গান্ধীজী ও উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি সাহেব...
(ক্যায়া করুঁ সজনী আয়ে না বালম)
পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়
স্বাধীনতা লাভের কিছুদিন আগে রাষ্ট্রের উদ্দেশে রাষ্ট্রপিতা গান্ধীজীর ভাষণ দেওয়ার পূর্বে একটা প্রার্থনাসভার কথা ছিলো। গান্ধীজীর ভাষণ এবং প্রার্থনার আগে,অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান সাহেবের অনুষ্ঠান ছিলো,কিন্তু ওনার আসতে দেরি হয়। খান সাহেব বোম্বাইয়ের ট্রাফিকে আটকে পড়েছিলেন। সমগ্র দেশের সঙ্গে সঙ্গে বাপুজীও সাগ্রহে প্রতীক্ষা করছিলেন।
খান সাহেব আসতেই উপস্থিত জনতা হাততালি দিয়ে ওনাকে স্বাগত জানান। উস্তাদজী হাঁফাচ্ছিলেন। ওনার স্হুল শরীর,এবং বড় বড় গোঁফ দেখে মনে হতো যেন কোনো আখড়ার প্রৌঢ় পালোয়ান।
গান্ধীজীর দৃষ্টি খান সাহেবের ওপর পড়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ সমারোহে দেরিতে আসার জন্য তিনি লজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন। গান্ধীজী যখন দেখলেন খান সাহেব অস্বস্তি বোধ করছেন তখন বাপুজী ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন "খান সাহেব আপনি হট্টাকট্টা মানুষ আর আমি রোগা পটকা,এইজন্য আপনার সঙ্গে লড়তে পারবো না।" এটা শোনার পর খান সাহেবের লজ্জাভাব দুর হয়ে যায়। এবং তিনি গান শুরু করেন।
স্বাধীনতা লাভের এই স্মরণীয় সমারোহে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান সাহেব "পাহাড়ি"তে একটা বন্দিশ শুরু করেন,যার মুখড়া ছিলো ---হরি ওম তত্ সত জপা কর জপা কর ....
উস্তাদজী ভজনও শোনান। ভজন শোনার পর গান্ধীজী বলেন "মানব আত্মার কোনো বিনাশ নেই। আত্মা কোনকিছু খায় না। তার যদি কিছু খাবার থাকে,তাহলো এই ভজনই তার ভোজন হতে পারে।"গান্ধীজী উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান সাহেবের দিকে ইশারা করে বিশুদ্ধ সংস্কৃতে কিছু বলেন,যার অর্থ ছিলো "মানবতার মঙ্গলের শিক্ষা এক মহান আওয়াজে অমর হয়ে গেলো।" তারপর জোরদার তালিতে চারদিক গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে এবং খান সাহেব দীর্ঘক্ষণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
গান্ধীজী উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি সাহেবের অত্যন্ত প্রশংসক ছিলেন। 1944সালে 26শে মে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি সাহেবের মহান কৃতির সম্মানে গান্ধীজী একটা চিঠি লিখেছিলেন। তিনি লেখেন "আপনি এখানে এসে মধুর ভজন শোনানোর জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। যদিও সঙ্গীতের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি ওস্তাদদের গান খুবই কম শুনেছি,এইজন্য বুঝিও কম। কিন্তু যে সঙ্গীতে ঈশ্বরের নাম আসে,সেটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। "'
-----আপনার মোহনদাস করম চন্দ গান্ধী।





