Saturday, May 30, 2020

বাপন চক্রবর্তী

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                                  বাপন চক্রবর্তী 




চিল্কা


শরীরেই ছিল সেই দ্বীপ... 
বালি।  বালি পার হয়ে ছোট ছোট ঢেউ। 
ছায়ার অমলেটে নুন... আর তপ্ত হাওয়া।

অবশেষে স্ক্রিনসেভারের মত নিভে এল অপরাহ্ণবেলা 

সারাদিন হাওয়ায় ঘুরেছে যার অতীতের কথা 
তার কোনও নৌকা ছিল না
সুখের বালুকা সব উড়ে গেছে মিথ্যে হাওয়ায়...

কাজল সেন

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                                কাজল সেন
চোর

 চোরটাকে আমি চিনি  অনেকদিন থেকেই চিনি। নাম মনে হয় শ্যাম। মানে আমি ঐ নামেই চিনি। শ্যামের অন্য আরও অনেক নাম থাকতেই পারে। চুরি করতে গেলে মাঝে মাঝে ধরা পড়তেই হয়। ধরা পড়লেই বাধ্যতামূলকভাবে যেমন পিটুনি খেতে হয়, তেমনি প্রশ্নের উত্তরে একটা নামও বলতে হয়। বারবার ধরা পড়লে একই নাম বলতে কেমন যেন সম্মানে বাধে। তাই নাম পাল্টাতেই হয়। কখনও শ্যাম, কখনও রাম, কখনও বলরাম। তা শ্যাম নামে আমি যে চোরটাকে চিনি, তাকে আমি শ্যাম নামেই চিনি। তার আরও কী কী নাম আছে তা আমার আদৌ জানা নেই।

তো সেদিন কী হলো, শ্যাম আমার বাড়িতেই চুরি করতে এলো। তখন মধ্যরাত্রি। শীতকাল। কৃষ্ণপক্ষ। চুরির সব থেকে উপযুক্ত সময়। কিন্তু শুধু উপযুক্ত সময়ে এলেই হয় না, চোরকে আগে থেকে জেনে নিতে হয়, বাড়িতে কে কে আছে! তারা যদি ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে তাহলে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে! তাছাড়া তাদের মধ্যে কেউ স্পোর্টসম্যান বা উওম্যান আছে কিনা, মানে পালানোর সময় ছুটে তাকে ধরতে পারবে কিনা! এসব বিচার বিবেচনা করেই হয়তো শ্যাম সেদিন রাতে আমার বাড়িটাই বেছে নিয়েছিল।

বাড়িতে আমি একাই ছিলাম। বৌ তার দাদার বাড়ি গেছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর একমাত্র ছেলে পুনেতে পড়াশোনা করছে। সুতরাং নিশ্চিন্ত হয়েই শ্যাম পাঁচিল টপকে আমার বাড়িতে ঢুকেছিল। একটু দম নিয়ে নিপুণ কায়দায় ভাঁড়ার ঘরের তালা খুলে মশলাপাতির কৌটোগুলো নাড়াচাড়ার খুটখাট শব্দ শুনে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি বুঝতে পেরে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে ভেতরের বারান্দায় পাতা ডাইনিং স্পেসে এসে বসলাম। বারান্দার লাগোয়া ভাঁড়ারঘর। শ্যাম টের পেয়ে শশব্যস্তভাবে বারান্দায় আমাকে লুঙ্গি পরে বসে থাকতে দেখে রীতিমতো হকচকিয়ে গেল।
-স্যার আপনি! জেগে আছেন এই মাঝরাতে?
-হ্যাঁ শ্যাম, আজকাল রাতে ভালো ঘুম হয় না। জেগে জেগেই কেটে যায়।
-সে কী! রাতে আপনি জেগেই থাকেন? তাহলে আমি কখন চুরি করতে আসব?
-না না, তুমি কিছু ভুল করনি। এটাই তো চুরির সঠিক সময়!
-ধ্যাত! কী যে বলেন স্যার! চুরির আবার সঠিক বেঠিক সময় হয় নাকি! সুযোগ পেলেই চুরি করা যায়। আমি তো সকাল দুপুর কিছুই মানি না। তবে রাতটা হচ্ছে স্পেশাল ব্যাপার।
-তা তুমি আমার বাড়িতে এসেছ মশলা চুরি করতে? দেখ, গিন্নি আমার কী কী মশলা গুছিয়ে রেখেছে। যতটা দরকার নিয়ে যাও। শেষ হয়ে গেলে, আমার গিন্নি ফিরে আসার আগে আরও একরাতে না হয় কষ্ট করে এসো।  
-আসলে স্যার, অন্য কোনো মশলা নয়, পোস্ত চুরি করতে এসেছিলাম। ছোটমেয়েটা পোস্ত খাবার জন্য কান্নাকাটি শুরু করেছে, অথচ বাজারে যা দাম!

বিদায় নেবার আগে শ্যাম কাছে এলো। বললাম, ক্লাস এইটে উঠে পড়াশোনা ছেড়ে দিলি। পকেটমারার ট্রেনিং নিলি। এখন দেখছি তোর ডিমোশন হয়েছে। ছিঁচকে চোরের কাজ করছিস!
-সে কী স্যার, আপনি চেনেন আমাকে?





মৌমিতা পাল

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
মৌমিতা পাল

আবার বাঁচবে তারা 

বাংলার বৃক্ষরা মরেছিল বলে
ঈশ্বরের রাজপথে ভেসে যায়
বিদিত অন্ধকারের দুহাজার কুড়ি।
বাংলার পথে পথে মানুষের সাজানো সংসার,
অশেষ দয়ায় পাখিদের পশুদের মানুষের দেহ 
পীত সাদা কালো - যেনবা ফাটা খোসা লাল,
অবিকল একই স্বাদ মৃত্যুর
ঝড়- রোগ - করোন শানিয়ে নখর
নিয়মিত খেতে শেখে বড়ো।

মৃত্যুর মাঝেও এবছরের দেয়াল
পড়েছে ' ফিরে আয় ' ডাক।
নীল নির্বোধ মাছি খণ্ডিত সহস্র আলো 
গুঁজে দেয় দেহহীন অশ্রুহীন গাধার দাঁতে।

এ বাংলা মরেও মরে না।।

পীত সাদা কালো - যেনবা ফাটা খোসা লাল,
অবিকল একই স্বাদ মৃত্যুর
ঝড়- রোগ - করোন শানিয়ে নখর
নিয়মিত খেতে শেখে বড়ো।

মৃত্যুর মাঝেও এবছরের দেয়াল
পড়েছে ' ফিরে আয় ' ডাক।
নীল নির্বোধ মাছি খণ্ডিত সহস্র আলো 
গুঁজে দেয় দেহহীন অশ্রুহীন গাধার দাঁতে।

এ বাংলা মরেও মরে না।।




সংযুক্তা পাল

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
                              সংযুক্তা পাল


গবাদিপশু

একজন বিবাহিত কৃষক এভাবেই গড়ে ফেলে 
       একটি 'পশু-খামার'।
মালিকানা যতটুকু আনন্দ       
                        দেয় চাষে
ঢের বেশি অঙ্ক কষে শোষণের
পিরামিডের চূড়োয় ওঠে 
                       ব্রান্ডেড সোল,
নীচের দিকে তাকালে ভয় 
                                  করে;
অমীমাংসিত জিজ্ঞাসা চিহ্নের
তাকগুলো ছেড়ে দিয়ে
আমরা যারা মাঠের দিকে 
                               তাকাই
একসময় অভ্যেসে নিশ্চিন্তে 
ঢুকে যাই খামারের ভিতর।


বিশ্বজিৎ দাস-মুক্তগদ্য

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
বিশ্বজিৎ দাস-মুক্তগদ্য

অরোরিনের পাঁচসাত

আধো ভাঙা সকালে উঠে দেখি একটু একটু করে সরে যাচ্ছে আমাদের শৈশব। ঝিঙে ফুল আর সোমত্ত পুঁইশাকে মাটির গা'কে ঢেকে রেখেছে বড় সোহাগে। ওদের দেখাদেখি আমারও সারা গা শাদা করে দিচ্ছে ওই আলো। আমি মুগ্ধ। মুগ্ধতার কোনো ব্রিটেনিয়া বিস্কুট নেই। এই ভেবে সেদিনের মতো পায়চারি করি নিজের ভিতর। নিজের স্বভাবে জল দিই। ওরা খুশি হয়। হাওয়াদের কিছুক্ষণ বসতে বলি; আঙুলের মুখে বসাই বেঁচে থাকার মন্ত্র! পোশাকে ডানা জুড়ে দিই, সুপারি গাছের কাছে; চেয়ে বসি মজ্জাগত মিষ্টিকস্বর। ওরা চুপ থাকে। আশঙ্কায় ডুব দেয়; এই বুঝি স্বপ্নঘোর কাটিয়ে পৃথিবীর ভুলতে থাকা মাছেদের ডেকে আনি, এই বুঝি জলে ভাসিয়ে দিই শিকড়ের নিকটবর্তী ঘনিষ্ঠকে। ওরা পারে না... জীবনকে বালিকা ভেবে বালির আদরে শুয়ে পড়তে। ডাবের ঝুলে পড়া দেখে এরকম অস্বস্তি জানায় আমাকে। সমুদ্রের আড়ালে বহুবার বিবাহগোলাপ দেখেছে। ওখানে জন্ম নিয়েছে এক ঔদ্ধত্য পুষে রাখা কবি। নিজেকে ছিঁড়ে সে দেখেছে; চর্যাপদের কামকলি। সে জেনেছে পাদাচার্য মানেই ব্যক্তিগত নয়; কাব্য থেকে কবিতার সাহাজঙ্গলী! শ্লোক কিংবা প্লেট ভাঙা শব্দমালা, হয়তো বা তৎসম অসংলগ্ন জীবনের দুচারটি কথা অথবা শেকশুভোদয়া আড়চোখের বস্তু নয়। দিন শেষ। আবারও দেখা হবে কানু ছোড়ার সনে; কদম্ব বনে!