Wednesday, January 6, 2021

শম্পা ব্যানার্জি-র ভ্রমণ-বাহিকতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   শম্পা ব্যানার্জি     
ভ্রমণ-বাহিকতা

বুদ্ধ যাত্রা (১ম পর্ব) 

ঠিক এখান থেকে বুদ্ধ যাত্রা শুরু। ক্লাস ফোরে পড়ি তখন। বাবা দুপুরবেলা এসে বল্লেন কৈরে, তোরা সুটকেস গুছিয়ে নে। চল বেড়াতে যাবো। মা, তখন ছাই মাখিয়ে আঁশ বঁটিতে মাছের কানকো কাটতে ব্যস্ত। আমার আবার মাছ কাটা দেখতে বড্ড ভালো লাগে। কেমন, মাছটাকে ছাইয়ে লেপে নিয়ে, মুড়ো আর ল্যাজা ধরে পেন্ডুলামের মতো বঁটির ওপর মাছটাকে ঘষে ঘষে আঁশ ছাড়াও। তারপর, পেট চিড়ে নাড়িভুঁড়ি, পটকা পিত্ত থলি। এবার কানকো, দাঁড়া, ল্যাজা কেটে ব্যাস 5 মিনিটে একটা চারা পোনা রেডি। কানকোর রঙ দেখেই মা বলে দিতো, মাছটা বাসি, টাটকা না তস্য বাসি। এই কানকোর রঙ লাল না হলেই মা আর বাবার ঝগড়া লেগে যেতো। তবু, বাবা কোনোদিনও মাকে বাজারে যেতে দিতেন না। ভাবতে অবাক লাগে এই মা আজ দশ বছর ধরে একাই বাজারে যায়। 
যাইহোক, আবার গল্পে ফিরে যাই। তবে, আজকের গল্পটা চলবে। দুপুর বারোটায় বাদামী রঙের লেদারের সুটকেস গোছানো শুরু। বাড়িতে অতিথি। কী লজ্জার ব্যাপার। যদিও, বাবার সেই বন্ধু পরিবার মাসখানেক করে থাকতেন আমাদের বাড়িতে গরমের ছুটির সময়। দিলীপ কাকু, সুন্দরবনের রাঙাবেলিয়ায় একটা স্কুলে পড়াতেন। ওঁর দুই ছেলে আর কাকিমা, পুরো গরমের ছুটিটা আমাদের  বাড়িতেই থাকতেন। এখনকার দিনে সপরিবারে মাসখানেকের অতিথি কেউ ভাবতেই পারবে না। মা, হাসিমুখে সবার হাতে সময়মতো খাবার তুলে দিতো। কোনোদিন বিরক্ত হতে দেখিনি। কিন্তু, সেদিন আমাদের হঠাৎ ভ্রমণের কথা শুনে দিলীপ কাকু আঁতকে উঠলেন। বললেন, "এখন কোথায় যাবো?" বোঝা গেলো আত্মীয় স্বজন ওনাদের অনেক আছে কিন্তু খাতির করার লোক নেই। যাইহোক, ওনারা সিন্ধান্ত নিলেন কাকিমার এক ভাইয়ের বাড়িতে থাকবেন, আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত। 
দুপরে, মাছ ভাত খেয়ে সেই সুটকেস, ব্যাগ গুছিয়ে আমি, মা, বাবা, বোন আর কাকুর পরিবার আর সাথে আরও দুই পরিবার সবাই মিলে রওনা হয়ে গেলাম। রাস্তায় শুনলাম, মায়ের এক বান্ধবীর পরিবারে দু'জন না যাওয়ায়, ওই মাসিমণির  হাজব্যান্ড মেসো বাবাকে বলেন তৈরি হয়ে নিতে। ব্যাস, আমরা নাকি গয়া যাচ্ছি তারপর  রাজগীর, বেনারস হয়ে ফিরবো দিন দশেক পরে। আমি, অবাক হয়ে শুনছি। রাতে ট্রেনে থাকবো। এটা আমার কাছে একটা থ্রিলিং আর ওদিকে কাকুর ছেলেরা বলে চলেছে, তুই কত লাকি। ধুর আমার ওসবে তখন কোনো কান নেই। খালি মায়ের হাসি হাসি মুখটা দেখে মনটা আনন্দে ভরে যাচ্ছিল। পরমা সুন্দরী মা আমার দিনরাত উনুনের পাড়ে বসে প্রায়শঃই রান্না করতে করতে চোখের জল মুছতো। জিগ্গেস করলে বলতো, "ও কিছু না। তোর দাদুর কথা মনে পড়ছে। অনেকদিন, বাবার চিঠি আসেনি তো তাই।" আসলে, এখন বুঝি সংসারের এই চাপ আমার অল্প বয়সী মাকে অনেক বেশি সহনশীলা করে তুলেছিলো। কেউ মাকে সাহায্য করতো না। মা, পিসি, কাকা, জ্যাঠতুতো দাদা, অতিথি সবার মুখেই  ঠিক সময়ে হাসিমুখে খাওয়ার তুলে দিত। আবার, জেঠুরা এলে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে খাওয়ার পরিবেশন। ঘুঁটে, কয়লার আঁচ, কাপড় কাচা, বাচ্চা মানুষ, রান্না বান্না করতে করতে মা হাঁপিয়ে উঠতো। তাই মায়ের মুখে হাসি দেখলে আমার আনন্দ হোত। তবে, এর মাঝেও মা, দিনরাত বই পড়তো। বাদলা দিনে কোলে গীতাঞ্জলি নিয়ে গান গাইতো, " আজ ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার। পরান সখা বন্ধু হে আমার।" আবার, সন্ধ্যে হলেই মায়ের কাছে পড়তে বসা। 
কথায় কথায় খেই হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ট্রেনটা দুলতে দুলতে শিয়ালদহ স্টেশনে ঢুকছে। লাল জামার কুলিরা জানলার কাছে এসে, হেঁকে যাচ্ছে, "কুলি, কুলি"। বাবা, ডাকছেন। এবার আমাদের নামার পালা।



Thursday, December 31, 2020

১-লাইনের কবিতা সংখ্যা≈ সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন::প্রচ্ছদ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   
প্রচ্ছদ ~ শম্পা ব্যানার্জি
আপনাকে পত্রিকার তরফ থেকে অশেষ ভালোবাসা____






































                                                                                                  

১-লাইনের কবিতা সংখ্যা≈ অভিজিৎ দাসকর্মকার

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   

অভিজিৎ দাসকর্মকার

সম্পাদকীয় নয় কিন্তু ---

১এক্কে ১
মসীহা বলেছিলাম, আপনার শব্দ ধ্বনিত হচ্ছে আঙুলের ছন্দে।

২ এক্কে ২
আপনার জন্মকথা, কিছুটা অসম্পূর্ণতা নিয়ে গেল কাচ ঘেরা গাড়িটি।

৩ এক্কে ৩
আপনার পায়ে যাদুকরের বাস,তাই আমরা মাঠের এপাশে নিজেরাও যুবরাজ।

৪ এক্কে ৪
আপনি ময়ূরভঞ্জ,সে-কারণে বেলা শেষে মানিক বাবুর বাড়ি গেলেন।

৫ এক্কে ৫
১ লাইনের কবিতা,আমি আপনি আর অনিন্দ্য রায়।

৬ এক্কে ৬
প্রতিটি কাজই সংরক্ষিত হচ্ছে কাগজের বয়াম ও হাটুই বাগানে।

৭ এক্কে ৭
কোনো ছবির সাথে ৪২ বয়কট করা মেলের সুদূর কোনো মিল নেই।

৮ এক্কে ৮
যারা একসাথে থাকলাম,সে, তাহারা এবং বাকিরাও পাশাপাশি রইলাম।

৯ এক্কে ৯
সারাটা বছর শুধু হারালাম,কুড়িয়েছি পিছন ঘোরা শব্দ আর ধ্বনি।

১০ এক্কে ১০
২০২১ মানে শুভ-ইচ্ছা,চমক আর সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন।


১-লাইনের কবিতা সংখ্যা≈ প্রভাত চৌধুরী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  

প্রভাত চৌধুরী

১ পঙ্ ক্তি-র ১০টি 


১. ফুলের উ-কার মুছে দিলেই ফল

২. তিথি মেনে যিনি আসেন না , তিনিই অতিথি

৩. অবচেতনে যে ময়ূরটি নাচে , অতিচেতনায় তার পায়ে নূপুর থাকে

৪. পোষা কুকুরকে পোশাক দিয়েই চেনা যায়

৫ . বউকথাকও পাখির ডাক কেবল বউরাই শুনতে পায় না

৬. ' বেতর ' এবং 'বেতার' -এর পার্থক্য আকাশপাতাল

৭. মা-এর কোনো তকমা লাগে না

৮. ফড়িং-এর সঙ্গে সারেং-এর যোগাযোগ জলসূত্রে

৯. ১টা বছরে ৬টা ঋতু , ঋত্বিক কতজন জানি না

১০. ঠিকমতো ফরমান করতে জানলেই সবকিছুই কবিতা হয়ে যায়

১-লাইনের কবিতা সংখ্যা≈ গৌরাঙ্গ মিত্র

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||   

গৌরাঙ্গ মিত্র

গৌরাঙ্গ মিত্রের এক লাইনের কবিতা


1) কানামাছি কানামাছি সাতে আছি, পাঁচেও আছি। 

2) কিন্তু প্রশ্ন হল কতগুলি মাঘ অবসান হলে শীত চলে যায়। 

3) অজ্ঞ বিজ্ঞ সর্বজ্ঞ সবাইকে প্রদক্ষিণ করে শীতল মৃত্যু। 

4) পলেস্তারা থেকে ঝরে পড়ছে সুন্দর কথামালা, 

5) ডিঙি নৌকো বেয়ে আপন খেয়ালে ভেসে যায় এক লাইনের কবিতা। 

6) লাস্ট ল্যাপ দৌড়ানোর সময় বুঝতে পারলাম এতকাল ভুল ট্র্যাকে দৌড়ে এসেছি। 

7) অঝোর নগ্নতায় বয়ে যায় নদী, মাঝি আর নৌকা আড়মোড়া ভাঙে ঘাটে। 

8) আমি কালো কালি দিয়ে আলো লিখছি রোশনাইয়ের আশায়। 

9) ঘাটে ঘাটে জল অক্ষরে লেখা থাকে নৌকাডুবির শোকগাথা। 

10) বাওরের ঘোলা জলে পাঁকাল মাছ, ফলুই মাছ ধরে আমাদের চেনা চাঁদ বেনে।