Wednesday, August 12, 2020

| অণুুগল্প | সৌমী আচার্য্য |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












সৌমী আচার্য্য
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা?


আমার দুটো হাত দুরকম।একটা কালো,রোমশ,কাঠ কাঠ,উদার।আরেকটা বেশ ফর্সা,নরম তুলতুলে,নৃশংস।কদিন আগে মালিশের তেল বিক্রি করে ফেরার পথে পাড়ার শীতলাপুজোর থানে দেখি  সরকারদের কুঁচুটে মেজবৌটার ভর উঠেছে।বাচ্চাদের জন‍্য দুধ জ্বাল দিয়েছিলো বিধবা বছর পঁয়ত্রিশের রেবা।তাই তাকে চুলের মুঠি ধরে আচ্ছাসে পিটাচ্ছে সরকারদের মেজবৌ।

-রাক্ষুসী,আমার পুজোর দিন আগুণ জ্বাললি,আমার সারা গা পুড়ে গেলো।

ওমনি বাঁহাতটা বলে উঠলো,ওর বরটা রেবার ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করেছিলো সেই রাগে এমন মারছে।আহা গো ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠেছে।ও বিপুল সঙের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে বাঁচাও না!কি আর করা।ওর বকবক শোনার থেকে রেবাকে বাঁচানো ভালো।দৌড়ে গিয়ে রেবাকে বললাম,মাকে পেন্নাম কররে মাগী।বলে রেবার মাথা ভর পড়া পায়ে ঠেসে ধরতেই ডান হাতটা আচ্ছাসে রাম চিমটি কেটে মেজবৌয়ের পায়ের চামড়া তুলে নিলো,আমি কিছু বোঝার আগেই।মেজবৌ রেবাকে ছেড়ে ধপ করে বসে আমাকে ভস্ম করতে লাগলো।আমি পড়েছি মহা ফাঁপড়ে।এই দুই হাত একদিন আমায় খাবে।

আমি মানুষটা খুব একটা ভালো নই দিব্ব‍্যি টের পাই।ভটচাজ বাড়ির তেরো বছরের মেয়েটার সরু ঠ‍্যাঙে প্রতি শনিবার তেল মালিশ করে দি।মেয়েটাকে বসিয়ে ওর মা সরে গেলেই ইচ্ছে করে হাতটা আরেকটু উপরে ওঠাই।মেয়েটা করুণ করে বলে এই হাতে মালিশ করো না জ‍্যেঠু লাগে,বাঁ হাতে করো মার হাতের ছোঁয়া পাই।

আমার বৌ রেখা বাঁহাতটাকে সহ‍্য করতে পারেনা,ইস্ ম‍্যাগো জঘন‍্য ভাল্লুকের মতো হাত।ডান হাতটা দিয়ে ধরো।

বাঁহাতটা একটুও দুঃখ পায়না মৃদু হেসে বলে,বাঁচা গেলো অসুস্থ শরীরগুলো বরং এই হাড়গিলে শরীরের থেকে ভালো।ডান হাতটা যত পেষে,থাবড়ায় রেখা তত সুখ পায়।আমার মন পড়ে থাকে বিলের পাড়ে মিনু দুলুর ভেজা শাড়িতে।বাঁহাতটা ফিসফিস করে বলে,মেয়েটার বড়ো কষ্ট বরটা দেখে না,বাচ্চাটার রক্তের রোগ।ও বিপুল কাল একবার ওর কাছে যেও।সুখলাল যে ঠিকানা দিয়েছে দিয়ে এসো।ফ্রিতে ডাক্তার দেখাতে পারবে।ওমনি ডান হাতটা ফিসফিসিয়ে বলে,মিনুর নরম বুকে আমায় একটু চেপে ধরো তো বিপুল বড়ো সাধ হয়...আমি থ‍্যাঁতাবাড়ি দি,চুউউউপচুউউউপ।

আমি,বিপুল কর্মকার লোকটা মোটে ভালো না।কাল মিনুর বাড়ি গেলে কোন হাতটা যে জিতে যাবে সেই চিন্তায় রোমশ বুকে দুহাতের সোহাগ মাখতে থাকি।

| অণুুগল্প | প্রিয়াঙ্কা পিহু কর্মকার |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












প্রিয়াঙ্কা পিহু কর্মকার
প্রতিদিন
সে দিন ৫টা ০৫  র নৈহাটি  লোকাল ধরব বলে দাঁড়িয়ে আছি শিয়ালদহের 1/A   প্ল্যাটর্ফমে  । খুবই ব্যস্ত আমাদের কলকাতা , তার এক ঝলক  শিলায়দহ স্টেশন দেখলেই  মনে হয় । বোর্ডে ট্রেন ও টাইম দিয়ে দিয়েছে । তবুও 3মিনিট লেট করছে আসতে ,  বেজায় ভীড় হবে ।যাই হোক আমি  মোবাইলে মন দিয়েছি  । হঠাৎ চোখ গেল মিওআ মোরের কাউন্টারে ।একজন ভদ্র মহিলা ওয়েল ড্রেসড ভীষণ স্মার্ট লাগছে , বেশ লাগছে । আমরা মানুষরা  বিপরীত লিঙ্গই হতক আর সম - লিঙ্গই হোক চকচকি হলেই চোখ ঠিক যাবেই । যেমন আমার ঐ মহিলার ওপর চলে যাচ্ছে । কিন্তু দেখলাম ঐ মহিলা  দুটো বারগার ওর্ডার দিয়েছে , বেশ কিন্তু ওনার খাওয়ার পদ্ধতিটা বড়ই দৃষ্টি কটু লাগছে , আমার বিশেষত লাগছিল হয়তো ট্রেন আসতে দেরী হচ্ছে বল নিজেই একটু নিজর মনোরঞ্জকের বিষয় দেখে অনুধাবন করছি ।
এসব ভাবতে ভাবতেই ট্রেন ঢুকে যায় আমি ট্রেন উঠি ঐ আরকি এক প্রকার যুদ্ধ জয়ের মত সিট নিলাম জানালার ধারেই । বসে আবার ঐ মহিলা কে দেখতে যাব দেখি উনি নেই । যাই হোক ভাবলাম আজকের মত মনোরঞ্জক  পর্ব শেষ হল বোধহয় । কানে ইয়ার ফোনটা দিতে যাবই একজন মহিলা কন্ঠ আমাকে বলছে -
" কেমন আছেন । কোথায় থাকা হয় ?"
আমি তাকিয়েই দেখি ঐ ভদ্রমহিলা যাকে আমার ট্রেন না আসার অবধি মনোরঞ্জক  খোরাক করে রেখেছিলাম ।
আমি ভীষণ লজ্জায় পরে যাই আর কি বলব যেন শব্দরা  স্তব্ধ হয়ে যায় , তাও আমি বললাম
-" ভালো আছি । আপনাকে তো চিনলাম না ।"
-আমাকে আপনি চিনবেননা   । তুমি করে বলছি তোমায়  অনেক ছোটো তুমি তাই ।
-" আচ্ছা বলুন ।
- কোথায় থাকো ।
- খড়দহ ।
-ওহ । স্টুডেন্ট !
- হ্যা থার্ড ইয়ার । আপনি কোথায় থাকেন ।
- আমি এই তো প্রাচীর ওদিকে । এটা আমার নম্বর কথা হবে কেমন ।
বলে হঠাৎ মহিলা চলেযান । আমি পুরো ব্যাপার টা বোঝার আগেই ট্রেনটা ছেড়ে দিল ।
খড়দহ আসা অবধি ভাবলাম কি হল বুঝলাম না ।
যাই হোক বাড়িতে এসে ফ্রেস হয়ে বসলাম । নং র চিট টা হাতে ।ভাবছি ফোন করে একটা সরি বলি ।ওভাবে ওনাকে দেখছিলাম তাই বোধহয় উনি  আমাকে ঠান্ডা ভদ্রস্থ অপমান করে দিল ।
একটা তো সরি বলব তারপর নং ব্লক । ব্যস 
এসব ভেবে করলামই একটা কল ।
রিং হচ্ছে । প্রায় এক মিনিট হবে হবে তখনি ফোন ধরলেন ।
-হ্যালো বল ।আমি জানতাম তুমি কল করবে । ঠিক মত বাড়ি পৌয়ছেছো তো।
- আমি পুরো চুপকে যেন আমার ঠোঁটে ফেভিকল দিয়েছে ।
অনেকক্ষণ উনি হ্যালো করার পর আমি বললাম ।
- সরি ।
-কেন । আমাকে খেতে দেখছিলে বলে আরে না না । কাল আসবে নাকি কলেজ আসলে বল দেখা করব।
আমি এবার একটু অবাক হলাম। কি বলতে চাইছেন মহিলা । আবার বলল
- কাল আসলে বল কেমন দেখা করব ।
-আমি কিছু না বলেই ফোন কেটে দেই ।

সারারাত ঘুম আসেনি , কত অচেনা মানুষ প্রতি দিন ট্রেনে বাসে দেখা হয় নিজের মত কল্পনায় ভাসে গন্তব্য পৌছানো অবধি  । কিন্তু এমন কি কারো সাথে হল । এই ভাবতে ভাবতে নতুন ভোর হয়ে গেল নতুন দিনে  পুরোনো আমি যাচ্ছি পুরানো কলেজে ।
ফোনটা আজ যেন আমার কাছে বড্ড  বেমানান লাগছে । কলেজের কোনো ক্লাশে মন বসল না । শুধু চোখ যায় ফোনে নতুন একটা রহস্যের মধ্যে , এসব ভাবছি হঠাৎ ফোন । নম্বর দেখে  আনন্দ রহস্য মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া হচ্ছে । ধরব কি ধরব না এই ভেবে ধরলাম ।
- হ্যা বলুন
- আজ কলেজে এসেছ । দেখা হচ্ছে কিন্তু তাহলে ।
আমি না বলার অনেক চেষ্ঠা করেও পারলাম   । বললাম
- কোথায় থাকবেন ।
-মুচি পাড়া থানার ওখানে   চেনো তো ।
- হ্যা
- আচ্ছা রাখছি ।

আমার মধ্যে নতুন কিছু জানার স্পৃহা
যেন  পর্বত চূড়ায় চলে গেছে । যাই হোক , আমি না চাইতেও চলে গেলাম কলেজ শেষের পর  মুচিপাড়া থানার কাছে ।দেখি উনি দাঁড়িয়ে , আমাকে দেখেই একগাল হাসি ,
আমি ও হাসলাম । মেকি হাসি ভালোই মানায় ।
- চল , এই গলির ওদিকেই আমার বাড়ি।
আমি দেখলাম আজ  ও ওয়েল ড্রেসড । ভাবলাম ভালোই বাড়ি হবে ।এবারে সাহকে জিজ্ঞেস করলাম ।
-আপনার নাম কি ।
-আমি মিনুতি বসাক । চলই দেখবে ।
-আমি পলি , পলি সামন্ত ।
-আচ্ছা ।
এই ভাবে কথা বলতে বলতে একটা পুরোনো প্রায় ধ্বংসাবশেষ একটা পোড়া বাড়ির সামনে দাঁড়ালাম 
আমি একটু অবাক হলাম । মহিলার পোষাকের সাথে বাড়ি বড় বেমানান যাচ্ছে ।
তারপর উনি নিয়ে গেলেন তার ঘরে । একটাই রুম চারিদিকে অপরিস্কার আর ঝুরঝুরে । জানলাম এটাও ওনার নিজের বাড়ি নয় উনি ভাড়া থাকেন ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
- আপনি কি করেন
হেসে বললেন দাড়াও সব বলছি । পোষাক টা ছাড়ি ।
আমি একটু অবাক হলাম পোষাক পালটাবে আমার সামনে ।
দেখলাম ওনার দামি পোষাক সব ছাড়ছেন  । হঠাৎ চমকে উঠে দেখলাম । ওনার অন্তরবাস ।
অন্তবাস শত ছিদ্রে ছিদ্রিত । আমি অবাক ।
মনে হচ্ছে ,পোষাকী সমাজকে উলঙ্গ করে সাদামাটা গরীবত্বের মোড়ক উন্মোচন হল ।
যে মানুষ টাকে কাল অব্দি তার স্বচ্ছ পোষাকের মেকি ভদ্রস্থ মনে হচ্ছিল । আজ সেই পোষাকই যেন ভদ্রতার তামাশার রিং মাস্টার মনে হয় ।।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি এককাপ লেবু চা নিয়ে মিনুতি বসাক হাসতে আমাকে দিলেন ।
পরে অনেক কথায় জানতে পারলাম -
উনি একজন যৌনকর্মী  বছর পয়ত্রিশ । একার মানুষ । জানতে পারলাম  গতকালের দুটো বারগারের বিষয় - খদ্দের ভালো ছিল টাকা একটু বেশি পেয়েছিল তাই দুটি বারগারের বিলাসিতা করেছিল ।
অনেক কথাই হল কথাই শুনলাম জানলাব বললাম ।
দেখতে দেখতে দুপুর স্নিতেজ হচ্ছে , আর রাতের তিলোত্তমা সাজে ব্যস্ত হচ্ছে ।
আমি চলে এলাম হাঁটচ্ছি আর ভাবচ্ছি ।
আমার চরিত্রের  কত খোলস কত বাঁক ।
প্রতিদিন আমরা কত শত মিনুতি বসাক আর পলি সামন্তের সম্মুখীন হয় । কত ব্যস্ততা ও অবসরের ফাঁকে মধ্যে ও আমরা এই শহরের প্রতিদিনের মনোরঞ্জক হচ্ছিসার করচ্ছি ।

আমরা আমাদের সকলের ধনীত্ব চরিত্রের শেষে  উলঙ্গ গরীবত্বটা ঠিক রাজপথ ধরে পোড়া ঝুরঝুরে দেওয়ার হুকে টানিয়ে দি   ।
নতুন ভোরের জন্য  , ,,,,,, ।

| অণুুগল্প | কেয়া চক্রবর্তী |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||.












কেয়া চক্রবর্তী
আশ্রিতা


মেয়েটির নাম কৃষ্ণকলি। যেমন নাম, তেমনি তার রূপ। ঠিক যেন কালো কষ্টিপাথরে খোদাই করা কোনো নারী। চোখদুটি কালো, মাথায় এক ঢাল কালো কুচকুঁচে রেশমের মতো চুল। মেয়েটি জনমদুখিনী। মা জন্মের সময়েই মারা যায়, বাবা ও ঠাকুমা এমন কালো মেয়েকে ঘরে ঠাঁই দিতে নারাজ, তাই সে এখন আশ্রিতা তার নিঃসন্তান মামার বাড়িতে। মামা ও মামী তাকে সন্তান স্নেহে লালন পালন করেছে, মামার যতকিঞ্চিৎ আয়ে বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করে, যথাসময়ে সৎ পাত্রে পাত্রস্থ করা হলো। বেশ সুখেই দিন কাটছিল, কিন্ত বিধি বাম, এক দুর্ঘটনায় স্বামীহারা হয়, ঠাঁই জোটে না আর শ্বশুরবাড়িতে। একদা মামা মামীর আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা কৃষ্ণকলি আজ আবার নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। এদিকে ততদিনে মামাও ইহলোকের মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন। মামীর কাছেই অগত্যা ঠাঁই হয় কৃষ্ণকলির। নতুনভাবে বাঁচার আশায় আজ সে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু কাজ পাওয়া বোধহয় এত সোজা ছিল না। একটি বাড়িতে সারাদিনের কাজের লোকের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়। কৃষ্ণকলির পরিচর্যায় মাসীমা খুব তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়ে যেতে থাকে এবং দুজনের মাঝে এক সখ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মনে মনে ভাবে এবার বুঝি সে সুখের মুখ দেখবে, কিন্তু সুখ বোধহয় কৃষ্ণকলির কপালেই নেই। বলে না সুখ এমন পাখি যা সবার কপালে সয় না। হঠাৎই ঘুমের মাঝেই মাসীমা ইহলোক ত্যাগ করেন। কৃষ্ণকলি ব্যথিত মনে বাড়ি ফিরে আসে ও নিজের লড়াই আবার নতুন করে শুরুর জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নিতে লাগে। কয়েকদিন পরে একজন এসে কৃষ্ণকলির খোঁজ করতে থাকে। তিনি জানান বিভাবতী দেবী( কৃষ্ণকলি যার বাড়িতে আয়ার কাজ করত) তার নামে বাড়ি, কিছু টাকা ও একটি চিঠি দিয়ে গেছেন। মাসীমা কৃষ্ণকলিকে  নিরাশ্রয় মানুষের সেবার এক মহান দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। কৃষ্ণকলির আশ্রয়ে আজ অনেক নিরন্ন মানুষ নতুন আলোর দিশা খুঁজে পেয়েছে। যে জন্ম হতে আশ্রিতা ছিল আজ সে বহু মানুষের আশ্রয়দাত্রী। মাসীমার বাড়িতেই গড়ে তুলেছে একটি আবাসিক হোম যেখানে বহু মানুষ আজ আশ্রয় পেয়েছে। মাসিমার শেষ ইচ্ছা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। আজ সে এই হোমের দিদিমণি, বহু মানুষের মুখে খুশির আলো জাগিয়ে তোলার এক মহান কাজে ব্রতী।

| অণুুগল্প | পার্থ সারথি চক্রবর্তী |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












পার্থ সারথি চক্রবর্তী 
আশীর্বাদ  


প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও ছাদে। বাগানের গাছগুলির পরিচর্যা করেই সকালটা যায় অশোকবাবুর।এক্স-ন্যভাল কমান্ডার । সুঠাম চেহারা । শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা আর কর্মযোগে তার বিশ্বাস । সকালে ঘন্টা-দুয়েকের কাজ বাগানে । রিটায়ার করার পর বেসরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন কিনা, সেটাই ভাবছেন ।হঠাৎ কানে বাজল রবীন্দ্রসংগীতের সুর। চমকে উঠলেন। যেন মিষ্টির গলা ।পরক্ষণেই বুঝলেন, পাশের বাড়ির মেয়েটি গাইছে।

মিষ্টির গলাটা বেশ ভালো ছিল।যদিও হারমোনিয়াম নিয়ে কিছুতেই বসত না।তবে পড়ার ব্যপারে বরাবরই মনোযোগী ছিল। অশোকবাবুর চাকরিতে অনেকটা সময় দুর্গম এলাকায় কাটাতে হয়েছে ।কৃষ্ণার কাছেই শুনত, একমাত্র সন্তান মিষ্টিকে পড়া নিয়ে কখনো তেমন বলতে হতো না । কৃষ্ণা একাহাতেই মেয়েকে বড় করেছে।মাধ্যমিকে খুব ভাল নম্বর পেলেও আর্টস নিয়েছিল ।শৈশব থেকেই অশোকবাবু মেয়ের মধ্যে যে আত্মসম্মানবোধ ও আত্মবিশ্বাস ঢুকিয়েছিলেন, সেটা দিনদিন মহীরুহ হয়ে উঠছিল ।কে জানে, সেটাই হয়তো জেদিও করে তুলছিল মিষ্টিকে ।নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতো বরাবর। ভীষন লজিক্যলও বটে।
মাস্টার্সে ভর্তির সময় অশোকবাবু কোচিনে পোস্টেড । অশোক অবসরে কৃষ্ণার থেকে ফোনে শুনত সব খবরাখবর ।ইদানিং আরো জেদি হয়েছে মিষ্টি। পড়াশোনা করে,কিন্তু কোথাও একটা আনমনাভাব ! স্বামী-স্ত্রী অল্প হলেও চিন্তিত ।একমাত্র সন্তান। অশোক ভাবে দুবছর পরে যখন রিটায়ার করবে, ততদিনে মাস্টার্স ও কমপ্লিট হয়ে যাবে।চাকরি ও একটা নিশ্চই পাবে মিষ্টি । ওর তো সিভিল সার্ভিসে যাবার ইচ্ছা।
কে জানত, অদৃষ্ট অন্য কিছু ভেবে রেখেছে!অশোক এক রাতে কৃষ্ণার ফোন পেল। মিষ্টি বাড়ি থেকে চলে গেছে!চিঠি লিখে রেখে গেছে, রফিকের সাথে ঘর বাঁধবে বলে। যেহেতু বাড়ির গোঁড়ামি কখনো একটি মুসলিম ছেলেকে বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নেবে না, তাই তার এমন সিদ্ধান্ত! আকাশ ভেঙে পড়েছিল! অশোক ও একই রকম তেজী । কৃষ্ণা বারবার বললেও অশোক রাজি হয় নি মিষ্টিকে ফিরিয়ে আনতে ।
তাই বলে কি,তার কষ্ট হয় না! বুকভরে দূর থেকে আশীর্বাদ করে মেয়েকে!
পাশের বাড়ির মেয়েটির গান যেন মিষ্টিকে মাঝেমাঝে তার কাছে এনে দেয়! চোখ দুটো ভিজে আসে জাঁদরেল কমান্ডারের।

| অণুুগল্প | শুভ্রনীল চক্রবর্তী |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












শুভ্রনীল চক্রবর্তী
Maa Private Ltd.

সকালবেলা রোজকারের মত নীলাভ কফিমাগটা ডানপাশে রেখে লগ ইন করলো --- 
  হঠাৎ রিংটোন বেজে উঠতেই তাকিয়ে দেখলো মম কলিং ।
একটু বিরক্ত ভাবেই ফোন ধরে বললো - 
" মা তোমাকে কতবার বলেছি এই সময় ফোন করবেনা , কতো চাপ থাকে জানো সকালে ? সকালে উঠেই ইন্টার্নাল স্ট্যাটাস কল তারপর ক্লায়েন্ট মিটিং ____ "
হয়তো ওপার থেকে কিছু কথা ভেসে আসার চেষ্টা করছিল কিন্তু তার আগেই -" আমি এখন রাখছি বিকেলে ফ্রী হলে কল করবো " বলে ফোনটা কেটে দিলো ।
        আবার দু মিনিট বাদে মম কলিং ---
" উফ্ , মা একবার বললে বোঝনা  ? তোমাদের জন্য কি চাকরি বাকরি ছেড়ে চলে আসবো নাকি "? 
ওপার থেকে ভেসে এলো একটু ভারী পুরুষালি গলা - " হ্যাঁ, হ্যালো আমি বরানগর থানা থেকে বলছিলাম , আজ সকালে একটা লরি এসে ----- 
     আমরা এই মাত্র বডিটা লোকেট করলাম " 
এপারে এক পৃথিবী শেষ নিস্তব্ধতা 
    " হ্যালো , নীলাভবাবু শুনতে পাচ্ছেন ?"