Friday, December 11, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ রাখী সরদার ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   

রাখী সরদার [পাঁশকুড়া]

আহুতি

আমি  ও আমার কবিতার মাঝে
আগুন ধরাতে বললে!

হে প্রাগৈতিহাসিক অগ্নি
পুড়িয়ে দাও আমার অলীক সুগন্ধ
সমস্ত শব্দের ক্ষুধা

ধ‍্যানের ভিতর সাদা সাদা ছাই
অক্ষর সমান ভারী,কিভাবে
ধারণ করি! মাথার উপর
জ্ঞানী আকাশ স্তব্ধ উদাসীন।

কিছু বোঝার আগেই
ধূসর খাতাটি ডানা মেলে
উড়ে গেল আকাশ পেরিয়ে...

         
অভিমানী

দূরত্ব ফুরিয়ে যে নদী গোপনে কাঁদে
তুমি কি বোঝ তার দহন?

সে বিষাদ আগুনে পুড়ে কাঠ
মাছের নীরস ঠোঁট,ক্ষত ভেঙে
ঢেউ গুলো যেভাবে করুণ...
ভয় হয় তলহীন অতল,
টেনে নেবে নিঃশব্দ অধরে।

যদি তাই হয়
নদীর বিষয়ে ভুলে যেও

আত্মধ্বংসে নদী ও নারী
দুজনে অশনি ওম
শূন্য স্রোতে ছাই হয়ে পড়ে।

          
নিঃস্ব হ‌ওয়ার দিনে

কতদূর বয়ে যায়
গোপন বাতাস? কতভাবে
জমতে থাকে বুকের কুয়াশা?

জানা নেই... কিছু জানা নেই

দিগন্তরেখায় কাঁপে
ঠান্ডা ভবিষ্যৎ, কাছে দূরে
দেহজ বিষাদ

অনাদরে মাথা নীচু আমলকী ছায়া
গাছেরা দাঁড়িয়ে শূন্য মনে,
ক্ষত ঢেকে চুপচাপ...

তীব্র হি-হি-অন্ধকারে শুনি
পতনের শব্দ,শুধু কাঁপনের শব্দ...


দুরন্ত সমুদ্র

সবাই বললো -তুমি নাকি আস্ত পাগল!

রাতের পর রাত কবিতা লেখো,
খিদে পেলে সিগারেট খাও
কাম,ক্রোধে নিজেকেই খুন করো
অক্ষর ছুঁড়ে ছুঁড়ে!

তোমার প্রতি সবার দারুণ অবিশ্বাস

ওরা ভাবে তোমার
নিঃশ্বাসের বায়ু মলিন...বিপজ্জনক
কাছে গেলেই নিঃস্ফলতার বোঁটকা গন্ধ,গা গুলিয়ে ওঠে।


আমার তো মনে হয়
তুমি আরও, আরও সাংঘাতিক...

মানুষের মাঝখানে টিকে থাকা
এক কঠিন অবজ্ঞা,যার সংস্পর্শে
বুকের ভিতর দাউ দাউ বিশৃঙ্খলা

একমাত্র চোখ, তোমার চাহনির
পুষ্টতায় কেঁপে ওঠে ভিতরের মোহনা,
তিরতির জলের শব্দ...জলচ্ছলে
ভেসে যাই,টের পাই চঞ্চল উন্মাদনা...

                
সে ও তার বিগ্রহ

ধীরে,ধীরে জাগো মাধবীলতা
স্বপ্নের কোরকে মাথা রেখে
সে এখন ঘুমায়...

কাকে দেব আকুতির নৈবেদ্য
দুঃখ এখন চায় উষ্ণতা
আনন্দসংকুল আমলকী ফুল।

সে কী জেগেছে তবে!
পুরাতন দ্বন্দ্বদৃশ্য ফেলে চিনেছে
শরীর পরম,
প্রসন্ন অন্ধকারে জ্বলে ওঠা
আমার সম্পূর্ণ।

Tuesday, December 8, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ রণজিৎ অধিকারী ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
রণজিৎ অধিকারী

প্রথম কাব্যগ্রন্থ "প্রেম ও রাত্রির কবিতা", যদিও নিজস্ব কাব্যভাষা খুঁজে পেতে আরো দশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সমাজ ও সময়কে একটা বিপরীত কোণ থেকে দেখার চেষ্টা করেছি " আস্তাকুঁড়ের কবিতা" বইটিতে, ঠিক তার পরের বইতেই আরো বড়ো ব্রহ্মাণ্ড, তার অদৃশ্য জগৎকে বুঝে নেওয়ার অক্ষম চেষ্টা। 
"উই পোকা ও নাক্ষত্র" থেকে পরের কাব্য "টেথিস সাগরের স্মৃতি" র কবিতার দূরত্ব অনেকখানি, ভাষা তার অভিমুখ বদলেছে। তারপর কখন অজান্তে বাইসন তার ভঙ্গি নিয়ে অরণ্যে এসে দাঁড়িয়েছে, তাও কত লক্ষ বছর আগেকার, আমরা তার কত কত পরে একদিন সন্ধ্যার আগে বনে বাইসন দেখতে গেছি।টের পেয়েছি বাইসন তৈরি হওয়ার কত আগেই মস্তিষ্কের ভেতরে তার সম্ভাবনা প্রস্তুত হয়েছে ক্রমে ক্রমে। 















একটি প্রতিবেদন

মেয়েটি ঈষৎ দুলতে দুলতে সেই ছন্দের ভেতরেই আর্তনাদ করে ওঠে, 
শূন্য মনে হয় সব ; যেন আজ সব শালপাতা ঝরে পড়বে। 
তাকে এই ছন্দ দিয়ে চলে পুরুষটি —এক মূঢ় বৃষের মতো। 
 ...। এর কোনো অর্থ নেই তোমার মনে হবে। তুমি 
পাশে দাঁড়িয়ে যদি অনুপুঙ্খ দেখ —মেয়েটির সমূহ লজ্জাস্থান ঢেকে   
                                                                পুরুষটির দেহ।
তুমি যা দেখতে পাবেনা —কেন মেয়েটির এসময় খালি
নদীপাড় দিয়ে হেঁটে যাওয়ার স্মৃতি মনে আসছে! 
গা শিরশির করে ওঠে নদীর হাওয়ায় ; দর্শক তুমিও 
                                       তাদের শীৎকারে কেঁপে উঠবে।  
ছলাৎছল ধ্বনির ধাক্কা পাড়ে এসে লাগছে। 
পাড় কোথায়! — এই পায় যেন, এই হারায়।  
তখন আসুরিক বলে পুরুষটি  দু'হাতে পৃথিবীশুদ্ধ শূন্যে তুলে নেয়,... 
দেওয়ালে ঠেসে ধরে...। একটা বড়ো গর্ত শুষে নিচ্ছে নাক্ষত্র তেজ। 
মেয়েটি তখনো ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে... আর 
ছন্দ কীভাবে সবকিছুকে নিঃশেষে ধ্বংস করে দেয়!      
তুমি এবার অনুপুঙ্খ থেকে চোখ সরিয়ে লং-শটে রোদ ও নিসর্গ পেরিয়ে 
আকাশ নক্ষত্রের দিকে চলে গেলে সব ঝাপসা হয়ে আসবে। 

                   

ঘড়ি, সময় মাপার যন্ত্রবিশেষ

ঘড়ির মতো এক কুৎসিত যন্ত্র যে কিনা দায়িত্ব পেল সময় মেপে দেবার! 
কারুর মনেই হয়নি এইভাবে মাপজোখ 
অন্য গ্রহেরা, দূর ছায়াপথের গ্রহেরা 
                                        ভালো ভাবেনেয় না। 
যেমন আমরা কখন বের হচ্ছি গর্ভ থেকে, কখন 
শেষতম নিঃশ্বাস ফেলছি ...  ভূমিকম্প, 
সমুদ্রের ফেঁপে ওঠার সময়কাল নিয়তি হিসেবে না-দেখে 
ঘড়ির মেপে রাখা সময় লিখে রাখছি। 
যেভাবে ঘড়ি প্রতি রাতেই এক নির্দিষ্ট সময়ে 
পৃথিবীর বাচ্চাদের ঘুমোতে পাঠায় 
বাবা মাদের আরেকটা সুযোগ দেওয়ার জন্য। 

আমাদের জাহান্নামে নামার সময়সূচি, 
                                                         স্বর্গারোহণ পর্ব ... 

ঘড়ির মতো এক কুৎসিত যন্ত্র কী করে দায়িত্ব পায় 
এত বড়ো গভীর সময়কে মাপার! 



প্রণয়বিষয়ক

মেয়েটি দেখিয়ে দিতে চাইলে পুরুষটি বলল, 
— কোনোকিছুই শিখতে চাইনা, আমি 
প্রত্যেকবারই আনাড়ির মতো সবকিছু শুরু করতে চাই। 
ভালোবাসা কোনো পেশাদারি কাণ্ড নয়। 
কিন্তু মেয়েটি তার যৌবনের অহংকারে ঝামটা দিয়ে ওঠে
আর দাবি করে —পৃথিবীতে কিছু জিনিস 
ঠিক সময়ে শিখে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন, 
কড়াইটা ঠিকঠাক ধরতে পারা —হাতে তাপ না লাগে, 
আঙুল কখন কতখানি বাঁকিয়ে নিতে হবে, 
হলুদের পরিমাণ,  ঠিক সময়ে রাতপোশাকের ফিতে  
খুলতে পারার নৈপুণ্য... কখনোই কোনো 
আনাড়ির কাজ নয় আর বারবার ভুলভাল করে ফেলা 
প্রণয়কে দীর্ঘায়িত করেনা। 
বিদ্যুৎচমকের মতো হঠাৎ আসা এক তাড়নায় 
চুম্বন করতে গিয়ে অমসৃণ দেওয়ালে পুরুষটির 
হাত ঘষে যায়... তখনই একটা পুড়ে যাওয়া গন্ধ ওঠে  
বসানো রান্না থেকে। কিন্তু এসবকিছুকে অস্বীকার করে
পুরো ঘরটা তখন হাওয়ায় ভাসতে থাকে। 
অসহায় যুবতী তখন হাতের কাছে এগিয়ে দেয় —
কীভাবে আর কোনটার পর কী...  যদিও 


পৃথিবীতে আজপর্যন্ত প্রেমিকেরা কিছুই শেখেনি বরং 
তাড়াহুড়োয় গিঁট পড়ে যাওয়া রাত পোশাকের ফিতে 
শেষমেশ খুলে দিতে হয় সঙ্গিনীকেই! 

পৃথিবী, ঘুরতে ঘুরতে যখন জট পাকিয়ে যায় তার 
নিজেরই সুতোয় যেন এক অদৃশ্য নারী এসে তাকে 
উদ্ধার করে দেয় সমূহ বিশৃঙ্খলা থেকে। 


কোথা থেকে শুরু

আমরা সঙ্গমের আগে রেখেছি পোশাক খোলার উৎসব। 
—যেন এই এখান থেকেই শুরু ; যেভাবে একটা লোক 
আঙুল দিয়ে দেখায় দূরের কোনো গ্রাম বা নদী। কিন্তু 
আদপে তা ঠিক কোথা থেকে শুরু! 
বেশিরভাগ লোক —যারা দ্রুতলয়কেই গান বোঝে, তারা
কখনোই টের পায়নি যন্ত্রগুলোর সুর বেঁধে নেওয়া, 
আসরে সন্তর্পণে তাদের পোশাক খুলে রাখা থেকেই 
                                                  হতে পারে প্রেমের শুরু। 
তুমি যদি খুব তাড়াহুড়ো না করো তো আমাদের 
পোশাক খুলে একটা সাদা পাথরের ওপর রাখো। 
যদিও তাকাতে পারবে না আর তুমি কাঁপতে কাঁপতে 
হয়তো লক্ষই করবে না —যে তখনই, ঠিক তখনই 
স্তনবৃন্তেরা জেগে ওঠে এবং সুগন্ধি ছড়ানো শুরু করে। 
পোশাকের মধ্যে যে ছিল ভেদ বোঝানোর চিহ্নমাত্র, সে
তখন হয়ে ওঠে এক অপরূপ আধফোটা ফুল —তার 
ঠোঁটগুলো তখন শুধু কথা বলতে চায়! 
আমরা যদি সত্যিই শুরু করতে চাই ধীর লয়ে তবে 
দ্রুত তানকারির আগে বিলম্বিত ওঠানামা —তাকে 
দীর্ঘায়িত করি এসো। 

এখনো আমাদের জন্য আছে একটা খোলামেলা পৃথিবী
— আর কোথা থেকে প্রেমের শুরু! 
সঙ্গমের আগে, পোশাক খোলারও আগে এসো খুঁজে নিই 
পোশাক গুছিয়ে রাখার একটা সাদা পাথর। 


দুপুরলিপি

এখানে অনেকটা দুপুর, আর বড়ো একটা নিমগাছ। 
খাঁজকাটা নিমপাতার ভেতর দিয়ে তাকাতে 
এত ভালো লাগে! 
একেকটা পিঁপড়ে পৃথিবী মাথায় করে আনছে, তাদের রাস্তায় 
একটা টগর ফুল...  রাস্তা বেঁকে যায়। 
অনেক বড়ো সময়কালের ভেতর এই দুপুর, পিঁপড়ের 
সারির যেকোনো একটা পিঁপড়েরই মতো। 
কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে! 
দুপুর এখানে অনেকটা। কোনোদিন টুকরো টুকরো করে 
কিছু কেটে রাখছিলাম পাশে —কাঠের টুকরো, সকাল, 
বিকেল, সন্ধে ... দুপুরটা একটু বড়ো ; 
নিজের হাতে কাটা তবু ছোটো বড়ো হয়ে যায় ফালি! 

জানালা থেকে দেখা যায়, এই রৌদ্রে রাস্তায় ঝুঁকে 
কাজ করা শ্রমিক —ওর নিজের কোনো দুপুর নেই, 
ওর রাত্রিটা বড়ো করে কাটা। 

উপমারা হারিয়ে গেছে, কিন্তু একটা শূন্যস্থান থেকে 
আমাকে দেখছে কেউ —একটা হতে চাওয়া কবিতা! 

Sunday, December 6, 2020

| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
| নভেলেট | 
অরিজিৎ চক্রবর্তী  
ডারউইনের চিঠি 
( পর্ব- ১৪ )

এরকম কত কিছু মাথায় আসে আবার মাথা থেকে বেরিয়েও যায়। মাঝে মধ্যে একা লাগে। আবার চারপাশের প্রকৃতির দিকে তাকালে একাকিত্ব কেটে যায়। শাড়ির খসখস শব্দ তুলে বুলির মা চলে যায় রান্নাঘরের দিকে। শূন্য ফাঁকা দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে থাকে সম্মোহ।লীমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। ফেসবুকের ছদ্মবেশী আইডি খুলে লীমার প্রোফাইলে ঢুকে যায় সম্মোহ। দেখে বহুদিন আগের একটা ছবিকে প্রোফাইল পিক করেছে লীমা, ছবির সঙ্গে কয়েকটা লাইন, "বহুদিন মনে ছিল আশা,ধরণীর এক কোণে রচিব আপন মনে, ধন নয় মান নয়, এতটুকু বাসা, মনে ছিল আশা"।

সম্মোহের হাসি পায়, মনে মনে বলে, বিড়াল! শ্রডিংগারের বিড়াল! অদ্ভূত সেই ঘটনার কথা মনে আসে। একটা বিড়াল বন্দী আছে স্টিলের বাক্সে। যার মধ্যে অবশ্যই জীবটার নাগালের বাইরে রয়েছে আরেকটা ব্যবস্থা। একটা নলে সামান্য খানিকটা তেজস্ক্রিয় পদার্থ। এতটাই কম যে একঘন্টায় তার মধ্যে থেকে হয়তো বা শুধু একটা পরমানু ভাঙবে। আবার হয়তো বা সেটাও নয়। যদি ভাঙে, তবে আয়োজন অনুযায়ী রিলে ব্যবস্থায় হাতুড়ির আঘাত পড়বে হাইড্রোরাসায়নিক অ্যাসিডের একটা ফ্লাক্সে। বেরোবে বিষাক্ত গ্যাস। মরবে বেচারা বিড়াল।

আজকাল লীমাকে ওই বিড়ালটার মতোই অসহায় লাগে সম্মোহের। "বিজ্ঞানী আরউইন শ্রডিংগার আপনার এই কাল্পনিক পরীক্ষা পদার্থবিদ্যার এক অমূল্য সোপান। আর আমি সম্মোহ চ্যাটার্জী, আমার জীবনে এটাই বিরহের গান।" কথাগুলো বেশ জোড়ে জোড়ে আউড়ে নিজেকে হালকা লাগে সম্মোহের। কারণ, সময়ের কাছে ফুরফুরে করে নেবার মধ্যে একটা অহংকার আছে।এই ধরনের অহংকার আঁকড়ে সম্মোহের তৃপ্তি! না পাওয়ার বেদনায় অমলিন প্রলেপ। শুধু একটাই দোষ তার, সে বড় বেশি কথা বলে। একবার শুরু হল তো থামতেই চায় না। বলতে বলতে কোথায় যে চলে যায় সে নিজেও জানে না। এখানকার লোকে তাই হেসে বলে বাগাড়ে বুড়ো। অথচ সম্মোহ ততটা বুড়ো নয়। বয়সটা এই শ্রাবণেই একষট্টিতে পড়েছে। দেখলে বোঝা যায় না। লাল টি শার্ট আর ব্লু জিন্সে পঞ্চাশের বেশি মনে হয় না।

লীমাকে মাঝে মধ্যে দেখতে ইচ্ছে করে। আবার করেও না। ফেসবুকের পোস্ট গুলো দেখলে সম্মোহের গা জ্বালা করে। সম্মোহ বিরক্ত হয়। লীমা যেন তার জীবন থেকে জীবনের পূর্ণতাটা কেড়ে নিয়েছে। লীমারও বয়স বেড়েছে। চামড়া কুঁচকেছে। কিন্তু বুক ঝোলেনি। সুচরিতা বলেছিল, ঝুলবে কেন? ওর বাচ্চা হয়েছে? বাচ্চা হলেই মেয়েদের ধকল!

আজকাল লীমার ওপর মায়া হয়। ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছে। ভাই বিয়ের পর গ্যাংটকে হানিমুনে গেছে। লীমা সেই হানিমুনের ছবি গদগদ হয়ে ফেসবুকে শেয়ার করেছে। শুধু মা আর ভাই, এর বাইরে যেন কোনো জগৎ নেই। জবাবদিহি নেই। বাবার চাকরিটা গলায় ঝুলিয়ে মা আর ভাই সারাটা জীবন শুধু শোষণ করে গেল একজন সৎ ভালো মানুষের উপর। কোনো মা যে এত স্বার্থপর হতে পারে জানা ছিল না।গেট খোলার শব্দে সম্মোহ তাকাল।

--" লালুকাকা কখন এলে গো!"

--- "খানিক আগে। মাঠে ধান কাটা চলছে। বড় খাটনি গো বাবু।"

---" হ্যাঁ, তা তো হবেই! সারাদিনের ধকল কম নয়!"

---" তা আজকে একটু হবে নাকি?"

এই "হবে নাকি?" শুনলেই লালুকাকা যে স্বর্গীয় হাসিটা দেয়, সেটা লাখ টাকার থেকে কম নয়! সম্মোহ এই হাসিটাকে খুব এনজয় করে।আর লালু কাকাকে নিয়ে মাল খেতে বসলে খুব এন্টারটেইন হয়। বেশি না! তিন পেগের পর লালুকাকার মতো বীর মাতাল এ তল্লাটে খুব একটা দেখা যায় না।

সন্ধ্যায় আজ হাঁসের মাংসের আয়োজন। লালু কাকা হাঁস কাটছে। পালক ছাড়িয়ে পরিস্কার করতে অনেকটা সময় লাগবে।প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। তারপর রান্না। বুলির মা আটা মেখে মশলা বাটতে ব্যস্ত। শিলে বাটা মশলায় রান্নার স্বাদ ভালো হয়। কাছাকাছি একদল শেয়াল খানিকক্ষণ একসঙ্গে ডাক দিল। সেই ডাকে গলা মেলালো কয়েকটা কুকুর। কাঠের উনুনে ঢিমে আঁচে এখন মাংস রান্না হবে।

তারপর সম্মোহ আর লালুকাকার শুরু হবে নৈশ কেত্ত্যন। মাসে দু-তিনবার এই ব্যবস্থা থাকে। শীতকালে পাঁচ-ছবার হয়ে যায়। এখন এখানে শীতের আমেজ এসে গেছে। মাঝে মধ্যেই ট্যুরিষ্টদের আনাগোনা। বেশিরভাগ লোকজন কলকাতা কিংবা পার্শ্ববর্তী শহরতলী থেকে বেড়াতে আসে। কংক্রিটের জঙ্গল থেকে এই বিশুদ্ধ শালের জঙ্গলে অবসর যাপন করে। তখন সারাদিন অতিথিদের ঝক্যি সামলে ঘুমোতে রাত হয়। লালুকাকা বুলির মা সারাদিন ধরে খাটে। বসার সময় পায় না। সম্মোহ হাতে হাতে সাহায্য করে। আগামী শুক্রবার আবার গেস্ট আসবে। তাই আজ একটু রিল্যাক্স করে নেওয়া। এতে অবশ্য বুলির মা রেগে যায়। সে বলে, তোমারা বাবু ফূর্তি করছো, আমার কি হবে!"

সম্মোহ হেসে বলে," কেন! তুমিও ফূর্তি করো!"লালুকাকা তালে তাল দেয়। বলে," হ্যাঁ, তুইও ফূর্তি কর! লাচ কর! দুটা গ্লাস খা।"

---" ওসব খাইনি আমি! বাবু আমাকে পয়সা দিবে"

আচ্ছা ঠিক আছে দেব দেব। কেন দেবনা! তুমি আমাদের এতো সেবাযত্ন করছো। এই বলে সম্মোহ পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বুলির মা'র দিকে এগিয়ে দেয়। বুলির মা টাকাটা হাতে নিয়ে বলে, "ঠিক আছে বাবু, তোমরা খাও। আনন্দ করো। যখন রাতের খাবার খাবে ডাক দিবে। সব একবার গরম করে দিব।"

লালুকাকা বলে," তোকে কিছু দিতে হবেনি, আমরা লিয়ে লিব। তুই তোর মতো খেয়ে ঘুমা মা!"

লালুকাকা তিনপেগের মাত্রা অতিক্রম করতেই সম্মোহ কথাটা বলে ফেলে।

-- "বটুক লোহার জায়গাটা দিবেনি বলছে।"

---" দোষ তো তোমার। তিন বছর আগে টাকা দিলে, কিছু শিখিয়ে নিলেনি! জায়গাটা ঘিরবে ঘিরবে করে ঘিরলেনি!ওর পুলি মেরে দিব। মাঙমারানি!"

---" এই তো মেরা সিপাই। রাত কা বাপ! খেল দেখাও দিকি!" সম্মোহ লালুকাকাকে উত্তেজিত করে আর মিটিমিটি হাসতে থাকে।লালুকাকা ফর্মে আছে। তবে বটুককে টাইট দিতে একটা কোনো উপায় ভাবতে হবে।সত্যিই তো টাকা দিল বটুকের মেয়ের বিয়েতে, ছেলের চাকরির জন্য! এছাড়া আপদে বিপদে সম্মোহ সবসময় টাকা দিয়েছে। শুধু মুখের কথা আর বিশ্বাস! জঙ্গলের মানুষ এমনটা হবে সম্মোহ বুঝতে পারেনি। ঈশ্বর আছেন এই সান্ত্বনা বাক্যে নিজেকে অবরুদ্ধ করলো না সম্মোহ। বরং একটা গোপন হত্যার ফন্দি আঁটল মনে মনে।

Saturday, December 5, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ রাহুল গাঙ্গুলী ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
রাহুল গাঙ্গুলী
















প্রতিবিম্ব থেকে ~ বুদবুদ ও তার পরবর্তী
-------------------------------------------------------------------
০'র চেয়েও         "চূ//ড়া//ন্ত"
                                              ০-হীন
                            অনর্থক     (−)'ফলটুকু }}

                                                    ||
মুখ ও মুখ'র ~ গোপন
                                 অদৃশ্য আলোয় অক্ষরমালা 

                                 বাতাস-ফেরৎ   
     অনেকটা
                        হৈচৈ জুড়ে
                                            আবাদযোগ্য
                                 ]]
                  যাপন 
                  আবরণ
                  পরিস্রাবণ            (♨) ~ খসছে
                                                        ১া
                                                        ১া
পরিবাহী সমাংশগুলো ________


+++++++++++++


পরস্পর অভিকর্ষ & ভরকেন্দ্র পরিবর্তন
---------------------------------------------------------------------
পাখিটা উড়ছে _____

সেই মুহূর্ত }}
                   খোলা জানলা থেকে সরাসরি মেঘ
                   আকাশী স্ফটিক
                   জল ও 
                               ]] ভাসান-যাবতীয় 

       ||

দেখা না হবার         প্ল্যাটফর্ম আকার (∞ ÷ 0)⁰
                     ® »» »
                                 কতোদিন 
                                দেখিনি তোমায় ______


++++++++++++


কে কোথায় ~ ১টি জটিল সংখ্যাতত্ত্ব নিরিখ
--------------------------------------------------------------------
ও)ঠোঁটে ~ ঠোঁট

                     পুড়ে যায়
                     গলে যায়
                     উড়ে যায়     ////      উড়ন্ত লাটাই ¾
      
    }} 
       সরাইখানা      অসীম তরল
                                                  {{
                                                      অবশিষ্ট ¼
         ||

মোম & মাটি
                     উড়ে যায়
                     গলে যায়
                     পুড়ে যায়

      উষ্ণতম                  মুহূর্তকাল-আকাশ
                                    বেশ ভারী
                                               ]] জলের চেয়েও ___


প্রাগৈতিহাসিক ডায়রি & নেপথ্য জন্মসূত্র 
---------------------------------------------------------------------
খসে পড়া ~ চাঁদের মাটি
                                      }} ক্রমশঃ «««

                                        গোপন তারাখসা
             জন্ম দিলো
                                ]]    অলীক জরায়ু 

                                ||

                          নির্দিষ্ট      (মুখাবয়ব)⁰ আকার
                                                       ∠(চৌকাঠ)°

                      দৃষ্টিবিভ্রম ~            জলীয়-বর্ণালী


অদৃশ্য জ্যামিতি সন্ধান & উষ্ণ বিকেল
----------------------------------------------------------------------
দেওয়াল ∝ দেওয়াল
                                }} আদপে
                                    ঘটনাচক্র ~ বৃত্তীয় "∆" 
         ||

     শুধু         ভেবে নাও
                     এরকম'ই           অদৃশ্য পথ
               ]]
                   পিথাগোরাস আবিষ্কৃত ⇭ ব-দ্বীপ ____

Wednesday, December 2, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ শ্রীমহাদেব ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
শ্রীমহাদেব















মাকে

মেরুদেশে ঝড় উঠছে
নেমে আসছে আকাশ হাতের মুঠোয়
গাভী চরছে মাঠে ময়দানে
দানা পানি সহ পরিযায়ী মন
ভেসে বেড়ায় হিল্লি দিল্লী আগ্রা হতে নায়াগ্রা

কত বদল ঘটছে রোজ
মা কেই শুধু বদলাতে দেখলাম না,
বাড়ি ফিরলে আশি পেরোনো মা
এখনও কড়াই চাপিয়ে আলু কাল্লা ভাজে

কিছুই হয়তো ফেরে না
যে মানুষদের দেখলাম তারা আর কখনও ফিরবে না জানি 
স্থাণু হয়ে মুখ বুজে সময় 
তাকে লাগাম পরাও 
বেহায়া আদরে বাঁদর সেজে কি লাভ বলো,

সমস্ত কান্না আগামীকাল  চাপা পড়ে যাবে মহাকালের দুরন্ত গ্রাসে।


মাটি 

কেউ কি মাটি হতে চায়,
একমাত্র মাটি ছাড়া
বিজ্ঞাপনে সুন্দর হয়ে উঠছে দেহ
শুধু বিষিয়ে যাচ্ছে মন 
শ্রাবণকে এখন বিশ্বাস হয়না আর
জল ঝরায় কিন্তু জল খসায় না
মিথ্যে মিথ মেঘ ভেসে বেড়ায় সর্বত্র
মন ভাঙে না,

সারাটা শহর জানে ক্যানাস্তারা পেটালে গেলে কী  কী লাগে।


নৌকো

ভাসছি আর ডুব দিচ্ছি
অতল গহ্বরে
নৌকো হয়ে ভাসতে গিয়ে
একনদী জল পেরিয়ে এলাম ,কষ্ট নেই।

ঝলসে যাওয়া পাখি দেখছি রোজ
কেউ রৌদ্দুরে আবার কেউ আলোয় পুড়ছে
বালির পরে নাম ধুয়ে যাওয়া শব্দের দল 
হুমড়ি খেয়ে বর্ষা পোষে 

আমার নামহীন  পোশাক কি রঙে তোমায় চুবিয়েছি জানে কি কেউ
অতল জলের বিক্ষিপ্ত জলরাশি 
মেঘ ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে চলেছে নিষাদের দিকে।

খাদ পেরোলেই  একটি একটি করে ঝরে পড়বে বিষণ্ণ রক্তকরবী।


মাছ

মাছ আমার খুবই প্রিয় 
তবে তার চেয়েও প্রিয়
মাছেদের নোলক,
আঁশটে ঘ্রাণ আর মূর্খদের বক্তৃতা মালা।
শক্ত শালুকের শরীর বেয়ে এগিয়ে আসছে সাপ,অহংকার আর ঘৃণার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে একা এক কৃষ্ণবর্ণ মেঘ,
একপা দুইপা হলুদ রঙা নেশা থেকে চুন খসিয়েছে 
নির্মেদ উলঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে একা তবুও

মেঘমুক্ত আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে নিথর প্রদীপ ,অব্যক্ত দুধভর্তি  কচি ধান
শরীরের আনাচে কানাচে গর্ত খোঁড়ে,
আমার একান্ত শৈশব 
শরীর সেঁকে নেয় আগুনের আঁচে।  


ত্রিবেনি

ঘাটের কাছে জল, ছল ছল
কিছু অস্থি হলুদে মেশানো
ছাই পাস উচ্চারণে কোচড়ে টান মারে,
পিছন ফিরে কারও অস্তিত্ব টের পাই না

কতশত গল্প বলেছে জল এভাবে
কোল খালি করা মা অথবা বাবা
ক্লান্ত অবসন্ন  দেহে বাড়ি ফিরেছে 
পায়ে পায়ে,

মুক্তি তখন আলোয় আলোয়
হলুদ ডানায় ভর করে বেসামাল পৃথিবী
প্রত্যয়ী ভাবনাতে ভাগ বসাচ্ছে আমার সকাল 

ক্রমশ ভেঙে পড়তে গিয়েও ঠিকাদারি মন ভাবে বিভোর,
 গৌর নিতাই মন সকাল সাঁঝে তামাক সাজে 
পোড়া মাটির কলকেয়।

ঘুম পায় কিন্তু কান্না আসে না।


আনন্দের এসরাজ

এসরাজ থেকে একেকটি তার খুলে নিলে
কংকাল বেরিয়ে পড়ে 
কংকাল থেকে গয়না খুলে নিলে
এক একটি শ্বাস দীর্ঘশ্বাস ,
 ময়না উড়ে যায়
গাছ বেসামাল হলেও  
কুড়ি থেকে ফুল ফোটে বিবর্ণ বেলায়।

নামহীন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বন্দী রাজার অন্তর্বাস
বিষাক্ত হুল ফুটিয়ে বিচ্ছিন্ন বালিয়াড়ি 
আজ সূর্য সেপাই

অরণ্যদিনে সারা পৃথিবীর মানুষ ভুলে যাচ্ছে
ব্যাথা কাকে বলে,
আমরা তো দুঃখবিলাসি 
মশানের ধোঁয়াময় জীবন কত দামি বলে যায় মৃতদেহ ছুঁয়ে বসে থাকাও যত শান্তি,
যত আনন্দের,


সুখটুকু বিসর্জন দিলে শ্যাওলা ভাসে।