Thursday, September 10, 2020

|| এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা | উৎস রায়চৌধুরী ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা
আজ থাকছে কবি শূন্যদশকের কবি উৎস রায়চৌধুরী। 


নমস্কার উৎস দা

--- নমস্কার

আমি অভিজিৎ  দাসকর্মকার ।  সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের নতুন বিষয় "এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা " প্রতি মাসের ১০ তারিখ বের করছি। সেই প্রসঙ্গে আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি।
কেমন আছেন দাদা?

----- আছি একপ্রকার, আজকাল অগুনগ্রাহিতায় আছি।

দাদা আপনার কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে।আপনি যদি আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং এই ওয়েবজিন পত্রিকার ও আপনার কবিতার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো বলেন।

--- ঠিক আছে, বলুন


১) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন বা সাহিত্যের সাথে যুক্ত?

➤ দেখুন শুরুয়াৎ তো সেই নবম শ্রেণী স্কুল লাইফ, কিছু অস্থিরতা ও নিজেকে মুল্যায়নের তাগিদ, সেভাবে কাগজে ছাপা হয় ২০০০ সাল থেকে, সেক্ষেত্রে বলতে পারেন শূন্যদশক।আমার লেখালেখির জীবনে সেই ছাত্র জীবনে জীবনানন্দের জীবন ও অভীপ্সা আমাকে খুব টেনেছিল। সুনীলের স্টেটমেন্ট ভিত্তিক লেখা, জয়ের কথা বলাটাতেই উপমা ভিত্তিক কবিত্ব আমাকে তাড়িয়ে নিত।

২) যদি কবিতা বা সাহিত্যে না থাকতেন তবে আপনি কোন বিষয় নিয়ে থাকতেন?

➤ এ ব্যাপারে কি বলি!! তবে কবিতা বা সাহিত্যেই কতটা আছি জানি না। সারা জীবন টাই কবিতার কাছে আমি শিক্ষানবি।  যদি সাহিত্য আমাকে না টানত তবে মানুষ কে চেনার দক্ষতা তে পটু হবার জন্য আরো বিভিন্ন বই পড়তাম। জীবনে তবলাও শিখেছি খানিক। সেটাই না হয় আরো জোড় কদমে চালাতাম। 


৩) আপনার কবিতা জীবনে কার অবদানকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেন?

➤ দেখুন আমার কবিতা বোধ কে কর্ষন করেছে আমার ভেতরের নানান শূন্যতা। একটি চীনা নৌকো আছে জানেন, তার নাম সাম্পান। এই সাম্পানের ভেতর একটি কিংবদন্তী আছে যে মাঝির দুঃখ জমা থাকে, আমারও তাই, সেই সংবেদনাই আমার কবিতা। এখানে চিন্তার এবং অনুভবের দিক থেকে কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর ল্যাকুনা আমারও    কবিতা জন্মের সোর্স। তবে মাননীয় কবি বিশ্বরূপ দে সরকার আমাকে শব্দ কারবারের ট্রিক্স টা ধরিয়েছেন। হয়তো সে জন্যই অন্তত কলম ধরলে উৎকর্ষ  কতখানি জানি না তবে ফেলে না দেওয়ার মতো অন্তত কিছু বেরিয়ে আসে।

৪) কোন কবিদের লেখা আপনার পছন্দের? বা এমনও বলতে পারেন আপনার কাছে কোন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পায়?

➤ সেভাবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না কোনো কবি পছন্দের। কবি অনির্বাণ দাসের বই পড়েছিলাম "লোডশেডিংএর মাঠ" দারুন। অভিব্যক্তি, কয়েনেজ অসাধার। ইনি তো সে অর্থে তেমন পরিচিত নন কিন্তু ভালো লাগল। এছাড়া দেবদাস আচার্য, স্বদেশ সেন আমাকে টানেন। আর কবিতার প্রকার ধর্মীতা  বলতে তেমন কিছু কবিতা এখন আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে যার মধ্যে শব্দের পরীক্ষা নিরীক্ষা থাকবে, ধ্বনির ও ইমেজারির এক মেল বন্ধন থাকবে।ফ্রাসটেশনও আমার রন্ধ্রের দোষ হিসেবে টানে।

৫) আপনার প্রিয় কবিতার বই কোনটি, যা নিয়ে আপনার ভাল না লাগা সময়গুলো কাটিয়ে নিতে পারেন?

➤ ভালোলাগার বই বলতে স্পেসিফিক কোনো বই আমি সংগে নিয়ে ঘুরছি, নেই। একসময় বিজয় দে র যেকোনো কবিতার বই খুব পড়তাম। ওনার লেখার মধ্যে রিপিটেড ইউসেবল এসপেক্ট একটি  আলাদা মাত্রা এনে দিত।পড়তাম। বারীন ঘোষালের শ্রেষ্ঠকবিতা পড়েছি। খুব অল্প বয়েসী ছেলে জগন্নাথের " মাটির সেতার" বইটি ভালো লেগেছিল। কাজ আছে।

৬) আপনিতো অনেক বছর লিখছেন। আপনার কবিতা main stream এর বাইরে। আপনি ক্যানো এই ধরনের, মানে main streamএর বাইরে লিখছেন? আসলে এই আবহমান বা main stream এ লিখলে তো অনেক নাম ডাক সম্মাননা এমনকি পুরস্কারে বাড়ি ভর্তি হয়ে যেতো। এই বিষয়ে কিছু বলুন উৎস দা---

➤ দেখুন মেইন স্ট্রিম যদি বাদ দিয়েই বলি তাহলে পুরস্কার সম্মাননায় আমি বিশ্বাসী নই। আর মেইন স্ট্রিমে লিখলেই যদি চাকতি তে ঘর ভরে যেত তাহলে মেইন্সট্রিমেরও কোনো গুরুত্ব থাকত না। সুবীর মন্ডল মেইন স্ট্রীমেই অসাধারণ কিছু লেখা লিখেছেন, বিশেষ করে হাসপাতালের বেডে অসুস্থতায়, তাঁর জীবনে কতটা একাধিক পুরস্কার এসচে জানা নেই। তবে আমি বরাবরই কিছু ভিন্নধর্মী ফোটাতে চেয়েছি, আমার প্রয়োগ অনেক মানুষেরই অপছন্দের। হতেই পারে, আমি তো কবি নই। কাউকে পটানোর  এক্স ফ্যাক্টরও আমার নেই। তবে আমার মনে হয় সমস্ত কবিতা নিয়ে কলমে এক্সপেরিমেন্টাল ইমেজারি রাখতে হয়।যেখানে সব বলে দেয়া মাফিক রহস্য থাকলেও কবিতা হয়ে যায়, সেখানে হারাবার হ্যালুসিনেশনে নিজেকে হারাবার অস্পষ্ট মাধ্যাকর্ষণও এক ধরণের কবিতা। আমি চেষ্টা করি। পুরস্কার দিয়ে কি হবে বলুন, লিখতেই পারলাম না আর পুরস্কার????

৭) এখন কবিতায় অনেকেই সিম্বল, ইকুয়েশন এমনকি খিস্তিও ব্যবহার করছেন।এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

➤ দেখুন সিম্বল, ইক্যুয়েশন আরো যা যা বললেন সেটা লিখিয়ে মানুষ দের নিজস্ব নির্জীবত্ব এবং সজীবত্ব। যারা পারছেন না তারাই এসব করেন বলে আমি মনে করি। তবে এখন যেকোনো বিষয়েই ভ্যালুর পরিমাণ কমছে, তাই অটোমেটিক্যালি এগুলো বাড়ছে। অনেকে এই এটোমিক এজে কবিতাকেও এটোমিক করে তুলতে চাইছেন, তাই এগুলোর ব্যবহার বাড়ছে।

৮) আপনি কেনো কবিতা লেখেন?
➤ আমি কবিতা লিখি নিজের না প্রকাশের জড়ত্ব থেকে মুক্তি পেতে। আমার এই স্বল্প জীবনে একটি প্যাঁচালো অপরিস্ফুট ওঠা বসার রহস্য আছে যার থেকে পরিত্রাণ পেতে আমি লিখি, সেটা কবিতা বা অন্য কিছু কি না জানি না, তবে একটি কোনো মাত্রার লেখা আর কি, সে মানুষ হয়তো নেয় না, কিন্তু লিখলে আমার সন্ন্যাস আবর্তিত হয়।

৯)  আপনি কি কোন কবিতা গ্রুপের সাথে যুক্ত, হেয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক গ্রুপ? তার নাম?

➤ আমি কোনো গ্রুপের সাথে কোনোদিনই যুক্ত ছিলাম না, আজও নই, তবে আপনারা অনেকেই হয়তো  জানেন যে এখনো পর্যন্ত মধ্যবর্তী পত্রিকা মন্ডলীর সাথে আমি যুক্ত আছি।


১০) আপনি কি এইসময় রবীন্দ্রনাথ পড়বেন নাকি জীবনানন্দ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খঘোষ এঁদের পড়বেন নাকি বারীন ঘোষাল বা দীপঙ্কর দত্ত এঁদের পড়বেন ?

➤  এ ধরণের একটি কথা আগেই বলেছিলাম। যাঁদের নাম বললেন তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের সময়ের পরিসরে খুব প্রাসংগিক তবে এখন ট্রেন্ড টাই যেহেতু অন্য এবং ভাবনাহীনতাই একটি অবস্থা, সেখানে দাঁড়িয়ে বারীন দীপংকর নিশ্চয় পড়ব। 

১১) যেহেতু  আপনার লেখা main streem থেকে আলাদা।ফলত আপনার পাঠককুলের পরিধি কেমন বলে আপনি মনে করেন?

➤ দেখুন আমার পাঠক নেই। আমি ঠিক সবক্ষেত্রেই কেমন যেন অসামাজিক। মানুষ আমাকে নিতে পারেন না, তা আমার কোনো বিষয়ে একমুখীনতা বা খুঁটিয়ে বিচারের প্রবণতা যাইই বলুন। লেখার ক্ষেত্রেও বন্ধু কম বলে, আমার লেখা অনেকেই এড়িয়ে যান।

১২) কবিতায় বহুরৈখিকতা  বিষয়ে আপনার তো ধারনা আছেই, এই  বিষয়টি আপনি কিভাবে ব্যাক্ষা করবেন?

➤ বহু রৈখিকতা মানে নিজের চিন্তার রৈখিক চিত্রকে ভেঙে দেওয়া। বিষয়হীনতা থাকলেই বহুরৈখিকতা আসবে। আবার শব্দের ব্যবহারের মধ্যে টিপিক্যাল অরগ্যাজম নিয়ে আসলে ব্যাকরণ কে ভেঙে দিলেও বহুরৈখিকতা আসে। যেমন একটি লাইন যদি এরম হয়ঃ " ছিল কে সাইকেল দিয়ে হাওয়া করে দিলাম" এখানে ব্যাকরণ নষ্ট হয়েছে কিন্তু অনন্য প্রয়োগের এন্টাগোনিস্টিক ক্যারেক্টার ধরা পড়েছে। এই আর কি।

১৩) আপনি কি বাংলা কবিতার বাইরে  অন্য ভাষায় লেখা কবিতা পড়েন? যদি পড়েন কোন ভাষায় কোন কবির কবিতা পড়েন? এতে কি মনে হয় আপনার লেখায় তার প্রভাব পড়বে বা সেই প্রভাবকে কি আপনি সচেতন ভাবে এঁড়িয়ে চলবেন?

➤ বাংলা কবিতাই বা কার কতটা গভীর ভাবে পড়লাম কে জানে?? কবিতা ঈশ্বরের নৃত্য, একে ধরা যায় না। কবিতায় মরশুম পাল্টায়, তাই কবির চেতনাও এমনি এমনি পাল্টে যায়। অন্য ভাষায় শার্ল বোদকেয়ারের কবিতা ভাবনা, কিছু কবিতা ও পড়েছি। র‍্যাঁবো পড়েছি। মরিস ক্লিকের শব্দ ভাবনার চাতুর্য পড়েছি। এগুলো পড়ার এবং নিজের লেখার প্রয়োগের মধ্যে যদি নিয়ন্ত্রণ থাকে তাহলে কোনো প্রভাবই কোথাও পড়বে না।

১৪) ক্যানো এঁড়িয়ে চলবেন দাদা?
➤ এঁড়িয়ে চলবো না বলেই ওপরের কথা গুলো পাড়লাম।

১৫) আপনিতো লেখা লিখি সুরু করেছিলেন শুধু প্রিন্ট মিডিয়ার হাত ধরে। এখন আমাদের ওয়েবম্যাগেও অল্প-বিস্তর  লিখছেন। এই ২টি ভিন্নি মাধ্যমকে কীভাবে ব্যাক্ষা করবেন?

➤ দেখুন প্রিন্ট মিডিয়া, ওয়েবজিন বলে সেপারেট ধর্মী কিছু নেই। প্ল্যাটফর্ম সবই এক। লিখতে পারাটাই বড় ব্যাপার। লেখার কৌশল টাও। কবিতা লেখাটা যৌতুক নিজেকে দিতে যাবার ক্ষেত্রে যদি নিজের কাছে নিজে অভিনয় না করি। তাই আমার কাছে সবই এক। 


১৬) আপনার কি মনে হয় web.mag, print media কে একসময়  অতিক্রম করতে সক্ষম হবে?

➤প্রিন্ট মিডিয়ার একটি অসম্ভব সংরক্ষণশীল গুন আছে তবে এটি অনেক স্তর অতিক্রম করে পাঠকের সামনে আসে। প্রিন্ট মিডিয়া কিনে পড়তে  হয়। তবে তা একপ্রকার দলিল। আর ওয়েব মিডিয়াতেও অসম্ভব প্রচার হয়, আজকাল প্রচুর ওয়েব জিন প্রস্তুতি লাভ করেছে।এর গুরুত্বও আছে। প্রচুর মানুষ ওয়েব জিন থেকে পরিচিতি পেয়েছে। তাই কোনো টাকেও ফেলতে পারি না।


১৭) এখন অজস্র কবিতা লেখা হচ্ছে।বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশও হচ্ছে। কিন্তু তারপর আর কবিতাগুলির হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না।আপনার মতে এর কারণ কী?

➤ এটা বলতে গেলে বলা যায় কবিতায় মেকানিজম এখন এতটাই বেশি যা মেকানিজমের পরিশীলিত ব্যবহারের মান কে অতিক্রম করে যাচ্ছে। কবিতা লিখতে গেলে একটি আত্ম অনুসন্ধিৎসার তদবির প্রয়োজন, যা কেউ করে না, আবার নিজের সাথে বাইরের অবস্থানের যে গভীর রিলেটিভ আপ্স এন্ড ডাউন্স নেচার তা অনেকে গুলিয়ে ফ্যালে। তবে নিজেকে আরো আরো রং থেরাপিউটিক এপ্লিকেশন কবিতাকে নষ্ট করে। তবে কবিতায় নানা ধরনের ইমেজারি, নর্মস, ট্যাকটিক্স এসেছে। তাই কি করবেন বলুন!!! তবে কবিতার হলি ইডিওলজি কখনোই কবিতা কে ভোলাবে না। সিন্ট্যাক্স ও সিমেন্টিকের যথার্থ প্রয়োগ কবিতা উন্নত করবেই। সিনট্যাক্স শব্দের ভাংচুর এবং সিম্যান্টিক শব্দের প্রয়োগাধীন অনুভব শীলতা যা দারুন মানসিক বিন্যাস গঠন করে।

১৮) চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এতে কি কবিতার উন্নতি হচ্ছে?  এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

➤ এ ব্যাপারে কিছু কথা আগেই বলেছি। এসব ব্যাপার নিতান্তই ফার্স। বেশি বাগাড়ম্বর উৎকর্ষ আনতে পারে না। তবে নতুন যাদের লেখা ছাপা হচ্ছে তাদের সামান্য পরিচিতিরও দরকার। তাই দেখে শুনে কিছু কাগজে তাদের লেখার অন্তর্ভুক্তি দরকার, তবে সম্মান টম্মান পতনের মূল।

১৯)  আপনার কতগুলো একক কাব্যগ্রন্থ আছে। প্রতিটি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বা আপনার কবিতার মাধ্যমে আপনি পাঠকদের কি বার্তা দিতে চান?

➤ কাব্য গ্রন্থ কবিতা জীবনের কারোরই কোনো ফ্যাক্টর নয়। কবিতাই বিচার, যদিও আমার ভুল বশত সাত টি কাব্যগ্রন্থ আছে, কিন্তু কবিতার মাধ্যমে আমি কি আর বলতে চাই, শুধু নিজের না হওয়ানো গুলোকে হওয়ানোর ভেতর আনবার চেষ্টা করি। আমার শেষ কাব্য গ্রন্থ " কোনো ম্যাজিক কোনো ফুৎকার" ২০১৬ সালে মধ্যবর্তী থেকে বেরিয়েছিল। আর পরে কোনো বই বেরোবে কি না জানি না, ইচ্ছেও বিশেষ নেই। দেখা যাক। পাঠক রা আমার কবিতায় কি আর বার্তা পাবেন। তারা শুধু ট্রেন্ড টা ফলো করতে পারেন। 


২০) আপনি কি বিশ্বাস করেন কবিতা লিখে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব?

➤কি আর বলব বলুন সমাজ এখন ভদ্রবেশী লম্পট, চাটুকার, বেশ্যা, মাতব্বরে ছেয়ে গ্যাছে। এদের শূর প্রবৃত্তি নষ্ট হয়েছে। কবিতার সূক্ষ আর্ট ও দর্শন এদের কোনো পরিবর্তনই আনতে পারবে না। কেবল সাময়িক একটু ভাব লোলুপতার ঝলক আনতে পারে। এখন কলির ধ্বংসই আমি মনে প্রাণে চাই।

২১) কবিতা লিখতে এসে আপনাকেও নিশ্চয়ই অনেক প্রতিকূলতার স্বীকার হতে হয়েছে? আমাদের পাঠকদের সতর্কতার জন্য কিছু বলবেন আপনার অভিজ্ঞতা ---

➤সে তো সবার মতো হয়তো আমারও এসেছে। অনেক সময় শব্দ হারিয়ে ফেলেছি, বিভিন্ন মানসিক প্রতিবন্ধকতা আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মানুষের জটিলতার পরিসংখ্যান আমি খুঁজে পাই না। এসবের ভেতর নিজের মননের গুনীন কে স্থির রাখতে হয়, থেমে যেতে হয়, চেপে যেতে হয়, রক্তে দাগ পড়লেও মগজকে হাওয়া লাগিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করতে হয়। কেউ কাউকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। নিজেকে ভেঙে নিজেকেই গড়তে হয়।

২২) আপনি আপনার পাঠকদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন?

➤ সত্যি কথা বলতে আমার কোনো প্রত্যাশাই নেই। সারা জীবন লেখায় থাকতে চাই, পারব কি না জানা নেই। 

২) উৎস দা আপনার কি মনে হয় কবিতা শেখানো যায়? যদিও নতুন লিখতে আসা কবিরা যদি construction গোছাতে না পারে, তাদের বলা  হয় যে,এই জায়গাটা এরকম না হয়ে,এরকম হলে মনে হয় আরও কমপ্যাক্ট হোতো। এটাও তো একপ্রকার শেখানোই।এটা আমিও মনে করি। আপনার কি মনে হয়?

➤ দেখুন কবিতা হাতে ধরে শেখানো যায় না আবার যায়ও। শব্দের কালচার করার জন্য বিভিন্ন রিসেন্ট তরুন দের বই গুলি পড়া দরকার যারা কবিতাকে an extraordinary amount of scientism এ পরিণত করেছে। নিজেকেও নতুন শব্দ সন্ধান করতে হবে, ব্যবহারের এক ঘেয়েমি ছাড়তে হবে। শব্দের স্বাভাবিক ব্যবহার কে ওলট পালট করতে হবে। খারাপ কবিতা অর্থাৎ ডগলাস কুপল্যান্ডের তত্ত্ব অনুযায়ী অসম ভংগুর অমেরামতিকেই কবিতার আদর্শে ফেলতে হবে। সর্বপরি কবিতা লেখায় নিজের একটি আত্ম জৈবনিক আত্ম উদ্ভাবনী বোধ থাকতে হবে। " মাথার ভেতর একটি বোধ" কাজ করাতে হবে

২৩) আমাদের এবং সকল পাঠকদের কাছে আপনার বার্তা---
➤ আমার মতো একজনের আর কিই বা বার্তা থাকতে পারে, তবে কবিতাকে ভালোবাসলে নিজের জীবনের প্রয়োগ কে ভালোবাসতে হবে। অনেক প্রতিশ্রুতিবান কবিই নিজেকে নষ্ট করে দিয়েছেন চরিত্রহীনতায় ও অলসতায়। একটি অধ্যাবসায় কে বহাল রাখতে হবে। হেরে গেলে চলবে না। সংগ্রাম জারী রাখতে হবে।


উৎস রায়চৌধুরীর ৩টি কবিতা_______


১)            পাঁক


নজর লেখা মিশ কালো ব্যাগ 

নতুন কে ফ্লোরেন্স স্টাইল

আলো কে কিন্তু করেছো

আমি সোহাগের এল এম মাঠে

চর চর গোবিন্দ গুলি এখন হারমোনিয়াম


রা খুঁজে পেতে আসর ভাবছি

সে ভাবছে হাতে লেখা ইস্কাবনের বিবি

মর্মর প্রোলেতারিয়েতে কত হরিণ

তোমাকে নামিয়ে নিল ফুটপাতে

অসম লেডিস মিন্স স্ট্রুয়েশনের কামড়ায়।



২)         ইন্টারপ্লে


হারানো খরচের বাস্প উড়ছে গলা

পে করছে চোখ ছবি অথবা বাইকে

প্রসাদ একতরফা সে বলে মেঘ কালার

আরশি জমাচ্ছে ইউ এস ফেরৎ যুবকে

ম ম করছে মোরামের প্যান্টি স্মেল গ্রাউন্ড


শুয়ে থাকা বা রো ধরা ডিকশনারি

এলো মেলো তারের বাগান

আল হাবিব বললেই খাঁচায় কৃষ্ণ মন

আওতায় জমি খেলাপের রেঁস্তোরায়

সব স্যাডিস্টিক বললেও ইউক্যালিপটাসএর সিনেমা। 



৩)                 দু প্রকারের দিন



দিনে দিনে ফি একটাই না কেবল পালট

ফোনের ফসফরাস অফ কেবল সরিয়ে দেখছো

ছায়ায় শুয়ে আছে আমার মেয়ে

কলামে ঘোড়াদের খেলনা বাটি কত শত

কেবল আজ রোদ লিখতেই চাঁদ হয়ে গেল


দেখা উল্টে গেলে দিনও হয় আরেক

শ'য়ে শ'য়ে চোরা গলি ঝুলে আছে 

মা'য়ের আশীর্বাদ কাঁটায় কাঁটাতেও বাগান

গোলাপিরা ঘর ভরাবে এজলাশের পরে

তখন তার ও তার ছি বুড়ি যৌন উপাচার।


ধন্যবাদ উৎস দা, আপনার সারাদিনের ব্যস্ত সময় থেকেও আমাদের পত্রিকা এবং আপনার পাঠকদের জন্য সময় দেয়ার জন্য। ভালো থাকবেন দা,  সুস্থ থাকবেন। সাহিত্যে থাকবেন।  


Sunday, September 6, 2020

| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
| নভেলেট |
   
অরিজিৎ চক্রবর্তী

ডারউইনের চিঠি প্রথম পর্ব
কানাডার পূর্বাঞ্চলের মাউন্ট রয়ালের শীর্ষে পর্যটন আবাসে একটি দেওয়াল ছবি আছে। এক শ্মশ্রুমান পুরুষ, পশুচর্মের শীত পরিচ্ছদ পরিহিত,বনে ঘেরা একটি হ্রদের পারে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবির নাম " মিসিসিপি নদী আবিষ্কার করতে উদ্যত অভিযাত্রী লাসাল"। অনেকে এটা পড়ে হাসেন-- লাসাল্ কি করে কী করে জানতেন তিনি ভবিষ্যতে মিসিসিপি আবিষ্কার করবেন? এই চিন্তাটি অতি প্রাচীন, স্বয়ং অ্যারিষ্টটলের আমল থেকে চলে আসছে।এটি অ্যারিস্টটলের "অভিসন্ধিবাদের"- এর চমৎকার উদাহরণ।

সম্মোহ ঠিক এরকমই একটা ভাবনার কাছে বারবার থমকে দাঁড়ায়। তার চলাফেরা হাসি-কান্না প্রেম যৌনতা কোন কিছুই যেন এর থেকে আলাদা নয়। এই ষাট বছরের যযাতি সুলভ জীবনে যেটুকু অর্জন আর যেটুকু বর্জন, তাতে তার মনে হয়েছে প্রত্যেক ঘটনার একটা কারণ থাকবে এবং কারণ ঘটবে কার্যের আগে।অথচ লাসালের অভিযানের কারণ ( ভবিষ্যতে ) মিসিসিপি আবিষ্কার।ছবিটির নাম দেখে আমাদের মজা লাগে এ-জন্য যে এতে কার্যকারণবাদ লঙ্ঘিত হয়েছে। সম্মোহের জীবন এরকম বহু লঙ্ঘনের কূটাভাসে বৈচিত্র্যে ভরা।

দুঃখ পেলে আমরা কাঁদি। আবার আনন্দেও চোখে জল আসে। চোখে ধুলোবালি ঢুকলেও জল আসে। পেঁয়াজ কাটার সময় জল আসে স্বাভাবিক ভাবেই! সম্মোহ ভাবে এরকম চোখের জল কি একই রকম? চিত্রগ্ৰাহক রোজ লায়ান ফিসার বিভিন্ন রকম চোখের জল অর্থাৎ অশ্রুর টোপোগ্ৰাফিক একটি সিরিজ তৈরি করেন, যেখানে আমরা চোখের জলের বিভিন্ন টোপোগ্ৰাফিক্যাল চিত্রের সন্ধান পাই।সম্মোহের এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত সন্ধান কিংবা বলা ভালো অনুসন্ধানের দিকে বরাবরই আগ্ৰহ। যেন সবসময় নিজের খেয়ালে বে-খেয়াল হয়ে আছে। ফেসবুক থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবার কাছেই সম্মোহ নিজেই একটা মাধ্যাকর্ষণচ্যুত চরিত্র। এখন আমরা তার তীব্রতা, স্থায়িত্ব ও বর্ণের ওপর নির্ভর করেই ট্যাকটিক চলনের অভিমুখগুলি খুঁজে বার করবো। তবে তার আগে লীমা এখন কেমন আছে খোঁজ নেওয়া যাক।

লীমা নামটার সঙ্গে সম্মোহের একটা অভিমান জড়িয়ে আছে। এই অভিমান মুছে যাওয়ার নয়। আর মুছে দিয়েই বা লাভ কি! এটুকু সম্বল করেই নিজস্ব যন্ত্রণার চোরা প্রকোষ্ঠে তার দিনযাপনের নির্জনতা। আসলে লীমাও ভালো নেই। ভালো থাকবেই বা কি নিয়ে? আত্মীয়তা বন্ধুতা কোন কিছুই মূল সত্যের তেমন গভীরে নেই।সত্যের একটা হালকা অগভীর পলেস্তারা আছে মাত্র। সামান্য আঘাতেই যখন তখন মিথ্যের দগদগে হাড়মাংস বেরিয়ে পড়ে।

প্রত্যুষে কোন পাখি প্রথম ডাকে? অন্যদের ঘুম ভাঙায়? পাখি যখন ডাকতে শুরু করে, তখনও কিন্তু আকাশ নিকষ অন্ধকার, সেখানে গ্ৰহ-নক্ষত্রের রাজত্ব, আলোর আভাসটুকুও মিলবে না। তা সত্ত্বেও পাখি ডাকে, একটি পাখি প্রথম ডেকে ওঠে, সেই ঘোষণায় ততখানি প্রত্যয়, তার থেকেও বহুগুণ থাকে দ্বিধা। ভুল হলে ভোগান্তির একশেষ। ভুল কি হয় না? জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রিকে প্রভাত মনে করে ডেকে ওঠে না পাখি? ভুল ধরা পড়লে অন্যদের কাছে জবাবদিহি করতেই প্রাণান্ত তা সত্ত্বেও প্রভাতকে আহ্বান করতে কেউ না কেউ ডেকে ওঠে। অতঃপর আরও দু'একজন গলা মেলায়।


                                                                                  আবার থাকছি রবিবার____       

Monday, August 31, 2020

| অনুবাদ সংখ্যা | মলয় রায়চৌধুরীর |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||

আজ অনুবাদ সংখ্যায় থাকছে জন অ্যাশবেরি (John Ashbery) বর্ষীয়ান মার্কিন কবি। অনুবাদ করেছেন মলয় রায়চৌধুরী

জন অ্যাশবেরি-র তিনটি পোস্টমডার্ন কবিতা ( ১৯২৭ - ২০১৭ ) । 

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী   


আমি দেখতে পাই, অন্ধ লোকটা বলল, হাতুড়ি আর করাত মাটিতে রেখে    


ওই পুরোনো সঙ্গীতে কিছু চারুতা আছে

ও তার দিকে টান পাবে যখন রাতের বাতাস তাকে     উন্মোচন করবে :

দূরে থাকতে ভালো লাগে ; পাথরগুলো হেলে পড়ে ;

গর্জন ছাপিয়ে পাহাড়ের বিষাদ নিজের জায়গায় 

রান্নাঘরগুলোর কিনউ উজ্বল কাঁথার মতন স্মৃতি

লাল রঙের এক থোক কাচা কাপড়ের । কিন্তু মোটরগাড়িটা কি

কখনও টেনে নিয়ে যাবে আর সব সময়ে তেজি যখন ও

সিঁড়ির মাঝে প্রেরণা পেলো

আর পাঁউরুটির স্লাইসে কেউ জ্যোতিষের ফোয়ারা খুলে দিলো

যতক্ষণ না তা মানুষের আদল নিলো, নির্বোধ, পকেট ফাঁকা

হয়তো, খুব সম্ভবত সেখানে দাঁড়িয়ে ।


তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না এই বিশ্রাম-থেকে-দূরের প্রয়োজনগুলোর বিরতি ?

আর বাতাসে প্রতিবেশিরা আর সেরকমই মেনে নেয়

ব্যাপারটা কঠিন, এক ধরণের মাইলফলক ?

যাতে পরদাগুলো যতোটা পারে চারুতা দিতে পারে

মনোরম দৃশ্যগুলোকে : এক উপচে-পড়া মলকুণ্ড

দরবার জীবনের স্মৃতিতে, লজেঞ্চুষ, সিগারেট,

তাছাড়া আর কী । এটা কেমনতর, একটার বেশি কি রয়েছে,

দয়ালু, লোকেরা কি চিরকালের জন্য প্রান্তে যেতে চায়

বিভিন্ন জিনিসের, এমনকি সুন্দরগুলোর, আর যখন তা ঘটে

আমরা কি সবাই একসঙ্গে আকা থাকবো । বর্ম

এই জিনিসগুলোর চিন্তায় নিজেকে দেখেই হাসে

তবু দূরত্বগুলো সবসময়ে বাড়তে থাকে

মাঝখানে সবকিছু নিয়ে, মাঝখানে

উঁচু বেড়াগুলো মনে হয় জানে জীবন কি জিনিস :

এক অর্পণ যা এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে । আর আমরা স্বপ্ন দেখি ।


 

একটা মাছি


আর তবু আমি আপনা থেকেই দেয়ালের ওই জায়গাটা দেখি--

সময়টা যথার্থ, কিন্তু দূরে --

অনুমতিটা টকে গেলো--

সেটাই সময়কালে আসে কিন্তু বয়স বাড়লে নয়,

মার্বেলের গুলিগুলো পাশপকেটে আটক,

আজকের ভঙ্গিমা আমরা ভালোভাবে জানি তা হলো

গতকালের বিলিব্যবস্হা  আর পাকা ভবিষ্যবাণী --

ঘোরবার সময়ে থেমে না-যাওয়া,

যেমন একজন আহ্লাদী নকশাকার নিজের টেবিলে বসে থাকেন ।


কারণ, এর কারণ হলো :

কৌতূহলী লোকটা আবার নিজের চুল পরিষ্কার করছে

নিজের পায়খানায় বসে আয়নায় একটা চোখ দেখতে পেলো

( বন্ধুগণ ব্যাপারটা ভালোভাবেই এসেছে

একবারের জন্যে যেমন দেয়া হয়েছে এখানেই আর আমি হাতে সময় নিয়ে

একবারের জন্যে, লেখালিখির জন্য পরিত্যক্ত, আর কতোটা

সময় গেছে শব্দদের নষ্ট করার জন্য,

যা তোমাকে খরচ করতে হতো কিংবা খেসারত দিতে হতো

মোটরগাড়িতে আশু রাত্রিভোজনের সীমাহীন

গাড়ির কাচে বয়ে চলেছে আলো

একটা বড়ো সফলতা

আমি অনুমান করতে পারি কিন্তু এক্ষুনি গ্রাহ্য করতে পারছি না,

সময়ের দিকে দেখবেন না ) আর সময়

তোমার খোঁজে পেনসিলভিয়ানা আর নিউজার্সি থেকে

ভালোভাবে ভ্রমণ করতে পারে না

নিজের চুলকে হালকা হলদে রঙে রাঙায়

খড়ের দেয়ালগুলোকে রঙ করে আর আয়না

বারান্দায় সকালের সূর্যের আলোকে বিপথগামী করে

সরাসরি জাজিমের ওপরে

ব্যাপারটা হলো জগতে এই জায়গাগুলো,

ভাড়া থেকে মুক্ত,

মালপত্রের, খাবারের, তোমার সঙ্গ দেবার এক অভিধান

ঈর্ষায়

কিন্তু দিনটাও এমন যখন আমরা একত্রিত হলুম

চুক্তি সাক্ষরিত হলো

আর সবকিছুই দীর্ঘ দুপুরের সমুদ্রতীরে সহজ হয়ে উঠলো

কাঁধকে ঢুকিয়ে দেয়া হলো মন্হরতরঙ্গে জুতোজোড়া খুলে

যাতে আমরা এখন বেঁচে থাকতে পারি কিছুটা

কৌতূহল আর আশায়

জলাশয়ের মতন যা দ্রুত জোয়ারের অংশ হয়ে ওঠে


সূর্য যখন অস্ত গেলো


একবার কারোর ভালোবাসা পেয়ে -- নিশ্চিত

তাতে এক স্হায়ী শুভত্ব আছে,

আমরা যদি পরিস্হিতিগুলো জানতে নাও পারি

কিংবা বহুকাল আগে ঘটে গেছে যাতে কোনো তফাত হয় না ।

প্রচুর সূর্যালোকের মতন কিংবা মিষ্টি-আঠালো প্রাচুর্যের মতন, 

চিনি দেয়া জিনিসের -- কে তোমাকে বলতে পারে তা ভুল ?

তোমাদের দলে কারা-কারা অন্ধকারে মুড়ে দিতে পারে উদাস

গানকে যা বাজতেই থাকে, যা পৃথিবীর আরম্ভ থেকে বেজে চলেছে ?


তবু, নিজের মানসিকতায় বাঁধা পড়ে যাওয়া, যা মনে হয়

সমভূমির মতন বিশাল, যাতে বলে দেয়া হয় যে

এর দিগন্তগুলো কৌতুকপ্রদভাবে সীমাবদ্ধ,

আর সেখান থেকেই উঠে আসে সমস্ত বিষাদ, সেই অবনত

ঝর্ণার পালকের মতন : তাকি জ্ঞানকে উচ্ছিন্ন করে না

ভালোবাসার বিভিন্ন বিন্যাস থেকে, তাদের ছোট করে তুলে

একটা শাদা উদাসীন ত্রিপার্শ্ব কাচে, এক ছাদহীন প্রেম ফাঁকায় দাঁড়িয়ে

প্রকৃতির শক্তিতে জড়ানো ? আর অনেকে এই দৃষ্টান্তে দেখতে পায় তা কেমন করে ওঠে

আস্তে আস্তে উদাসীন স্বর্গের দিকে, সেই সমস্ত পাণ্ডুর কুহক ?

পাখির গানের মতন ধুয়াটা এলোমেলো, তা অপরিচিতের মতন চুয়ে পড়ে

এখান থেকে বেরোনো পরিচিত কাঠামোর মাঝে

স্হির পরিচিত পরিধিতে আর কম নিশ্চিত প্রবণতায় :

তা আগেই নিজের পথ তৈরি করে নিয়েছিল। সন্ধ্যার চিত্তবিনোদনে।

এমন সময়ও হয় যখন সঙ্গীত আমাদের কাবু করে ফ্যালে,

আচমকা হতবুদ্ধিকর নৈকট্যে আসে, আমার কবজির ওপর বইতে থাকে ;

যে সত্যি আর নোংরা কথাগুলো তুমি রাতের বেলায় ফিসফিস করে বলো

যেমন বই বন্ধ হয়ে যায় নষ্ট চাদরের মতন, একটা কলঙ্ক

সময় থেকে ছিঁড়ে নেয়া সব রকমের দ্যোতনা আর ফেলে দেয়া

কুয়োর ভেতরে মণিরত্নের মতন ; জবাবটা, এছাড়াও,

আমার মাথায় যে প্রশ্ন জেগেছিল কিন্তু আমি তা ভুলে গেছি,

ব্যতিরেকে যেভাবে কোনো-কোনো জিনিস, কোনো-কোনো রাতে, জুটি বাঁধে ।




Thursday, August 27, 2020

| বিশেষ সংখ্যা | প্রকাশ ঘোষাল |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||

কবি প্রকাশ ঘোষাল, আসানসোল বাসী,  ৯০ দশকের কবি। কবির আত্মপ্রকাশ মিহির আচার্য্যের "লেখক সমাবেশ"___ এপার বাংলা ওপার বাংলা -র পত্রিকার হাত ধরে। কবির ১টি কাব্যগ্রন্থ আছে " জন্মদিনের মতো বৃষ্টি " —— কবিকণ্ঠ প্রকাশনী থেকে ২০০২ সালে প্রকাশিত। কবির কবিতা এইসময়কার আঙ্গিকে, কবিতার গঠন ও বাচনভঙ্গিতে।  

আসুন পড়ি___



প্রকাশ ঘোষাল-এর কবিতা

১.
হাড় 

রোজ সকালবেলায় শৃঙ্খলা রোদ এসে
বাচ্চাদের অরণ্য পার করে দেয় 
বিষন্ন অর্কিড কোলে একা একা  বসে থাকে ব্যালকনি
সমুদ্রে ভেসে যায় চাঁদের ক্ষয়াটে হাড় 

২.
বিষ্ময়চিহ্ন

ঘুমন্ত জ্বরের কোন স্ক্রিনশট নেই
গতজন্মের দেহ থেকে ছিটকে পড়ছে সাবালক অক্ষর। 
বিষ্ময়চিহ্নের ভেতর মাঝেমাঝে পাশ ফিরে শোয় আশ্চর্য পৃথিবী। 

৩.
স্বপ্নমঙ্গল

হাড়গোড় নিয়ে স্বপ্নমঙ্গল লিখে চলেছে এক দার্শনিক 
এ জন্মে নুন পাহাড়ের আর সমুদ্র দেখা হলো না
ও আয়না জীবন মুন্ড বাইরে রেখে চলো 
ঈশ্বরের শ্বাসকষ্ট দেখে আসি। 

৪.
লগইন

গোলাপের শো-রুম থেকে বেরিয়ে আসছে নিওপ্রিন দম্পতি 
লম্বা জিভের ভেতর মেরুপ্রদেশের গান
কঙ্কাল স্বেচ্ছাসেবক বুকপকেটে গুঁজে দিচ্ছে ধন্যবাদ 

আঃ ভিবজিওর ঘুম কয়েকশো তারার চোখ 
দূর থেকে উড়ে আসছে চতুর মাইক্রোসফট 
নিশাচর লগইন হেলথ্ ওকের ছায়া। 

৫.
আয়ুলিখন

এবং জানি না কিভাবে এলাচ ভোর উঠে যায় গাছের পাতায় 
কখন যে সন্ধেতারা দোল খায় শান্ত শাখায়, কিভাবে বদলে যায় ভাঙা চেয়ারের ঘুম 
অথচ মাথার বাকল খুলে দেখি হাজার হাজার স্কাইলাইটের রং 
ময়ুর মুদ্রায় ফুটে ওঠে চুম্বন শীৎকার,শরীরই বসতভূমি হাত ও চোখের কাঙাল পরাগ, 
জিভের নিচে নিঃস্বতার অনুবাদ শুধু ছুঁতে চায় জীবনের সন্ধি সমাস
মৃত বছরের আয়ু ঝুঁকে পড়ে 
অনন্ত প্যারাফিন লিখে চলে লিকলিকে পৃথিবীর ঝর্ণা যাপন।

৬.
গর্বিত শামুক 


দিন ও রাত্রির মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে বাঘেরা ক্যারাম খেলছে 
সন্দেহ আর যন্ত্রনার ফাঁক দিয়ে পন্ডিত শেয়াল বাজারে ছুটছে
সেয়ানা চিংড়ির সম্মতি না পেলে সমস্ত সিগন্যাল অফ
ঠিক দশটায় যে যার দাঁড়ে দোল খাবে জেনারেল সিফট 
দৃশ্যমান হিংস্রতার টেলিকাস্ট দেখতে দেখতে বিছানায় শুয়ে পড়বে গর্বিত শামুক।

৭.
তিন সেকেন্ড শূন্যতা


শাদা অভিমান।টকঝাল ছিল না যে জোর করে বলা যায় না
একটা নেউল রঙের চাঁদ আটকে ছিল বাসি জানলায় 
কয়েকটা আরশোলা এখনো ভাবছে আমার মৃত্যুর পর কোথায় বসবে তারা
তিন সেকেন্ড শূন্যতায় 
বেহুঁশ উড়ে গেলে স্যাটেলাইট ছুঁয়ে ফেলবে দুনিয়ার বোকামি 
সমস্ত ছদ্মনাম সর্বনাম মিলেমিশে ছুটে যাবে ইঁদুর ভর্তি ট্রেন