Thursday, September 24, 2020

|| ছক্কা ফর্মের কবিতা ≈ শীর্ষা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
ছক্কা ফর্মের কবিতা
শীর্ষা
পরিচিতি :: 
জন্ম বীরভূমে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলজিতে স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশে একটি কলেজের অধ্যাপিকা। শখ কবিতা-গল্প-উপন্যাস পড়া এবং লেখা। লেখালিখির সূচনা স্কুলজীবনের সাহিত্যসভা থেকে। একমাত্র বই 'তারাফুলের শবযাত্রা' (২০২০)।



বিষণ্ণ জাদুকরের তাস

ছক্কা পুট

রাত উড়ে যায়

 চিলের ডানায় –

 একা

 একটি মেয়ে কেঁদে চলে,

 পৃথিবীর খোলস জুড়ে ছড়ানো কান্না !

রাজত্বের আনন্দে ঘুড়ি ওড়ে এশরীর ওশরীর

 

ছক্কা দুই

একটি পালঙ্ক,

পাখোয়াজ –

বেঁচে থাকতে চায়নি নিজেরা।

মৃত্যুর নাম আসলে শুধুই সঙ্গত!

ছেড়ে যাওয়ার দোষী গাছ নয় জেনেও

প্রিয় সঙ্গীত বিরহদোসর 

 

ছক্কা তিন

 আমাদের আনন্দঘন চড়ুইভাতির দিন।

 ক্ষুধার্ত পাখিটি যেভাবে উড়ে যায় আকাশে 

ডিমের পোচমার্কা গোধূলি চকচক করে!

 আমাদের গোগ্রাসী খিদেয়

 প্রতিটি

পোচই চড়ুইমাংস!

 

ছক্কা চার

একটি অবিশ্বাস ঠেলে এগোচ্ছে

সম্পর্ক,

কেউ বুঝে ওঠার আগেই সে

অবিকল নদীটি যেন!

শরীরে ক্ষমা নাম সেই মেয়েটির বাস –

হারানো ডাকনাম।

 

ছক্কা পাঁচ

একটি গান গাওয়ার আগেই

পাখিটির মৃত্যু 

যেন বেড়ি বানানোর কথা ছিল না কখনোই,

যেন সবটাই ভুল।

অথচ লালন ঠিকটুকু বুঝে নিল

চুপচাপ!


দু ছক্কা

জেলখানারও

বাকশক্তি আছে। 

খোঁপার ভেতর থেকে

যেভাবে ছটফটে কাঁটা ঘুড়ি ওড়াতে চায়;

সংসারী কয়েদির চোখ একটি আয়না

আয়ুর মুখ দ্যাখে –

না-ফুরোনো 

  

দু ছক্কা পুট


তোমাতে

ঢুকে পড়ব ঠিক –

এটা ভাবতে ভাবতেই আমি সফল

তুমি হাঁটাচলা করছো এই আমাকে নিয়েই;

আর আমি নিজেকে অদৃশ্য 

নিখোঁজ দেখছি

  

দু ছক্কা দুই

আমাদের চোখের মণিটি

পাখির সংসার 

খড়কুটো খুঁজছে, খুঁজেই চলেছে অক্লান্ত অবিরাম

ফুরোচ্ছে না সংসারের সাধ!

ওদিকে পালক খসে পড়ছে আয়ুর

শৌখিন 


দু ছক্কা তিন

আয়ুষ্মান

সিঁথি বেয়ে হাঁটছে মেয়েটি, রাতভর 

পারিবারিক বাঁশিটি তাকে ছুঁতে পারছে না

শাঁখ বাজাতে বাজাতে এগিয়ে চলেছে

দ্বিধাগ্রস্ত আয়ুপতাকা, নারীর পেছনে

 

দু ছক্কা চার

ভুলের শরবনে

পথ হারানো তুমি

কাশের নরম মাখতে থাকো;

অথচ কী বেশরম তিরের সজ্জা !

ছেঁকে ধরছে তোমাকে, রাতদিন –

মাখিয়ে দিচ্ছে ভীষ্মসোহাগ 

 

দু ছক্কা পাঁচ

সলতে বেয়ে

দপদপ করছে কুমারীর সিঁথি – অ্যাম্বুলেন্সের বাতি!

দমকা হাওয়ার ম্যাজিশিয়ান

পথ দেখাচ্ছে পাশের বাড়ির যতীনদাকে,

প্রদীপটি

ফুঁসে উঠছে সধবার বিশ্বাসঘাতকতায়



|| ছক্কা ফর্মের কবিতা ≈ প্রনব রুদ্র ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
ছক্কা ফর্মের কবিতা
প্রনব রুদ্র
পরিচিতি::
২০০৬ সনে "উনিশ কুড়ি"তে প্রথম প্রকাশ পায় কবিতা। সে বছর থেকেই "সজাগ" নামে বার্ষিক (অনিয়মিত প্রকাশিত হয়) লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদনা শুরু। বিষাণ নামক একটি নাট্য সংস্থার সাথে ২০০৮ সাল থেকে নাট্যচর্চা করি। বর্তমানে বেশকিছু ওয়েবজিনে লেখা মাঝেমধ্যে প্রকাশিত হয়। স্থায়ী পেশার যোগ জীবনে এখন পর্যন্ত ঘটেনি। বাংলায় লিখতে ও পড়তে পারি। 




ছক্কা

১।
জ্বালো আলো
আঁধার দূর হবে 
আলোকলতা 
নিজেকে পোড়ালে পুড়তে ইচ্ছে হবে
আগুন নিয়ে খেলোনা ছেলেখেলা 
আগুন জমিয়ে রাখ্ বুক পাঁজরের ওমে।

২।
দিন চলে যায়
রাতে
চাতক ওড়ে
বৃষ্টি খুঁজে খুঁজে ফেরে
ভোকাট্টা প্রেম চোখে শ্রাবণ নামিয়ে রাখে 
সকল প্রত্যাখ্যান কুঁড়ি হয়ে ফোটে।

৩।
মৃত্যুপুরীতে
নতুন জীবন
ভালোবাসা ছূঁয়ে দিলো
ফুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে সাজলো হৃদয়
হাসিতে টোলপড়া গাল ভাঙলো ব্যথা
পুনর্জন্মের ঢেউয়ে স্বতঃশ্চল প্রেমিকা। 

৪।
নীরব তুমি আমি যখন বলি কথা
অলস তুমি যখন আমার ব্যস্ততা
হাসি তোমার মুখে
জানি
নিথর প্রতীক্ষা
পাথর বুকে বেঁচে ভালোবাসা। 

৫।
অলস দুপুর
হয় নাকো দূর
চিন্তা
একাধিক ঝড় বুক বাজে ভরপুর
যদি সে হাতটা ধরে
যদি রাধা বাঁশুরী বাজায় ঘুমহীন রাতে।

৬।
শ্রাবণ ঘনালো বুকে
বর্ষা চোখে
যেওনা
আমাকে একা করে দিয়ে
দুজন একসাথে আরো একটুক্ষণ থাকি!
হৃদয়ের কষ্টে বৃষ্টি পাক কবিতার খাতা।

৭।
হারিয়ে গেছে মিষ্টি সকাল
চায়ের কাপে প্রেমিক হলো ধোঁয়া
ভেসে গেলো ইচ্ছেরা সব তোকে ছোঁয়ার
এখন তুই দূরে
ভালো থাকিস
ভুলে।

৮।
বন্ধ মনের দরজা খুলে
ইচ্ছেরা ফুড়ুৎ
ভালোবাসা
উথাল পাতাল হাওয়া
দুষ্টুমির লাজুক হাসি একটু মাখি
কাছে গিয়েও ফিরে আসি তুমি উড়ালপাখি।

৯।
জীর্ণ জর্জরিত উপেক্ষিত উপাখ্যান
প্রশ্নবাণে পদদলিত
হতাশা
উত্তরণ পথ কই?
সমস্যার গভীর শিয়রে বাজে মৃত্যুবিণ
এক দুই তিন প্লিজ সমাধান দিন!

১০।
বন্ধু মানে কান্না শেষ
প্রাণখোলা হাসি
বিপদে
সর্বদা তোরই আছি
সবাই ভালো বন্ধু পায় না
হাজার নানা বায়না পূর্ণ হয় না। 

 


|| ছক্কা ফর্মের কবিতা ≈ পার্থ সারথি চক্রবর্তী ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
ছক্কা ফর্মের কবিতা
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
পরিচিতি::
পদার্থবিদ্যার ছাত্র হলেও সাহিত্যচর্চা মন জুড়ে। ভালবাসি কবিতা, ছোট গল্প ও প্রবন্ধ লিখতে । বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখি।কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিতব্য। বর্তমানে কোচবিহারের বাসিন্দা।


নৈকট্য 
গাম্ভীর্য 
সে তো তোমার অলংকার 
ইচ্ছে করলে
তা তুমি অনায়াসেই দেখাতে পারো
নিজস্বতা ধরে রাখতে, 
আমার কাছে তুমি তাও একইরকম সহজ

ঘট 
রথমেলা থেকে একটা ঘট কিনেছিলাম 
দশটাকায় 
তিলেতিলে উপার্জিত সম্পদ
জমিয়ে রাখার বাসনা নিয়ে 
এক লহমায় ভেঙে গেল, হৃদয়ের মত
ভঙ্গুর  কিনা!

স্বপ্ন  
ভোরবেলা
সূর্য উঠছে
পূর্বদিক রঙিন হচ্ছে
নতুন স্বপ্ন আবার ভাসছে
হলদে সকাল ডানা মেলবে ব'লে
সাজঘরে নিপূণ হাতে রঙ মেখে নিচ্ছে

 রোদ  
হাঁটতে হাঁটতে পৌছে গিয়েছি গাছের তলায়
একটি নিস্পত্র গাছ
বসন্তের শেষ
রোদ সোজা ভেদ করে নামছে
সকালের স্নিগ্ধ সুকোমল রোদ
আলতোভাবে


আমি  
একাকীত্বের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছি  
আমি
গভীর অতলে অবগাহন করতে উদ্যত
অমরত্বের আশায়,
বিষাদকে কাটিয়ে উ'ঠে শূন্যতাকে জয় করতে
শুধু, একক আমি


হৃদয়ভূমি 
প্রান্তর
সবুজে সবুজে চারদিক ছয়লাপ
মাঝ বরাবর একটি লেভেল ক্রসিং 
দ্বিধাবিভক্ত হৃদয়ভূমি
বুকের খাঁচার মতো 
যেন পাশাপাশি শুয়ে থাকা দুটি গ্রাম

ক্ষুধা  
গোলকধাঁধা 
বিরাট বড় একটি হা 
সবকিছু একসাথে গিলে নিতে চাইছে
এক লহমায়
অদম্য ক্ষুধার জ্বালা, 
তুমি,আমি; আজ কারোর রেহাই নেই


হাসি  
প্রতিদিন
আগুনের খেলা
নিকোটিনের কালো ধোঁয়া
পেতে চেয়েছি মৃত্যুর আস্বাদ
সমস্ত যন্ত্রনা তাই গ্রহণ করেছি
দিনশেষে তোমার হাসি দেখব,এই আশায় 

হিসেব 
সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে
পাটিগণিতের হিসেব
বীজগনিতের সব সূত্র মুখ থুবড়ে পড়ছে 
অহর্নিশ
মুখমণ্ডল জুড়ে ফুটেছে দুঃখের জ্যামিতি 
উপপাদ্য মিলছে না 

 নদী   
নদী বয়ে চলে
নিজস্ব ছন্দে
শুধু ছাপ ফেলে যায় স্মৃতির গহনে 
নীরবে, 
প্রতীক্ষায় বসে থাকা এক দুরুহকাল
দীর্ঘশ্বাস ধুয়ে যায় স্রোতে



|| ছক্কা ফর্মের কবিতা ≈ নীলিমা দেব ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
ছক্কা ফর্মের কবিতা
নীলিমা দেব
পরিচিতি-::
জন্ম ৩১ মে ১৯৮৩, ৮২ মাইল, উত্তর ত্রিপুরায়। মার্কেটিং-এ এমবিএ। বাসস্থান: তাম্বারাম, চেন্নাই। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘ব্যক্তিগত অরণ্য’।


এক.

 

ঘর উধাও

বাগান এগিয়ে আসছে

আলুথালু

আমি বেলা কুড়াই আর কুড়াই

ওমওম বারান্দা লিঙ্গ বদলায়

নীল ভাতে সবুজ হয়ে আছে শব্দ

 

দুই.

 

রাত হয়ে পড়ে আছি নৌকোয় 

চাঁদ ওঠাচ্ছে আগন্তুক 

খেলাচ্ছে

জলের বন্দিশ

শুরুর আগেই অন্তিম গায়

আমরা মালকোষ ভাগ করে নিই নদীর

 

তিন.

 

রাইয়ের সমস্ত

নুয়ে আছে একা

ভোরাই

সরোদের সহজে দীর্ঘ হয় পাখি

ব্রজ উলটে পালটে কানাই  

যমুনার নিচে ছাই হয়ে যাচ্ছে চাঁদ  

 

চার.

 নদী 

ছায়া খোলা রবীন্দ্রনাথ     

একূল ওকূল 

আয়না থেকে আয়নায় সারণী পেরিয়ে নৌকোবিলাস

ফাঁকা হয়ে আছে জল  

ধবধবে নীলে শ্রাবণ ভিজে যায়    

 

পাঁচ.

 কাশ্মির থেকে চাঁদ ধরে এনেছি

যত জ্যোৎস্না তত ইদ

ভাতের হাঁড়িতে চাপা পড়ে ছিল রাত

জলের পৃষ্ঠাগুলি  

তানসেন আঁকে গাঁয়

মাটির

 

ছয়

 গালিব রঙের চুপচুপ

 নাদান

 হাত থেকে পড়ে গেলো চাঁদ

 হা-কথারা গড়িয়ে গড়িয়ে উনুন  

 কাগজের ফুঁ নিভিয়ে দিয়ে যায় ভাষা  

 পাখিভুক অন্ধকার!

 

সাত

 সূর্য বন্ধ করে দাও

 শিশিরের নদী

 কাঁপছে

 নৌকোয় জলের রিপ্রিন্ট

 দেবদাসী খিদের ফটক খুলে দিয়েছে কেউ

 এসো ত্রিতালে বাজাই রেস্তোরাঁ  

 

আট

 আহা আহা!

 চোখে চোখে রাখা ঘুম

 ভীমপলেশ্রী

 কবুতরে ঢেকে দাও উদলা আলো

 দীর্ঘ হচ্ছে নীরব

  আয়না থেকে খুলে নিয়েছে যাকিছু দৃশ্য

  

নয়

 তন্দুরি চাঁদ

 শুরুর দিকে বরফের খোয়াব  

 আগুন

 লেবুর রসে ছড়িয়ে পড়ছে গান     

 স্থায়ী থেকে অন্তরা

 গোধূলির নিচে পুঁতে রাখা ভাতের জমিন

 

দশ

 মলাটে চুমুর শব্দ

 মাটির উপন্যাস

 “দরিয়া”  

 ধ্বনির আঁচড়ে আদুরে ছাপ

 কোলাজ ভেঙে ভেঙে জলের অতীত  

 এখানেই চিৎ হতে পারত ভাষার তরল