Sunday, August 22, 2021
| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |
Wednesday, August 18, 2021
বিশেষ সংখ্যা~অনিন্দ্য রায়
ত্রিওলে/ ট্রিওলেট হল আট লাইনের এক স্তবকের কবিতা, যার প্রথম লাইনটির চতুর্থ আর সপ্তম লাইনে এবং দ্বিতীয়টির অষ্টম লাইনে পুনরাবৃত্তি ঘটে। অন্ত্যমিল-বিন্যাস ক খ ক ক˚ ক খ ক˚ খ˚ ( ˚ চিহ্ন পুনরাবৃত্তি বোঝাতে ব্যবহৃত)।
এর জন্ম মধ্যযুগীয় ফরাসি কবিতায়, ফ্রান্সের উত্তরভাগে পিকার্দি অঞ্চলে।
বাংলায় এই ফর্মের প্রথম রচয়িতা বীরেন্দ্রচন্দ্র বসু, তিনি এর নাম দিয়েছিলেন তেপাটি।
১
স্নানের দিকে জানলা খুলে রাখি
জল এখনও কলেজ পড়ুয়া তো
কুয়োর পাড়ে চোখেরই গুস্তাকি
স্নানের দিকে জানলা খুলে রাখি
লেবুগাছের আড়াল থেকে নাকি
উনিশ-কুড়ি দেখেদেখেই স্নাত
স্নানের দিকে জানলা খুলে রাখি
জল এখনও কলেজ পড়ুয়া তো
২
বিকেল ভাঙছে আজও
মদে ফ্রস্টেড কাচে
উদাসীন এস্রাজও
বিকেল ভাঙছে আজও
যেমন ইচ্ছে সাজো
মাধুর্য ঠিক আছে
বিকেল ভাঙছে আজও
মদে ফ্রস্টেড কাচে
৩
পিছুডাক
ফিরে যাই
মুনস্ট্রাক
পিছুডাক
উড়ে যাক
স্মৃতি ছাই
পিছুডাক
ফিরে যাই
৪
দীঘির পাড়ে কাদের বাড়ি?
রোদের ছাদ ও ছায়ার বেড়া
পেছনে তার মেঘের সারি
দীঘির পাড়ে কাদের বাড়ি?
আমরা কদিন থাকতে পারি?
আমরা দুজন শ্মশান-ফেরা
দীঘির পাড়ে কাদের বাড়ি?
রোদের ছাদ ও ছায়ার বেড়া
৫
মুখোমুখি সারাদিন বসে আছ চুপ
আমাদের নীরবতা ছিঁড়ে দেব কাকে?
ক্রমাগত পিন প’ড়ে মাঝখানে স্তূপ
মুখোমুখি সারাদিন বসে আছ চুপ
কাগজের আঁকিবুকি বোবা অনুরূপ
ফাঁকা রেস্তোরাঁ জুড়ে কে যেন কু ডাকে
মুখোমুখি সারাদিন বসে আছ চুপ
আমাদের নীরবতা ছিঁড়ে দেব কাকে?
শ্রী মহাদেব
৬
শীত ছিল চিৎকৃত
গান একা পিকনিকে
কেউ কাছে যায়নি তো
শীত ছিল চিৎকৃত
গান আরও অভিভূত
যায় মোহনার দিকে
শীত ছিল চিৎকৃত
গান একা পিকনিকে
৭
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি ভোর থেকে
মাথা গোঁজার কিছুটি নেই শুধু ব্যাঙের ছাতা
তলায় ঢুকে পড়ছি সাথে ব্যাঙ্গমিকে ডেকে
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি ভোর থেকে
অঝোর জলে আফ্রোডিজিয়াক মিশিয়েছে কে?
একটি ফোঁটা জিভে ছুঁতেই কাণ্ড ঘটে যা তা
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি ভোর থেকে
মাথা গোঁজার কিছুটি নেই শুধু ব্যাঙের ছাতা
৮
আলোরা নাচে আর ছিটিকে পড়ে রাত
পায়রা উড়ে যায়, কাঁপছে থিয়েটার
টিকিট না কেটেও এসেছি দৈবাৎ
আলোরা নাচে আর উল্টে পড়ে রাত
আমাকে দেখে তুমি মঞ্চে নাড়ো হাত
জানি না প্রয়োজন আদপে কী এটার
আলোরা নাচে আর ছিটকে পড়ে রাত
পায়রা উড়ে যায়, কাঁপছে থিয়েটার
৯
কবুতর নিয়ে লেখা সোজা
কঠিন সেটাকে মুছে ফেলা
(হয়তো করতে পারে ওঝা)
কবুতর নিয়ে লেখা সোজা
আজ তাকে ধরেই হল যা
বেজে ওঠে ছ’টি ভুভুজেলা
কবুতর নিয়ে লেখা সোজা
কঠিন সেটাকে মুছে ফেলা
শ্রী মহাদেব
১০
আমারও পতাকা ছিল কোনও একদিন
গুমোট শহরে মামুলি, অনালোচিত
ওড়াতাম রোজ বেহায়া, অসমীচীন
আমারও পতাকা ছিল কোনও একদিন
প্রতিবেশী ছাদে কেউ কি দৃষ্টিহীন
এসে দাঁড়াত ও সংকোচ খুলে দিত
আমারও পতাকা ছিল কোনও একদিন
গুমোট শহরে মামুলি, অনালোচিত
১১
নজরুলগীতি
ছুঁতে পারি না তো
চোখে-চোখ রীতি
নজরুলগীতি
নীল শাড়ি স্মৃতি
স্থির, অভিজাত
নজরুলগীতি
ছুঁতে পারি না তো
১২
নিজেকে মেল করার মতো সারা দুপুর
সারা দুপুর, সারা দুপুর মেলানকলি
মনে কেবল একটি লেখা ঘুরছে দু ফু-র
নিজেকে মেল করার মতো সারা দুপুর
উপন্যাসের বিশাল খাটে একলা উপুড়
পড়ছি শুয়ে শূন্য পাতার গ্রন্থাবলী
নিজেকে মেল করার মতো সারা দুপুর
সারা দুপুর, সারা দুপুর মেলানকলি
১৩
একটি পানপাতা, ইচ্ছে ছিল শুধু হাত রাখার
অথচ সে নিজেই ফস্কে উড্ডীন শহরময়
বোঝে না প্রেম বলে কাকে ও কার নাম বলাৎকার
একটি পানপাতা, ইচ্ছে ছিল শুধু হাত রাখার
আমারও একা লাগে, বরোজে ঢুকি তাই নির্বিকার
অচেনা গাছগুলি শরীর ছুঁয়ে যায়, পুলক হয়
একটি পানপাতা, ইচ্ছে ছিল শুধু হাত রাখার
অথচ সে নিজেই ফস্কে উড্ডীন শহরময়
১৪
হাতের পানীয়ে অশান্তিগুলো একটা পোকার মতো
ভাসছে, তুমিও খাচ্ছ না, শুধু ধরে আছ ক্যাজুয়েলি
দেখি কব্জিতে সদ্য বাতিল সম্পর্কের ক্ষত
হাতের পানীয়ে অশান্তিগুলো একটা পোকার মতো
তোমার গ্লাসে যে আঙুল ডোবাব অতটা অসংযত
হতে পারছি না প্রথম আলাপে, পোকাটা কীভাবে ফেলি!
হাতের পানীয়ে অশান্তিগুলো একটা পোকার মতো
ভাসছে, তুমিও খাচ্ছ না, শুধু ধরে আছ ক্যাজুয়েলি
Sunday, August 15, 2021
বিশেষ সংখ্যা~আলোক মণ্ডল
বন্দিকে পাটের তৈরি কাপড় পড়তে দেওয়া হত যাকে "পানিশমেন্ট-ড্রেস" বলা হত। সেই পাটের ড্রেস পরে নিতম্বের ফাটা জায়গায় পাটের কাপড়ের ঘষা লেগে ঘা হয়ে যেত। এরকম শতশত
অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বটুকেশ্বর দত্ত যেমন পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তেমনি কত বন্দী অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে জেল প্রশাসন একবার এক সঙ্গে ৭৮ জন বন্দী কে এক সঙ্গে ফাঁসি দিয়েছিল। কত যে নির্মম অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছিলেন তার হিসেব আর এক নিবন্ধের সূচনা করবে।
সেলুলার জেলে অবিভক্ত বাংলা থেকে ১৯১০ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৩৭০ জন, উত্তর প্রদেশ থেকে ২০ জন, অবিভক্ত পাঞ্জাব থেকে ৮৪ জন,বিহার থেকে ১৮ জন, দিল্লী থেকে ১ জন, মাদ্রাজ থেকে ৩ জন এবং মহারাষ্ট্র থেকে ৩ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী জেল খেটেছেনআমাদের জেলা,বাঁকুড়া থেকে মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় সেলুলার জেলে বন্দি ছিলেন বিষ্ণুপুর ডাক গাড়ি লুঠের অভিযোগের শাস্তি স্বরূপ।সাত বছরের জন্য তাঁর দ্বীপান্তর হয়েছিল। তিনি ১৯৩৭ সালে জেলের অভ্যন্তরে আমরণ অনশনেও যুক্ত ছিলেন।১৯৩৮ সালে জেল মুক্ত হয়ে ১৯৩৯ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হন এবং পরে দল ত্যাগ করে মাকর্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং জেলা সম্পাদক হন। কিন্তু সেই পার্টিই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে স্বাধীনতা সংগ্রামীর দের সম্মান জানিয়ে ভারত সরকার যে "তাম্রপত্র'' দেয় তা গ্রহণের অপরাধে।শেষ জীবন তাঁর চরম দারিদ্র্যে কাটে অবহেলায় ও বিনাচিকিৎসায় মারা যান।
যুগান্তর দলের সদস্য , বিষ্ণুপুর ডাকলুঠের সংগে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিমল কুমার সরকারের দীপান্তর হয়। তিনি সেলুলার জেলে বন্দী থাকেন ১৯৩৩ সালে,৫ বছরের জন্য। তিনিও জেলে দ্বিতীয় "হাঙ্গার স্ট্রাইক"-র সংগে যুক্ত ছিলেন, মুক্তি পান ১৯৩৮ সালে। পরবর্তি সময়ে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন এবং ১৯৩৬ সালে বাঁকুড়া জেলাপার্টির প্রথম সম্পাদক হন।
বে-আইনী অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখার জন্য বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা দীননাথ কর্মকারের ছেলে ভবতোষ কর্মকারকে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ সালে ৪ এপ্রিল মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি করে এবং পরে তাঁকে সেলুলার জেলে স্থানান্তরিত করে। তিনি সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পান ১৯৩৮ এ তারপরেও তাঁকে অন্য জেলেই থাকতে হয়।
মেছুয়াবাজার বোমা ষড়যন্ত্র মামলায় সুধাংশু দাশগুপ্তের ৯ ডিসেম্বর ৫ বছরেরর জেল হয় জেলবন্দি অবস্থায় সেলুলার জেলে বিমল সরকারের সাহচর্যে এসে সুধাংশু দাশগুপ্ত কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং জেল থেকে ১৯৩৫ এ মুক্তি পেয়ে বাকি জীবন বিষ্ণুপুরে সংগঠনের কাজে কাটিয়ে দেন, সে হিসেবে তিনি এই জেলারই মানুষ।
একই ভাবে বিহার থেকে সেলুলার জেলে বন্দী প্রমথনাথ ঘোষও পরবর্তী ১৯৩৭ এর পর মুক্তি লাভ করে কর্মক্ষেত্রে হিসেবে বাঁকুড়া জেলাকেই বেছে নেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সংগে যুক্ত হন।
আমরা অনেকেই খুব আবেগ প্রবন ও গল্পবাজ তাই গল্পের গরু গাছেও চড়ে! তাই মনীষীদের নিয়ে সহজেই গল্প ছড়িয়ে পড়ে। এমনই এক গল্প সেলুলার জেলবন্দি বীর সাভারকারকে নিয়ে। বলা হয়, তিনি সেলুলার জেল ভেঙে পাহাড় প্রমান প্রাচীর ডিঙিয়ে ১০০০ মাইল উত্তাল সমুদ্র সাঁতরে পালিয়ে এসেছিলেন ভারতের মূল ভূখন্ডে। এরকম গপ্প কিন্তু ডাহা মিথ্যা তার কোন তথ্যও নেই।আসলে,১৯০৯ সালে ১ জুলাই মদনলাল ধিংড়া বৃটিশ প্রভু কার্জন ওয়াইলি কে লন্ডনে গুলি করে হত্যা করেন সেই সময় ভিনায়ক দামোদর সাভারকার বোমা তৈরীর মেথড নিয়ে জাহাজের কুক হয়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন কিন্তু ধরা পড়ে যান। বৃটিশরা তাঁকে বন্দী করে জাহাজে ভারতে চালান করার সময় দামোদর ১৩ মার্চ ১৯১০ এ জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে ফ্রান্সের পোর্ট মারসেল্স বন্দরে পৌছে আত্মগোপন করেন, ফ্রান্স পুলিশ তাঁকে আবার ধরে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেয়।১৯১১ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি কার্জন হত্যায় যুক্ত থাকার মামলায় এবং নাসিক ষড়যন্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সেলুলার জেলে বন্দি হন ৫০ বছরের জন্য।বৃটিশ সরকারের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি জেল মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন তারপর ১৯২৪ সালে বৃটিশ সরকার তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির প্রস্তাব দেয়, ইতিমধ্যে কংগ্রেস দল ভারতের ৭ টি রাজ্যে ক্ষমতায় এসে গেছে,সেটা ১৯৩৭ সাল,বিনায়ক দামোদর সাভারকার ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া শর্ত মেনে মুচলেখা( বৃটিশ বিরোধী কোন আন্দোলনে থাকবেন না,কোন রাজনৈতিক কাজ-কর্মে যুক্ত থাকবেন না শুধু সমাজসেবায় যুক্ত থাকবেন এই শর্তে।) দিয়ে সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পান।এই হচ্ছে তথ্য স্বীকৃত ইতিহাস। অথচ সেলুলার জেলের সামনেই যে পার্ক, তা সেটি তাঁর নামেই উৎসর্গীকৃত , পোর্টব্লেয়ার এয়ারপোর্টের নামও"বীর সাভারকার এয়ারপোর্ট" তাঁর নামেই অথচ নেতাজীর ১৯৪৩ এ বৃটিশমুক্ত আন্দামানে প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তার কোন স্বীকৃতি নেই! এমনকি তিন শতাধিক বাঙালী বীর বন্দিদের নামের তালিকা যা এতোদিন সেলুলার জেলের দেওয়ালে মার্বেল পাথরে উৎকীর্ণ ছিল তা প্রতিদিনই কোন এক অদৃশ্য কারনে কমতে থাকছে।যেমন আমরাও ভুলে যাচ্ছি বাঁকুড়ার ঐ সমস্ত বীরদের কথা, ক'জনই বা জানি তাঁদের সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে!









