সেভাবে সক্রিয় কোন পুরুষ বিরোধী আন্দলোন না করলেও মেধা বরাবর ই পুরুষ বিদ্বেষী।সে বেশ ভালো একটি চাকরীতে উঁচু পোষ্টে থাকা সত্বেও মায়ের ইচ্ছা কে প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে না করে কুমারী ই রয়ে গেছে।
অফিস কলিগ সুমন্ত প্রায় তারই বয়সী,একটা স্টপ আগে কোন এক ভাড়া বাড়িতে থাকে।অফিস যাবার সময় রোজ ই দেখা হয়,এবং এক ই বাসে দুজনে যায়,ভীড় বাসে মেধা কে দেখলে সে সিট ছেড়ে দেয়। মেধা অবশ্য পাত্তাই দেয় না। শুনেছে মফ:স্বলে তার বাড়ি।চাকরী সুত্রে এখানে। ছেলেটি বেশ স্ব প্রতিভ,স্মার্ট। এক এক দিন অফিসে লেট হলে মেধার হয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে সে ই কারণ বলে দেয়।মেধার অবশ্য কৃতঙ্গতা টতা আসেনা।সে তো আর কাউকে তোষামোদ করেনি তার হয়ে সাফাই গাইতে।
সেদিন বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎই রাস্তা অবরোধ।কোথায় নাকি এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।কত ঝক্কি পুইয়ে প্রায় মাঝরাতে ভাড়ার গাড়িতে ফিরতে পেরেছিল মেধা।ভাগ্গি সুমন্ত ছিল! না হলে যে কি হতো ভাবতেই কাঁটা দিচ্ছে গায়ে।
জন্মদিনের পায়েস টা মুখে তুলে দিতে দিতে মা বলেছিল " হ্যাঁরে আপিসে এত ছেলে ছোকরাদের সঙ্গে কাজ করিস,কাউকে কি তোর মনে ধরেনা! আমি চোখ বুঁজলে দেখবে কে শুনি".আগে হলে বেশ দু চার কথা শুনিয়ে দিত মেধা কিন্তু ইদানিং কেমন যেন মনেহয় সব পুরুষ মানুষ অসৎ হয় না।
সেদিন মেধার বেশ দেরী হয়েছিল বের হতে।আগের বাস টা নির্ঘাত মিস করবে।বুকের মধ্যে একটা যেন চিনচিনে ব্যাথা! হার্টের কি কোন সমস্যা হচ্ছে! বাস স্টপে গিয়ে দেখে সুমন্ত দাঁড়িয়ে বারবার ঘড়ি দেখছে। তবে কি ও বাস মিস করেছে? কিন্তু তাহলেও তো এখানে থাকার কথা নয়।হঠাৎ মেধা অনুভব করে বুকের ব্যাথাটা নেই।পাশাপাশি ই সিট জুটে গেল। চোখ পড়ল সুমন্তের আঙুলে। বেশ বড় ফোস্কা।জিগেস করবে কি না ভাবার আগেই সুমন্ত উত্তর দিল - এখানে একা থাকি,রান্নার তেমন অভ্যেস ছিলনা তো! প্রায় ই ভাতের ফ্যান পড়ে যায়।" "তা বাড়ি থেকে কাউকে আনলেই তো হয়,সেবা যত্নের জন্য"।বলেই মেধা নিজেকে বকে দিল। এতো কথা বলার কি দরকার ছিল! সুমন্ত মুখ নামিয়ে উত্তর দিল " মা য়ের বয়স হয়েছে, বৌদী এলে বাড়ির অসুবিধা।আর তেমন কেউ নেই!" বাড়ি ফিরে মা কে জড়িয়ে ধরেছিল মেধা।কি জানি কেন, এতো আনন্দ আগে তার হয়নি।
অফিসে কদিন খুব চাপ গেল। আজ থেকে একটু হাল্কা হতে পেরেছে সবাই।ওরা ঢুকতেই সবাই একসঙ্গে অভিনন্দন জানালো সুমন্তের উদ্যেশে।কেউ একজন বলে উঠলো- ব্রাদার এতোদিনে মাথা মুড়োলে তাহলে।হো হো করে হাসির স্রোত বইল।মেধার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।তবে কি সুমন্ত বন্ধুদের সঙ্গে কিছু আলোচনা করেছে তাকে নিয়ে!!" "ছবি টবি দেখা ভাই।তারিখ টা যেন কত?"
বাসেওঠার আগে এবং উঠে ও মেধা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়,যদিও জানে কেউ থাকেনা আর।থাকবেও না,তবুও...সবাই কে বিয়ের কার্ড হাতে দিয়েই নিমন্ত্রণ করেছে সুমন্ত শুধু মেধার টা ডাকে এসেছে। ভালোবাসার যে কত ভ্যারিয়েশন!