Saturday, October 24, 2020

≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ সৃজা রায় ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
সৃজা রায়



রাত দুপুরে...

খোশগল্পে টকবগিয়ে রাজার জামাই এলো।
রাজকন্যার সিঁথিপাটি, তেল লাগিয়ে পরিপাটি,
এমন সময় রাজপূরীতে ব্যাঘাত বিশাল হলো!
সৈন্য -সেপাই,দল বাগালো, 
দরজার পাশে কানাঘুষো।
এক যে আছে গুবরে পোকা, 
বজ্জাতি সব কাজ,
সয়ম্বরার সভায় আসে বিদঘুটে সব সাজ,
শুনছো সবাই!রাজামশাই!
ভীষন চটেছেন!
রাজপুরীতে শূলে চড়ানোর  নির্দেশ দিয়েছেন!
সবার হাবভাব ভয়ে টয়ে
পালিয়ে গিয়ে বাঁচে,
এমন কেন নির্দেশ দিলেন,
অতিথিদের কাছে?
গুবরে কেবল মুখ টিপে রয়,
আচার বিচার পরে,
রাজকন্যার স্বামী হবে,
তারই ফন্দি করে।
মন্ত্রের জোরে কেউ তাহারে,
বানিয়ে দিয়েছে এমন,
দেখতে নাকি সুপুরুষ সে,
এই তল্লাটে নেই তেমন!
রাজকন্যা প্রশ্ন করেন" উপায় তবে? 
তোমার শাপের শাপান্তরণ কিরমভাবে হবে?"
ভেবে বললো গুবরে পোকা,
রাস্তা একটাই আছে!
চুপ করে রও!
সান্ত্রী -মন্ত্রীর বাক্যটি যেন না সরে!
স্বস্তি দিয়ে বললেন রাজা, "বেশ,তোমার ইচ্ছা পূরণ হোক",
গুবরে তখন নির্ভয়েতে বলেই ফেলে,
রাতদুপুরে কাটতে হবে রাজার বিশাল গোঁফ!


≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ পারমিতা ভট্টাচার্য ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা
পারমিতা ভট্টাচার্য


অশৌচলীলা

বদ্ধতার নামে জীবন কিনছি একমুঠো
চিলেকোঠার চিলতে দেওয়াল জুড়ে
পায়রা ওড়া ধুলো - সুখ...
বিন্দু বিন্দু সুখের ভৌমজল চুঁইয়ে
জোছনা স্নানে যাচ্ছে রাজপথ

অষ্ট বিভূতি জাগ্রত শালগ্রাম শিলা জুড়ে
অশৌচলীলা ...
গঙ্গা স্নানে লালবাতি, মনের স্থাপত্যের নিয়তি বেলায়

চঞ্চল মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে কিছু দুরন্ত চড়াই
খড়কুটো ছাড়া আছেই বা কি গৃহস্থালী - কার্পণ্যে...

কাজল হয়ে গলে যাচ্ছে উষ্ণ মণ্ডলের ষড়যন্ত্র...
মেরুদণ্ড - হিমবাহে...

তুলসী - গঙ্গায় ধৌত মিথ্যা প্রপাত
আছড়ে পড়ছে বিসর্গ বিন্যাসে...


≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ বিপাশা ভট্টাচার্য ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
বিপাশা ভট্টাচার্য


কবিতার কাছে ঋণ

যদি পারো, একথোকা কামিনী রেখে যেয়ো,
মাথার পাশে। উত্তরের জানলার কোণে...
বড় গুমোট হয়ে উঠেছে ঘর।
দমচাপা সন্ধ্যেয় সঙ্গ দিক
শুভ্র পবিত্রতা আর স্নিগ্ধ সুবাস।
অবসর মতো-- রেখে যেয়ো কাগজ কলম।
অক্ষরের কাছে আমার এক জীবনের ঋণ।
শুধু বর্ণমালার আশ্রয়ই বারবার-
পিছুটান হয়ে চেপে ধরেছে আঁচলপ্রান্ত।
কত প্রিয়জন, কত প্রতিশ্রুতি...
সব বিগতজনমের স্মৃতি মনে হয়।
খাদের কিনার অবধি পৌঁছে গিয়েও
তবু বারবার ফিরে ফিরে আসি।
কবিতা, তোমায় করেছি সাধন সঙ্গিনী।

≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়



ছোটগল্প~দৃষ্টি

প্রায় ছ’মাস বাদে করেদের বাড়ির খড়খড়ি দেওয়া জানালা খোলা দেখে পাড়ার লোকজন বেশ উৎসুক হয়ে পড়েছিল । শুধু তাই নয়, সেই জানালায় একটা মেয়েকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল । বাড়িটা করেরা বিক্রি করে দিয়েছিল বলে পাড়ার সকলে জানত । তারপর থেকে বাড়িটা বন্ধই ছিল । তাহলে কখন নতুন লোকজন এলো আর জিনিষপত্রই বা এলো কবে ?

 সমাধান করে দিলো পাড়ার গেজেটার সান্টু । জিনিসপত্র সমেত বাড়ি বিক্রি করেছে করেরা । আর এদের জিনিস কিছুদিনের মধ্যেই এসে যাবে । এদের ফ্যামিলিতে আছে মা বাবা আর মেয়ে । আর বাড়ির পুরনো কাজের মেয়ে হারুর মা ।

কিছুদিন যেতে দেখা গেল এরা মিশুকে নয় । বাজারে বা পথে দেখা হলে সামান্য হেসে মুখটা অন্যদিকে করে চলে যায় বাড়ির কর্তা । বাকিরা কেউ বের হয় না বাড়ি থেকে । তবে মেয়েটি সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত ওই জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে । স্নান-খাওয়ার সময়টাও বাঁধা । মুখে সবসময় হাসি লেগে আছে । এই হাসি তার রূপকে আরও বাড়িয়ে দেয় ।

পাড়ার কমবয়সী ছেলে-ছোকরাদের যাতায়াত করেদের বাড়ির সামনের রাস্তায় বেড়ে গেছে । গ্রামের কর্তাব্যক্তিরা বেশ অসন্তুষ্ট মেয়েটির বাবার ওপর । তাদের বক্তব্য, ‘মেয়ে চরম নির্লজ্জ । আর বাপ তাকে শাসন না করে ধিঙ্গি হতে ইন্ধন জোগাচ্ছে ।’ এসব কথা বললেও তার নিজেরাও লুকিয়ে-চুরিয়ে ওই মেয়েকে দেখতে যায় ।

কেটে গেছে ছ’টা মাস । একদিন সান্টু ছুটতে-ছুটতে চন্ডীমন্ডপে এলো ।

‘তোমরা কি খবরটা শুনেছ ?’

নন্দীখুড়ো বলে, ‘কী করে শুনব বাবা ? তুমি হলে আমাদের গ্রামের গেজেটার । তুমি খবর না দিলে আমরা পাই কী করে ?’

‘ওই মেয়েটা গো, যারা এখন করেদের বাড়িটা কিনেছে ...’

সান্টুকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে নন্দীখুড়ো প্রায় ভেংচে ওঠে, ‘আবার কী করেছে ঐ গুণনিধি ?’

‘আহ্‌, আগে শোনো । ওই মেয়ে অন্ধ । ব্রেন টিউমার অপারেশনের পর তার দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছিল । আজ কলকাতায় যাচ্ছে । একটা চোখ ম্যাচ করেছে । অপারেশন হবার দেখতে পেতেও পারে । মানে ডাক্তার তেমন সম্ভাবনার কথা বলেছেন 

গোটা চন্ডীমন্ডপ থমথম করছে । মানুষগুলোর ভেতর একটাই কথা ঘুরে-ফিরে আসছে । অন্ধ মানুষের অসহায় দৃষ্টি চিনতে না পেরে অনায়াসে তারা বেহায়া বলে দেগে দিয়েছিল মেয়েটাকে । এখন চোখ ফিরে পেয়ে সেই মেয়ে তাদের চোখের দিকে যখন তাকাবে, তাদের নির্লজ্জতা বুঝে নেবে না তো ?

 



≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ উজ্জ্বল সামন্ত ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
উজ্জ্বল সামন্ত


অনুগল্প~সহচরী
কোম্পানির উচ্চপদে থাকায় ইয়ার এন্ডিং এর মিটিং টা শেষ হতে রাত বারোটা বাজলো।অয়নের বাড়ি ফিরছে নিজে ড্রাইভ করে। হালকা বৃষ্টি পড়ছে।  রাস্তায় দেখে একটি অষ্টাদশী মেয়ে দাঁড়িয়ে লিফট চাইছে। অয়ন গাড়ি থামিয়ে গাড়ির জানালার কাঁচ নামালে , মেয়েটি  কাছে এসে বলে আমাকে নিয়ে যাবেন? যা দেবেন তাতেই হবে, আমার খুব বিপদ, বড্ড সমস্যায় পড়েছি। 

মেয়েটির মুখের সঙ্গে অনিশার অনেক মিল। পুরনো দিনের কিছু স্মৃতি এক পলকে চোখের সামনে ভেসে উঠলো অয়নের। অয়ন ও অনিশা খুব ভালো বন্ধু ছিল। কলেজে তারা ছিল প্রেমের লিজেন্ড।বিগত কয়েক বছর অয়ন নেশাগ্রস্ত। তার ছন্দহীন জীবন নিয়ে তাঁর বাবা-মা চিন্তিত। কোন এক অজ্ঞাত কারণে আজ নিজেকে শেষ করার লড়াইয়ে নেমেছে, যেন নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ। পরকীয়া সম্পর্কেও জড়িয়েছে অয়ন। আর অনিশা বাবা-মার ইচ্ছেতে ,নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ করে।এক কন্যার মা ,স্বামী একটা প্রাইভেট ফার্মে কর্মচারী ছিল। আজ ২৫ বছর কোন যোগাযোগ নেই। 

 অয়ন ওই বয়সী একটা মেয়েকে একাকী রাস্তায় দেখে , তার নিজস্ব ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে। মেয়েটি বিছানায় আমন্ত্রণ জানায়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একটি সিগারেট ধরায়। মেয়েটির সিগারেটের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হয়। রাত গভীর হয়।  মেয়েটি প্রশ্ন করে আপনি আসবেন না?   অয়ন গিয়ে ইজি চেয়ারে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটির কাছে যায় তার মুখখানা দেখে তার জীবনের গল্প জানতে চায়। 

মেয়েটি কাঁদো কাঁদো গলায় জানায় ওর মা খুব অসুস্থ। বাইরে নিয়ে  যেতে হবে চিকিৎসার জন্য কিন্তু খরচ যোগাতে পারছে
 না।  বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার অচল। মায়ের চিকিৎসার জন্য আজকে সে বাধ্য হয়ে এই এসকট সার্ভিসে নেমেছে। অয়ন পকেট থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দেয়। 

 অয়ন তাকে পরের দিন আবার আসতে বলে । মেয়েটি এলে অয়ন তাকে নিয়ে  হাসপাতালে যায়। কিন্তু একি দেখে অয়ন? হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার প্রাক্তন প্রেমিকা , একসময়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু । ডাক্তারকে প্রশ্ন করলে জানতে পারেন সময় শেষের দিকে। অয়ন অনিশার চিকিৎসার যথাসাধ্য চেষ্টা করে কিন্তু নিয়তির কাছে হার মানে।

অয়ন কে অনিশা অনুরোধ করেছিলো মেয়েটির দেখাশোনার জন্য । অয়ন মেয়েটিকে আরো লেখাপড়া শেখায়। উচ্চশিক্ষিত করে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠা করে। হয়তো এভাবেই অয়ন অনিশার প্রেমকে ও একজন নারীকে সম্মান জানায়, সমাজের কথায় চিন্তা না করে।"সমাজ প্রশ্ন করবে- সহচরী? শেষ ভালো যার ,সব ভালো তার... " অয়ন মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়...