নমস্কার কার্তিক দা
---অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
আমি অভিজিৎ দাসকর্মকার । তুমিতো জানোই, সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের নতুন যে বিষয় প্রতি মাসে ২ বার বের করছি "এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা " --- থেকে তোমার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি।
কেমন আছো দাদা?
-----এসো অভিজিৎ। চলছেগো পরিস্থিতি অনুযায়ী।
ভালো আছি বললে মিথ্যে বলা হয় আবার
খারাপ আছি বললেও মিথ্যে বলা হবে-
কারণ বিশ্ব জুড়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি - এতো মানুষের মৃত্যু মানসিক বিষন্নতায় ঢেকে দিচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত, অথচ আমার কিচ্ছুটি করার নেই!
আবার দীর্ঘ লক্-ডাউনের জেরে প্রচুর খেটেখাওয়া- দিন আনা দিন খাওয়া গরীব মানুষগুলির যে কষ্ট ( আমার থেকেও যাদের অবস্থা আরো শোচনীয় ) তাদের থেকে একটু হলেও ভালো আছি তো।অতএব ভালো নেই বলাটাও ভুল হবে তাই পরিস্থিতির বিচারে কেমন আছি সহজেই বোঝা যায়।
দাদা তোমার কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। তুমি যদি তোমার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং এই ওয়েবজিনকে ও তোমার কবিতার পাঠকদের জন্য তোমার কথাগুলো বলো।
---বেশতো বলো।
জানোই তো আমি কতোটা ব্যস্ত থাকি সারাদিন
তার মধ্যেই তো সবসময় কবিতার সঙ্গে থাকি।
১) কিভাবে কবিতা লেখায় এলে?
➤স্কুলবেলা থেকে গল্প লিখতাম। টুকটাক ছড়া ও কবিতাও।
স্কুলে পড়াকালিন হঠাৎ বাবা মারা যান ১৯৮৩তে।
পড়াশোনার পাশাপাশি হাতের কাজ শিখতে হয়, দোকানে থেকে গল্প লেখার সময় খুব একটা পাওয়া যেতো না তাই সময় পেলে কবিতা লিখতাম।
এভাবেই কখন যেন কবিতায় ডুবে গেলাম।
আর এখন তো প্রায় সকলে আমাকে সেলুনকবি বলেই জানে...
২) তুমি তো সারাটাদিন সেলুন নিয়ে ব্যাস্ত। যদি কবিতা বা সাহিত্যে না থাকতে তবে তোমার অবসর কিভাবে কাটতো কখনো ভেবেছো?
➤তা ভেবেছি বৈকি।
আসলে আমার অনেক গুলি নেশা ছিলো।
তার কিছু কিছু এখনো আছে, সময় পেলে মাঝে মাঝে বসি। যেমন গান শোনা,গানটা আমার খুব প্রিয় এখনো প্রায় সময় গান শুনি।
আমার লেখা বেশ কিছু গানও আাছে।
তা ছাড়া এক সময় ছবি আঁকতাম খুব,স্লেটের
ওপর খোদায় করতাম বিভিন্ন মনীষীদের ছবি, মাটির নানারকম মূর্তি বানাতাম।এইসব একসময় ভালোয় করতাম।
কবিতায় না থাকলে হয়তো এগুলির কোনো একটি নিয়েই সময় কাটতো।
৩) তোমার কবিতা জীবনে কার অবদানকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দাও?
➤অবশ্যই সুব্রতদা। বিষ্ণুরের সুব্রত পন্ডিত আমার দাদা এবং বন্ধু অত্যন্তভালো মানুষ। সুব্রতদার হাত ধরেই আমার সিরিয়াস কবিতায় আসা সেটা নব্বই দশকে ।
তখন কাঁচা লিখতাম সুব্রতদাই লেখার খুঁটিনাটি বিষয় গুলো বুঝিয়ে দিতো। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখাও পাঠিয়ে দিতো।পরবর্তী সময়ে পরিচিত হয়েছি চারণকবি বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।কবি বিকাশ দাশ, কবি সুশীল হাটুই, কবি প্রভাত চৌধুরী কবি আফজল আলি।এনাদের প্রত্যেকের কাছে আমি বিভিন্ন ভাবে লেখার প্রেরণা পেয়েছি।
তারপর তো বহু গুনি মানুষের সানিধ্যে এসেছি, তাদের কাছে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি ঋদ্ধ ও হয়েছি।
আমার না- লিখতে পারার দিন গুলিতে তোমার খোঁচা দেওয়া বা রাগ করা সেটাও তো এক রকম প্রেরণা। ঠিক কি-না।
৪) তুমি কোন ধরনের কবিতাকে বেশি প্রাধান্য দাও ?
➤ আমি সময়োপযোগী লেখাকেই প্রাধান্য দিই
বেশি। যে কবিতা শরীরে লাবণ্য আছে তেজ আছে। আছে শানিত কন্ঠ এধরনের
নতুন লেখা,নতুন আঙ্গিকের লেখা,নতুন শব্দচয়নের লেখাকে।
৫) তোমার প্রিয় কবিতার বই কোনটি, যা নিয়ে তুমি তোমার ভাল না লাগা সময়গুলো কাটিয়ে নিতে পারো?
➤ জীবনানন্দ দাস সমগ্র।
আজও আমার কাছে নতুন। ওনার একটা কবিতাই আমাকে সারাদিন ঘোরের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে যথেষ্ট।
৬) তুমিতো ৯০ দশক থেকে লিখছো। তোমার কবিতা এখন main stream থেকে কিছুটা আলাদা । তুমি ক্যানো main stream থেকে বেরিয়ে লিখছো ? আসলে এই আবহমান বা main stream এ লিখলে তো অনেক নাম ডাক সম্মাননা এমনকি পুরস্কারে ছয়লাপ হয়ে যেতো । এই বিষয়ে কিছু বলো কার্তিক দা---
➤এটা প্রায় সকলেরই হয়। লিখতে লিখতে
সময়ের সাথে সাথে লেখার, ভষার বা ভাবনার পরিবর্তন হয়ে যায়।
আমার লেখাতে আমি সময়কে প্রাধান্য দিতে চাই।সময়কে না ধরলে তো পিছিয়ে পড়তে হয়।
আর দ্যাখো,সন্মাননা বা পুরস্কার পেতে কার না ভালো লাগে।
তবে আমি কখনোই এগুলির কথা ভেবে লিখতে আসিনি। বললাম যে আমি খুব ছোটো থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। সেই বয়সে তো পুরস্কারের ভাবনা মাথায় আসার কথাও নয়।
লেখাটাকে ভালোবেসেই লিখে যায়।না লিখে
থাকা যায় না তাই...
যদিও কবিতা লিখতে গিয়ে আমি অনেক কিছু
হারিয়েছি তবুও কবিতার সঙ্গে থেকেই অনেক মানুষের কাছ থেকে প্রচুর ভালোবাস ও সন্মান
পেয়েছি যা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।
৭) এখন কবিতায় অনেকেই সিম্বল, ইকুয়েশন এমনকি খিস্তিও ব্যবহার করে কবিতাকে বিভিন্নতা দেয়ার চেষ্টা করছেন । এ বিষয়ে তোমার অভিমত কী?
➤কেনো যাবে না?
তা তো করা যেতেই পারে। কবিতায় ভাঙা-গড়া ধারাবাহিব ভাবেই চলে আসছে।এগুলি তাদের চিন্তার স্ফুরণ ও রুচির পর্যায়ে থাকে।
সে ক্ষেত্রে তার ব্যবহার বা প্রয়োগটি একটি মস্ত বড় ব্যাপার।
এইযে সিম্বল,ইক্যুয়েশন বা খিস্তির কথা বলছো
ধরো কেউ যদি তার কবিতাকে স্মার্ট বা সমসাময়িক রূপ দেবার কথা মাথায় রেখে এগুলি ব্যবহার করে তাতে কোনো বাধা নেই।লক্ষনীয় বিষয় হোলো তার সঠিক প্রয়োগ।
যদি ভাবনা বা বোধের সাথে মিশে গিয়ে স্বভাবিক ভাবে আসে আলাদা কথা আর যদি মনে হয় তা জোর করে ঢোকানো হয়েছে তবে
দেবীপ্রতিমাকে জিন্সের পেন্ট আর টি-শার্ট পরানোর সমান হবে।
৮) তুমি কেনো কবিতা লেখো ? তোমার কবিতায় তোমার কর্মস্থল এবং কর্মের বিষয় আসা যাওয়া করেছে?
➤মনের স্ফুলিঙ্গকে ছড়ানোর জন্য কবিতা লিখি।কবিতা আমার কাছে সমস্ত রকমের অন্যায় ও অসামনঞ্জস্যের প্রতিবাদের ক্ষেত্র।অবশ্যই প্রেম বর্জিত নয়।প্রত্যেকেরই কিছু ভালো লাগার জায়গা থাকে তো। কবিতাকে ভালোবেসেই কবিতা লিখি।কবি হবো বলে নয়।না লিখে থাকতে পারি না।
যার সঙ্গে দিন রাতের বেশিরভাগ সময় কেটে যায়--
সে বিষয়ের ভাবনা তো স্বাভাবিক ভাবে আসবেই।আমার কর্মস্থল নিয়ে, আমার কর্মজীবন,আমার কর্মের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কিছুই আমার কবিতায় আসে।
একটি কবিতার লাইন এরকম " কাঁচি দিয়ে চুল ছাঁটতে ছাঁটতে / কখন যে ছেঁটে ফেলেছি ইচ্ছের আয়ত ডানাগুলি... "
৯) আচ্ছা কার্তিক দা তুমিতো নিশ্চয়ই বিভিন্ন ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সাথে যুক্ত? তোমার কী মনে হয় কবিতা লেখায় এই মাধ্যমগুলো কতটা জরুরি?
➤ভীষণই জরুরি। যে সময়ের ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি তার পরিপূরক হিসেবে এই গুলির প্রয়োজন আছে। এই অনলাইন মিডিয়া গুলির দৌলতে মূহুর্তের মধ্যে প্রচুর লেখা পড়তে পারছি আমরা,খুব সহজেই পৌছে যাচ্ছি কবির কাছে তার কবিতার কাছে। জানতে পারছি তাদের লেখার ধরণ।
কিন্তু প্রিন্টমিডিয়ায় সেই গতি নেই,
ধরো আজ আমার একটি কবিতা কোথাও প্রকাশিত হল, কিন্তু আমি জানতেই পারলাম না, জানছি হয়তো এক মাস, দু'মাস বা তিন মাস পরে।ততক্ষণে সেই কবিতাটির প্রতি ততেখানি মায়া থাকে না আর।
তাই সময়ের প্রেক্ষিতে এগুলি খুব জরুরি।
আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রিন্ট মিডিয়ারও প্রয়োজন আছে। যেমন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে।
১০) কার্তিক দা তুমি কাদের লেখা পড়বে এইসময়ে ? কেনো?
➤সমসাময়িক লেখা অর্থাৎ এই সময়ের লেখা। গঁতের বাইরে বেরিয়ে লেখাকে প্রাধান্য দিইআমি। কেনো না আমরা সবাই নতুন কিছু পড়তে চাই নতুন কিছু শিখতে চাই।
আর নতুন ভাবে কিছু লিখতে চাই।
এভাবেই একটা নতুন থেকে হেঁটে যাওয়াতেই আর একটা নতুনের জন্ম হয়...
১১) যেহেতু তোমার লেখা কিছুটা main streem থেকে আলাদা। অতএব তোমার পাঠককুলের পরিধি কেমন বলে তুমি মনে করো?
➤সেভাবে যাচাই করিনি কোনোদিন। সোসাল-মিডিয়া ছাড়াও অনেকেই পার্সোনাল ইনবক্সে ভালো লাগার কথা জানায়। সেটা অবশ্যই ভালো লাগে।
১২) কবিতায় বহুরৈখিকতা রাখার বিষয়টি তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে?
➤কবিতায় বহুরৈখিকতার প্রয়োজন আছে।একই ধারার লেখা পড়তে পড়তে যখন আমাদের মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন বহুরৈখিক লেখা সেই ক্লান্তি থেকে আমাদের মুক্তি দ্যায়।যেহেতু ব্যপারটা বহুরৈখিক তাই পড়ার ক্লান্তিও সহজে আসে না।
১৩) আচ্ছা তোমার এই সেলুন দোকানের ব্যস্ততা, ঘাটকামানো। তার সাথে রীতিমতো একনিষ্ঠভাবে সাহিত্য যাপনে থাকা । তোমাকে নিয়ে কোনো কাজ কোনো পত্রিকা করেনি কখনো?
➤হ্যাঁ,করেছে। আনন্দবাজার পত্রিকা আমাকে নিয়ে দুবার ২০০৫ ও ২০১৯ এ ফিচার করেছে।দিনকাল পত্রিকা করেছে। এইসময় সংবাদপত্র করেছে।
১৪) আচ্ছা কার্তিক দা কবিতা পাক্ষিক থেকেই তোমার লেখা প্রথম প্রকাশিত হয়? আর প্রভাত চৌধুরীর সাথে তোমার পরিচয়ের সময়কালটা একটু আমাদের বলো,শুনি____
➤আমার কবিতা প্রথম প্রকাশ নব্বইয়ের দশকে।তার অনেক পরে আমি কবিতাপাক্ষিক এ লিখতে আসি। প্রভাতদার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের দিনক্ষণটি ঠিক মনে নেই।
বিষ্ণুপুর যদুভট্ট মঞ্চে সমাকৃতির উদ্যোগে একটি কবিতার অনুষ্ঠান হয় সেখানেই শ্রদ্ধেয় প্রভাত চৌধুরীর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ
যিনি আজকে আমার প্রভাতদা, আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। আমার বানান ভুল হলে ভীষণ বকেন...
১৫) তোমার কী মনে হয় web.mag, print media কে একসময় অতিক্রম করতে সক্ষম হবে?
➤ সে তো করবেই।কালের প্রভাবকে তো অস্বীকার করা যায় না।আগে তো আমরা চিঠি পড়তাম।চিঠি আসতো।
কুশল বিনিময় হতো তার মাধ্যমে। সুখ-দুঃখের আদান প্রদানেরও মাধ্যম ছিল চিঠি। কিছু অফিসিয়াল চিঠি পত্র ছাড়া সবই তো এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমাদের ধৈর্য কম জীবনযাত্রায় ব্যস্ততা বেড়েছে, সে জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি কোনো সহজ মাধ্যম পাই তবে আমিতো তাকে গ্রহন করবোই।তাই প্রিন্টমিডয়াকে গ্রাস করছে অনলাইন মিডিয়া। সময় তার নিজের জায়গা নিজেই তৈরি করে নেয়।
১৬) এখন তরুণ প্রজন্মের অনেক কবিরা অজস্র কবিতা লিখছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশও হচ্ছে। কিন্তু তারপর আর কবির হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না এমনকি কবিতাগুলোও না। তোমার মতে এর কারণ কী?
➤এর অন্যতম একটি প্রধান কারণ হল প্রকৃত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব তা সেটা সামাজিক ভাবেই হোক বা সরকারি ভাবে।
সোসাল মিডিয়ায় আমরা লক্ষ করি সম্ভাবনার কলম নিয়ে অনেক নতুন মুখ এগিয়ে আসছে। কিন্তু,তাদের অধকাংশের মাথাকে সারাক্ষণই গ্রাস করে রাখে অর্থনৈতিক চিন্তা।এটা তাদের কাছে একটা প্রতিবন্ধকতা।
তাদের কাছে সাহিত্যের থেকে ভাত রুটির তাগিদটাই বেশি। এইটি আমি অনুভব করি খুব। আবার কিছু শখের তাগিদে আসে দু-চারটা কাগজে লেখা বেরোনোর পর তাদের শখও কমে যায়...
১৭) চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এতে কি কবিতার উন্নতি হচ্ছে? এ বিষয়টিকে তুমি কিভাবে দেখো?
➤দ্যাখো,পুরস্কার দিয়ে অনুপ্রাণিত করা এক অর্থে ভালো। তবে, সেভাবে কবিতার প্রকৃত উন্নতি হচ্ছে বলে আমার মনে হয়না। তার কারণ সব সময় যোগ্য মানুষটিই পুরস্কৃত হচ্ছে এমনটি নয় তার মধ্যে অনেক বেনোজল ঢুকে যায় এটা সর্বজন বিদিত, আমরাও আমাদের চার পাশে তা প্রত্যক্ষকরি।
কিছু মানুষ সত্যিই তার যোগ্যতার জন্য অবশ্যই সন্মানিত হচ্ছে,তাদের কাজের কাছে গেলে কবিতার কিছুটা উন্নতি আমরা বুঝতে পারি।
বাকিটা বেনোজলের নোনা ঢেউয়ে ভিজে যায় আর আমরা হাওয়ায় তরোয়াল চালিয়ে যুদ্ধ জয়ের কথা ভাবি। আবার কোনো কবিকে পুরস্কার দিয়ে তার স্বকীয়তাকে শৃঙ্খলিত করা হয়। কিছু কিছু কবিতার বইয়ে কবিতার শরীর নেই - শরীরে প্রাণ নেই তবু
সেগুলিও অনায়াসে পুরস্কৃত হচ্ছে। এগুলো ঠিক পাটকাঠি দিয়ে সাঁকো গড়লে যেমন হয়!
১৮) তোমার একক কাব্যগ্রন্থ আছে ২টি । নামগুলো, প্রকাশকাল আর প্রকায়নার নামগুলো একটু বলো। এই কাব্যগ্রন্থগুলির মাধ্যমে বা তোমার কবিতার মাধ্যমে তুমি পাঠকদের কি বার্তা দিতে চেয়েছো?
➤আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "নৈঃশব্দ্যের বাতায়ন" কোনো প্রকাশনা নয়। প্রকাশক ছিলেন কৃষ্ণকিশোর কবিরাজ ( বিষ্ণুপুর) আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় মানুষ। আমার লেখা পড়ে ওনার খুব ভালো লাগতো তাই ব্যাক্তিগত খরচায় এটি ছিলো তার আমার প্রতি ভালোবাসার উপহার। প্রকাশ অনুষ্ঠানটি হয়েছিলো ২০০৫ সালে শ্রদ্ধেয় কবি বিকাশ দাশ এর হাতদিয়ে। বিষ্ণুপুর কর্মচারী ভবনের সভাগৃহে
বহু গুনিজনের সমাগমে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "একটি নির্বাক শব্দবৃত্ত" এটি বইতরনী প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত
আমার খুব প্রিয় মানুষ অরিজিৎ চক্রবর্তীর হার্দিক সহযোগিতায়। প্রকাশকাল ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ কলকাতা প্রেসক্লাবে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী পল্লব কীর্তনীয়ার হাতদিয়ে।
একজন সমাজসচেতন নাগরিক হিসেবে মানবিক মূল্য বোধের জায়গা গুলিকে সংরক্ষণের বার্তা।
আমাদের মেরুদণ্ড হোক নমনীয় কিন্তু ঋজু...
১৯) তুমি কী বিশ্বাস করো কবিতা লিখে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব?
➤এটা আগে সম্ভব হতো বা ছিলো । নজরুলের কবিতায় " কারার ঐ লোহ কপাট..." প্রভাবিত হয়ে জেল খানায় আন্দোলন হয়েছিলো। এখন ব্যাপারটা অন্যরকম,ধরো কারো একটি ভালো কবিতা শুনে হয়তো অনেকে হাততালি দেবে বাহবা দিতেপারে কিন্তু সেই ভাবনাকে তাদের কর্মজীবনে হয়তো কখনো প্রয়োগই করবে না। কেনো না বর্তমানে মানুষ যাই করুক সচেতন ভাবেই করে অবচেতনে করে না।
আবার এমনটাও তো দেখি, কেউ একটি কবিতায় দারুণ দারুণ লাইন ব্যবহার করছে অথচ তার ব্যবহারিক জীবনের সাথে তা মেলেই না। সেটিও তো পাঠক বা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।
অর্থাৎ কবিতা লিখে বা কবিতায় নতুন করে বলে মানুষের জাগা ঘুমকে ভাঙানো ভার,এবং তা অত্যন্ত কঠিনও।
২০) কবিতায় জটিলতা বিষয়টি এবং ভালো কবিতা বলতে তোমার মতামত কী, আমাদের পাঠকদের কিছু বলো।
➤আমার মত হল কবিতায় জটিলতা ও ভালো কবিতা, এই দুটিই আমার কাছে আপেক্ষিক।
কেন না, আমি হয়তো সেই চিন্তা বা বোধের জায়গায় পৌঁছাতে পারছি না তাই আমার কাছে জটিল।
আর কবিতায় ভালো বা খারাপ সেভাবে বলা যায় না। আমার কাছে যেটা ভালো সেটা অন্যের ভালো না লাগতে পারে।প্রত্যেকেই তার নিজস্ব এঙ্গেল থেকে বিচার করে।
কবিতার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিক ভাবে স্থাপন করাটিই একজন কবির প্রকৃত কাজ।
২১) কার্তিক দা, তুমি তোমার পাঠকদের কাছে কী প্রত্যাশা করো ?
➤কবিতা গুলি পড়ে তাদের মতামত দিয়ে আমাকে শুধরে দেওয়া -
আমার ভাষায় বোতামখোলা কমেন্ট...
২২) কার্তিক দা আমাদের এবং সকল পাঠকদের কাছে তোমার বার্তা---
➤বর্তমান সময়ে অর্থাৎ আমাদের এই সিরিয়াস লাইফস্টাইলে কবিতার খুব প্রয়োজন মনে হয়। কেননা কবিতা আমাদের যে মননটি উপহার দিতে পারে তা খুবই অমূল্য। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমি তার প্রয়োজন অনুভব করি।আর এই কাজটি তুমি বা সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন যে ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছো তার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোটো করবো না।আমি জানি তুমি তোমার কাজের জায়গায় কতোটা মনোযোগি। আশা রাখি আগামীতে আরো ভালো রূপ দেখতে পাবো এই ওয়েবজিনের।
তাই অনেক ভালোবাসা রাখলাম।
কবিতা পড়ুন, কবিতার সঙ্গে কিছুটা হলেও সময় অতিবাহিত করুন।
মুখোশ না খুলে রাখলে আমরা আমাদের স্বরূপ দেখতে পাবো না।
কার্তিক ঢক্-এর কবিতা দিলাম--
। পেরেক ।
যে মাশরুমটির নীচে আমি ভাতঘুম দিই
তার চুড়িতে বেহাগ বাজে না!
সমস্ত স্বরলিপি জুড়ে নোনা জলের বুদবুদ পাখনায় বিষাদ মেখে মাছ খেলা করে জলের শূন্যতায়...
বাইরে কোকিল গাইছে, সবুজ হারমোনিয়ামে ভ্রমরের মেন্ডোলিন ঝরনা
প্রজাপতিদের রঙিন হাততালি - দুপুরের নীল আকাশ জুড়ে...
আমার ঘুমে পেরেক পিঠছে অ-সফল স্বপ্নের বাদ্যযন্ত্রের হাতুড়ি !
। নদীর বর্গক্ষেত্র ।
নদীটির বর্গক্ষেত্র জুড়ে বিদ্যুৎ খেলা করে-
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে চায় যে যুবক হরিণ
মৃত্যুকে নিতে চায় বোতামবিহীন তৃষ্ণার সিক্সপকেটে।
চাঁদের অন্তঃসলিল স্রোত নিয়ে যায় বদ্বীপঘেরা অন্ধকার উপকূলীয় চোরাকুঠুরিতে--
আমাজনি ভালোবাসার গন্ধে রতি-বিষন্ন
নাইটল্যাম্পের ব্লু-চোখে ঘন হয় ঘুমের কাজল।
রাতের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে হলুদ বাঘ--
উজ্জ্বল চামড়ার শ্বেত ভল্লুক।
চিড়িয়াখানার জাঁকজমক আলো নিয়ে ঝলমল করে চাঁদের বর্গক্ষেত্র --
খাঁজে খাঁজে মহাকর্ষীয় বিদ্যুৎশিখা...
। ধূসর ট্রাউজার।
আলগা বাঁধন থেকে বিরহ-গান ভেসে এলে
অবয়বে দোলা খায় ধূসর ট্রাউজার।
কুলুঙ্গির প্রদীপ কাঁপে ভুষাকালি মাখা
দুহাতের চাঁদ হেঁটে যায় অমাবস্যার বাতায়নে...
কী দিয়ে গোপন করি অন্ধকার আসবাব!
কালো বেড়াল চেটে খায় ফোটানো দুধের বাটি
ঘড়ির চৌকিদারিতে নির্মম কাঁটা।
সুতো থেকে খসে পড়ে সুচ-- রক্তাক্ত হয় বেকুব করবী...
(প্রকাশিত কবিতাপাক্ষিক শারদ সংখ্যা ২০১৯)
কার্তিক ঢক্-কে সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের তরফ থেকে অনেক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রইল। তুমি তোমার ব্যস্ততার ফাঁকেও আমাদের এবং তার পাঠকদের জন্য তার মনের কিছু কথা শেয়ার করলেন। এই পরিস্থিতিতে ভালো থেকো।সুস্থ থেকো।