Saturday, October 24, 2020

≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়



ছোটগল্প~দৃষ্টি

প্রায় ছ’মাস বাদে করেদের বাড়ির খড়খড়ি দেওয়া জানালা খোলা দেখে পাড়ার লোকজন বেশ উৎসুক হয়ে পড়েছিল । শুধু তাই নয়, সেই জানালায় একটা মেয়েকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল । বাড়িটা করেরা বিক্রি করে দিয়েছিল বলে পাড়ার সকলে জানত । তারপর থেকে বাড়িটা বন্ধই ছিল । তাহলে কখন নতুন লোকজন এলো আর জিনিষপত্রই বা এলো কবে ?

 সমাধান করে দিলো পাড়ার গেজেটার সান্টু । জিনিসপত্র সমেত বাড়ি বিক্রি করেছে করেরা । আর এদের জিনিস কিছুদিনের মধ্যেই এসে যাবে । এদের ফ্যামিলিতে আছে মা বাবা আর মেয়ে । আর বাড়ির পুরনো কাজের মেয়ে হারুর মা ।

কিছুদিন যেতে দেখা গেল এরা মিশুকে নয় । বাজারে বা পথে দেখা হলে সামান্য হেসে মুখটা অন্যদিকে করে চলে যায় বাড়ির কর্তা । বাকিরা কেউ বের হয় না বাড়ি থেকে । তবে মেয়েটি সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত ওই জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে । স্নান-খাওয়ার সময়টাও বাঁধা । মুখে সবসময় হাসি লেগে আছে । এই হাসি তার রূপকে আরও বাড়িয়ে দেয় ।

পাড়ার কমবয়সী ছেলে-ছোকরাদের যাতায়াত করেদের বাড়ির সামনের রাস্তায় বেড়ে গেছে । গ্রামের কর্তাব্যক্তিরা বেশ অসন্তুষ্ট মেয়েটির বাবার ওপর । তাদের বক্তব্য, ‘মেয়ে চরম নির্লজ্জ । আর বাপ তাকে শাসন না করে ধিঙ্গি হতে ইন্ধন জোগাচ্ছে ।’ এসব কথা বললেও তার নিজেরাও লুকিয়ে-চুরিয়ে ওই মেয়েকে দেখতে যায় ।

কেটে গেছে ছ’টা মাস । একদিন সান্টু ছুটতে-ছুটতে চন্ডীমন্ডপে এলো ।

‘তোমরা কি খবরটা শুনেছ ?’

নন্দীখুড়ো বলে, ‘কী করে শুনব বাবা ? তুমি হলে আমাদের গ্রামের গেজেটার । তুমি খবর না দিলে আমরা পাই কী করে ?’

‘ওই মেয়েটা গো, যারা এখন করেদের বাড়িটা কিনেছে ...’

সান্টুকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে নন্দীখুড়ো প্রায় ভেংচে ওঠে, ‘আবার কী করেছে ঐ গুণনিধি ?’

‘আহ্‌, আগে শোনো । ওই মেয়ে অন্ধ । ব্রেন টিউমার অপারেশনের পর তার দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছিল । আজ কলকাতায় যাচ্ছে । একটা চোখ ম্যাচ করেছে । অপারেশন হবার দেখতে পেতেও পারে । মানে ডাক্তার তেমন সম্ভাবনার কথা বলেছেন 

গোটা চন্ডীমন্ডপ থমথম করছে । মানুষগুলোর ভেতর একটাই কথা ঘুরে-ফিরে আসছে । অন্ধ মানুষের অসহায় দৃষ্টি চিনতে না পেরে অনায়াসে তারা বেহায়া বলে দেগে দিয়েছিল মেয়েটাকে । এখন চোখ ফিরে পেয়ে সেই মেয়ে তাদের চোখের দিকে যখন তাকাবে, তাদের নির্লজ্জতা বুঝে নেবে না তো ?

 



≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ উজ্জ্বল সামন্ত ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
উজ্জ্বল সামন্ত


অনুগল্প~সহচরী
কোম্পানির উচ্চপদে থাকায় ইয়ার এন্ডিং এর মিটিং টা শেষ হতে রাত বারোটা বাজলো।অয়নের বাড়ি ফিরছে নিজে ড্রাইভ করে। হালকা বৃষ্টি পড়ছে।  রাস্তায় দেখে একটি অষ্টাদশী মেয়ে দাঁড়িয়ে লিফট চাইছে। অয়ন গাড়ি থামিয়ে গাড়ির জানালার কাঁচ নামালে , মেয়েটি  কাছে এসে বলে আমাকে নিয়ে যাবেন? যা দেবেন তাতেই হবে, আমার খুব বিপদ, বড্ড সমস্যায় পড়েছি। 

মেয়েটির মুখের সঙ্গে অনিশার অনেক মিল। পুরনো দিনের কিছু স্মৃতি এক পলকে চোখের সামনে ভেসে উঠলো অয়নের। অয়ন ও অনিশা খুব ভালো বন্ধু ছিল। কলেজে তারা ছিল প্রেমের লিজেন্ড।বিগত কয়েক বছর অয়ন নেশাগ্রস্ত। তার ছন্দহীন জীবন নিয়ে তাঁর বাবা-মা চিন্তিত। কোন এক অজ্ঞাত কারণে আজ নিজেকে শেষ করার লড়াইয়ে নেমেছে, যেন নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ। পরকীয়া সম্পর্কেও জড়িয়েছে অয়ন। আর অনিশা বাবা-মার ইচ্ছেতে ,নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ করে।এক কন্যার মা ,স্বামী একটা প্রাইভেট ফার্মে কর্মচারী ছিল। আজ ২৫ বছর কোন যোগাযোগ নেই। 

 অয়ন ওই বয়সী একটা মেয়েকে একাকী রাস্তায় দেখে , তার নিজস্ব ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে। মেয়েটি বিছানায় আমন্ত্রণ জানায়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একটি সিগারেট ধরায়। মেয়েটির সিগারেটের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হয়। রাত গভীর হয়।  মেয়েটি প্রশ্ন করে আপনি আসবেন না?   অয়ন গিয়ে ইজি চেয়ারে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটির কাছে যায় তার মুখখানা দেখে তার জীবনের গল্প জানতে চায়। 

মেয়েটি কাঁদো কাঁদো গলায় জানায় ওর মা খুব অসুস্থ। বাইরে নিয়ে  যেতে হবে চিকিৎসার জন্য কিন্তু খরচ যোগাতে পারছে
 না।  বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার অচল। মায়ের চিকিৎসার জন্য আজকে সে বাধ্য হয়ে এই এসকট সার্ভিসে নেমেছে। অয়ন পকেট থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দেয়। 

 অয়ন তাকে পরের দিন আবার আসতে বলে । মেয়েটি এলে অয়ন তাকে নিয়ে  হাসপাতালে যায়। কিন্তু একি দেখে অয়ন? হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার প্রাক্তন প্রেমিকা , একসময়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু । ডাক্তারকে প্রশ্ন করলে জানতে পারেন সময় শেষের দিকে। অয়ন অনিশার চিকিৎসার যথাসাধ্য চেষ্টা করে কিন্তু নিয়তির কাছে হার মানে।

অয়ন কে অনিশা অনুরোধ করেছিলো মেয়েটির দেখাশোনার জন্য । অয়ন মেয়েটিকে আরো লেখাপড়া শেখায়। উচ্চশিক্ষিত করে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠা করে। হয়তো এভাবেই অয়ন অনিশার প্রেমকে ও একজন নারীকে সম্মান জানায়, সমাজের কথায় চিন্তা না করে।"সমাজ প্রশ্ন করবে- সহচরী? শেষ ভালো যার ,সব ভালো তার... " অয়ন মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়...


 

≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ পার্থ সারথি চক্রবর্তী ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 



সাঁকো হয়ে রই  
     
আজো যখন কাউকে সাঁকো দিয়ে-
                    পার হয়ে যেতে দেখি
মনে পড়ে নিজের কথা, এভাবেই তো 
শুয়েছিলাম বহুদিন, লম্বা হয়ে 
আর ওপর দিয়ে পার হয়ে গেছে 
কত লোক পায়ে হেঁটে,সাইকেলে চেপে
-- কেউ আবার মোটরসাইকেল নিয়ে 

দম নেবার জন্য বা আড়মোড়া ভাঙার জন্য,
উঠতে চেয়েও উঠতে পারিনি
-- পাছে কেউ খাদে পড়ে যায় 
বয়সের ভারে যখন দুর্বল হই,
নড়বড়ে হয় হাড়গুলো, তাও শুয়ে থাকি
তোমাদের পারাপারের জন্য, শেষ পর্যন্ত 

নাহলে তো মানুষে মানুষে সম্পর্কই
           --খাদে পড়ে যাবে, তাই না!

≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ পারমিতা দে দাস ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
পারমিতা দে দাস



রাতের মায়া

রাতের গায়ে একটা মায়া লেগে থাকে।

কেউ যেন একটা কালো চাদরে তার যন্ত্রণা গুলো গুঁটিয়ে রেখে
 ঘুমোতে চলে গেছে।
 আমরা অনুভবে ছুঁয়ে দেখি।তারাদের সাথে গুনতে থাকি প্রতিটা প্রহর।

 দুমড়ে মুচড়ে নিজেদের শোক ছড়িয়ে দেই হেডফোনে।
 বালিশ ভেজা শিমুল তুলো চুপসে আসে মায়া জলে।স্থগিত থেকে যায় কথা। বিপরীতে হেঁটে যায় প্রাচীন দুটো পরিচিত মুখ।

 আমরা তবু অন্ধকার সিঁড়িতেই বসে থাকি পরিযায়ী মানুষের মতো,যদি সেই রাত ফিরে আসে।

 যদি রিংটোন টা দ্বিতীয় বার বেজে ওঠে।।

≈ বিকাশ দাস সংখ্যা ≈ শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
বিকাশ দাস সংখ্যা 
শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়



ছোট গল্প~আহবান

মা,বাবা ঘুমোচ্ছে। চুপিচুপি এসে ঘরের জানলার অ্যালকোবে বসে থাকে বুবাই। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে থাকে। নির্জন দুপুর। কেউ কোথাও নেই। ভোলু নামে তার আদরের কুকুরটা ড্রেনের একপাশে ফেলে রাখা উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে চলেছে একমনে। খাওয়া শেষ হলে বুবাইদের জানলার দিকে তাকিয়ে আপন খেয়ালে ঘউ ঘউ করে দুবার ডেকে উঠলো ভোলু। মনটা যেন কেমন করে উঠলো বুবাইয়ের।ছোট্ট, কচি হাতখানা নাড়ছে জানলার ফাঁক দিয়ে।  'ভোলু' বলে ডাকতে গিয়েও পারলো না। বাবা, মা ঘুম থেকে উঠে দেখলে বকুনি দেবে। 'সন্ধ্যেবেলা ম্যাথের হোমটাস্ক করতে হবে, মনে আছে?  অনলাইন ক্লাসে মিস দেখবেন বলেছেন..আর তুমি এখন না ঘুমিয়ে..।'
ভোলু চলে যায় নিজের মনে.. সোজা লম্বা রাস্তাটা যেদিকে  গিয়ে  বাঁক নিয়েছে সেদিকে।  খাঁচা গাড়ি করে যাওয়া সেই স্কুলের রাস্তা...গাড়ির চাকার সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর চলে আসতো ভোলু..সেই মথুরা বিল পর্যন্ত...। একসময় থেমে যেত গতি হারিয়ে। খাঁচার জালের ফাঁক দিয়ে বুবাইয়ের দেখাদেখি অন্য বন্ধুরাও হাত নেড়ে  ইশারা করত ভোলুকে। এগিয়ে যেত গাড়ি। একসময় মিলিয়ে যেত ভোলু দৃষ্টিপথের আড়ালে। 
মন কেমন করা সেই ইশারার অপেক্ষায় আজ আর ও দাঁড়িয়ে থাকে না। অভিমান করেছে নিশ্চয়। 
স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আচার কাকু রবিবার হলেই বুবাইদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেতে একবার ঠিক হাত নেড়ে ডাকতো। কতদিন হয়ে গেল কাকু আর আসে না এ পথে। যেমন আসে না বাবার অনেক দিনের বন্ধু মজার মজার গল্প বলা সমীর কাকু,রীতা কাকিমা, ছোট্ট টুকাই..। বাবা,মা শিখিয়েছে,' এখন কাউকে আসতে নেই..। '
দিন যত দীর্ঘ হয়েছে, অভিমান বড় হয়েছে ততই।

জানলা দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে বুবাই। কচি হাতের মুঠোয় জড়িয়ে ধরতে যায় তার সেই অনেক দিনের অভিমানী পৃথিবীটাকে যেন..। সেই চেনা রাস্তা, খাঁচার গাড়িতে করে যেতে যেতে গল্প বলা ড্রাইভার কাকু,ঝিল পাড়ের ঘন সবুজ গাছপালা,ঝোপঝাড়ে ঢাকা মেঠো পথ, মাছ ধরা নৌকা,স্কুল মাঠের কাঠবাদাম, জামরুল গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে পড়ে আসা বেলার আলো...কোথায় গেল দিনগুলো! 
 
সামনের বাড়ির খাঁচাবন্দি টিয়াপাখিটা বার তিনেক ট্যাঁ ট্যাঁ করে ডেকে উঠলো। নির্মেঘ, নীল আকাশে ডানা মেলে  বক পাখির দল উড়ে চলেছে.. কার্ণিশ ভাঙা ছাদের ফাটলে কোথায় ঘুঘুর ডাক..নিঃসঙ্গ হাওয়ায় গাছের পাতার খসখসানি... হঠাৎই কারা যেন ফিসফিস করে ডেকে ওঠে..' এই বুবাই স্কুলে যাবি না? ঐ যে গাড়ি চলে এলো..।'
 নীচে মেইন গেটে তালা দেওয়া। ওরা অপেক্ষা করে আছে যে...! বুবাই ফিরে ফিরে তাকায়...একবার টিয়াপাখিটার দিকে। একবার প্রায় দূরে মিশে যাওয়া বকগুলোর দিকে। 
পেছন থেকে একটা আলতো হাতের ছোঁয়া গায়ে এসে লাগে। মা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
' কী করছিস বুবাই? এই ছবিটা তুই আঁকলি!'
নীল আকাশ..এক ঝাঁক বক উড়ে চলেছে, ওপাড়ে বহু দূর বয়ে চলা মথুরা বিল এর দিকে..রাস্তায় অপেক্ষমাণ একটা কুকুর, দূর থেকে খাঁচার গাড়ির দিকে তাকিয়ে.. আরো দূরে কল্পনায় ভেসে ওঠা একটা স্কুলের গেট..।
ফেসবুক ওয়ালে বড়োবড়ো করে লেখা.. 'আমাদের ছোট্ট বুবাই সোনার নিজে হাতে আঁকা একটি ছবি। ওর ভালোবাসার পৃথিবী। '
 ছোট্ট বুবাই জানে, সেই পৃথিবীতে হাত ধরে নিয়ে  যাবার মতো লোক আজ আর তার পাশে কেউ নেই।