে দেবে সাধ্য মতো।

---" এতকিছু ঘটে গেল তুই একটা ফোন করলি না।"

---" তোর নম্বর জানতাম না।"

---" বাল। নম্বর জোগাড় করতিস! চেষ্টা করিস নি বল।"

---" না, করিনি! বিদ্ধস্ত হয়ে ছিলাম।

শেফালির মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না। প্রথমে ও জানতো না রোগটা সম্পর্কে। তারপর একদিন জেনে গেল কিভাবে যেন। কিন্তু এই জেনে যাওয়াটা আমাকে বুঝতে দেয়নি। তখন আর কারো কথা মনে আসেনি। তোর কথাও মনে আসেনি। মন ওকে ছাড়া আর কাউকেই মনে জায়গা দেয়নি। "

---" তোর কষ্টটা অনুভব করছি! "

ট্যাক্সি শ্যামপুকুর স্ট্রিটে এসে থামল। সম্মোহ জোর করে ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে বিকাশদের বাড়ির গলিতে পা বাড়াল। শেফালি নেই। কিন্তু ওর আন্তরিক স্মৃতি যে ভোলবার নয়! মানুষ চলে যায় অথচ তার ওম্ ঘিরে থাকে!

সম্মোহ বিকাশের দেওয়া লুঙ্গি পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। দেওয়ালের এক পাশে শেফালির ছবি। অল্প বয়সের সদ্য বিয়ে হওয়া ছবি। সম্মোহ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকল। ভাবনার ঢেউ ভাসিয়ে দিলো সম্মোহকে।

---" সম্মোহদা এ্যাতো মদ খাও কেন? কি পাও ওসব ছাইপাশ খেয়ে?"

---" নেশা পাই! নেশা!"

---"একটা বিয়ে করো দিকি, মদের থেকেও বেশি নেশা পাবে! লীমাদিকে পাওনি! তাতে কি! দ্যাখো এখনো কেউ তোমার অপেক্ষায় আছো! এক পাখির ডাকে কখনো ভোর হয়! আরেক পাখিকেও ডাক দিতে হয়!"

---" আরে বিকাশ, শেফালি যে দার্শনিক হয়ে যাচ্ছে! "

বিকাশ হেসে ফেলে। সঙ্গে সম্মোহ।

---" কি খারাপ বলেছি! তোমরা হাসছো! " শেফালি অদ্ভূত স্বরে মুখ ভেঙচি দেয়।

সম্মোহ আবার হেসে ফেলে। বলে দিদিমণি এতদিন বাদে এলাম একটা জম্পেশ চাট বানিয়ে দাও!"

---" সে না হয় বানিয়ে দেব। কিন্তু কথা দাও দুটোর বেশি তিন পেগ হবে না!"

--- " আচ্ছা বাবা তাই হবে।প্রমিস। তবে তোমার বরের জন্য দুটো আমার জন্য একটা বেশি বরাদ্দ। অতিথি বলে কথা!"

----" হ্যাঁ বুঝেছি নারায়ণ! "

পুরনো দেওয়াল ঘড়ির শব্দে অন্যমনস্কতা কাটল। সময় যেন বলে দিল যাকে খুঁজছো সে নেই।তার না থাকার মধ্যেও সময়ের কাঁটা আছে। সেই কাঁটা যেন বিঁধিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তকে।

বিকাশ চা- বিস্কুট হাতে ঘরের ভেতরে এলো।সম্মোহকে বললো," নে, চা খা।"

----" খাচ্ছি। তোর?"

----" এই তো!"

---" কি ভাবছিস?"

----" স্মৃতি!"

---" মানুষ বুড়ো হলে স্মৃতিই ভাবে!"

----" ঠিকই বলেছিস। মানুষ বৃদ্ধ হলে স্মৃতিই ভাবে!"

---" বাড়িতে রান্নাবান্না কে করছে? লোক রেখেছিস?"

---" নারে লোক রাখার অনেক হ্যাপা। আমাদের পাড়ায় একজন ভদ্রমহিলা হোম ডেলিভারি শুরু করেছেন বছর খানেক হলো, ওনার থেকেই খাবার নিই। আর একটি আছে, সে ঘরদোর পরিস্কার করে বাসন মেজে দিয়ে যায়।"

---" ভাগ্যিস দেখা হলো বল। না হলে এত কিছু জানতেই পারতাম না।"

---" শোন আমার সঙ্গে কদিনের জন্য বাঁকুড়া চল। ঘুরে আসবি। আশাকরি তোর খারাপ লাগবে না।"

--" যাব রে!"

---" পরশু আমি ফিরব। আমার সঙ্গেই যাবি তুই। "

---" ঠিক আছে যাব।"

বিকাশ আপত্তি করলো না। সম্মোহ বিকাশকে জড়িয়ে ধরলো।