Tuesday, July 13, 2021

বিশেষ সংখ্যা~পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||                             

গান্ধীজী ও উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি সাহেব...
(ক্যায়া করুঁ সজনী আয়ে না বালম)
পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়



স্বাধীনতা লাভের কিছুদিন আগে  রাষ্ট্রের উদ্দেশে রাষ্ট্রপিতা গান্ধীজীর ভাষণ দেওয়ার  পূর্বে একটা প্রার্থনাসভার কথা ছিলো।  গান্ধীজীর ভাষণ এবং প্রার্থনার আগে,অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান  সাহেবের অনুষ্ঠান ছিলো,কিন্তু ওনার আসতে দেরি হয়। খান সাহেব বোম্বাইয়ের ট্রাফিকে আটকে পড়েছিলেন। সমগ্র দেশের সঙ্গে সঙ্গে বাপুজীও সাগ্রহে প্রতীক্ষা করছিলেন। 
     খান সাহেব আসতেই উপস্থিত জনতা হাততালি দিয়ে ওনাকে স্বাগত জানান। উস্তাদজী হাঁফাচ্ছিলেন। ওনার স্হুল শরীর,এবং বড় বড় গোঁফ দেখে মনে হতো যেন কোনো আখড়ার প্রৌঢ় পালোয়ান। 
গান্ধীজীর দৃষ্টি খান সাহেবের ওপর পড়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ সমারোহে দেরিতে আসার জন্য তিনি লজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন। গান্ধীজী যখন দেখলেন খান সাহেব অস্বস্তি বোধ করছেন তখন বাপুজী ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন "খান সাহেব আপনি হট্টাকট্টা মানুষ আর আমি রোগা পটকা,এইজন্য আপনার সঙ্গে লড়তে পারবো না।" এটা শোনার পর খান সাহেবের লজ্জাভাব দুর হয়ে যায়। এবং তিনি গান শুরু করেন। 
  স্বাধীনতা লাভের এই স্মরণীয় সমারোহে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান সাহেব "পাহাড়ি"তে একটা বন্দিশ শুরু করেন,যার মুখড়া ছিলো ---হরি ওম তত্ সত জপা কর জপা কর ....
উস্তাদজী ভজনও শোনান। ভজন শোনার পর গান্ধীজী বলেন "মানব আত্মার কোনো বিনাশ নেই। আত্মা কোনকিছু খায় না। তার যদি কিছু খাবার থাকে,তাহলো এই ভজনই তার ভোজন হতে পারে।"গান্ধীজী উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান সাহেবের দিকে ইশারা করে বিশুদ্ধ সংস্কৃতে কিছু বলেন,যার অর্থ ছিলো "মানবতার মঙ্গলের শিক্ষা এক মহান আওয়াজে অমর হয়ে গেলো।" তারপর জোরদার তালিতে চারদিক গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে এবং খান সাহেব দীর্ঘক্ষণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। 
    গান্ধীজী উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি সাহেবের অত্যন্ত প্রশংসক ছিলেন। 1944সালে 26শে মে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি সাহেবের মহান কৃতির সম্মানে গান্ধীজী একটা চিঠি লিখেছিলেন।  তিনি লেখেন "আপনি এখানে এসে মধুর ভজন শোনানোর জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। যদিও সঙ্গীতের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি ওস্তাদদের গান খুবই কম শুনেছি,এইজন্য বুঝিও কম। কিন্তু যে সঙ্গীতে ঈশ্বরের নাম আসে,সেটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। "'
              -----আপনার মোহনদাস করম চন্দ গান্ধী। 



Saturday, July 10, 2021

আমন্ত্রিত সংখ্যা≈দেবযানী বসু

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
                                       









দেবযানী বসু-র কবিতা

পানসির পৌরোহিত্য

ঝাড়বাতিতে জন্মাল জামরুল
জারুল দারুল
বাতি চুঁইয়ে ভালোবাসা নামে ধরণীতে
অপরাজিতা ভরা আগুন পানসি কবির বুকে
তিনজনের একজন অনুপস্থিত
সক্রেটিসের যুগ থেকে প্রেমের নিয়ম এই
হাতের আড়ালে রাখো মঘানন্দিনীর আগুন
ঐ কামিজনারী ফুটিবেই যথাস্থানে এব চ
জাগ্ৰত তারকেশ্বর দীপদুপুর
তখনও কবির ভিটে ছুঁয়ে বইছে নদীটি
সাগরিকা দাঁড় পাল নিয়ে
প্রত্যঙ্গসীমানা পেরিয়ে।


কাঠিঘুর্ণী

একটি শুককীট প্রজাপতি হবে বলে গলা সাধে রোজ।
রোজ উড়ুক্কু গাছের ষড়যন্ত্র উড়ুক্কু মাছের নামে চালানো হয়।
বি শার্প শঙ্খলাগার মিথ্যেটুকু বয়ে বেড়ায়
' বয়ে বয়ে বেড়ায় সে তার যা কিছু সঞ্চয়' --
রনপা চড়া রোদ
একঠেঙো হাওয়ার চোখে জলসত্র
নিরোনীরোদের মুখ ধোয়ানো নদী
এত ষড়যন্ত্র যে কাঠি ফড়িং পর্যন্ত কাঠি করতে ভুলেছে।
বাসি ভাতের গন্ধে রাজনীতি টকে গেছে।

মহাকাশে ফেলা বাতিল প্রেম

সামরিক গোয়েন্দা কুকুরের কাছে ধরা পড়ে
নিরো ও নীরোদের পার্থক্য।
বিগতগন্ধা ফুলের ভিতর পচাগলা ব্রেসিয়ার
নিরোর গন্ধ শুঁকে শুঁকে নীরোদকে আবিষ্করণ
গুজবের কৃষ্ণগহ্বর গল্প গেলে গোগ্ৰাসে
কবিতা গেলে না
কতো যে মানুষ শূন্য থেকেই চিহ্ন ধরে
খেয়ে পরে বেঁচে আছে
কবি চেয়েছিল বলে গ্ৰামের নামটি ধানকমলি আজ।
জখম জমি কারখানার
জমিতে ভালোবাসার বেজি ও ভামের দল
শহরে এলে পুড়িয়ে মারা হবে তাদের।

আমন্ত্রিত সংখ্যা≈বিশ্বজিৎ দাস

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||










বিশ্বজিৎ দাস-এর কবিতা


আড়বাঁশি

১.

শাশ্বত পুরুষ ছেড়ে চলে গেছে মেয়ে
কালকেতু আনে এক চতুর রমণী
সিরিয়ালে আসে যায় অযুত কুমারী
তোমায় জেনেছি কাল ধ্যান গান গেয়ে!

পাহাড় শরীরে নামে কোকিলের চোখ
সারাক্ষণ বাজে মধুর মধুর বংশী
কাব্যকলা কেন জনন বিমুখ হংসী
কেন লাঙলের ফাল আদর্শের শোক?

জানি, সব কিছু স্বপ্ন
তবু নেই ভয়
যে আসে, সে তো জানে
নিপুণ অভিনয়!

২.

আয়নার ব্যক্তিগত চোখ নেই। নুন
ইশারায় ডাকে, মুদ্রিত কামনা; হায়!
দুপাশে শরীর থাকে দুদিকে আগুন
পারার ভিতরে যাওয়া আসা, রক্ত খায়

নীতিকথা পড়ে! এভাবে হাড়ের ক্ষয়
এসো, জরিমানা করি; লবণ ছড়িয়ে
প্রবল শীতের কাছে চামড়া কতিপয়
পোকামাকড়ের উল্লাস হোক গড়িয়ে

আসা এক মৃত্যুর কবিতা নিয়ে আজ
তোমাকে বলাই হয়নি কখনও এসো না
আয়নার চারদিকে আর...

৩.

মিথ্যে কবিতার ঘুঘুর বাসায় এক
প্রশাসনিক বৈঠক ঘিরে যত গণ্ডগোল
কেউ কান্না কেউ শোক, কেউ বলছে জন্ম হোক
শরীর নামানো এক ঝরনা শাবক
জ্যোৎস্না ছোঁয়ানো রসটুকু খাক পাঠক

কেউ বলবে কবিতা পড়ুক গণেশ পাগল!

আসলে কি তাই? কবিতা হয় না কিছু
যত মুখ দুমড়ে এসব কথা বলা যে!
কবিতা পড়ুক যেন সারাজীবন হত্যাকারীকে...

আমন্ত্রিত সংখ্যা≈তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||










তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা


জীবদ্দশা সিরিজ়ের তিনটি কবিতা


আলপনা ধুলো-ধুলো কেন?

কুসুমের ভেতরে কে যে মাছের গতর এঁকে গেছে!

ওহো কী অশ্লীল! এয়োস্ত্রীরা চোখ টেপাটিপি করছে।
মাছটি ফুলে উঠছে কামে। কুসুমও ফুলল।
টোপ নিয়ে আয়! টোপ নিয়ে আয়! কতগুলো বাবা যে জড়ো হয়েছে উৎসাহে!
ধুলো-ধুলো। হাওয়া দিলেই মাছ, কুসুম সব উড়ে যাবে—
এই ভয় কি সহজে কাটে?
ছিপ নিয়ে ছুটে আসছে কিন্নর-কিন্নর বাচ্চামানুষ।
ওদের হাসি শুনে স্ত্রীদের তলপেট শরমে কুঁকড়ে যাচ্ছে।

এতসবের ভেতর মাছ উগড়ে দিল আঠা।
কুসুম কমে এল সুখে...
ছিপ পড়ল। এয়োস্ত্রীরা হাঁ করে দেখছে এই খেলা।

লালা ঝরছে মৃদু-মৃদু পথে।

যার ছিপে উঠবে মাছ, তার গৃহে সুখ-শান্তি হোক!


১০

এই অবধি পথ। তারপর মন্দিরের শুরু।
এঁটো ভোগের মতো আমাদের মাথাগুলি সিঁড়িতে নামানো।
বিগ্রহে রোদ পড়ছে। শোলমাছের চোখ যেন। মৃদু।

এই অবধি পথ। মন্দিরের শুরু ও শেষ একই বিন্দুতে।
সরণশূন্য বৃত্তের মাঝে ব’সে, প্রিয় পুরুষ, আশীর্বাদে কী দিচ্ছ এখন?
“পেট হোক” বলেছিলে। পেটে পশুর আনাগোনা নিয়ে ঘুরে মরছে কিশোরী।
“মাথা হোক” বলেছিলে। দ্যাখো, সিঁড়িতে কত নৃমুণ্ড শিরশিরে হাওয়ায় দুলছে...

কার মাথা কে যে চুরি করে পালিয়ে যাবে!
কবন্ধ কমেনি। আরও কত ধড় মন্দিরে যে মানত বাঁধতে আসবে!
এভাবেই, পুরুষ আমার, আয়ু টানো। বায়ু টানো। স্নায়ু...

পথ এতটাই। এরপর হেঁটে গেলে পাগুলি মিথ্যে... সন্ন্যাস...


১২

প্রাচীন শীতের ভিতর থেকে নেমে আসছে আমাদের ধাত্রী মা।
এবার নাড়ি কাটার শব্দে গ্রামপতন চাপা পড়ে যাবে।

এই আয়ুষ্কালে বাকল খসার চিত্র ছাড়া আর কিছু মনে থাকবে না।
ফল কাটার দৃশ্য, ধান থেকে ইঁদুর ছাড়ানোর পদ্ধতি,
পুতুল প্রসব করার লোভে মৃৎলিঙ্গে দুধ ঢালতে আসা মেয়ে,
মন্দিরের চারপাশে হঠাৎ আগুন, বটুক ভৈরবের ফাটা-ফাটা গা...
আমাদের স্মৃতিগুলি সাদা।

যাদের আদেশে পথগুলি মরা সাপের মতো বাঁকা,
তাদের পায়ের দিকে চোখ যায়। ভেবেছিলাম শিকড়ের বিস্তার দেখে
শেষমেশ গাছ মনে হবে। মনে হবে পায়ের ভিতর কিছু পাতালের কয়লা আছে।
কিছুই হল না। শুধু ফিরে গিয়ে দোর দেওয়ার ইচ্ছা প্রবল...

গুহা ছেড়ে এসে আমরা রোগ পেলাম, ক্ষয় কিছু কিছু।
পথ এত একমুখী, ফেরার উপায় নিভে গেছে।

প্রাচীন জলের কুম্ভ ভেঙে বেরিয়ে আসছে আমাদের ধাত্রী মা।
এবার গ্রামপতনের শব্দে নাড়িকাটা চাপা পড়ে যাবে।

Thursday, July 8, 2021

বিশেষ সংখ্যা~পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||                    
  
বেগম আখতার ও শক়িল বদায়ুনী...
(অ্যায় মুহব্বত্ তেরে অঞ্জাম পে রোনা আয়া)

পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়



বিশ্বখ্যাত গ়জ়ল,ঠুমরি,দাদরা গায়িকা মোহতরমা বেগম আখতার সাহিবার (মূল নাম আখতারি ফ্যায়জাবাদী) অতি জনপ্রিয় গ়জ়ল "অ্যায় মুহব্বত্ তেরে অঞ্জাম পে রোনা আয়া ...এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ইতিহাসটা অত্যন্ত অদ্ভুত। 
   বেগম আখতার একবার বোম্বাইয়ে এক মেহফিলে সুরের তুফান তুলে ফিরছিলেন। পরের দিন তিনি লক্ষণৌ যাবেন। সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রিরাও ছিলেন। লক্ষ্ণৌর   ট্রেন ধরার জন্য ভি টি ষ্টেশনে পৌঁছন। ট্রেনে বসে তিনি গাড়ি ছাড়ার অপেক্ষা করছিলেন। তখন আখতার সাহিবাকে খুঁজতে খুঁজতে তৎকালিন সময়ের এক তরুণ শায়র ভি টি ষ্টেশনে এসে পৌঁছন। শায়র সাহেব ট্রেনের প্রতিটি কোচে উঁকি মারতে মারতে এগোচ্ছিলেন। আচমকা সেই শায়রের দৃষ্টি ট্রেনের একটা জানলার পাশে বসা বেগম সাহিবার ওপর পড়ে। সেই মুহূর্তে ট্রেন ছাড়ার সিগন্যাল হয়। শায়র সাহেব দ্রুত সেই জানলার কাছে পৌঁছন। তাঁর এবং বেগম আখতারের মধ্যে কুশল বিনিময় হয়। তরুণ শায়র নিজের পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে বেগম সাহিবার দিকে এগিয়ে দেন। ট্রেন ছেড়ে দেবার মুহূর্ত খানেক আগে কাগজে কি লেখা আছে না পড়েই বেগম আখতার নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে দেন। সারারাত ট্রেন চলে। ট্রেন যখন সকালে ভুপালে পৌঁছয়,চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভ্যানিটি ব্যাগে রাখা সেই তরুণ শায়রের দেওয়া কাগজটার কথা বেগম সাহিবার মনে পড়ে। 
  বেগম আখতার কাগজটা খুলে দেখেন তাতে একটা গ়জ়ল লেখা । আখতারি সাহিবা রাগ "ভৈরবী "তে গুণগুণ করতে থাকেন। গ়জ়লটি ছিলো...অ্যায় মুহব্বত্ তেরে অঞ্জাম পে রোনা আয়া ....। লক্ষ্ণৌ পৌঁছনোর আগে,ট্রেনের মধ্যেই তিনি হারমোনিয়ামে পুরো গ়জ়লটা কম্পোজ করে নেন। লক্ষ্ণৌর অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বেগম আখতারের প্রোগ্রাম ছিলো। 
বিশেষ করে যখন তিনি ওই গ়জ়লটা শোনান,সুরের মূর্ছনায় উপস্থিত সবাই মাতোয়ারা হয়ে যান। শ্রোতারা যখন শেষ পংক্তিটা শোনেন....জব হুয়া জিক্র এ জ়মানে মেঁ মুহব্বত্ কা "শক়িল ...তখন শ্রোতারা জানতে পারেন এই গ়জ়লটার শায়র শক়িল বদায়ুনী সাহেব।  ভি টি ষ্টেশনে বেগম আখতারের হাতে কাগজটি গুঁজে দিয়েছিলেন যে শায়র তিনি আর কেউ নন শক়িল বদায়ুনী সাহেব,যিনি গ়জ়ল লেখক কবি হিসাবে বিশ্বখ্যাত হন। বেগম আখতার ও শক়িল বদায়ুনী গ়জ়ল সাম্রাজ্যে যেন সমার্থক হয়ে পড়েন। বেগম আখতারের গাওয়া বেশিরভাগ বিখ্যাত গ়জলগুলি শক়িল সাহেবেরই লেখা।