Wednesday, October 14, 2020

≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা≈ চিরঞ্জীব হালদার ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
চিরঞ্জীব  হালদার


চিরঞ্জীব  হালদার-এর কবিতা

ধরুন তাঁতকল বা ভেসে যাওয়া খড়ের কাঠামো।
কোনটার অধিকারী আপনি নন।

তাঁতে যে সব সুতোয় গামছা  নির্মিত হচ্ছে
তার লিঙ্গ নির্দ্ধারণের কোন ভূমিকায়
আপনি অপাংক্তেয়।
আপনি যে মূল্যে খরিদ করুন।
যে কালিতে নাম লিখে রাখুন না কেন
এই উভচর পোষাক থেকে যে ঠিকানা  নির্গত হয়
তা দিয়ে এক পঞ্চায়েত কেমন পোষ মানে
দেখে যান কত্তা।
বরং একটু দরাজ হাততালিতে
মুখরিত হলে দোষ নিয়েন না।

জল জানেনা তার দেহ জুড়ে যে প্রবল কাঠামো ভাসমান তার কোন শুক্রদোষ আছে কিনা।
আপনার ঘাটের খুব কাছেই আত্মজার খসে
যাওয়া দেহচরিত্রের ভুগোলের পাতা আশ্বিনের
হাওয়ার উড়তে থাকলে সিরাজের আত্মার কাছে কি কৈফিয়ত দেবেন।
ভেবে নিন আপনি জল। অথবা প্রকৃতসুতোর ব্যর্থ যোগানদার এক তাঁতের মালকিন।
দেহ বল্লরীতে ভরা আশ্বিন কথা কয়।
 দেখুন ভেসে যাওয়া কাঠামোয় তাঁতকল
গুজে দিচ্ছে নীল বর্ণের সমস্ত ধাঁধার প্রশ্নমালা।
আপনি অভুক্ত তাঁত কলের চিৎকার দিয়ে
গড়া খড়হীন মনুষ্যজাতক মাত্র।

≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা ≈ সৌমিত্র রায় ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
সৌমিত্র রায় 


শব্দব্রাউজ ৷৷ সুড়সুড়ি দিতে থাকবো

মেদিনীপুর ; ৭-০৫-২০২০ ; রাত্রি ৯টা ২৭ || এখন বসেছি লিখতে, লিখি, তবে খোলা জানালা আমার সাথেই খুনসুটিতে মেতেছে~

শব্দসূত্র: বাকি রয়ে গেছে

বাকি সময়টুকু রাতের শরীরে বয়ে চলা বাতাসের মতো সুড়সুড়ি দিতে থাকবো ; কিন্তু এ শরীর রাতের ; এ কী হেসে উঠবে ? কে জানে ! শুধুমাত্র একটা সাহস রাতের গভীরে প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু তুমি ? তুমি তো ভীতু কবি !

রয়ে সয়ে সাহস দেখাও কবি ; রাত মানে অন্ধকার জড়ো হতে হতে রাত হয় ; সংঘবদ্ধ ; সুনীল সরণি থেকে অংশুমান ; সুবিধাবাদের জনপ্রিয়তায় মোহে অন্ধ সময় ; তোমাকে সাহস যোগাচ্ছে সুড়সুড়ি দেওয়ার ; স্রোতে মিশে যাও কবি ; জানালার সাথে খুনসুঁটি শুধু ? কবিতা ছাপিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে কখনো কোনো মেয়ের সাথে শুতে শিখিয়েছো নবীন বন্ধুদের ? 

গেছে একটা দিন ৷ সেদিন বাংলায় একটা সুবিধাবাদের প্রবর্তন হলো ; তুমুল জনপ্রিয় কবিতা কনসেপ্টের ; শুধুই 'বাউণ্ডুলে' নয় ; একটা জাতির সাথে ঢ্যামনামো শুধু ; 'ঢ্যামনামো' 'ঢ্যামনামো ' ঢ্যামনামো' ! আজ সেপ্টেম্বর ৭ !

|| শান্তি ||


≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা ≈ রফিকুল কাদির ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
রফিকুল কাদির


সে-ই আমার আনন্দ বারিধারা যে থাকে পরানে

নৈমিত্তিক বিচ্ছিন্নতা আমাদের নেই
সাথে থাকি অহর্নিশ
যাদুমন্ত্রের মতো এক হয়ে যাদুকরের ভেতর

জীবনের প্রলুব্ধ ব্যকরণ পাঠ করে বুঝেছি-
ভালোবাসা কোন বিচ্ছিন্নতার সমীকরণ নয়
হতে পারে বিরহের অনুসিদ্ধান্ত!

তাই তাকে পাওয়ার চেয়ে ভয়ঙ্কর প্রলয়
কে জাগাতে পারে জগতে

এক যুগেরও বেশি সময়!
অদ্যাবধি আমাদের কামনা ও সংগ্রামের সুরে
একটি কথাই বাজে-
'পাশে থেকো! থেকো কাছে!
বুকের পাঁজর হয়ে-ই নয় থাকলে!
যদিও জানি, সে হাড় নয়, পাঁজর নয়
হৃদপিণ্ড বা করোটিও।

সে আমার সত্ত্বা।

অতি ক্ষুদ্র!
আমার আকাশ-
যার ভেতরে থাকে জীবন, কতশত পৃথিবী

চৌহদ্দির দখল নিয়েই থাকে সে
আহ্লাদে আটখান হয়ে
ভাসতে ভাসতে ঢুকে পরে
আমার ভেতরে

চেতনা লুপ্ত হয়

সাধারন নারীর অবজ্ঞায় দেখি-
হাতে মাধবীলতা, আটপৌরে শাড়ি, বাঙালি বাঁধন
ঘুরে বেড়ায় হৃদয়ের অলিন্দ-নিলয়ে

সমুদ্র, অনন্ত জলরাশি, ঢেউ
তার মুখের মতো- সফেদ! স্বচ্ছ!

আনত হই।
অবিশ্বাস্য আক্রোশে জাপটে ধরি
শব্দঘর ঢিপঢিপ করে বাজে
তন্ত্রীগুলো শান্ত হয়
কোন এক অপার আহ্বানের মতো
কৃষ্ণের বাঁশির মতো
মুহাম্মাদের আরাধনার মতো
যিশুর হাতের মতো
অবিনাশি শ্লোক শোনা যায়

তুমি যত দূরেই থাকো
যত দূরেই রাখি
প্রকৃতি যতই খেলুক বিচ্ছিন্নতার সাপলুডু
তবু তুমিই আমার পাঁজরে বাজো।
অন্তরে রোদ্দুর ছড়াও।

এই বিচ্ছিন্নতাকাল!
এই লকডাউন!
এই আণুবীক্ষণিক অমাবস্যা...

সেই কবে সূর্য উঠেছিল, জানিনা;
রাত্রির এ উৎযাপন, নিশীথ-সূর্যকেও হার মানিয়েছে

সূর্য ওঠে!
বাইরে আলোর মশাল- দেখে জানালা
দিনেরই ভিন্ন ভিন্ন ভাগে

সূর্য কোথায়?
সে তো কবেই ডুবেছে!
প্রকৃতি দেখি-
কখনো অন্ধকার; কখনো আকাশ
বইপত্র, মনিটর
আরও কি সব হাবিজাবি

একটা দিনেই আটকে আছি
একটা দিনেই আটকে গেছি

প্রিয়তমা! বন্ধু! মাতা বসুন্ধরা!
তোমার ভালোবাসার স্নিগ্ধতা
দূরের সমূল উৎপাটন
দূরকে আরও দূরে নিয়ে গেছে
আামাদের মতান্তরিত শ্লোক বিজারণ, বিশ্লেষণে
নতুন নতুন ক্ষার, অম্লে
ভাসিয়েছে ঘর

সংসারে আরোগ্য নেই!
অহংকার নেই!

কেবল আকুতি শুনি
অন্ধকার দেখি
দেখি ছড়িয়ে যাওয়া আতঙ্ক

এ কী মানুষের ঘর!
এ কী মানুষেরই বাঁচা!

সেই কবে কোন বৈশাখে
রোদে-জলে নেয়ে
সূর্যকে বলেছিলাম- আজ তবে যাই গুরুদেব!
এবার ঘরে ঢুকবো!

আজ মুখ ফিরিয়েছে ঘর
বসন্ত ফিরে গেছে কবে
কোন চৈত্র সংক্রান্তি নেই
বৈশাখের গান নেই
কেবল অভ্যেস মতো গুনগুন করছে কবি
শিল্পীরা গলায় তুলেছে মাদুলি
ভয়, আড়ষ্টতা  বুকে পাঁজরে
- কাল যদি মরে যাই!
- যদি মেরে ফেলি ভাই, বন্ধু;
মুছে দিই পিতামাতার হাসি

তারপরও এ ক্রান্তিকালে বলি-
ভালোবাসি! ভালোবাসি!

স্বপ্নভুক দুঃস্বপ্নের মতো ছিনতাইয়ের স্বপ্ন দেখি
শান্ত পৃথিবীর স্বপ্ন
সবার সুখের দিন

ইরেজার ঘষে তুলে ফেলি- কলঙ্কের ছাই

সবই তোমার জন্য প্রিয়তমা
অন্তরে তোমাকে পাবার বাসনা

মানুষ থাকতে পারে না একা
হতে পারে না পর
সাতশো কটি ঘর তো আমারই ঘর
সাতশো কোটি হাসিই আমার উৎসমূল
ভালোবাসার জন্মান্ধ মাতা

তোমাকে ভালোবাসি।

এ বিচ্ছিন্নতা তোমাকে পাবার অবিরত বাসনা

তোমার চোখ দু'টি আবারও কাছ থেকে দেখতে চাই
খুব কাছ থেকে নিতে চাই শ্বাস
শরীরী ঘ্রাণ

যদিও মাঝখানে দূরত্বের নদী
নৈঋত যন্ত্রণা

তবু হাঁটতে থাকে- অনন্ত যাত্রার হারকিউলিস

পোড়া মাঠ, জঞ্জাল সময়, গ্রহণের সূর্য
পেছনে ফেলে, চলে যাও দূরে;
দিগন্তের ওপারে

এই তোমার নিয়তি
তোমার প্রেম
প্রণতি...

≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা ≈ দেবযানী বসু≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
দেবযানী বসু



অণুগল্প~ জীবন জীবনের জন্য 

বিশাল রতন ও মেঘনাদ তিন জন প্রবীণ বন্ধু একই অফিসে কাজ করে। বিশাল ও রতনের সম্প্রতি স্ত্রীবিয়োগ ঘটেছে। দুজনের স্ত্রীই সরকারি চাকরি কর্মরত অবস্থায় চলে যায় প্রচুর টাকা ফি এফ হিসেবে স্বামীদের হাতে দিয়ে। দুজনেরি ক্যান্সার ছিল। এদের মধ্যে মেঘনাদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। ওর স্ত্রী বিভা গরীব ঘরের মেয়ে। মনপসন্দ যৌতুক দিতে পারে নি। এ নিয়ে মেঘনাদ চিরকাল একটু মনোকষ্টে ভোগে। মেঘনাদের স্ত্রী মতোই গৃহকর্মণিপুণা হোক কথায় কথায় এইসব সৌভাগ্যবান বন্ধুদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে মেঘনাদ যা শোনায় তাতে করে তার স্ত্রীর গ্লানি ও হীনমন্যতায় ভোগা এমন কিছু ব্যাপার না।
কুর্চি গাছের ফুলে উপচানো গেট। সামনে কালো বাইক কালো দুধেল গাইয়ের মতো দাঁড়িয়ে। সেইদিকে তাকিয়ে বিভা অন্যমনস্ক হয়ে যায়। প্রথম বিয়ে লোকে ভুল করে করে ফেলে অনেক সময়। বাবলি মরলে কি মেঘনাদের ভাগ্য খুলবে? নিজের বিবাহিতা মেয়েই উদ্যোগ নিয়ে বিয়ে দেবে হয়তো। ভাগ্যবানের বৌ মরে অভাগার গরু মরে এ তো সবাই জানে। মেঘনাদ কর্মসূত্রে বিশালদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়েছে। টাকা পয়সা ততটা হলে বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ত সেরকম তো মেঘনাদের হয় নি। তাই আফশোস থেকে যায়। 
এদিন বিকেলে মেঘনাদ হঠাৎ ফোন করে জানাল বাড়িতে ফিরতে দেরি হবে।  আসলে মেঘনাদ  দৌড়ল বিশালের বাড়িতে। সেখানে তখন বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশী জড় হয়েছে। রতনের চোখ মেঘনাদের দিকে পড়তে বললো-  'এই তো এসে গেছিস। কিন্তু এইমাত্র দলবল নিয়ে সব বেরিয়ে গেল। ঐ যে লোকাল উর্বশী সমিতি! দশটি হাজার টাকা খসিয়ে নিয়ে গেছে। বিশাল শালা বাড়িতে ক্যাশ রাখে না? তিন তিনবারের টাকা দেয় নি বোঝ! তিনবারের জন্য দশহাজার টাকা কমই তো বল। যাক গে আমরা সবাই মিলে মিটিয়ে দিলুম।'  বলেই মেঘনাদের কাঁধ চাপড়ে দিল। মেঘনাদ লাজুক হেসে বলল ' চল রাস্তায় চা খাই গিয়ে।' সেই মুহূর্তে ভাবল বিভাকে এ খবরটা শোনানো যাবে কি? শোনালে কি যে হবে!

≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা ≈ প্রকাশ ঘোষাল ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
প্রকাশ ঘোষাল



টেডি বিয়ার 

এই যে জেব্রাক্রসিং বরাবর ছুটে যাওয়া ঘুনসির তারানা এসব
বিনিপয়সার খেলা হে পেটরোগা পৃথিবী
ডিগবাজি খেতে খেতে রাস্তা এখন শুনশান অদৃশ্য ফকির গাছতলায় 
সোহাগি ঢেউ পতাকার এতো কাছাকাছি  ঝাপসা আলোয় 
পেটের ভেতর সেই আজন্ম জমে ওঠা ছেঁড়া রোমান্স, রূপকথা, শূন্যতার মস্তি
এখন উইপোকার আমি  সৃজন ক্রিয়ায় কাহিনী  লিখতে ব্যস্ত 
চৌকাঠ বরাবর 
আহা দ্যাখো ওই কঙ্কাল অভিসারে কেমন ভালোবাসা চলেছেন পার্কে 
নৌকো ভরা জার্নাল ভুরভুর জলের দোলন  
ছটফট করছে ডারউইন এদিকে আয়নার ওপারে 
মিউজিয়ামের বাক্স গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম
একটু শীতের জন্য যাচ্ছেতাই খিস্তি মেরে গেল কয়েকটা 
বাটার টোস্ট ,
মাটির প্রজাতিরা 
ট্যাক্সি থেকে নেমে সোজা ছুটে যাচ্ছে ফায়ার ব্রিগেডের দিকে 

মিস্টার ব্রহ্ম, কী দিনকাল পড়লো বলুন তো 
বুকের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে গাছেদের ফিসফিস অথচ
মেঘের পাড়ায় কোন শব্দ নেই 
জানলা ভর্তি বৃষ্টিও সরে যাচ্ছে পাশের বাড়ির দরজায়  সারাটা জীবন শুধু বালিতেই বসে বসে ধর্মপাঠ
বর্ণালী শিকার এখন সত্যমেব জয়তে,
বাকি সব টেডি বিয়ার!