Wednesday, July 28, 2021

আমন্ত্রিত সংখ্যা≈সৌমাল্য গরাই

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||








সৌমাল্য গরাই



আবহমান

নদী তুমি পার করে দিও দেহজ নৌকার ভার। বইঠা হারিয়েছে মন, তাকে মাঝি করে দিও
চর্যাপদে গুঞ্জাফুল গাঁথা শবরীটির মতো। ভুলে যাই কীভাবে বাঁধব স্রোতচূর্ণিমালা । 

উদ্দেশ্য বিহীনভাবে পালিয়ে গিয়েছি বৃক্ষ ও ব্যাধের ধ্যান থেকে। দুজনের ধ্যানসত্য থেকে জেনেছি এসব লক্ষ্যভেদী। এর চেয়ে ভালো  সমুদ্র মুখর হাওয়াদের কাছে যাওয়া। সমুদ্রের লবণাক্ত ডাকে সাড়া দেয় লক্ষ্যহীন। নীল ফেনায়িত রাতে প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে ঘুমোয় সবুজ শ্যাওলারা, তার আঁশগন্ধ পেয়ে জল জাগে আর ছুটে ছুটে যায় তীর থেকে তীরে।

যে ছেড়েছে ঘর— ক্রীতদাস হতে ইচ্ছে করে তার, যেন জীবনকে ঘোরাতে পারি আমার পিছু পিছু...


প্রতিফলন
 
বারবার ফিরে আসছে পুরানো  লেখারা
একঘেয়ে জীবনের চেয়ে 
 তারা খুঁঁজছে উৎসমুখ

বস্তুত পালাতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে
ভাঙাচোরা আয়নার পারায়
এভাবে অপেক্ষা করছে হয়তো সেই
অপূর্ব দৃশ্যের—
যেখানে জন্মান্ধ  এক লোক
 ভাঙা  আয়নায়
কিংবা অন্ধ একটা আয়না লোকটির চোখে
নিজমুখ দেখছে


তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে...

তোমার সারাৎসার নিয়ে ফুটে ওঠে আধশোয়া রাত্রি, নৌকা ও চাঁদের চক্ষু। নির্নিমেষ পলকের ছোঁওয়ায় কাঁপে শয্যাবৃক্ষ। অন্ধকার হতেই তোমার ঘুমের মধ্যে অন্তরাত্মা ধ্যানমগ্ন অবস্থায়  দেখে অতল জলের নীচে ভাসতে ভাসতে  চলে যাচ্ছ প্রান্তসীমানায়, কখনো যুদ্ধক্ষেত্রে,  হত্যার শিবিরে, কখনো বা সন্তানের শিয়রে।  অন্ধ লিপি গ্রন্থের শরীরে দাঁত বসিয়ে খুঁটে নিচ্ছ খুদ।   যেমন পোকারা খেয়ে নেয় সমস্ত অক্ষর যেন বিলুপ্ত করতে চায় ভাষাবহনের দায়, যাতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারি নির্বিচারে।  এমনি মুহূর্তে দেখো 
লক্ষ বছরের মায়া, লক্ষ বছরের আলো এসে তোমাকে একলা করে দিচ্ছে, এভাবে  হারিয়ে ফেলছ দৃষ্টি , আয়ু, প্রাচীন বয়স। 

অসম্পূর্ণ এই যাত্রাপথে 
অসময়ে যে জেগে উঠল সে কী তুমি!

Sunday, July 25, 2021

| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||    

অরিজিৎ চক্রবর্তী-র

ডারউইনের চিঠি  পর্ব~১৯

যত রাতেই ঘুমোক পাঁচটা বাজলেই চোখ খুলে যায় সম্মোহের। তখন চুপচাপ বিছানায় গুটি মেরে শুয়ে থাকতেও ভালো লাগে না। মনে হয় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার এটাই আসল সময়। তাই সম্মোহ মুখহাত ধুয়ে একটা ঢিলেঢালা পাজামা পরে বেরোনোর প্রস্তুতি নেয়। পাশের খাটে বিকাশ তখন ঘুমে অচেতন। ভাবে বিকাশকে ডেকে তুলবে! পরমুহূর্তেই মনে হয় , গতকাল অত রাত্রে ফিরে বিকাশ হয়তো বড্ড ক্লান্ত। ববং অন্যদিন বিকাশকে ভোর ভোর নিয়ে বেরোবে। এখানকার জঙ্গল দেখাবে। পাখি দেখাবে। আজ বরং থাক। এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সম্মোহ সদোরের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে হাঁটা দেয়। জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে রঘুর চায়ের দোকানের সামনে এসে বাঁশের প্রশস্ত বেঞ্চিতে বসে এক কাপ চা হাতে নিয়ে চা দোকানে জড়ো হওয়া গ্ৰামের লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে থাকে।

----" বাবু কবে ফিরলেন? "

----" গতকাল রাতে। "

----" এখন বেশি রাত করোনি। হাতির দল আইছে। "

---" তাই নাকি!"

----" হ , খুব লফরজফর করছে। ফকিরের ঘর ভেঙে দিয়েছে। ধান খেয়ে দিয়েছ। "

এই চায়ের দোকানে চা খেতে আসার এইটাই সবচেয়ে বড় সুবিধে , গ্ৰামের সমস্ত খবর একনিমেষে পাওয়া যায়! 

চা খাওয়া শেষ করে সম্মোহ হাঁটতে হাঁটতে পিচ রাস্তার দিকে এগিয়ে চলে। সকালে এই রাস্তাটায় বরাবরই হাঁটতে পছন্দ করে সম্মোহ। কত ধরনের পাখির ডাক! জঙ্গলের ঠান্ডা বুনো বাতাস। সম্মোহ মনে মনে ভাবে যদি লখা মাছ নিয়ে বসে তাহলে একটু মাছ কিনে বাড়ি ফিরবে। আর সকালের জলখাবারে বুলির মাকে লুচি করতে বলা আছে।

সম্মোহ যখন বাড়ি ফিরলো তখন ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁই ছুঁই। বুলির মাকে মাছের থলেটা দিয়ে বলল, টাকটা মুরলা মাছ পেলাম, জমিয়ে রান্না করো। 

বুলির মা মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে। এখন চা করবো? লুচির আলুভাজা করা হয়ে গেছে। ময়দা মেখে রেখেছি।"

---" ঠিক আছে। দাঁড়াও দেখি সে ঘুম থেকে উঠলো কিনা!"

সম্মোহ ঘরে ঢুকে দেখল, বিকাশ তখনও ঘুমোচ্ছে। এই ওঠ, ওঠ রে! এতো ঘুম ভালো নয়!

সম্মোহের ডাকে বিকাশের ঘুম ভাঙ্গলো। হুঁ, উঠছি। আমার বেডটি চাই।

সম্মোহ বুলির মাকে চেঁচিয়ে দু-কাপ লিকার চা করতে বললো। তারপর বিকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, " কিরে আরেকটু ঘুমোতি!"

--- " আরে না না! ভালো ঘুম হয়েছে। এবার চা খেয়ে পটি করে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নেব। তারপর তোর সঙ্গে জায়গাটা ঘুরতে বেরোব। রাতের অন্ধকারে গভীর জঙ্গল ছাড়া কিছুই বুঝলাম না!"

---" জঙ্গল ছাড়া এখানে কিছু নেই বন্ধু। "

----" কে বলেছে কিছু নেই! মায়া আছে! যে মায়ায় তুই কলকাতা ছাড়লি!"

সম্মোহ বিকাশের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, জঙ্গলে থাকি সামান্য বালক!"

---" কেয়া বাত! তা বালকের বাল কি পক্ক! "

---- " শালা কি দিচ্ছিস রে সকাল সকাল!"

লালুকাকা চা নিয়ে ঢুকল। সম্মোহ ইশারায় বিকাশের খাটের পাশে টেবিলে চায়ের ট্রে-টা রাখতে বলল।

---- "বিকাশ এই হলো লালুকাকা, আমার ম্যানেজার।"

---" ও আচ্ছা। লালুকাকা তোমার কথা সম্মোহের মুখে অনেকবার শুনেছি..."

লালুকাকা মিটিমিটি হাসে। তারপর রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।

 --- " চায়ের ব্যাপারে তোর ফ্যাসিনেশনটা রয়েই গেল! নিশ্চয়ই কলকাতা থেকে নিয়ে আসিস!"

----" হ্যাঁ, কলেজস্ট্রিটের দিকে গেলে সুবোধ ব্রাদার্স থেকে নিয়ে আসি। বিওপি। বার্ডস অরেঞ্জ পিকো। আমার পছন্দের চা।"

---" নে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। ব্রেকফাস্ট সেরে ফুলঝোরের দিকে যাব।"

---" সেটা আবার কোথায়?" 


----- " সুতানের কাছের একটা গ্ৰাম। বাইকে যাব। জঙ্গলের রাস্তায় যেতে তোর ভালোই লাগবে।"

বুলির মা'র বানানো গরম গরম লুচি আলুভাজা খেয়ে সম্মোহ বিকাশকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। 

---- " হেব্বি চালাস তো! তুই একদম পালটে গেছিস। তোকে এভাবে দেখে বড় আনন্দ হচ্ছে রে।"

----" তোর ওরকম মনে হচ্ছে। একই রকম আছি রে। চারপাশের চেনা পরিবেশটা পাল্টেছে। তাই আমাকে তোর অন্যরকম লাগছে!"

----" হয়তো তাই! তবে নিজের চেনা শহুরে গন্ডীর বাইরে এসে বেশ লাগছে রে! থ্যাঙ্কস!"

---- " আবার থ্যাঙ্কস! বোকাচোদা। চল তোকে আজ মহুয়া খাওয়াবো। "

সম্মোহ ক্যানেলের পাড় ধরে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গাড়ি ছোটাতে থাকল।

বিকাশ মাঝে মধ্যেই সম্মোহের সঙ্গে কথপোকথন চালাচ্ছিল। মিনিট পনেরো বাদে সম্মোহ গাড়ি থামল ভাঙা অ্যাসভেসটারে ছাওয়া জীর্ণ একটা চা দোকানের সামনে। চা দোকানের পাশেই একটা কামারশাল। হাপরের মুখ দিয়ে গলগল করে হাওয়া বেরুচ্ছিল। কাঠ কয়লার মধ্যে ফোঁস ফোঁসানি শব্দ। খানিকটা কয়লা টকটকে লাল রঙ ধরেছে। তারমধ্যে কয়েকটা লোহার রড। কোনটা মোটা কোনটা সরু।আগুনে ঢোকানো দিকটা আর আগুনের রঙ থেকে আলাদা করা যায় না। প্রতিবার হাপর থেকে বেরুনো হাওয়া সাদা ছাই উড়িয়ে দিচ্ছে আগুনের মধ্য থেকে। ধলু বাঁ হাতে একটা বড় সাঁড়াশি দিয়ে একটা লোহার রড টেনে বের করলো।পোড়া দিকটা বড় একটা লোহার পিন্ডের উপর চেপে ধরে অন্য হাতে হাতুড়ি উঁচিয়ে জোরে আঘাত করল।টং। মুখোমুখি নিশিকান্ত একটা কাঠের উঁচু পিঁড়ির উপর বসে দুদিকে পা ছড়িয়ে দিয়ে দু'হাতে একটা ভারী হাতুড়ি উঁচিয়ে দড়াম করে মারল---টাং। টং টাং।হাতুড়ির ঘায়ে দেখতে দেখতে জ্বলন্ত পিন্ডটা সারস পাখির লম্বা ঠোঁটের মতো বাঁকা আকার নেয়।

--- ধলু, এটা কি বানাচ্ছো গো?"

------" বাবু গাঁইতি হবে! তা অনেকদিন পরে এলেন এদিকে ! তা একটু চা গান বাবু!"

----" চা খাবনা। মহুয়া চাই। আমার বন্ধু কলকাতা থেকে এসেছে। ওকে বুনো মহুয়া খাওয়াবো ভাবছি! ব্যাবস্থা হবে?"

----" তা আবার হবেনি! কি যে বলেন!"

Thursday, July 22, 2021

বিশেষ সংখ্যা~পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||           

ভারতীয় সংগীতের প্রথম সুপারস্টার ক্যুইন গৌহর জান্ ও 
উর্দু কবি আকবর ইলাহাবাদী ....

পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়


বিশ্বে প্রথম গান রেকর্ডিং হয় 1877সাল থেকে। অবিভক্ত ভারতের গৌহরজানই প্রথম শিল্পী,যাঁর গান 1902সালে 2রা নভেম্বর প্রথম রেকর্ডিং হয়। 
গৌহরজানের আসল নাম অ্যাঞ্জেলিনা। এক খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম। 1873সালে 26শে জুন। মারা যান 1913সালে 17ই জানুয়ারি। 

 গৌহরজান একবার এলাহাবাদ যান এবং জানকী বাঈএর ঘরে ওঠেন। এটা সম্ভবত 1910সালের ঘটনা।  গৌহরজান এলাহাবাদ থেকে বিদায় নেবার আগে জানকী বাঈকে বলেন ..."এখানে উর্দু কবি খান বাহাদুর সৈয়দ আকবর ইলাহাবাদীর সঙ্গে দ্যাখা করতে আমার ভীষণ ইচ্ছা করছে।একটু যদি নিয়ে যেতেন..."   জানকী বাঈ বলেন "আজ কথা বলে নিয়ে কাল যাবো ।"  সুতরাং পরের দিন দুজনে মহারসিক কবি আকবর ইলাহাবাদীর ঘরে হাজির হন। জানকী বাঈ পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন..."এ কলকাতার বিখ্যাত গায়িকা গৌহরজান। আপনাকে দর্শন করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল ,সেজন্য আমি একে নিয়ে এলাম। "
মহারসিক আকবর ইলাহাবাদী সাহেব বলেন "এ আমার পরম সৌভাগ্য ! নতুবা আমি না তো নবী,না ইমাম,না বিচারক,না কোনো গ্রন্থ,না কোনো ওলি। প্রথমে জজ ছিলাম,এখন রিটায়ার্ড করে কেবলমাত্র "আকবর"ই রয়ে গেছি। আমার বুদ্ধিতে কুলোচ্ছে না আপনার আমি কি সেবা করতে পারি।যাইহোক,স্মৃতি স্বরূপ একটা শের লিখে দিচ্ছি।"এই বলে আকবর ইলাহাবাদী সাহেব একটা শের কাগজে লিখে গৌহরজানের হাতে তুলে দেন ....
   
খুশনসীব আজ ভলা কৌন হ্যায় গৌহর কে সিওয়া 
সবকুছ্ অল্লাহ্ নে দে রক্খা হ্যায় শৌহর কে সিওয়া " 

  
                                                                                                                                    (শৌহর ..স্বামী)

Tuesday, July 20, 2021

আমন্ত্রিত সংখ্যা≈সমীরণ ঘোষ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||









সমীরণ ঘোষ

থাবার শূন্য


সস্তা মাংসের ঘরে কুকুরগুলো 
ফোঁটা ফোঁটা সাংকেতিক শব 
বারবার পিন গুঁজে কারোকেই জাগানো যাচ্ছে না

দস্তানা খুলে রাখার পরও ভয়ংকর দাগের বরফ
পাভলভ ফুরোনো ঘণ্টার। নিচু দেশের ধাতব
মাংস ও কুকুরগুলো অনুবর্তিত হচ্ছে 
ছোপ ছোপ হাওয়ার বাজনায়

দ্বীপ আত্মশুদ্ধির। যৌনরেডিও খুলে 
আত্মহিম জেনানামহল 



চল্লিশদিনের জন্য ভুলে থাকা শরীরে 
পেরেক ঠোকার নির্মম 
চল্লিশদিনের কাচ বালিরজনীর স্মৃতি

হাড়ের ঘোড়াও এত বজ্রউন্মাদ
অস্থিপোড়া গানের ভ্রুকুটি। লোহার পাতাল
কিন্তু সতেরদিন শলাকাবেঁধা শরীরের যম
সিঁড়ির পেরেক বেয়ে শূন্যে মেশা ঘোড়া ও পাতাল

ধ্বনির কাঁটায় রাত ঘনঘন আলোকে কামড়াচ্ছে 



সাদা আলোর তুলনায় কুকুরগুলো নেহাতই পলকা
তাওয়ার গনগনে কুকুরদের ছিঁড়ে ফেলছে
ভারি শিসে

শূন্যের ভুট্টাক্ষেতে গুঁড়ো গুঁড়ো পাখির ঝুমঝুমি
জানলা ও মাংসের দেয়াল ফুঁড়ে কুকুরগুলো
ক্ষিপ্ত  আর অবিবেচকরকম লাল
আলোর পলকায় শুধু  অনতিক্রমণীয় ঘেউ
সুরের নিশীথ 



বৃষ্টি সেলাই করছে কুকুরদের সাংঘাতিক ক্ষত
আর কুকুরগুলো তীব্রতম বৃষ্টির জাহাজ 
বিন্দু খুইয়ে অবিচল তরঙ্গের জিভ

মাংস আর প্রভুর চিৎকারও হয়তো ফেরাতে 
পারবে না
মাংস আর প্রভুর আর্তনাদে চিরে ফেলবে
আকাশ। হামেহাল। বৃষ্টির কুকুর



বাজনার গুটি কেটে বাজনা বেরুচ্ছে 
লাল খুনের পাখনা

ভাপের মহল্লায় রুটি। তখনও বোমারু
ছায়ার বিমান। নখের আগুনে জ্বলা দ্বীপ 

রাত্রি দুটুকরো। বুঁদ। আলোর বেদানা
বাজনা গলছে। সাদা ফুসফুস। জিভের হাপর



জানলার দূরবিন ব্রোঞ্জের পাখিকে পুষছে
এই খরশান। গুহ্যনীল। ধাতুর সুদূর 

পারদ পর্যন্ত খোঁড়া নদীর কিতাব। ঢেউ মিনার
সূর্যাস্ত। সন্ধে মাংসের ভাঁজে। ঝুরঝুরে 
বালির অক্ষর
খুন হওয়ার আগেই চাঁদ স্মৃতির বরফ
শিস ঘোড়ার টিমটিমে 
মেয়েটির গোঙানি লেগে মেঘের আরব
কুকুরদের ফেরাচ্ছে  লাল সঙে


আমন্ত্রিত সংখ্যা≈পিনাকীরঞ্জন সামন্ত

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||










পিনাকীরঞ্জন সামন্ত-এর কবিতা


সাপ্তাহিক...

১)

এই সন্ধ্যা আমাকে ভাবায় না
এই সন্ধ্যায় পাখিরা আসে না আর
তবু এই সন্ধ্যাকে ডেকে নিই কাছে
সন্ধ্যা - ক্রমশ রাত্রি হবে জেনে
এই সময় এক কাপ চা ও একটি সিগারেট
এবং obviously একটি নারী...
প্রয়োজন... যদি সে হয় নদী
সঙ্গে নিয়ে..., ভেসে যাব
ব্ল্যাক হোল টু দি পয়েন্ট ঐ ভূমধ্যসাগরে ।।

২)

একটি অঙ্ক ও একটি ছবি
পাশাপাশি
পথের পাঁচালীর সুর
একটি জীবন ও একটি মৃত্যু
পাশাপাশি
হেঁটে হেঁটে বহুদূর ।
আজ মোটোর-বাইকের চাকা পাংচার
পকেট অঙ্কে জিরো...
তাই অঙ্ক নিয়ে কোনো প্রশ্ন নয়
ছবি নিয়ে ক্লান্তি শুধূ...
সিগারেট আমি ও ভাবনা - পাশাপাশি
পুড়তে পুড়তে... ক্রমশ....।

৩)

কলকাতা চিত্রনাট্যের আনাচে কানাচে
টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে
তর্কে বিতর্কে
চাষে বাসে - শিল্পায়নে শপিংমলে
সরকারি প্রশাসনে
বিশেষ্য বিশেষণে
অথবা হতে পারে - কৃষি বিল থেকে কৃষক আন্দোলনে
গুষ্টির মাথা...
কলকাতার গোপালরা - বড় সুবোধ বালক
কী চমৎকার ঐ কন্ডম 
কী চমৎকার ঐ মরীচিকা বাহার
হাওড়া স্টেশন, ফেরিঘাট - ভাগীরথী
পেরিয়ে পেরিয়ে অবশেষে ...

৪)

ছুড়ে দিলাম অঙ্কের খাতা অবাধ্য রসিকতার মাঝে
উঠে এল নূপুরের ঢল বিষ্ণপ্রিয়া সাজে
কে বলেছে ? অঙ্কে হলো ভুল
সারিবদ্ধ রঙিন পুতুল....
ঢেউ'এর বিস্তারে পুষ্করিণী সাজে
নগ্ন কাঠবিড়ালি আর আমি রসিকতার মাঝে
চলো যাই ....
আবার আমরা অঙ্ক নিয়ে বসি
আমি, কাঠবিড়ালি, তুমি ও বিষ্ণুপ্রিয়া সখী ....

অঙ্ক নিয়ে হোক আজ লুকোচুরি খেলা
জলের ভিতর বাজুক অঙ্গ - নতুন বর্ণমালা ।।