Friday, November 13, 2020

✪ দীপান্বিতা সংখ্যা ≈ অদিতি ঘোষদস্তিদার

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||    
দীপান্বিতা সংখ্যা














সম্পাদক~ অদিতি ঘোষদস্তিদার-এর অণুগল্প

আড্ডা নিউ জার্সি থেকে প্রকাশিত -ম্যাগাজিন অভিব্যক্তি- সম্পাদক


র‍্যাডিকাল

 ক্লাস টেনে কেমিস্ট্রি ক্লাসে আজ যৌগমূলক পড়াব

 রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে একটু ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম লেশন প্ল্যানটা

 এখানে পড়াতে গেলে আমাকে বাংলা প্রতিশব্দগুলো ভালো করে মনে রাখতে হয়নামেই ইংলিশ মিডিয়াম 

আগে গাড়িতেই আসতাম এখানে জেলাশাসক দপ্তরের আধিকারিক আমার কর্তাটিঅলোক

 আধিকারিক মানে যে অফিসার সেটাও হালে শিখেছি


হাঁটতে এই রাস্তায় মন্দ লাগে না আজীবন সেন্ট্রাল কলকাতার মেয়ে আমি

 বিয়ের পর কিছুদিন দক্ষিণে থাকলেও এই রাঙামাটিদূরে ধূসর পাহাড় আর চারদিকের সবুজ বেশ লাগে 

আদিবাসী প্রধান জায়গা এটা  বছর খানেক গে অলোক এখানে ট্রান্সফার হয় দু'বছরের জন্যে

 কিন্তু অলোক চাইলো এখানেই কাজ করতে

 বড্ডো ভালোবেসে ফেলেছে লোকটা  জায়গাটা আর এখানে মানুষজনকে

 আমাকে  চাপ দেয়নি আসার জন্যে মাসে দু'বার কলকাতা যাচ্ছিল

 আমি ওকে না জানিয়েই এখানে একটা স্কুলে এপ্লাই করি আর কাজটা হয়েও যায় 

আমি আসতে  খুব খুশি বলাই বাহুল্য

এলাকায় গত দুই তিন মাস ধরে বেশ গন্ডগোল চলছে

 মাইলের পর মাইল  জমি নিয়ে চলবে উন্নয়নের কাজ -- তাতে কাটা পড়বে হাজার হাজার গাছ

  জঙ্গল থেকে আদিবাসীদের সরিয়ে এনে তাঁদের জন্যে আলাদা বাসস্থান আর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে---

এই সব পরিকল্পনা কিন্তু আদিবাসীরা তাতে একেবারেই রাজি ননপরিবেশবাদীরাও তাঁদের সঙ্গে সহমত

চারদিক গত সপ্তাহ থেকে বেশ উত্তপ্ত তাই অলোক অনেক ভোরে চলে যাচ্ছে অফিসে

 পুরোপুরি এলাকার লোকেদের পক্ষে

আমি একটু গা বাঁচিয়ে চলতে ভালোবাসি

 দু'একবার বুঝিয়েছি ওকে, "কি দরকার বাপু ঝামেলারবদলি নিয়ে নাও!"

উত্তরে বলেছে, "এদের ব্যথা বুঝলে  কথা বলতে না!"

ক্লাসে পড়াতে শুরু করলাম, "আজ তোমাদের মূলক বা radical পড়াবো"

সংজ্ঞা পড়লাম বই থেকে

তাকিয়ে দেখি একরাশ চোখ -তাতে ফাঁকা দৃষ্টি।

বুঝলাম, সব মাথার ওপর দিয়ে গেছে

আবার বোঝাই, "প্রকৃতিতে মূলকদের আলাদা করে পাওয়া যায়না

 অন্য পরমাণুর সঙ্গে জুড়েই এদের অস্তিত্ব"

খুব একটা মাথায় ঢুকল বলে বোধ হলোনা

"আচ্ছাএই যে তোমাদের নাককান এগুলো আছে তো?"

সমস্বরে হ্যাঁ

"কিন্তু কোনদিন কি দেখেছো একজোড়া কান আলাদা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেবা একটা বোঁচা নাক আর একটা

 টিকোলো নাকের সঙ্গে গপ্পো জুড়েছে?"

ক্লাসে হাসির রোল উঠলো চকচকে চোখ সব

"মূলকরাও এমনি  করে থাকে মিলেমিশে,  ওদের আলাদা করা যায় না!"

"ঠিক যেমন জঙ্গল আর আদিবাসীরাতাই না মিস!"

আমি স্তম্ভিতবাহ্বেশ বুঝেছে তো!

"এই তো দারুন বলেছকি নাম তোমার!"

"গিরীন মুর্মু!"


✪ দীপান্বিতা সংখ্যা ≈ সৌর শাইন

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||     
দীপান্বিতা সংখ্যা













সম্পাদক~ সৌর শাইন-এর অণুগল্প

গল্পপথিক অনলাইন-পত্রিকা 


নোনা স্মৃতির কোলেজ

 

ঝাঁঝালো দুপুর ও উষ্ণ নিশ্বাসের তীব্র আবেদন

এই বারান্দা ঘেরা পৃথিবীতে গল্পের জোয়ার নেমে এলে সৌরাভ্র কিংবা শাপলা কেউই এড়িয়ে যেতে পারে না। বেগতিক হাওয়া শাড়ির আঁচলটুকু ছিনিয়ে নেবার আবদার ধরে। তীব্র ইচ্ছের পূর্ণিমা ঝলসে উঠে তিথির পর তিথি। চুঁইয়ে পড়া প্রতিটি ফোঁটা কর্ষণহীনতার অভিযোগ এনেলিখে রাখে অভিমানকাব্যএখানে দোষ কার?

নাকাউকে দোষ দেয়া উচিত হবে না। বিচ্ছেদ তো নিয়তিরই খেলা।

 

একুশের গণ্ডি পেরোতে পারেনি সৌরাভ্র। ওর আকাশ কাঁচা রঙের নবান্নে মশগুল হতে চায়। আর ভাবনার সীমা পূর্বতীরমধ্য আকাশ কিংবা গোধূলি লগ্ন সে ‍চিনতে পারে নি। কিন্তু সময়ের নেশা কখনো কখনো গ্রাস করতে চায়। সাড়া দিতেও মন টানে। লাজুক স্বভাব ও একচিলতে হাসির কারিশমাতে বন্দি ছত্রিশে থাকা ডা. শাপলা মল্লিক

 

নোনতা বিস্কুটে কামড় দেয় সৌরাভ্র। ধড় বেয়ে নেমে আসা বিন্দু বিন্দু ঘাম শুষে নেয় শার্টের কলার। শুকনো কাপড়ের ক্ষুধা এমনই তুখোড়সন্ধ্যায় উড়ে যাওয়া বাদুরের মতো মিলিয়ে যায় শরীরের নোনাজল। যদিও, ইচ্ছার নোনা সমুদ্র সব ভিজিয়ে একাকার করে দিতে চায়।

 

দেয়ালঘড়িতে ঘূর্ণি মুহূর্ত। দুজোড়া চোখ পরস্পরের জিজ্ঞাসা ও বহুনির্বাচনী সংলাপ ঝেড়ে নিস্তব্ধ দুপুরকে গ্রাস করতে থাকে

কি চা নিবে না?’

হেসে চায়ে চুমুক দেয় সৌরাভ্র। ঠোঁটে আঁচ লাগতেই বুঝতে পারেসে কোথায় দণ্ডায়মান। আচমকা অজানা শিহরণ ঘুরে ফিরে জাগে। কাঁপন ও হস্যমিশ্রিত হিশেব কষতে কষতে চা ফুরায়

সৌরাভ্র ফিরে যায়

ডাক্তার শাপলা মল্লিক সন্ধ্যার ফ্লাইটে জার্মানি পাড়ি দেয়

 

একদিন রোগিদের ভিড় ঠেলে চেম্বারে প্রবেশ করেছিল সৌরাভ্র। হাতে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল  কিছু ডিজাইন পেপার। বিরক্তি ভরা চোখে সৌরাভ্রের দিকে তাকিয়েছিল ডাশাপলা মল্লিক। মনে মনে বলেছিল, ছেলেটার কাণ্ডজ্ঞান বলে কিছু নেই! কিন্তু টেকনিক্যাল কাজের সার্বক্ষণিক সঙ্গী সেই ছেলেটাকে একসময় এতোটা কাছে টানবে তা হয়তো ভাবেনি শাপলা।

 

শাপলার মুখে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রশংসা সৌরাভ্রকে কখনো কখনো ক্লান্ত তুলতো। লাজুক তরুণ চুপটি করে থাকতো, মুচকি হাসতো।

সন্ধ্যের পর থেকে সৌরাভ্র শাপলাময় ভাবনার পৃষ্ঠাগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। এই তো কিছু বিকেল জমে আছে ছাদ-বাগানে, চা আড্ডায়। শাপলা প্রায়ই চাইতো সৌরাভ্র ওর কাছে আসুক, একাকিত্ব ঘুচে দিক ঝড়ো ইচ্ছায়। কী এমন ক্ষতি হতো ‍যদি সৌরাভ্র নিশ্চলতাকে ছুটি দিয়ে একদিন ঝাপটে ধরার সুখে পৃথিবীর সব জড়তাকে বিলীন করে দিতো?

যদি সত্যিই লাজুকতার দুয়ার চুরমার করে সৌরাভ্র একাকিত্বের পথিক শাপলাকে কাছে টানতো, ও কি আনন্দিত হতো? তখন অভিমানি পাখির মতো দূর বিদেশে ছুটতো না?

 

সৌরাভ্র আর ভাবতে পারে না। হঠাৎ দেখতে পায় শাপলার মেসেজ এসেছে, ‘ভালো থেকো, হয়তো আর ফিরবো না’।