Wednesday, February 16, 2022

দেবশ্রী দে'র কবিতাগুচ্ছ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||      দেবশ্রী দে'র কবিতাগুচ্ছ



জলাশয়টুকু

পার হয়ে বুঝি
দেখা হয়নি অনেক কিছুই

গা বাঁচিয়ে ভেসে গেলে
ছোঁয়া যায় না-
দুঃখের অণু অণু সুখ

অথচ পেরিয়ে এসেছি সব
মৃত্যুর আগে


স্বপ্নেরা উলঙ্গ হলে

দিনের আলো ফুটলেই
স্বপ্নেরা উলঙ্গ হয়ে
নেমে পড়ে রাজপথে

খুলে যায় কল্পনাপ্রসূত
আচ্ছাদন। আভরণ
চুঁয়ে পড়ে রক্ত, ঝরে স্বেদ

প্রিয় শরীরে যেমন
তারা অবাঞ্ছিত,
মনসিজ স্বপ্নেও তাই-ই

কিছু রাত স্বপ্নবিহীন হওয়া আবশ্যক।


পাখিটার

পিঠে অগুনতি পালক
আমরা চাইলেই
সেগুলোকে সাজিয়ে
কষতে পারি অসংখ্য সমীকরণ

দুঃখের কথা এই যে,
আমরা কখনোই
সেইসব সমীকরণে চেপে
উদ্দেশ্যহীন উড়ানে সামিল হই না 


রূপকথা

ডানাবিহীন, আমার নিঃশর্ত রাত

এক পা এক পা ক'রে
হেঁটে যাওয়া ছাড়া
কোনও রূপকথার গল্প নেই

তুমি শিখে নিয়েছ
উড়ানের আশ্চর্য জাদুকরী,
কুয়াশায় রেখেছ অস্তিত্ব

নির্দ্বিধায় আমি শিশির মাখছি
তোমাকে ছোঁয়ার নামে।

Sunday, February 13, 2022

কবিতার ডালপালা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   অরিজিৎ চক্রবর্তী

কবিতার ডালপালা  
[ ষষ্ঠ পর্ব ]

আমরা কি কবিতাকে শিকড়ের সমসাময়িক অনুসন্ধান বলে মনে করতে পারি? কবিতায় সমসাময়িকতার কি কোন নিজস্ব সত্তা আছে? অথবা শিকড় অনপেক্ষ হয়ে সাম্প্রতিক কি কখনো দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে? কবি যেহেতু একজন ব্যক্তি এবং ব্যক্তি যেহেতু একটি সমাজ ও ঐতিহ্যের অংশ,  ফলত সময় এবং স্থান এই দুইয়ের মিলিত প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই সামাজিক এবং ঐতিহ্যগত স্বারায়নের প্রভাব তার অভিজ্ঞতাকে পরিবর্তিত করে, যে পরিবর্তন কবি তার ঘনিষ্ঠ পৃথিবীর বোধ ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী গ্ৰহণ বা বর্জন করতে পারেন।
এখানে শিকড় খোঁজার চেষ্টা বৃথা হয়ে যায়। আমরা অনন্যপায় হয়ে কবির মানস জগতে অনুসন্ধান করি। প্রতিমা ও প্রতীকগুলিকে বিশ্লেষণ করি কোন সম্ভাব্য ব্যাখ্যা বা অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য।


"অতিদ্রুত তলিয়ে যাচ্ছি বনসাই শহরে। তোমার শরীর থেকে 
নেমে আসা সহজ গোধূলি আজ আর কোন জেব্রা পারাপার করল না
পুরোনো গ্রামাফোনে ঘাড় কাৎ করে থাকা বেহালার ছড়টাও
একটানা বেজে বেজে ঘুমিয়ে পড়েছে পুড়ে যাওয়া সম্পর্কের ভেতর

যে সাঁকোর পার বরাবর সূর্যাস্ত  হারিয়ে যায় তার মনস্তত্ত্ব নিয়ে 
কাঁটা-চামচেরা একটা তদন্ত শুরু করুক
প্যালেটের কিনারে লেগে থাকা ছইনামচা অন্তত সে কথাই বলছে

ল্যান্ডস্কেপের মৃদু শিথিলতাও

পিক্সেলে তোমার ছবি বলতে এই লুকিয়ে দেখার প্রোফাইল 
ডেলিরিয়ামের উৎরাই ভেঙে অন্যমনস্ক

পাড়াতুতোদের চোখ এড়িয়ে অডিটোরিয়ামের গলায়
কয়েকশো মেগাবাইট চুপ করে থাকা যতিচিহ্নের দিনযাপন গাইছে"

( সিম্ফনি )

এই কবিতাটি বহুমাত্রিক পাঠের দাবিদার হয়ে আমাকে কবিকৃত "ডেলিরিয়াম" শব্দটির প্রয়োগ দক্ষতায় উপমেয় আর উপমানের পরস্পর অভেদ কল্পিত সাঙ্গ রূপকের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল। কারণ ইংরেজি শব্দ "ডেলিরিয়াম"- এর বাংলা অর্থ "ভুল বকা"। অর্থাৎ ডেলিরিয়াম হল মস্তিষ্কের ক্রিয়ার হঠাৎ অবক্ষয় যা মানসিক কর্মহীনতা সৃষ্টি করে। ডেলিরিয়ামের অবস্থায় একজন মানুষ মানসিক অবস্থার পরিবর্তন অনুভব করেন। অথচ কবি লিখে ফেলেন " পিক্সেলে তোমার ছবি বলতে এই লুকিয়ে দেখার প্রোফাইল / ডেলিরিয়ামের উৎরাই ভেঙে অন্যমনস্ক"! আমরা রূপকের অভিপ্রায়কে অতিক্রম করে একটা প্রার্থিত স্পর্ধার দিকে এগিয়ে যাই। কবি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যান। সমগ্ৰ কবিতাটি তাই উৎপ্রেক্ষার ঘনঘটায় ঘটমান। বর্তমানকে লুকিয়ে রেখে কবি তাঁর পাঠককে চিনিয়ে দেন কিভাবে শব্দপ্রগতির অবগাহন মানসিক ও বাচনিক প্রযত্ন পুড়ে যাওয়া সম্পর্কের সুর তোলে। 

কবি শান্তিময় মুখোপাধ্যায় তাঁর কবিতার বই "অপঠিত জলপাইলিপি"- র পাতায় পাতায় এরকম আরো চিত্রকল্পের আকুলিবিকুলি প্রযুক্ত করেছেন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এই বইটির প্রকাশক 'কবিতাপাক্ষিক'। কবি মাত্রই প্রেমিক। তাঁর প্রেম উৎসারিত হয় লালিত শব্দে,ছন্দে, অদেখাকে দেখার স্বভাবজাত বিন্যাসে। কিন্তু শান্তিময়ের দেখার ভেতর একাকিত্বের ডেলিরিয়াম আছে। দৃশ্য থেকে দৃশ্যের মুন্সিয়ানায় বিচ্ছিন্নতার সুরটি তাঁর অত্যন্ত সুপরিচিত। 

"এই যে বহুদূর চলে যাওয়া গরাদের মোটা শিক ভেঙে
না জ্বলে ওঠা আলোটির দিকে
তার মান নির্ণয় করতে আবার ইউটার্ন নিতে হল
প্রসূতিসদনের দরোজায়

শুনলে হয়ত মহানির্বাণ তন্ত্রের কথা মনে হবে
কপাললিপির অস্পষ্টতা ধরা পড়বে মোটা দাগের রেখায় 

আমলকি পাতায় ফুটে ওঠা করচিহ্ন 
আজো জানল না এইসব 

মৃগশিরা নক্ষত্রের চোখে কেন একদিন
নেমে এসেছিল অন্তবর্তীকালীন ঘুম"

( পরকীয়া )

কুণ্ডলিনী জাগরণের একটি লক্ষণ হল নাদের স্ফূরণ। নাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে বিন্দু ও কলাতত্ত্ব। জগতের সৃষ্টি প্রণালীর বিবরণ প্রসঙ্গে সারদাতিলকে লেখা আছে---

"সচ্চিদানন্দবিভবাৎ সকলাৎ পরমেশ্বরাৎ।
আসীৎ শক্তিস্ততো নাদস্ততো বিন্দুসম্ভুদ্ভবঃ।।"

এই বিবরণ থেকে আদি সৃষ্টির যে ক্রম পাওয়া যায়, তা থেকে জানা যায় যে, সৃষ্টির আদিতে স-কল পরমেশ্বর থেকেই সৃষ্টির বিকাশ ঘটেছে।'স--কল' বলতে 'কলাসহিত'--- এটাই বুঝতে হবে। আবার 'কলা'শব্দের অর্থ শক্তি। এই স--কল পরমেশ্বর থেকে অবতরণক্রমে শক্তিতত্ত্বের বিকাশ হয়ে থাকে।
কবি কি তেমনই কোনো বিকাশের প্রত্যাশী ? তাই না জ্বলে ওঠা আলোটির প্রতি তাঁর নির্বাণগামী সোপানের ধারা ! কিংবা হয়তো সংযুক্তি ( Conjunction ) ও বিযুক্তির ( distinction ) নিরিখে কবিকল্পনার ঊর্ধ্বায়ন। 


"এই যে বহুদূর চলে যাওয়া গরাদের মোটা শিক ভেঙে / না জ্বলে ওঠা আলোটির দিকে / তার মান নির্ণয় করতে আবার ইউটার্ন নিতে হল /প্রসূতিসদনের দরোজায় / শুনলে হয়ত মহানির্বাণ তন্ত্রের কথা মনে হবে "

যেন এক আশ্চর্য সংবর্তনের শৈলী। দৃশ্যমান ও বোধগম্য বাস্তবের সীমার ওপারে যার দ্বিজত্বলাভ কিংবা কপাললিপির নিয়তি। যেখানে পরাবস্থারও পরাবস্থা আছে। আছে "অন্তবর্তীকালীন ঘুম"!  অর্থাৎ অবস্থার স্থিতিলাভ। কবিতার পূর্ণ জাগরণ !  কবিতার ইউটার্ন পরিণতি।

শান্তিময় মুখোপাধ্যায়ের এই কবিতার বইটি পড়তে পড়তে বারবার মনে হয়েছে শব্দের হ্যালুসিনেশন কিভাবে কবিতার প্রাচুর্যকে অবারিত করে তোলে, তারই সেমিওলজি অর্থাৎ সংকেতবিজ্ঞানে । এখানে সংকেতের বাহ্যিক রূপ ও অন্তর্নিহিত অর্থের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন একের পর এক সংকেত-বিম্ব! বিশেষ করে ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে একটি সংকেত দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত – বাহ্যিক রূপ বা দ্যোতক (signifier) ও অন্তর্নিহিত অর্থ বা দ্যোতিত (signified)। যেমন ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দ্যোতক হল কোন ধ্বনিসমষ্টি বা চিত্র, যেমন “মহানির্বাণতন্ত্র” একটি ধ্বনিত শব্দ বা লিখিত শব্দ। অন্যদিকে দ্যোতিত হল তন্ত্রের ধারণা, এই দুইটি উপাদান একত্রে মিলে কবি জানিয়ে দিলেন প্রসূতিসদনের দরজার অপেক্ষা। আশাকরি এরকম আরো বহু অপেক্ষার উৎসে পাঠক তাকিয়ে থাকবে পরবর্তী কবিতার সেমিওলজির দিকে।





Thursday, February 10, 2022

অনুবাদ কবিতায় কবি দেবলীনা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  

অঙ্কিতা আনন্দের কবিতাগুচ্ছ অনুবাদ করলেন কবি দেবলীনা

অঙ্কিতা আনন্দ ২ আগস্ট ১৯৮৫ সালে বিহারের ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। মূলত হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করেন এবং সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত। 
নতুন প্রজন্মের নারীবাদী কবিয়েত্রী অঙ্কিতা আনন্দ আজ সুপরিচিত। আজ তাঁর কয়েকটি কবিতা বাংলায় অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি আমি দেবলীনা । 



खाई 
 
तुम्हारी आँखों में तैरते दर्द के रेशे 
दग़ा देते हैं तुम्हारी हँसी के रेशम को,
और प्रश्नचिन्ह लगाते हैं 
हमारे प्यार पर. 

 
 খাদ

তোমার চোখে ভাসমান বিষণ্ণ পলক
আঘাত করে তোমারই মুলায়ম হাসিকে
আর প্রশ্ন চিন্হ নির্দেশ করে
আমাদের ভালোবাসার ওপর


खोज 

ख़ुद को ढूंढ़ने की व्यस्तता में 
शामिल एक इंतज़ार है 
किसी का 
जो हमें ढूँढ़ निकाले.


খোঁজ

নিজেকে খোঁজার ব্যাস্ততার 
মধ্যে আছে এক নিরন্তর 
অপেক্ষা 
যে আমাকে খুঁজে বের করে।


ईश्वर 

हमें कई ग़लत आदतें सिखाता है,
जैसे 
किसी से बातें करना 
बिना ये जाने कि वो सुन भी रहा है या नहीं. 


ঈশ্বর

আমাদের সেই ভুল অভ্যাস শেখানো 
যেমন 
কারুর সাথে কথা বলছো 
অথচ তুমি জানোই না যে কিছুই শুনছে না।



सकारात्मक


अपने व्यक्तिगत शोक के उत्तरदायी आप स्वयं हैं। 

लज्जाजनक कुछ नहीं— 

इस दुर्बलता में भी 

सेल्फ़-हेल्प उद्योग के सक्षम निवेशक हैं आप। 

कश्मीर से लेकर कुमारी 

कन्याओं तक की कहानियाँ 

अगर निजी तौर पर आपकी छाती में बर्फ़ जमाने लगें, 

तो बदलाव की ज़रूरत व्यवस्था को नहीं 

आपके नज़रिए को है 

और यही है 

आपकी हैसियत के भीतर।


 
ইতিবাচক

আপনার ব্যক্তিগত শোকের জবাবদিহির জন্য আপনিই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ 

লজ্জাজনক কিছুই নয়
এই দুর্বল সময়েও 
স্বয়ংক্রিয় উদ্যোগের ইচ্ছাধীন আপনি 

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত গল্পরা
যদি নিজের মতো করে আপনার বুকের ওপর 
বরফ জমাতে চায় 
তাহলে পরিবর্তন প্রয়োজনীয় 
কিন্তু সেটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির,অবস্থার নয়

আর এটাই আপনার অন্তরাবস্তা।


चाय पर चर्चा


बच्चे 

एक स्तब्ध चुप्पी में 

मेज़ पर चाय रख चले जाते हैं। 

उनके नेता कहते हैं 

बच्चों को ‘घर’ के कामों में 

हाथ बँटाना चाहिए ....


चाय बेचने वाले बच्चे बड़े बन सकते हैं 

पर पहले ‘चाय-चाय’ 

चिल्लाना पड़ता है।



চা'য় পে চর্চা 

বাচ্চাটি
এক স্তব্ধ নৈঃশব্দের মাঝে
 মেঝেতে চা রেখে চলে যেতেই

নেতা'জি বলে ওঠেন 
বাচ্চাদের ঘরের কাজে 
সাহায্য করা উচিত 

এই চা বিক্রি করা বাচ্চাটিও একদিন বড় হতে পারে
কিন্তু তার জন্য প্রথমে তাকে 
"চা'য় - চা'য়" হাঁক দিতে হবে 


दु:ख की जगह


दु:ख कहीं भी आपको दबोच सकता है 

एक से एक असुविधाजनक मौक़ों पर 

मीटिंग के बीच 

ठीक आपके बोलने की बारी से पहले 

निवाले में लिपट 

अटक सकता है गले में 

हँसी की पीठ से निकल 

धप्पा कर सकता है 

उसे सोचना, सीखना चाहिए 

संवेदनशील, शांत होना, 

दबे क़दमों से आना 

बस तभी जब सही वक़्त हो 

पर कब? 

कौन-सा समय हमने सुनिश्चित किया है? 

कौन-सी जगह, 

जहाँ उसे मान से बिठा पूछा जाए 

कैसा है वह?


দুঃখের জায়গা 

দুঃখ যখন খুশি তোমাকে আঁকড়ে ধরতে পারে
যেকোন অসুবিধেজনক পরিস্থিতিতে

মিটিংয়ের মাঝখানে 

ঠিক তোমার বক্তব্য রাখার আগে 

গলার কাছে জট পাকিয়ে
তোমার স্বর আটকে দিতে পারে

হাসির পিঠ থেকে বেরিয়ে 
আচমকা ধাপ্পা দিতে পারে

তার শেখা ও ভাবা উচিত 
সংবেদনশীল ও শান্ত থাকা
ধীর পায়ে আসা
ঠিক তখন যখন তার আসার সময় হবে 

কিন্তু কখন ?
ঠিক কোন সময় আমরা সুনিশ্চিত করেছি ?
সে কোন স্থান 
যেখানে তাকে সম্মানের সাথে বসিয়ে
জিজ্ঞেস করব 
যে কেমন আছে সে ?



Wednesday, February 9, 2022

ইউসুফ মুহম্মদের দোঁহা কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  ইউসুফ মুহম্মদের দোঁহা কবিতা



দোঁহা

 
৩২২

এ কেমন ছাই এ কেমন ধোঁয়া, বাতাসে ভাসে না মন্ত্রণা!
জানা হলো শেষে এই চিতা ভস্ম তোর মন-পোড়া যন্ত্রণা।

৩২৩

যেখানে সোমত্ত নদী সেখানে জন্মের নতুন বাগান,
মহাজীবনের ডাকে জেগেছে উত্থান পতনের গান।

৩২৪

আয়না ভেঙে পেলাম দারুর লুপ্ত-গোপন- রূপনগরের চাবি
আদম ছুঁলো ঠোঁটের দানা, হারানো সুর ভাজতে যাবো, যাবি?

৩২৫

চণ্ডীদাসের প্রেমের বয়ানে
দুপুর ঝরায় কোন্ আষাঢ়ের ফুল!
ফলের খোসায় সুফি কী দেখিলো
ঠোঁটের তুলিতে আঁকা আদমের ভুল?

৩২৬

রিপু-’র জালে সংজ্ঞা হারিয়ে মানুষ হলো কলঙ্কিত
নিঃসরণের পাপের খাতায় ঈশ্বরেরও নামাঙ্কিত

৩২৭

ঈশ্বর আজ বৃন্তচ্যুতির পাপ-পুণ্যে- যাদব বাবুর গণিত খাতার ডট
ঘর ছেড়ে যায় পরের পাখি যাক না, তবে হুরের নেশা কেমন যে উদ্ভট।

৩২৮

বাঁশের চোঙায় কে সাধে ভৈরবী, মহাসাগরের ঢেউ উতলায়
পাগলের মন ঘোর চঞ্চল সুর-মুলতানে,
পরমেশ্বর- অহুর-মাজদা, বুদ্ধ-কৃষ্ণ, ইসা নবি মুসা ও মোহাম্মদ
সকল হৃদয় এক সুরে বাঁধা ভোরের বাগানে।

৩২৯

কাদার নাভিতে খুঁজতে গিয়েছো জনমের অনুরাগ,
তোমার পিরানে, প্রণত খড়িতে কালান্তরের দাগ।

৩৩০

স্পর্শের বাইরে বসে কে আমার পাঁজরের তারে বাজায় ভৈরবী
অন্তর্গত সুরে বান, প্রেমকথা কে শোনায়- কোন্ মনচারী কবি!


নীপবীথি ভৌমিকের কবিতাগুচ্ছ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||    নীপবীথি ভৌমিকের কবিতাগুচ্ছ


তরঙ্গ    

গভীর অরণ্য। চোখ ফেরানো দায়।
 যতদূর দেখা যায়, আলো আর আলোর উথালপাথাল তরঙ্গ

    কেউ কি তবে চিনে ফেলেছিল নিজেকে?
      হত্যা করেছিল স্বহস্তে নিজের মৃত্যু আর জন্মকে?

   চোখ বেঁধে রাখা তাই আমার।
     যাতে করে অন্ধ হওয়া যায় !

    গান্ধারী জন্ম নিয়ে বসে থাকা দিনগুলো
     আলোই চিনেছে শুধু
      আঁধার চেনা কি এত সহজ?

কাহিনী

 এ সমস্ত জীবনের গল্পে চরিত্রগুলো 
   বেশিরভাগ কাল্পনিক
  কাল্পনিক স্নান সারে
    রোদে ভিজিয়ে নেয় সময়ের যাঁতাকলে

      একটা পাখি হঠাৎ উড়ে  গেল
    কোনো এক প্রাচীন বৃক্ষের গোপন 
      কুঠুরি থেকে ,
      একমাত্র পাখিটিই বাস্তব। 
        
       সন্ধ্যে নামলে মাটি রঙের
      পৃথিবীটা আবার কালো হয়ে ওঠে
         গ্লাস আর তরলের আদরে

   চুমুকে চুমুকে সুরাও অনিবার্য হয়ে
    যায় কখনো দিনশেষে।


যা কিছু দৃশ্যে থাকে
    
  প্রতিটি মৃত্যুই আসলে হারিয়ে যাওয়া অতীত, যেখানে 
শিশু গাছেরা ঘুমিয়ে থাকে এক একটা জন্মের হাতে

    ছায়া আসে, 
     হারিয়ে যায় বৈকালিক স্রোতের গান
      খইফুল হাতে নিয়ে 
    আমরাও হারাই এভাবে স্রোত আর 
         সাঁতারের মাঝ বরাবর

   ঢেউ থেমে যায় জীবন পারে, নদী- জল- কোলাহল...

 পাহাড়ী রঙের মেয়ে       
       
      রঙচটা সন্ধ্যা নেমে আসে আজকাল 
    এ শহরে!
  নক্ষত্র চ্যুত আকাশ বাঁশি বাজায়
  বিষাদ- আঙুলে

    ধুন ওঠে আলি আকবরের সরোদে
     পাহাড়ী মেয়ে রঙের রাগে

       জ্বর থামলে আবার যাব ভেবেছি ওদেশে;
      মিথ্যে তাপমাত্রা আর মুখোশ ছেড়া
        রোগের পথ ডিঙিয়ে।

 
ঘর
  
  প্রতিটি দুঃখের পাশে আমি
  সুর বেঁধে রাখি।
   তানপুরার সা'কে ছুঁয়ে পঞ্চম বেজে 
        ওঠে  মর্মরে
      কখনো পরজে কখনোও বা বসন্তে...

     আমি সুর সাধিনি। জানি না তাকে
     একান্ত ‌গভীরে,
     তবু কেন যে মনে হয় বিষাদ প্রিয় হলে
   মাড়োয়া বয়ে যায় আমার নদী-জন্ম ঘিরে !

      প্রতিটি বিষাদের পাশেই আমার 
   ঘর বাঁধা থাকে সুর পঞ্চম ছুঁয়ে।