Sunday, December 6, 2020

| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
| নভেলেট | 
অরিজিৎ চক্রবর্তী  
ডারউইনের চিঠি 
( পর্ব- ১৪ )

এরকম কত কিছু মাথায় আসে আবার মাথা থেকে বেরিয়েও যায়। মাঝে মধ্যে একা লাগে। আবার চারপাশের প্রকৃতির দিকে তাকালে একাকিত্ব কেটে যায়। শাড়ির খসখস শব্দ তুলে বুলির মা চলে যায় রান্নাঘরের দিকে। শূন্য ফাঁকা দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে থাকে সম্মোহ।লীমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। ফেসবুকের ছদ্মবেশী আইডি খুলে লীমার প্রোফাইলে ঢুকে যায় সম্মোহ। দেখে বহুদিন আগের একটা ছবিকে প্রোফাইল পিক করেছে লীমা, ছবির সঙ্গে কয়েকটা লাইন, "বহুদিন মনে ছিল আশা,ধরণীর এক কোণে রচিব আপন মনে, ধন নয় মান নয়, এতটুকু বাসা, মনে ছিল আশা"।

সম্মোহের হাসি পায়, মনে মনে বলে, বিড়াল! শ্রডিংগারের বিড়াল! অদ্ভূত সেই ঘটনার কথা মনে আসে। একটা বিড়াল বন্দী আছে স্টিলের বাক্সে। যার মধ্যে অবশ্যই জীবটার নাগালের বাইরে রয়েছে আরেকটা ব্যবস্থা। একটা নলে সামান্য খানিকটা তেজস্ক্রিয় পদার্থ। এতটাই কম যে একঘন্টায় তার মধ্যে থেকে হয়তো বা শুধু একটা পরমানু ভাঙবে। আবার হয়তো বা সেটাও নয়। যদি ভাঙে, তবে আয়োজন অনুযায়ী রিলে ব্যবস্থায় হাতুড়ির আঘাত পড়বে হাইড্রোরাসায়নিক অ্যাসিডের একটা ফ্লাক্সে। বেরোবে বিষাক্ত গ্যাস। মরবে বেচারা বিড়াল।

আজকাল লীমাকে ওই বিড়ালটার মতোই অসহায় লাগে সম্মোহের। "বিজ্ঞানী আরউইন শ্রডিংগার আপনার এই কাল্পনিক পরীক্ষা পদার্থবিদ্যার এক অমূল্য সোপান। আর আমি সম্মোহ চ্যাটার্জী, আমার জীবনে এটাই বিরহের গান।" কথাগুলো বেশ জোড়ে জোড়ে আউড়ে নিজেকে হালকা লাগে সম্মোহের। কারণ, সময়ের কাছে ফুরফুরে করে নেবার মধ্যে একটা অহংকার আছে।এই ধরনের অহংকার আঁকড়ে সম্মোহের তৃপ্তি! না পাওয়ার বেদনায় অমলিন প্রলেপ। শুধু একটাই দোষ তার, সে বড় বেশি কথা বলে। একবার শুরু হল তো থামতেই চায় না। বলতে বলতে কোথায় যে চলে যায় সে নিজেও জানে না। এখানকার লোকে তাই হেসে বলে বাগাড়ে বুড়ো। অথচ সম্মোহ ততটা বুড়ো নয়। বয়সটা এই শ্রাবণেই একষট্টিতে পড়েছে। দেখলে বোঝা যায় না। লাল টি শার্ট আর ব্লু জিন্সে পঞ্চাশের বেশি মনে হয় না।

লীমাকে মাঝে মধ্যে দেখতে ইচ্ছে করে। আবার করেও না। ফেসবুকের পোস্ট গুলো দেখলে সম্মোহের গা জ্বালা করে। সম্মোহ বিরক্ত হয়। লীমা যেন তার জীবন থেকে জীবনের পূর্ণতাটা কেড়ে নিয়েছে। লীমারও বয়স বেড়েছে। চামড়া কুঁচকেছে। কিন্তু বুক ঝোলেনি। সুচরিতা বলেছিল, ঝুলবে কেন? ওর বাচ্চা হয়েছে? বাচ্চা হলেই মেয়েদের ধকল!

আজকাল লীমার ওপর মায়া হয়। ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছে। ভাই বিয়ের পর গ্যাংটকে হানিমুনে গেছে। লীমা সেই হানিমুনের ছবি গদগদ হয়ে ফেসবুকে শেয়ার করেছে। শুধু মা আর ভাই, এর বাইরে যেন কোনো জগৎ নেই। জবাবদিহি নেই। বাবার চাকরিটা গলায় ঝুলিয়ে মা আর ভাই সারাটা জীবন শুধু শোষণ করে গেল একজন সৎ ভালো মানুষের উপর। কোনো মা যে এত স্বার্থপর হতে পারে জানা ছিল না।গেট খোলার শব্দে সম্মোহ তাকাল।

--" লালুকাকা কখন এলে গো!"

--- "খানিক আগে। মাঠে ধান কাটা চলছে। বড় খাটনি গো বাবু।"

---" হ্যাঁ, তা তো হবেই! সারাদিনের ধকল কম নয়!"

---" তা আজকে একটু হবে নাকি?"

এই "হবে নাকি?" শুনলেই লালুকাকা যে স্বর্গীয় হাসিটা দেয়, সেটা লাখ টাকার থেকে কম নয়! সম্মোহ এই হাসিটাকে খুব এনজয় করে।আর লালু কাকাকে নিয়ে মাল খেতে বসলে খুব এন্টারটেইন হয়। বেশি না! তিন পেগের পর লালুকাকার মতো বীর মাতাল এ তল্লাটে খুব একটা দেখা যায় না।

সন্ধ্যায় আজ হাঁসের মাংসের আয়োজন। লালু কাকা হাঁস কাটছে। পালক ছাড়িয়ে পরিস্কার করতে অনেকটা সময় লাগবে।প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। তারপর রান্না। বুলির মা আটা মেখে মশলা বাটতে ব্যস্ত। শিলে বাটা মশলায় রান্নার স্বাদ ভালো হয়। কাছাকাছি একদল শেয়াল খানিকক্ষণ একসঙ্গে ডাক দিল। সেই ডাকে গলা মেলালো কয়েকটা কুকুর। কাঠের উনুনে ঢিমে আঁচে এখন মাংস রান্না হবে।

তারপর সম্মোহ আর লালুকাকার শুরু হবে নৈশ কেত্ত্যন। মাসে দু-তিনবার এই ব্যবস্থা থাকে। শীতকালে পাঁচ-ছবার হয়ে যায়। এখন এখানে শীতের আমেজ এসে গেছে। মাঝে মধ্যেই ট্যুরিষ্টদের আনাগোনা। বেশিরভাগ লোকজন কলকাতা কিংবা পার্শ্ববর্তী শহরতলী থেকে বেড়াতে আসে। কংক্রিটের জঙ্গল থেকে এই বিশুদ্ধ শালের জঙ্গলে অবসর যাপন করে। তখন সারাদিন অতিথিদের ঝক্যি সামলে ঘুমোতে রাত হয়। লালুকাকা বুলির মা সারাদিন ধরে খাটে। বসার সময় পায় না। সম্মোহ হাতে হাতে সাহায্য করে। আগামী শুক্রবার আবার গেস্ট আসবে। তাই আজ একটু রিল্যাক্স করে নেওয়া। এতে অবশ্য বুলির মা রেগে যায়। সে বলে, তোমারা বাবু ফূর্তি করছো, আমার কি হবে!"

সম্মোহ হেসে বলে," কেন! তুমিও ফূর্তি করো!"লালুকাকা তালে তাল দেয়। বলে," হ্যাঁ, তুইও ফূর্তি কর! লাচ কর! দুটা গ্লাস খা।"

---" ওসব খাইনি আমি! বাবু আমাকে পয়সা দিবে"

আচ্ছা ঠিক আছে দেব দেব। কেন দেবনা! তুমি আমাদের এতো সেবাযত্ন করছো। এই বলে সম্মোহ পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বুলির মা'র দিকে এগিয়ে দেয়। বুলির মা টাকাটা হাতে নিয়ে বলে, "ঠিক আছে বাবু, তোমরা খাও। আনন্দ করো। যখন রাতের খাবার খাবে ডাক দিবে। সব একবার গরম করে দিব।"

লালুকাকা বলে," তোকে কিছু দিতে হবেনি, আমরা লিয়ে লিব। তুই তোর মতো খেয়ে ঘুমা মা!"

লালুকাকা তিনপেগের মাত্রা অতিক্রম করতেই সম্মোহ কথাটা বলে ফেলে।

-- "বটুক লোহার জায়গাটা দিবেনি বলছে।"

---" দোষ তো তোমার। তিন বছর আগে টাকা দিলে, কিছু শিখিয়ে নিলেনি! জায়গাটা ঘিরবে ঘিরবে করে ঘিরলেনি!ওর পুলি মেরে দিব। মাঙমারানি!"

---" এই তো মেরা সিপাই। রাত কা বাপ! খেল দেখাও দিকি!" সম্মোহ লালুকাকাকে উত্তেজিত করে আর মিটিমিটি হাসতে থাকে।লালুকাকা ফর্মে আছে। তবে বটুককে টাইট দিতে একটা কোনো উপায় ভাবতে হবে।সত্যিই তো টাকা দিল বটুকের মেয়ের বিয়েতে, ছেলের চাকরির জন্য! এছাড়া আপদে বিপদে সম্মোহ সবসময় টাকা দিয়েছে। শুধু মুখের কথা আর বিশ্বাস! জঙ্গলের মানুষ এমনটা হবে সম্মোহ বুঝতে পারেনি। ঈশ্বর আছেন এই সান্ত্বনা বাক্যে নিজেকে অবরুদ্ধ করলো না সম্মোহ। বরং একটা গোপন হত্যার ফন্দি আঁটল মনে মনে।

Saturday, December 5, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ রাহুল গাঙ্গুলী ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
রাহুল গাঙ্গুলী
















প্রতিবিম্ব থেকে ~ বুদবুদ ও তার পরবর্তী
-------------------------------------------------------------------
০'র চেয়েও         "চূ//ড়া//ন্ত"
                                              ০-হীন
                            অনর্থক     (−)'ফলটুকু }}

                                                    ||
মুখ ও মুখ'র ~ গোপন
                                 অদৃশ্য আলোয় অক্ষরমালা 

                                 বাতাস-ফেরৎ   
     অনেকটা
                        হৈচৈ জুড়ে
                                            আবাদযোগ্য
                                 ]]
                  যাপন 
                  আবরণ
                  পরিস্রাবণ            (♨) ~ খসছে
                                                        ১া
                                                        ১া
পরিবাহী সমাংশগুলো ________


+++++++++++++


পরস্পর অভিকর্ষ & ভরকেন্দ্র পরিবর্তন
---------------------------------------------------------------------
পাখিটা উড়ছে _____

সেই মুহূর্ত }}
                   খোলা জানলা থেকে সরাসরি মেঘ
                   আকাশী স্ফটিক
                   জল ও 
                               ]] ভাসান-যাবতীয় 

       ||

দেখা না হবার         প্ল্যাটফর্ম আকার (∞ ÷ 0)⁰
                     ® »» »
                                 কতোদিন 
                                দেখিনি তোমায় ______


++++++++++++


কে কোথায় ~ ১টি জটিল সংখ্যাতত্ত্ব নিরিখ
--------------------------------------------------------------------
ও)ঠোঁটে ~ ঠোঁট

                     পুড়ে যায়
                     গলে যায়
                     উড়ে যায়     ////      উড়ন্ত লাটাই ¾
      
    }} 
       সরাইখানা      অসীম তরল
                                                  {{
                                                      অবশিষ্ট ¼
         ||

মোম & মাটি
                     উড়ে যায়
                     গলে যায়
                     পুড়ে যায়

      উষ্ণতম                  মুহূর্তকাল-আকাশ
                                    বেশ ভারী
                                               ]] জলের চেয়েও ___


প্রাগৈতিহাসিক ডায়রি & নেপথ্য জন্মসূত্র 
---------------------------------------------------------------------
খসে পড়া ~ চাঁদের মাটি
                                      }} ক্রমশঃ «««

                                        গোপন তারাখসা
             জন্ম দিলো
                                ]]    অলীক জরায়ু 

                                ||

                          নির্দিষ্ট      (মুখাবয়ব)⁰ আকার
                                                       ∠(চৌকাঠ)°

                      দৃষ্টিবিভ্রম ~            জলীয়-বর্ণালী


অদৃশ্য জ্যামিতি সন্ধান & উষ্ণ বিকেল
----------------------------------------------------------------------
দেওয়াল ∝ দেওয়াল
                                }} আদপে
                                    ঘটনাচক্র ~ বৃত্তীয় "∆" 
         ||

     শুধু         ভেবে নাও
                     এরকম'ই           অদৃশ্য পথ
               ]]
                   পিথাগোরাস আবিষ্কৃত ⇭ ব-দ্বীপ ____

Wednesday, December 2, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ শ্রীমহাদেব ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
শ্রীমহাদেব















মাকে

মেরুদেশে ঝড় উঠছে
নেমে আসছে আকাশ হাতের মুঠোয়
গাভী চরছে মাঠে ময়দানে
দানা পানি সহ পরিযায়ী মন
ভেসে বেড়ায় হিল্লি দিল্লী আগ্রা হতে নায়াগ্রা

কত বদল ঘটছে রোজ
মা কেই শুধু বদলাতে দেখলাম না,
বাড়ি ফিরলে আশি পেরোনো মা
এখনও কড়াই চাপিয়ে আলু কাল্লা ভাজে

কিছুই হয়তো ফেরে না
যে মানুষদের দেখলাম তারা আর কখনও ফিরবে না জানি 
স্থাণু হয়ে মুখ বুজে সময় 
তাকে লাগাম পরাও 
বেহায়া আদরে বাঁদর সেজে কি লাভ বলো,

সমস্ত কান্না আগামীকাল  চাপা পড়ে যাবে মহাকালের দুরন্ত গ্রাসে।


মাটি 

কেউ কি মাটি হতে চায়,
একমাত্র মাটি ছাড়া
বিজ্ঞাপনে সুন্দর হয়ে উঠছে দেহ
শুধু বিষিয়ে যাচ্ছে মন 
শ্রাবণকে এখন বিশ্বাস হয়না আর
জল ঝরায় কিন্তু জল খসায় না
মিথ্যে মিথ মেঘ ভেসে বেড়ায় সর্বত্র
মন ভাঙে না,

সারাটা শহর জানে ক্যানাস্তারা পেটালে গেলে কী  কী লাগে।


নৌকো

ভাসছি আর ডুব দিচ্ছি
অতল গহ্বরে
নৌকো হয়ে ভাসতে গিয়ে
একনদী জল পেরিয়ে এলাম ,কষ্ট নেই।

ঝলসে যাওয়া পাখি দেখছি রোজ
কেউ রৌদ্দুরে আবার কেউ আলোয় পুড়ছে
বালির পরে নাম ধুয়ে যাওয়া শব্দের দল 
হুমড়ি খেয়ে বর্ষা পোষে 

আমার নামহীন  পোশাক কি রঙে তোমায় চুবিয়েছি জানে কি কেউ
অতল জলের বিক্ষিপ্ত জলরাশি 
মেঘ ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে চলেছে নিষাদের দিকে।

খাদ পেরোলেই  একটি একটি করে ঝরে পড়বে বিষণ্ণ রক্তকরবী।


মাছ

মাছ আমার খুবই প্রিয় 
তবে তার চেয়েও প্রিয়
মাছেদের নোলক,
আঁশটে ঘ্রাণ আর মূর্খদের বক্তৃতা মালা।
শক্ত শালুকের শরীর বেয়ে এগিয়ে আসছে সাপ,অহংকার আর ঘৃণার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে একা এক কৃষ্ণবর্ণ মেঘ,
একপা দুইপা হলুদ রঙা নেশা থেকে চুন খসিয়েছে 
নির্মেদ উলঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে একা তবুও

মেঘমুক্ত আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে নিথর প্রদীপ ,অব্যক্ত দুধভর্তি  কচি ধান
শরীরের আনাচে কানাচে গর্ত খোঁড়ে,
আমার একান্ত শৈশব 
শরীর সেঁকে নেয় আগুনের আঁচে।  


ত্রিবেনি

ঘাটের কাছে জল, ছল ছল
কিছু অস্থি হলুদে মেশানো
ছাই পাস উচ্চারণে কোচড়ে টান মারে,
পিছন ফিরে কারও অস্তিত্ব টের পাই না

কতশত গল্প বলেছে জল এভাবে
কোল খালি করা মা অথবা বাবা
ক্লান্ত অবসন্ন  দেহে বাড়ি ফিরেছে 
পায়ে পায়ে,

মুক্তি তখন আলোয় আলোয়
হলুদ ডানায় ভর করে বেসামাল পৃথিবী
প্রত্যয়ী ভাবনাতে ভাগ বসাচ্ছে আমার সকাল 

ক্রমশ ভেঙে পড়তে গিয়েও ঠিকাদারি মন ভাবে বিভোর,
 গৌর নিতাই মন সকাল সাঁঝে তামাক সাজে 
পোড়া মাটির কলকেয়।

ঘুম পায় কিন্তু কান্না আসে না।


আনন্দের এসরাজ

এসরাজ থেকে একেকটি তার খুলে নিলে
কংকাল বেরিয়ে পড়ে 
কংকাল থেকে গয়না খুলে নিলে
এক একটি শ্বাস দীর্ঘশ্বাস ,
 ময়না উড়ে যায়
গাছ বেসামাল হলেও  
কুড়ি থেকে ফুল ফোটে বিবর্ণ বেলায়।

নামহীন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বন্দী রাজার অন্তর্বাস
বিষাক্ত হুল ফুটিয়ে বিচ্ছিন্ন বালিয়াড়ি 
আজ সূর্য সেপাই

অরণ্যদিনে সারা পৃথিবীর মানুষ ভুলে যাচ্ছে
ব্যাথা কাকে বলে,
আমরা তো দুঃখবিলাসি 
মশানের ধোঁয়াময় জীবন কত দামি বলে যায় মৃতদেহ ছুঁয়ে বসে থাকাও যত শান্তি,
যত আনন্দের,


সুখটুকু বিসর্জন দিলে শ্যাওলা ভাসে।

Sunday, November 29, 2020

| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
| নভেলেট |
    







অরিজিৎ চক্রবর্তী

ডারউইনের চিঠি  ( ১৩ পর্ব )

প্রায় পঁয়ত্রিশ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকার তানজানিয়ার স্যাঁদিম্যান আগ্নেয়গিরিতে ঘটেছিল এক বিস্ফোরণ। আর পুব দিক থেকে আসা ঝঞ্ঝায় লাটোলি সমভূমির উপর দিয়ে এই বিস্ফোরণের কালো ছাইয়ের ঘূর্ণি রয়ে গেল।বর্ষার শুরুও ছিল তখন। এই বৃষ্টি ঘাসের উপর ছাইয়ের আবরণ ফেলল--- ছেয়ে গেল গাছের উঁচু মগডালও। খাবারের খোঁজে আসা প্রাণীরা গেল হকচকিয়ে, আকস্মিকতায় ভীতসন্ত্রস্ত। হাতি,গন্ডার, জিরাফের দল পালিয়ে পথ খুঁজছে। লাফিয়ে চলছে খরগোস, অ্যান্টিলোপ আর বড় দাঁতওয়ালা বাঘ। পোকামাকড়ও হামাগুড়ি দিয়ে ছুটছে চতুর্দিকে। ঠিক তখনই আবার অগ্ন্যুৎপাতের ছাই সবকিছু দিল ঢেকে। এই ছাই-ই ভরিয়ে দিল পদচিহ্নের গহ্বর গুলো--- আমাদের আবিষ্কারের জন্য থেকে গেল এসব...

বহু পদচিহ্নের মধ্যে কয়েকটি আমাদের কল্পনাকে আলোড়িত করল। তিনটি জীব বৃষ্টির পরেই ওই সমভূমির উপর দিয়ে এগিয়ে গেছে। যেন তিনজোড়া মানুষের পা! এই জীবেরা আমাদের মতো খাড়া হয়ে হাঁটত। তাদের পা-গুলো ছিল ঠিক আধুনিক মানুষেরই মতো। এরাই হলো আধুনিক মানুষের অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস, আধুনিক মানুষের সম্ভাব্য পূর্বসূরি। আদিম মানুষের বিস্ময়,আগ্ৰহ বা ভয়ের এই হঠাৎ চলা বেঁচে আছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে। লক্ষ-অযুত-হাজার বছর পেরিয়ে সেই মানুষের উত্তরপুরুষ এই আমরা আজও খুঁজছি নিজেদের অস্তিত্বকে। আগ্ৰহ,বিস্ময়ে, ভয়ে,আবেগে।

কখনো কখনো হাতছানি দেয় বিগত জনম। হয়তো আগের জন্ম। হয়তো সেটা এই জন্মেরই প্রারম্ভ।সম্মোহ বুঝতে পারে না। জায়গাটা চেনা মনে হয়! যেন প্রতিটি ধূলিকণা সম্মোহ স্পর্শ করেছে। আবার পরমুহুর্তেই রাস্তাঘাট, শানবাঁধানো পুকুরপাড়, একটু দূরে দূরে ল্যাম্পপোস্টের মাথায় সেজের বাতি, একটা বারবাড়ি, বৈঠকখানার কড়ি-বরগাওলা মস্ত হলঘর, আবার কোনো অন্দরমহল,পাতকোতলা, একদম উঠোনের সঙ্গে লাগোয়া ছোট রোয়াক পেরিয়ে ব্যারাকের মতো রান্নাঘর-- এই সব কিছু আবছা লাগে, অচেনা মনে হয়। অচেনা মনে হলেও সম্মোহ বুঝতে পারে কোনো একদিন এসবের মধ্যে ছিল সে।

কখনো আবার এই স্মৃতিবিলাসকে অস্বীকার করতে ইচ্ছে হয়। স্মৃতির যে অংশে কিছু কিছু বিস্মৃতিময় পেলবতা আছে,সম্মোহ সেই নরম ও মায়াবী সময়গুলি দু'হাতের ধাক্কায় সরিয়ে দিতে থাকে।

ঘুম ভেঙে যায়। সম্মোহ ভাবে স্বপ্ন আর ভাবনার কি বিচিত্র গতি! দেখে বৃষ্টি হচ্ছে। নীল ধোঁয়ার মতো বৃষ্টি হাওয়ার টানে কখনও বা এদিকে যায়, কখনও বা অন্যদিকে। সারা আকাশ মেঘে ছেয়ে আছে।কালো ও ঘোলাটে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ। দিনের শুরুতেই মনে হয়েছিল বেলা ছোট হয়ে আসছে। সময় চলে যাচ্ছে। অথচ এই ষাটর্দ্ধো জীবনে তার কাছে সবই অধিকন্তুর এক্তিয়ারে বলে মনে হয়। সম্মোহের কলকাতার বাড়ির এক প্রতিবেশী ভোরবেলাকার ভ্রমণটি সেরে এসে যখন চা পান করেন, তার কাছে এক কাপ চা অধিকন্তু হলেও অভ্যার্থনাযোগ্য বিবেচিত হয়।

নদীর ধারে জন্ম বলে আজীবন নদীর স্বপ্ন দেখে গেল বন্ধু দিবাকর। শুধু নদী কেন, চারপাশটা বর্ষায় মনে হতো জলছবি। সেই জলের টান রয়ে গেল। কোথাও গিয়ে নদী দেখলে মনটা ভরে যায় দিবাকরের।সে বলে, জলরাশির মধ্যে একটা প্রসারতাই শুধু নয় গভীরতা আছে। এই দুইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তার চিরদিনের চলা।যাকে বলি স্রোতধারা। দিবাকর এমন জীবন্ত, এমন দুরন্ত যে, তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালে সব বিবর্ণতার অবসান--- যেন এভাবেই জীবনের কেন্দ্র বিন্দুতে ফিরে আসা। অচলতা নয় গতি, পেছনে নয় সামনের দিকে তাকানো।উৎস থেকে মোহনায়। তারপর অপরিমেয় বারিধি।

আজ দিবাকরের জন্য মনটা ছটফট করছে। সম্মোহ ভাবলো একটা ফোন করবে। অনেকদিন কথা হয়না।

----" হ্যালো দিবাকর! দিবাকর...!"

----" শুনতে পাচ্ছি। বল। কেমন আছিস?"

--- " চলে যাচ্ছে রে! তুই? তুই কেমন..."

---"ভালো নেই রে ! বিস্ময় আর আনন্দ জীবনের মূল কথা! এদুটোই হারিয়ে ফেলেছি। কিছু ভালো লাগে না রে! কোনো কিছু আর ভালো লাগে না!"

---" কেন রে! কি এমন হলো? বুড়োদের মতো কথা বলছিস কেন রে?"

---" ফাটছে তো আমার! তুই বুঝবি কি! ছেলে বিয়ে করে বাচ্চা পায়দা করে ঘাড়ের উপর বসে বসে খাচ্ছে। আর আমার সামান্য কটা টাকা পেনশন। চলে? চালানো যায়?"

----" ছেলে প্যায়দা করে নাতি দিয়েছে। এতো ভালো কথা। এতে এ্যাতো হাহাকার কেন?"

---" তুমি কি আর বুঝবে ভায়া।বিন্দাস আছো। নদের নিমাই হয়ে।"

---" হাহাহাহা..." সম্মোহ হেসে ফেলে ‌।

----" শোন, ছেলে সঙ্গে সবসময় খিটখিট করা বন্ধ কর। ওকে কিছু টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা করে দে। তুই নিজেও ব্যবসাটা দেখ! "

----" কি ব্যবসা করবে শুনি। কোনো চেষ্টা আছে?খালি বাপের পেছন মারার ফন্দি করছে।"

---" তুই শুধু শুধু ছেলেটার ওপর রাগ করছিস। ওকে দূরে না ঠেলে ওর পাশে থাক। আর যেকোনো দিন আমার কাছে চলে আয়। তোকে নদী দেখাতে নিয়ে যাব।"

---" নদী এখন যদি হয়ে গেছে রে ভাই। তুমি মনে করে ফোন করলি, ভালো লাগলো। কেউ তো ফোন করে না! তুই করিস মাঝে মধ্যেই! যাব রে একদিন যাব। তোর কাছে কটাদিন কাটিয়ে আসবো।"

দিবাকরের সঙ্গে কথা বলে মনটা খারাপ হয়ে গেল সম্মোহের। দিবাকরের নদীতে এখন অজস্র যদির ডিঙি ভাসছে। ছেলেবেলায় যখন কার্তিক মাসে আকাশপ্রদীপ দেওয়া হতো উঁচু বাঁশের ডগায়, তখন একটা অনুভুতি হতো আকাশের সঙ্গে মাটির একটা সখ্য আছে! আজ দিবাকর ওর ছেলের সঙ্গে সেই সখ্যতা হারিয়ে ফেলছে কেন? জীবনের অপূর্ণতা কোনদিন শেষ হবার নয়! জীবনের সঙ্গে গা ঘেঁষে দিবাকরকেও অনেকদূর যেতে হবে, এই কথাটা দিবাকরকে বোঝানোর খুব প্রয়োজন।

হাতির গল্প শুনিয়েছিলেন সন্ত ফ্রান্সিস। হাতি তার সঙ্গীনী কখনো বদলায় না। তার ওপর তিন বছরে মাত্র পাঁচদিনের জন্য সঙ্গিনীর সঙ্গে সহবাস করে। ষষ্ঠ দিনে পুরুষ হাতি ফের ভিনদেশে পাড়ি দেয়।দিবাকরের কথা ভাবতে ভাবতে হাতির কথাটা মাথায় এলো সম্মোহের।


Friday, November 27, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ কার্তিক ঢক্ ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||

কার্তিক ঢক্













অনুকবিতা


১। অন্তর্দহনে ঘর পুড়লে
    জলের কোনো ভূমিকা থাকে না। 

২।পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে মাঝে মাঝে
    অবলুপ্ত মোহর কুড়ায় আমি। 

৩।একটি নদী থাকলেই জল থাকবেএমন        
    কোনো কথা নেই-প্রতিটি অপরাহ্নে
    নুড়িপাথরের গান আর খালি কলসির
    কান্না শোনা যায়।

৪।সুন্দরমনের ঝিনুকগুলির বুকে মুক্তা থাকেনা 
   দীর্ঘশ্বাস এর ধূসর আর্তনাদ খেলা করে
   আমরা তাকে কয়লা বলি...

৫।চাঁদ ভালো, না সূর্য ভালো
   এই প্রশ্নের মুখোমুখি হ'তে গেলে
   আগে খুলে রাখতে হবে মুখের থেকে মাস্ক 

৬।সবারই ইচ্ছেদের যে ডানা থাকে
    আমি তাকে মান্যতা দিই...

৭। সুতীক্ষ্ণ খঞ্জরটিকে ধারাল করেছি আমিই -
  বুকপকেটের পিছনের রাস্তায় অহরহ 
  কুচি কুচি করছে প্রহর...

৮। উপোসি চোখ পেতে রাখি
   একটু আধটু চাঁদ দেখবো বলে -
ও আকাশ মেঘের আড়াল দাও কেনো! 

৯।যতোবারই জিভ ছুলো না কেনো
ভালোবাসি বলাটা আসলে হৃদয়ের কারুকাজ...

১০।ব্যুমেরাং শব্দটি আসলে আমার জন্য নয়!