Wednesday, August 12, 2020

| অণুুগল্প | অরণ্যা সরকার |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












অরণ্যা সরকার

চাকা ও সিঁড়ির গল্প 

এক যে ছিলর দেশে ছিল এক পোস্ট অফিস। বারান্দায় ঝুলে থাকতো একটা লাল ডাকবাক্সএকা। একদিন,  ই-মেল আর হোয়াটসঅ্যাপের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল এক রাজকন্যে। তার সারা গায়ে রঙিন ট্যাটুর  অলংকার।  কেউ কেউ অবশ্য কালশিটে বলে ভুল করতো। তারপর  খুব আলো করে যখন জীবন নেমে আসতো  তখন তাদের বুকের ভেতর থেকে লম্বা বাতাস বেরিয়ে এসে বলতো ,’না না এ বিভ্রম

রাজকন্যা ডাকবাক্সকে বলল, ‘কালের ঝুলি, আমি অক্ষরমালা। আমাকে নেবে ? আমারও বুকের ভেতরে স্মৃতির খসখস।’ চারদিকে তখন কুয়াশা রঙের স্তব্ধতা। লাল ডাকবাক্স তার মরচেপড়া শরীরের জন্য বড়  লজ্জা  পেল। বলল ‘জখম গুনে গুনে শুধু  সংখ্যায় ডুবে আছি। তুমি কি কথার আকাশ নিয়ে এলে ?’
‘আমার তো আর আকাশ নেই কালের ঝুলি। চর্যাপদের টিলা পেরিয়ে, পদাবলীর যমুনা সাঁতরে, শহীদদের রক্তঋণ বুকে নিয়ে  বেশ দানা বাঁধছিলাম। এই বালি বালি সময় আমাকে খুলে ফেলছে আমার থেকেআমার ভেতর বিঁধে আছে আমারই কাঁটা। ভানে ক্লান্ত, মিথ্যেয় নতমুখ আমি এবার  খুলে ফেলতে চাই ভিনদেশি  রত্নবসানো জামা’  
তারপর কালের ঝুলির বুকের ভেতর রাজকন্যা অক্ষরমালা খুলে ফেললোপোশাক পরে নিলো নীল খামের শিফনকড়ারামধনুরঅনুশাসনথেকেপালিয়েআসাকিছুরঙেরইচ্ছেলুকিয়েপড়লোওদেরদুখজাগানিয়াগানেরতরঙ্গেঅক্ষরমালাগাইতে লাগলো ‘একি  লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ...’ । 

চাকা ঘুরছিল বনবনবলিষ্ঠ হচ্ছিল মেধাএকদিন পোস্টঅফিস নতুন বিল্ডিং পেল। মহলজোড়া মানুষ পেল বোতামটেপা আরাম পেলো পেনশনের লাইন থেকে কত জীবনের গল্প পাক খায় নতুন দেয়ালের ভেতর। দেয়ালের কানে শ্রুতির ঝুমকো  ঝকমকিয়ে ওঠে।  নতুনের হৈ হৈ জমে বাতাসের  ড্রয়ারে।  লালবাক্স পড়ে রইল এক যুবক কদমগাছের তলায়। শুকনো পাতা আর বাতিল কাগজের মধ্যে শুয়ে  শুয়ে ওরা দেখল ওদের চারপাশে ভিড় করে আসছে খাম, পোস্টকার্ডদের আত্মারা।  মেঘ ঘনাল ভীষণ। ভেজা কদমের রেণু মেখে ঝুপ ঝুপ পড়তে লাগলো ‘শ্রীচরণেষু’, ‘কল্যাণীয়েষু’ ‘ প্রিয়তম,’  প্রিয়তমা’রা...। 

| অণুুগল্প | রাখী সরদার |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












রাখী সরদার
মহাজ্ঞানের খোঁজে

সদানন্দ ভোরভোর হেঁটে চলেছে সাধিকা আত্রেয়ীর আশ্রমে।এই কদিন আগে নানা জায়গা ঘুরেএই সমুদ্র তীরে এসেছে। এখানেই তাঁর কথা শুনেছে।
তিনি নাকি সিদ্ধা নারী,সব জানেন।তাঁর কাছেই সেই পরম সত্যের কথা সে জানবে।যার খোঁজে সে এতদিন ঘুরছে। আশ্রমে যেতে যেতে কত কী মনে পড়ছে তার।মিঠেখালির নদীর নির্জন পারে ভণ্ড সাধু সেজে সে একসময় অনেক মানুষ কে ঠকিয়েছিল, কিন্তু ছোট্ট চন্দরাকে ঠকাতে পারেনি।যে তার মৃত মায়ের সাথে দেখা করানোর কথা বলেছিল--

"ঠাকুর তুমি  সব পারো। আমার  মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দাও।"

"চন্দরা কেউ পারেনা।সব মিথ্যে বলি রে।"

"তুমি মিছে কথা বলো!তবে যে সবাই বলে তুমি মহাজ্ঞানী।"চন্দরা কাঁদতে কাঁদতে  ছুটে চলে গিয়েছিল।

সেদিন‌ই ওখান থেকে চলে এসেছিলাম।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে আশ্রমে এসে গেছিলাম জানিনা।এমন সময় শুনতে পাই --

"কীরে মেয়েটির জন্য কষ্ট হচ্ছে?"

অবাক হয়ে দেখিএকজন শ্বেতবস্ত্র পরিহিতা রমণী তাকে দেখে মৃদু হাসছে।এই সেই আত্রেয়ী মা!কিন্তু ইনি কিভাবে জানল!

"সব জানিরে।যা  ওই সমুদ্রে ডুব দিয়ে আয় সব
বলব।"

সমুদ্রে আস্তে আস্তে নামি।এক বিরাট  ঢেউ  আমাকে টেনে নিয়ে চললো কোন অতলে। পিছনে কে ডাকছে না ...

"ঠাকুর ,ও ঠাকুর..."

পিছন ফিরে দেখি চন্দরা  ! একটা শুভ্র পাথরে এক আধা ঘোমটা নারী বসে,আর তার আঁচল আঙুলে জড়িয়ে  চন্দরা নীলাভ দেহে রঙিন মাছেদের সাথে জলে খেলা করছে।"

আমার দেহ ভারী হয়ে আসে এমন দৃশ্যে, বাতাসহীন
শরীর আর‌ও তলিয়ে যেতে থাকে।হঠাৎ চন্দরা তার কচি হাতে আমার আঙুল স্পর্শ করে বলে ওঠে --

"ঠাকুর কোথা যাও!দ্যাখো এই আমার মা। ঠিক
খুঁজে পেয়েছি।"

"এ আমি কী দেখছি!  ঈশ্বর এমন ও ঘটে !"

"তুই ঠিকই দেখছিস।"

"তুমিও এখানে আত্রেয়ী মা!"

"হ্যাঁ রে আমিও।সবাই কে এই অনন্ত নীলে আসতে হবে।"

আঃ,বেশ হাল্কা লাগছে।চোখ খুলে দেখি  বালির উপরে শুয়ে।সেই সাধিকা পরম স্নেহে মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে বলছেন --

"কীরে মহাজ্ঞানের সন্ধান পেলি!"

কথা বলার শক্তি নেই।মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই।

| ঝুরো গল্প | সোনালি বেগম |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












সোনালি বেগম 
ফটো-এডিটিং খেলা 

আনন্দের নানান সম্ভার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। খুশি থাকার কোনো মূলমন্ত্র আছে নাকিসেদিন ব্রিটিশ হিপনোটিস্ট পল ম্যাককেন্না- বই ‘আই ক্যান মেক ইউ হ্যাপি’- কথাগুলো বেজে উঠছিল মনে। এটা একটা অভ্যাস। খুশি থাকার অভ্যাস।
সব সময় সত্যিই কি খুশি থাকা সম্ভব?’
অবশ্যই সম্ভব।
যদি জোর করেকারণ ছাড়াই হাসতে থাকিতখন?’
ফোরসড স্মাইল হোক বা না হোকহাসলেই আমাদের শরীর সেরোটোনিন রিলিজ করে। যেটা হল একটি নিউরোট্রান্সমিটার। যার জন্য আমরা ভালো অনুভব করি। আর যে মানুষটির দিকে তাকিয়ে তুমি হাসছোসেও তো তখন আনন্দ অনুভব করবে।
খুশির বন্যায় ভেসে যাবো শত দুঃখ বুকে নিয়েও
দুঃখটা কিসের শুনি!’
কত-কত দিন হয়ে গেলআমরা বালিকা বয়স ছেড়ে নারী হয়ে উঠেছি। জীবননদীর স্রোতে ঢেউয়ের পর ঢেউ ছুঁয়ে এগিয়ে চলেছি। মাঝে মাঝে যখন বাল্যসখীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়আনন্দে হেসে উঠি। কিছু কিছু ব্যাপার ভেবে দুঃখ পাই এখনও। একটা ছোট উদাহরণ দিই। যেমনবাসে মেয়েদের উপর অসভ্য আচরণগুলো কি কমেছে একটুওযদিও ব্যতিক্রম আছে। মেয়েদের মলেস্টেশন এবং হ্যারাসমেন্টের পুনরাবৃত্তি বার-বার শোনা যায়। কয়েক যুগ আগেও যা ছিলএখনও সেই একই রকম। এই আনওয়ান্টেড টাচগুলো রেপের থেকেও কিছু কম নয়। বর্তমানে নিউজপেপার ছেয়ে গেছে ‘মি টু’ (# Me Too) ক্যাম্পেন। মেয়েদের সম্মান বাঁচানোর যোগ্য পদক্ষেপ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আমি আর আমার বন্ধু রিয়া বাসের ভেতর যথাযথ বসার জায়গা খুঁজে নিলাম। দিল্লি-চিড়িয়াখানায় বহুদিন আসা হয়নি। হৈ-হৈ করে পৌঁছে গেলাম। ছবির পর ছবি তোলা হল। মজা আর হাসিএখন ছবির পারফেকশন নিয়ে চললো ফটো-এডিটিং খেলা। ফেস ফিল্টার ‘পারফেক্ট সেল্ফি’ অ্যাপে ছবিআবার ‘এয়ার ব্রাশ’ অ্যাপে ছবির কোয়ালিটি পালটিয়ে দেখতে থাকলাম আমরা।

| অণুুগল্প | সৌমী আচার্য্য |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












সৌমী আচার্য্য
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা?


আমার দুটো হাত দুরকম।একটা কালো,রোমশ,কাঠ কাঠ,উদার।আরেকটা বেশ ফর্সা,নরম তুলতুলে,নৃশংস।কদিন আগে মালিশের তেল বিক্রি করে ফেরার পথে পাড়ার শীতলাপুজোর থানে দেখি  সরকারদের কুঁচুটে মেজবৌটার ভর উঠেছে।বাচ্চাদের জন‍্য দুধ জ্বাল দিয়েছিলো বিধবা বছর পঁয়ত্রিশের রেবা।তাই তাকে চুলের মুঠি ধরে আচ্ছাসে পিটাচ্ছে সরকারদের মেজবৌ।

-রাক্ষুসী,আমার পুজোর দিন আগুণ জ্বাললি,আমার সারা গা পুড়ে গেলো।

ওমনি বাঁহাতটা বলে উঠলো,ওর বরটা রেবার ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করেছিলো সেই রাগে এমন মারছে।আহা গো ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠেছে।ও বিপুল সঙের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে বাঁচাও না!কি আর করা।ওর বকবক শোনার থেকে রেবাকে বাঁচানো ভালো।দৌড়ে গিয়ে রেবাকে বললাম,মাকে পেন্নাম কররে মাগী।বলে রেবার মাথা ভর পড়া পায়ে ঠেসে ধরতেই ডান হাতটা আচ্ছাসে রাম চিমটি কেটে মেজবৌয়ের পায়ের চামড়া তুলে নিলো,আমি কিছু বোঝার আগেই।মেজবৌ রেবাকে ছেড়ে ধপ করে বসে আমাকে ভস্ম করতে লাগলো।আমি পড়েছি মহা ফাঁপড়ে।এই দুই হাত একদিন আমায় খাবে।

আমি মানুষটা খুব একটা ভালো নই দিব্ব‍্যি টের পাই।ভটচাজ বাড়ির তেরো বছরের মেয়েটার সরু ঠ‍্যাঙে প্রতি শনিবার তেল মালিশ করে দি।মেয়েটাকে বসিয়ে ওর মা সরে গেলেই ইচ্ছে করে হাতটা আরেকটু উপরে ওঠাই।মেয়েটা করুণ করে বলে এই হাতে মালিশ করো না জ‍্যেঠু লাগে,বাঁ হাতে করো মার হাতের ছোঁয়া পাই।

আমার বৌ রেখা বাঁহাতটাকে সহ‍্য করতে পারেনা,ইস্ ম‍্যাগো জঘন‍্য ভাল্লুকের মতো হাত।ডান হাতটা দিয়ে ধরো।

বাঁহাতটা একটুও দুঃখ পায়না মৃদু হেসে বলে,বাঁচা গেলো অসুস্থ শরীরগুলো বরং এই হাড়গিলে শরীরের থেকে ভালো।ডান হাতটা যত পেষে,থাবড়ায় রেখা তত সুখ পায়।আমার মন পড়ে থাকে বিলের পাড়ে মিনু দুলুর ভেজা শাড়িতে।বাঁহাতটা ফিসফিস করে বলে,মেয়েটার বড়ো কষ্ট বরটা দেখে না,বাচ্চাটার রক্তের রোগ।ও বিপুল কাল একবার ওর কাছে যেও।সুখলাল যে ঠিকানা দিয়েছে দিয়ে এসো।ফ্রিতে ডাক্তার দেখাতে পারবে।ওমনি ডান হাতটা ফিসফিসিয়ে বলে,মিনুর নরম বুকে আমায় একটু চেপে ধরো তো বিপুল বড়ো সাধ হয়...আমি থ‍্যাঁতাবাড়ি দি,চুউউউপচুউউউপ।

আমি,বিপুল কর্মকার লোকটা মোটে ভালো না।কাল মিনুর বাড়ি গেলে কোন হাতটা যে জিতে যাবে সেই চিন্তায় রোমশ বুকে দুহাতের সোহাগ মাখতে থাকি।

| অণুুগল্প | প্রিয়াঙ্কা পিহু কর্মকার |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












প্রিয়াঙ্কা পিহু কর্মকার
প্রতিদিন
সে দিন ৫টা ০৫  র নৈহাটি  লোকাল ধরব বলে দাঁড়িয়ে আছি শিয়ালদহের 1/A   প্ল্যাটর্ফমে  । খুবই ব্যস্ত আমাদের কলকাতা , তার এক ঝলক  শিলায়দহ স্টেশন দেখলেই  মনে হয় । বোর্ডে ট্রেন ও টাইম দিয়ে দিয়েছে । তবুও 3মিনিট লেট করছে আসতে ,  বেজায় ভীড় হবে ।যাই হোক আমি  মোবাইলে মন দিয়েছি  । হঠাৎ চোখ গেল মিওআ মোরের কাউন্টারে ।একজন ভদ্র মহিলা ওয়েল ড্রেসড ভীষণ স্মার্ট লাগছে , বেশ লাগছে । আমরা মানুষরা  বিপরীত লিঙ্গই হতক আর সম - লিঙ্গই হোক চকচকি হলেই চোখ ঠিক যাবেই । যেমন আমার ঐ মহিলার ওপর চলে যাচ্ছে । কিন্তু দেখলাম ঐ মহিলা  দুটো বারগার ওর্ডার দিয়েছে , বেশ কিন্তু ওনার খাওয়ার পদ্ধতিটা বড়ই দৃষ্টি কটু লাগছে , আমার বিশেষত লাগছিল হয়তো ট্রেন আসতে দেরী হচ্ছে বল নিজেই একটু নিজর মনোরঞ্জকের বিষয় দেখে অনুধাবন করছি ।
এসব ভাবতে ভাবতেই ট্রেন ঢুকে যায় আমি ট্রেন উঠি ঐ আরকি এক প্রকার যুদ্ধ জয়ের মত সিট নিলাম জানালার ধারেই । বসে আবার ঐ মহিলা কে দেখতে যাব দেখি উনি নেই । যাই হোক ভাবলাম আজকের মত মনোরঞ্জক  পর্ব শেষ হল বোধহয় । কানে ইয়ার ফোনটা দিতে যাবই একজন মহিলা কন্ঠ আমাকে বলছে -
" কেমন আছেন । কোথায় থাকা হয় ?"
আমি তাকিয়েই দেখি ঐ ভদ্রমহিলা যাকে আমার ট্রেন না আসার অবধি মনোরঞ্জক  খোরাক করে রেখেছিলাম ।
আমি ভীষণ লজ্জায় পরে যাই আর কি বলব যেন শব্দরা  স্তব্ধ হয়ে যায় , তাও আমি বললাম
-" ভালো আছি । আপনাকে তো চিনলাম না ।"
-আমাকে আপনি চিনবেননা   । তুমি করে বলছি তোমায়  অনেক ছোটো তুমি তাই ।
-" আচ্ছা বলুন ।
- কোথায় থাকো ।
- খড়দহ ।
-ওহ । স্টুডেন্ট !
- হ্যা থার্ড ইয়ার । আপনি কোথায় থাকেন ।
- আমি এই তো প্রাচীর ওদিকে । এটা আমার নম্বর কথা হবে কেমন ।
বলে হঠাৎ মহিলা চলেযান । আমি পুরো ব্যাপার টা বোঝার আগেই ট্রেনটা ছেড়ে দিল ।
খড়দহ আসা অবধি ভাবলাম কি হল বুঝলাম না ।
যাই হোক বাড়িতে এসে ফ্রেস হয়ে বসলাম । নং র চিট টা হাতে ।ভাবছি ফোন করে একটা সরি বলি ।ওভাবে ওনাকে দেখছিলাম তাই বোধহয় উনি  আমাকে ঠান্ডা ভদ্রস্থ অপমান করে দিল ।
একটা তো সরি বলব তারপর নং ব্লক । ব্যস 
এসব ভেবে করলামই একটা কল ।
রিং হচ্ছে । প্রায় এক মিনিট হবে হবে তখনি ফোন ধরলেন ।
-হ্যালো বল ।আমি জানতাম তুমি কল করবে । ঠিক মত বাড়ি পৌয়ছেছো তো।
- আমি পুরো চুপকে যেন আমার ঠোঁটে ফেভিকল দিয়েছে ।
অনেকক্ষণ উনি হ্যালো করার পর আমি বললাম ।
- সরি ।
-কেন । আমাকে খেতে দেখছিলে বলে আরে না না । কাল আসবে নাকি কলেজ আসলে বল দেখা করব।
আমি এবার একটু অবাক হলাম। কি বলতে চাইছেন মহিলা । আবার বলল
- কাল আসলে বল কেমন দেখা করব ।
-আমি কিছু না বলেই ফোন কেটে দেই ।

সারারাত ঘুম আসেনি , কত অচেনা মানুষ প্রতি দিন ট্রেনে বাসে দেখা হয় নিজের মত কল্পনায় ভাসে গন্তব্য পৌছানো অবধি  । কিন্তু এমন কি কারো সাথে হল । এই ভাবতে ভাবতে নতুন ভোর হয়ে গেল নতুন দিনে  পুরোনো আমি যাচ্ছি পুরানো কলেজে ।
ফোনটা আজ যেন আমার কাছে বড্ড  বেমানান লাগছে । কলেজের কোনো ক্লাশে মন বসল না । শুধু চোখ যায় ফোনে নতুন একটা রহস্যের মধ্যে , এসব ভাবছি হঠাৎ ফোন । নম্বর দেখে  আনন্দ রহস্য মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া হচ্ছে । ধরব কি ধরব না এই ভেবে ধরলাম ।
- হ্যা বলুন
- আজ কলেজে এসেছ । দেখা হচ্ছে কিন্তু তাহলে ।
আমি না বলার অনেক চেষ্ঠা করেও পারলাম   । বললাম
- কোথায় থাকবেন ।
-মুচি পাড়া থানার ওখানে   চেনো তো ।
- হ্যা
- আচ্ছা রাখছি ।

আমার মধ্যে নতুন কিছু জানার স্পৃহা
যেন  পর্বত চূড়ায় চলে গেছে । যাই হোক , আমি না চাইতেও চলে গেলাম কলেজ শেষের পর  মুচিপাড়া থানার কাছে ।দেখি উনি দাঁড়িয়ে , আমাকে দেখেই একগাল হাসি ,
আমি ও হাসলাম । মেকি হাসি ভালোই মানায় ।
- চল , এই গলির ওদিকেই আমার বাড়ি।
আমি দেখলাম আজ  ও ওয়েল ড্রেসড । ভাবলাম ভালোই বাড়ি হবে ।এবারে সাহকে জিজ্ঞেস করলাম ।
-আপনার নাম কি ।
-আমি মিনুতি বসাক । চলই দেখবে ।
-আমি পলি , পলি সামন্ত ।
-আচ্ছা ।
এই ভাবে কথা বলতে বলতে একটা পুরোনো প্রায় ধ্বংসাবশেষ একটা পোড়া বাড়ির সামনে দাঁড়ালাম 
আমি একটু অবাক হলাম । মহিলার পোষাকের সাথে বাড়ি বড় বেমানান যাচ্ছে ।
তারপর উনি নিয়ে গেলেন তার ঘরে । একটাই রুম চারিদিকে অপরিস্কার আর ঝুরঝুরে । জানলাম এটাও ওনার নিজের বাড়ি নয় উনি ভাড়া থাকেন ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
- আপনি কি করেন
হেসে বললেন দাড়াও সব বলছি । পোষাক টা ছাড়ি ।
আমি একটু অবাক হলাম পোষাক পালটাবে আমার সামনে ।
দেখলাম ওনার দামি পোষাক সব ছাড়ছেন  । হঠাৎ চমকে উঠে দেখলাম । ওনার অন্তরবাস ।
অন্তবাস শত ছিদ্রে ছিদ্রিত । আমি অবাক ।
মনে হচ্ছে ,পোষাকী সমাজকে উলঙ্গ করে সাদামাটা গরীবত্বের মোড়ক উন্মোচন হল ।
যে মানুষ টাকে কাল অব্দি তার স্বচ্ছ পোষাকের মেকি ভদ্রস্থ মনে হচ্ছিল । আজ সেই পোষাকই যেন ভদ্রতার তামাশার রিং মাস্টার মনে হয় ।।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি এককাপ লেবু চা নিয়ে মিনুতি বসাক হাসতে আমাকে দিলেন ।
পরে অনেক কথায় জানতে পারলাম -
উনি একজন যৌনকর্মী  বছর পয়ত্রিশ । একার মানুষ । জানতে পারলাম  গতকালের দুটো বারগারের বিষয় - খদ্দের ভালো ছিল টাকা একটু বেশি পেয়েছিল তাই দুটি বারগারের বিলাসিতা করেছিল ।
অনেক কথাই হল কথাই শুনলাম জানলাব বললাম ।
দেখতে দেখতে দুপুর স্নিতেজ হচ্ছে , আর রাতের তিলোত্তমা সাজে ব্যস্ত হচ্ছে ।
আমি চলে এলাম হাঁটচ্ছি আর ভাবচ্ছি ।
আমার চরিত্রের  কত খোলস কত বাঁক ।
প্রতিদিন আমরা কত শত মিনুতি বসাক আর পলি সামন্তের সম্মুখীন হয় । কত ব্যস্ততা ও অবসরের ফাঁকে মধ্যে ও আমরা এই শহরের প্রতিদিনের মনোরঞ্জক হচ্ছিসার করচ্ছি ।

আমরা আমাদের সকলের ধনীত্ব চরিত্রের শেষে  উলঙ্গ গরীবত্বটা ঠিক রাজপথ ধরে পোড়া ঝুরঝুরে দেওয়ার হুকে টানিয়ে দি   ।
নতুন ভোরের জন্য  , ,,,,,, ।