Thursday, May 7, 2020

মৌমিতা পাল

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... 
দ্বিতীয় বর্ষ।


রুরু
মৌমিতা পাল 

যা বলার এখনি বলে নিই।আনন্দে ডুবে গেলে চুপ করে যেতে হয়।বোধ আর বিষণ্ণতার আড়ালে আমাকে বরাবর গ্রাস করেছে আনন্দই।নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু করি , আর যেসব অসার ঢক্কানিনাদ তারপর আরো বেশী করে মনে হয় মুছে ফেলি যাসব লিখেছি এতদিন।স্তাবকদের ভীড়ের মাঝেও সেদিন প্রাসঙ্গিকভাবে চিনে নিয়েছিলাম কোন কোন স্নেহ।মানুষের মালিন্য আমাকে বিমর্ষ করে।ঔদ্ধত্য , উচ্চৃঙ্খলতাকে আমি ঘৃণা করি।ইচ্ছা করে প্রতিটা আঘাতের কিংবা অনুশীলিত ছলের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিই আলেপ্পোর মিউজিয়ামে রাখা ফিশারম্যানের ছবিটা।ছবিটা হামুরাবির সময়কালের, রাজা জিমরিলিমের মারীর প্রাসাদের অখণ্ড দেওয়ালচিত্র।ব্রাউন পশ্চাৎপটের ঠিক বৈপরীত্যে কালো বর্ডারের মাঝে সেই জেলের শারীরিক বিভঙ্গ আঁকার যে শক্তিশালী শৈলী তা আমাকে নীরবে চিনিয়েছিল শৈলীর অতিরিক্ত প্রগাঢ় জীবনকে। আমাকে মোটামুটি অনুমান করতে পারে সেও জানে না , সময়কে আমি বিস্তর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি অসময়ের মতলব বানচাল করে।সাফল্য আর যাই হোক আমাকে কখনো যেন উন্নাসিক না করে তোলে।উন্নাসিকদের মগজ কোন এককালে প্রখর হলেও , শেষমেষ ভোঁতাই হয়ে যায়।ধারটা যেন নাকে নয় , মগজেই থাকে।

আপন মনে বকে যাচ্ছিলাম এসব বাগবাজার ঘাটে দাঁড়িয়ে রুরু।ঘরে ফিরছিলাম।আমার চারপাশে প্রীতির ঠিক পাশে পাশেই জড়ো হচ্ছিল শত্রুও।এখন ঠিক চিনে নিতে পারি , ইনটিউশনটা ক্রমশ আরো প্রবল হয়ে উঠছে বলেই।এই সময়গুলোতেই ঘরে ফেরার তাগিদ প্রবল হয়ে ওঠে।মা মাছ ভাতের গরাস মেখে মুখে তুলে দেবে ঘরে এলেই।বাগবাজার ঘাটে তখন কোন কোন জন শ্রাদ্ধ করছিল ।যেখানে মানুষ শাখা ভাঙ্গে সেখানেই নতুন শাখা পরে কোন জন।এক ঘাটেই সারি সারি পসরা সাজিয়ে বসেছিল ব্যবসায়ীরা।ভীড় হয়েছিল অনেকেরই।কেউ পুজো দেবে , কেউ শ্রাদ্ধ , কেউ শুধুই স্নান।ঘাট লাগোয়া চক্ররেলের স্টেশনে মিলেনিয়াম পার্ক থেকে ফিরছিল প্রেমিক যুগল।আমি তোর সঙ্গে দেখা না করে তোর শহর থেকে একলাই ফিরছিলাম।নৌকা থেকে ছোট ছোট মাছ নামাচ্ছিল কোন জন।অন্য দিন হলে কিনতাম।আজ না কিনেই ঘরে ফিরব ঠিক করলাম।কতদিন তোর সঙ্গে মাছ নিয়ে ঝগড়া করিনি।অন্যমনস্কভাবে পথে দেরী করে ফেলছিলাম।হঠাৎ খেয়াল হল আজ নীলমের আমার ঘরে আসার কথা। জানি না , ও কেন আসতে চেয়েছিল ! তবে মুর্শিদকে জানাইনি এসব।প্রতিটা ব্যক্তি মানুষের আলাদা অস্তিত্ব থাকে জীবনে।একটার সঙ্গে আর একটাকে না গুলিয়ে ফেললেই হল।

জীবনের ক্লেদ ক্লান্তিতে যখন বেঁচে থাকাকে বড়ো ভুঁইফোঁড় প্রবণতা মনে হয় যখন , তখন সন্দেহ আর চারপাশের ব্যভিচারকে অতিক্রম করে রুরু তোর ভালোবাসায় ফের অর্কেস্ট্রা শুনছি।বর্ষা নয় , হেমন্ত প্রিয় ঋতু আজকাল।রুরু , তোর আমার বাইরের যোগাযোগটা কোনদিন নিভে গেলেও একরোখা কবির মতো প্রেম লিখেই যাব আমৃত্যু।উপনিষদে বলা আছে - 
" অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যে অবিদ্যামুপাসতে
ততো ভূয়ো ইব তে তমো য উ বিদ্যায়াং রতা।"
দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'গীতাপাঠ' গন্থে এর টীকাভাষ্যে বলেন -'যাহারা অবিদ্যার উপাসনা করে তাহারা অন্ধ তিমিরে প্রবেশ করে।তাহা অপেক্ষা আরো ঘোরতর অন্ধ তিমিরে প্রবেশ করে যাহারা বিদ্যায় রত।' আমি তাই বিদ্যা কিংবা অবিদ্যার দ্বন্দ্ব নয় ভালোবাসাকে সম্বল করেছি , জ্ঞানকে পাথেয় করেছি , কর্মকে সঙ্গী আর যোগকে অভ্যাস।  বোধ আর অভিজ্ঞতা আমার গুরু।পথই ঘর , ঘরই পথ।তাই রুরু তোকে ভালোবাসতে আমার তোকেই লাগবে না। গোটা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তোকে পেয়ে বর্তে যাক , আমি একটা পাহাড় জাপ্টে দ্বীপান্তরে যাবই।ঈশ্বরের প্রেমিকা বলেই রুরু, তোর প্রতি আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা কোনটাই এ জীবনে যাওয়ার নয়।
                                                            ইতি
                                                        অপ্রেমিকা

বিশ্বজিৎ দাস

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... 
দ্বিতীয় বর্ষ।


ভানুমতীর খেল, প্রিয় বন্ধু বুদ্ধদেবকে
বিশ্বজিৎ দাস


জলের ভেতরের অস্থিরতা না বুঝে
অনেকেই দৃশ্যত মিশে যাই ঢেউয়ের তালে

জল শুয়োরের বাচ্চা বলে না; তাই
বেধে রাখা এই গায়ে শ্যাওলারা চুমু খায়

দুমদাম তরুণ কবি, আনে ডিসকোর্স
ডিম ফোটানোর জন্য যথেষ্ট তাঁ দেয় কি?

আপনি শালা বহুত ধুরন্ধর। সঙ্গিনীর
ঘাড় লাগোয়া চুলে চুলবুলি কাটেন, নখে

লেগে থাকে নিঃসরণের আবেগ; আর
সেটা দিয়েই লিখে যান সিনিয়র কবিতা!

সেরকম অদ্ভুত দাঁড়ি
কামনার ঘরবাড়ি সাজিয়ে রেখেছেন বেল ফুলে

থ্যাপ্পড় খাননি বলে, এখনো আত্মহত্যার
গল্প শুনিয়ে করেকম্মে খাচ্ছেন এবং বাকিটা

ব্যক্তিগত জানিয়ে বলেছেন; এসো ডার্লিং
এই নেভানো আলোয় ধূর্ত জলাশয়ের মতো
আমরাও যাই মিলিয়ে...ফুটুক লোক দেখানো

পদ্ম। জমে যাক আমাদের আশা মেটানো ঘুম
ঘুমের মধ্যে আসুক ওর্গাজম। সেই সুখে আজ

আবারও লিখব ঠুকে, কোনো এক তরুণ কবিকে
কিচ্ছু হচ্ছে না বুঝলে? ফলো করো আগে আমাকে

তরুণ কবিও কম যায় না।
         শালা, বাস্টার্ড মাল
এবার আসুন; দেখাব ভানুমতীর খেল!

রুমা ঢ্যাং অধিকারী

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... 
দ্বিতীয় বর্ষ।


রাবণীয় পাঁজি 
রুমা ঢ্যাং অধিকারী

১/
করিডোরের ঘূর্ণিপাকে কেটে যাচ্ছে
                  এক একটি বিভূতি রাত
স্প্রেডশিটের জোনাল রিভিউ অনুযায়ী
ত্রিস্তরীয় গরাদের দরজায় ক্ষীণজীবীরা
               বারেবারে চোখ পাতে, হাতও নামায় 

তবু ফিরে দেখা এই ইকির মিকির চামচিকির ঘনিষ্ঠতায় 
কখনও চামর ঘরাণা 
   মন্ত্র ধ্বনির মতো বাজে 

২/ 
ঘোড়ার দীর্ঘপথে আয়ুকাল ভাঙে অন্তর্বাষ্প
আকালের মৃতচাহিদার কাছে
ক্লান্ত মনে হয় খিদে

বিষণ্ণ কোকিলের কাছেও যেমন ক্লিশে এই অবসরযাপন 
সামাল দিচ্ছে 
ভুলে যাওয়া শার্টের ইশারা

ফুটো সম্মোধনের অন্দরমহল নিয়ে
বৈকুণ্ঠপুরী আজ সন্দিহান
তবু এমন কোন কৌশল জানা নেই 
               গুণপনার পরিশিষ্ট মহোৎসবে

চঞ্চল নায়েক

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... 
দ্বিতীয় বর্ষ।

অশৌচকালীন ডাইরি --১৭
চঞ্চল নায়েক

নিমগাছের আত্মকথনে মৃতরা জড়িয়ে আছে
     একারণেই তার ছায়া এত শীতল 
শীতের চাদর মুড়ে যে বিদায় আসে
তাকে ফাগুনের কৃষ্ণচূড়া কখনো দেখেনি

সূর্যস্নান সেরে সে সাধক অমরত্বকেও ধরতে পারে না
সেখানে সান্ত্বনা দিয়ে কিছু লেখা বোকামি
আমাদের নির্ধারিত গৃহ আছে
      সেখানে ফিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক 

অশৌচ রেখে যায় প্রতিটি মানুষ 
রেখে যায় কিছু ভাসা ভাসা দাগ...
 এই যে এতো এতো ব্যস্ততা 
তা কেবলই একটি নির্জন ঘুমের আয়োজন মাত্র

যতটুকু বাতাস শুষেছি নিমযাত্রায় তারই ঋণমুক্তি
ল্যাম্পপোস্ট সেভাবেই রয়ে যাবে
শুধু দেখে নেবে আলোকিত অধ্যায়টুকু...

রাখী সরদার

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... 
দ্বিতীয় বর্ষ।


মোক্ষ ও লোভী বাঘ
রাখী সরদার

জানা ছিলনা ...

নিসর্গে রাত নামলেই হয়ে পড়ব বন্য

শরীরে বাঘের ডোরাকাটা ছল পাতা,আর
আমার দুচোখে শুধু হরিণের চলাচল

গর্জে উঠছে রতিঈর্ষা,অন্ধকারে লাফ দেয়
লালিত নখের ধার।মাংসাশী তৃপ্তিতে
কখন ঘুমিয়েছি জানিনা...

একটা ক্ষুধার্ত কাকের ডাকে জাগি,একি!

কয়েকজন রমণীর চোখের ছুরিতে
আমি আগাগোড়া খণ্ড খণ্ড।তাদের ক্ষমাসুন্দর
হাতে ঘুরছে ফিরছে আমার নির্বাণ 

কেবল পাশের কাঁটাঝোঁপে বিঁধে আছে
আমার রক্তজবা হৃদয়...