Wednesday, October 14, 2020

≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা≈ নিমাই জানা ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
নিমাই জানা


মোম রঙের পাখি

দুটো পা গলে যাচ্ছে মোমের মত  

পায়ের নিচে অনেকগুলো ধারালো ব্লেড গিরিখাতের V স্রোত
মিসরীয় নারী উড়ছে ডাইক্লোফেনাক মেঘ হয়ে
এরা সকলে ব্যথার উপশম জানে নদীর মতো
গাছের লেন্টিসেলে শুধু জমে উঠছে ভগ্নাংশ ঘাম
ক্লোরোফিল জানে পাখিরাও কখনো ঘুড়ি হয়ে যায় , ব্যথাতুর নারী শুধুই রাত্রি খুঁজে
দিনের মোহনায়
শরীরের উপসর্গ'ই মানে লাল যন্ত্রণার গভীরতা
কাটা গেঁথে আছে কোন পলাশফুলে
সব নক্ষত্রের এখন একটি বড় আর্কিটেকচার চাই
আমরা সকল উদাস পাশবালিশের দিকে ছিন্নমস্তা নামে যে পাগলি ওই রাস্তার দিকে হেঁটে চলে 
তাদের নিরলস চলাচল শুরু হয় গভীর রাতে
অ্যানিমেশন রঙের ওষুধগুলো শুয়ে থাকে নিজের কালো রংয়ের বুকপকেটে

আমি একটি ভূত পরীর জন্য অপেক্ষা করি 


≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা ≈ নীপবীথি ভৌমিক ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
নীপবীথি ভৌমিক


তফাৎ

 এই যে অক্ষর সাজাই, শব্দ 
    খুঁড়ে চলি অবিরাম, 
  এ সবের বাহানা আসলে কবিতা লেখার ;

     হত্যা করি নিজেকে। এক একটা শব্দকেও
       যেমন হত্যা করি মিথ্যে কবিতা লেখার অছিলায়

     রক্তপাত হয় খুব।
      খুঁটে খুঁটে খায় আমায় ব্যর্থ কবিতারা

       কলম আসলে কিছুই নয়,
   যা কিছু বাস্তব জেনেছি, সব কিছুই মাস্ক আর মুখোশের তফাৎ।


≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা ≈ চিরঞ্জিৎ বৈরাগী ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
চিরঞ্জিৎ বৈরাগী


পটচিত্রে স্যাড ইমোজি

ইঞ্জিনের পারদ থেকে লাশের কান্না
গলনাঙ্কে শীতল বাষ্প
সেতারের লিরিক্যাল ব্যালাডে
তেজহীন ঘটোৎকচ

রাত জাগা পাখিরা
নপুংসকী পদ্মের নাভি ছিঁড়ছে
মায়াময়ী ব্যোম, কাশহীন শরৎ
অস্ট্রেলিয়া বেদুইন, শূন্য প্যাগোডা

অ্যাকটিভিটিস অফ মহাকাশ

কলকাতা থেকে বঁনগা লোকাল
অনলি ২×১

জাপানি সিরিঞ্জগুলি স্যাড ইমোজি,
অ্যাফেকশনেট বাই রোস্টিং জ্যাক

মহামায়া আর বালিয়াড়ি
অবনী পটচিত্রে বিশ্বভারতী!


Sunday, October 11, 2020

| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
| নভেলেট |
অরিজিৎ চক্রবর্তী

ডারউইনের চিঠি  ( পর্ব- ৬ )

ইউটিউবে"পথে হলো দেরি" সিনেমাটা দেখছিল সম্মোহ। সারাটা সন্ধ্যে একঘেয়ে ভাবে কাটছে।লালুকাকা কদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে। ফিরতে এখনো দিন তিনেক বাকি। লালুকাকা না থাকলে এমনটাই হয়। মনে মনে আজকের একাকিত্বকে তিন দিয়ে গুণ করলো সম্মোহ। আসলে সম্মোহের একটা অসুখ করেছে। একাকিত্বের অসুখ। অথচ এই জনহীন অরণ্যে একাকিত্ব ভালোবেসেই তার আসা। তবু লালুকাকা থাকলে হাতের কাছে সবটা পেয়ে যায়। এখন বাড়িতে যে কেউ নেই এমনটা নয়। বুলির মা আর পবন আছে। আগামী রবিবার ফেসবুকের একটা গ্ৰুপ "ধন্যিমেয়ে" থেকে ছয়জন এখানে বেড়াতে আসবে। ফোনপে- তে অ্যাডভান্স পাঠিয়ে দিয়েছে।

এখানকার ভাঙাচোরা ঘরগুলো কত স্মৃতি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১০ বছর আগে পর্যন্ত বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সুতান গেস্ট হাউসে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ত। পরে এই গেস্ট হাউসে পুলিশ শিবির করে। ২০১০ সালে শিলদা-কাণ্ডের পরে এখানকার শিবির গুঁটিয়ে নেয় পুলিশ।  মাওবাদীরা এসে পরিত্যক্ত শিবির ও লাগোয়া গেস্টহাউস ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়। এখন জায়গাটা শান্ত তবুও সেভাবে দেখা নেই পর্যটকদের। তাঁরা এলেই বা থাকবে কোথায়? শীতের দুপুরে খাঁ খাঁ করে এই অতিথি আবাস। দরজা জানলা সব উধাও। নেই ছাউনি। লাগোয়া খাল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বোট। মরচে ধরেছে ওয়াচ টাওয়ারে।  এ জন্য পরিকাঠামোর সমস্যা, স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাটতি, নিরাপত্তার অভাবজনিত চাপা আতঙ্ককে দায়ী করছেন অনেকে।

বাঁকুড়া শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে রানিবাঁধ। সেখান থেকে ঝিলিমিলি যাওয়ার রাস্তা ধরে বারোমাইলের জঙ্গল পেরিয়ে ১৩ কিলোমিটার গেলেই সুতান। সেখান থেকে আরও ১০ কিলোমিটার দূরেই তালবেড়িয়া জলাধার। শাল-মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা এই দু’টি এলাকা ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির কাছে এক সময় বেড়ানোর আদর্শ জায়গা ছিল। সুতানের জঙ্গলে এখনও হরিণ, খরগোস, বনমোরগ-সহ বহু প্রাণী রয়েছে। কখনও চলে আসে হাতি।পর্যটকদের থাকার জন্য যে দু’টি ঘরের একটি গেস্ট হাউস ছিল এখন সেই বাড়ি হানাবাড়ির সমান। এমনকী একটা নলকূপও নেই। রাস্তাটি অবশ্য সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।

এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা জলধর সোরেন সম্মোহকে বাড়ি করার জন্য জায়গাটা খুঁজে দেয়। প্রায় এক একর জায়গা। সম্মোহের বাল্যবন্ধু অরিত্র জায়গাটার প্ল্যান বানিয়ে দিয়েছে। তিন কামড়ার দোতলা বাড়ি। উপরের তলায় সম্মোহ থাকে। নীচটা হোম স্টে-র জন্য ভাড়া দেয়। লোকজন মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসে। তার থেকে সম্মোহের কিছু রোজগার হয়। লোকজন এলে ভালোই লাগে। বহু মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়। তাদের দেখভাল করতে করতে সম্মোহের সময় কেটে যায়।এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে তাপসদার ফোন।

--- "হ্যালো কেমন আছো সাহেব?"

----" চলে যাচ্ছে গুরুদেব। তোমাদের কি খবর? বউদি কেমন আছে?"

---- " বউদির শরীর খুব একটা ভালো নেই। কেমো চলছে। মাঝে মাঝেই তোমার কথা বলছে। "

---" শোন না! বউদি কিছুটা সুস্থ হলে, তুমি বউদিকে নিয়ে আমার এখানে চলে এসো। কদিন কাটিয়ে যাও।"

---" ইচ্ছে তো করে ভায়া! দেখা যাক! কবে সেই সোনালি দিন ফিরে আসে।রিটার্মেন্টের পর ভেবেছিলাম ঘুরে ঘুরে বেড়াব। তা আর হলো কই! ভগবান চাইলো না। তোমার বৌদি বিছানায় পড়লো।"

--- " সব ঠিক হয়ে যাবে তাপসদা। মনখারাপ করো না। বৌদি ঠিক হয়ে যাবে।"

----" তাই যেন হয়! তুমি পারলে একবার ঘুরে যাও। আমরা এখন কলকাতাতেই তো আছি। আর তুমি মাঝে মধ্যে এদিকে কাজ নিয়ে আসো যখন..."

---" নিশ্চয়ই যাব। দেখা হবে। তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে দেব ফোন করে।"

---" ঠিক আছে। জানিও। ভালো থেকো সাহেব।"

তাপসদার সঙ্গে কথার মাঝেই একটা ফোন আসছিল। দুটো মিসড্ কল। "ধন্যিমেয়ে" গ্ৰুপের নন্দিনী ফোন করেছে।

---" হ্যালো , বলুন ম্যাভাম।"

---" বলছি আমরা রবিবার দুপুরে গিয়ে লাঞ্চ করবো। দেশি মুরগির মাংস করবেন দাদা।আর রাতে আপনাদের তৈরি হোমমেড মহুয়া চাই।"

---" অবশ্যই ম্যাডাম। চিন্তা করবেন না। সব ব্যবস্থা থাকবে।" সম্মোহ বললো।

---" থ্যাঙ্কইউ দাদা। দেখা হচ্ছে।"

ফোন রেখে একটা সিগারেট ধরালো সম্মোহ। ফেসবুক খুলে নন্দিনী সেনের প্রোফাইলটার দিকে তাকিয়ে থাকলো খানিকক্ষণ। মাঝ বয়েসি। প্রোফাইল পিকচারটার দিকে তাকিয়ে মনে হয় বেশ সুন্দরী। গালে টোল পড়ে। তবে আজকাল ফোটো অ্যাপের কায়দায় সুর্পোণখাকে সহজেই সুতনুকা বানানো যায়। তাও ভদ্রমহিলাকে সম্মোহের সুন্দরী ভাবতেই ইচ্ছে করলো। বুলির মা এখন ডিনার করবো কিনা জানতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।সম্মোহ মাথা নাড়িয়ে "হ্যাঁ" বললো।

যাইহোক এই ফোন গুলো আসার জন্য একঘেয়েমি খানিকটা কাটলো সম্মোহের। এখন রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে। বুলির মা খাবার নিয়ে এসেছে। পবন বাংলা খেয়ে প্রায় বেহুঁশ। বুলির মা'র বয়স বিয়াল্লিশ তেতাল্লিশ হবে। পাশের গ্ৰামেই বাড়ি। স্বামী নেই। মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। এখন বেশির ভাগ সময় এখানেই থাকে। মাঝে মধ্যে বাড়ি যায়। শরীরে এখনো যৌবনের ছাপ। ঠিক মতো শাড়ি আগলে রাখতে পারে না। তাই শরীরের অনেকটাই পড়ে ফেলা যায়। সম্মোহ সেই শরীরের গন্ধ দূর থেকে উপভোগ করে। অনেক সময় ইচ্ছে ডালপালা মেলতে চায়। নিজেকে সামলে নেয় সম্মোহ।ভাবে এসব চক্করে যাওয়া মানেই বিপদ। গ্ৰামের ব্যাপার! এই তো মাসখানেক আগেই ফরেস্টের বিটবাবু কেস খেল! চম্মার সঙ্গে ফস্টিনষ্টি ছিল। গ্ৰামের লোক ধরে বিয়ে দেয় আর কি! শোনা যায় টাকার বিনিময়ে ব্যাপারটা মিটেছে।খাওয়ারটা টেবিলে সাজিয়ে বুলির মা বসলো মেঝেতে। বললো," পবন মহুয়া এনেছে, খাবি?"

সম্মোহ জিজ্ঞেস করলো,"মালটা ঠিকঠাক!"

--" খারাপ হবে কেনে খেয়ে দ্যাখ!"

--" লিয়ে আয়। খাই।"

বুলির মা মহুয়া আর গ্লাস নিয়ে এলো। সম্মোহ মহুয়া বরফ দিয়ে খেতে পছন্দ করে। তাই ফ্রিজ খুলে বরফ নিয়ে এলো। বুলির মা ফ্রিজ খুলতে ভয় পায়। লালুকাকা থাকলে সেইই সব আয়োজন করে দেয়। সম্মোহকে কোনো ঝক্ক্যি নিতে হয় না।

একবার সম্মোহের ভীষণ জ্বর। আর অসহ্য মাথা ব্যাথা। লালুকাকা কিছূতেই কিছু করতে পারছে না। ওষুধ দিয়েছে। জলপট্টি দিয়েছে। জ্বর কমছে না কিছুতেই। শেষে বুলির মা'কে বললো, " তুই আজ বাবুর কাছে থাক। বাবুর দেখভাল কর।"

বুলির মা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। লালুকাকা বললো, " কাউকে বলবনিরে! বাবুর কাছে থাক। সেবা কর।"

বুলির মা সন্ধ্যে থেকে সারারাত ছিল। কোলের উপর সম্মোহের মাথাটা চেপে ধরে জলপট্টি থেকে মাথা-গা-হাত-পা টিপে দেওয়া সব করেছিল। মাঝরাতে সম্মোহ যখন অনেকটাই সুস্থ, দেখলো বুলির মা দুই বুকের মাঝখানে সম্মোহের মাথাটা চেপে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। সেই অর্ধ উন্মুক্ত স্তনের আড়ালে সম্মোহ একটি বালকের অবুঝ যৌনতার মতো উষ্ণতা অনুভব করছে। এখন কি করবে সম্মোহ! শরীরের অপার তীব্রতাকে অবদমন করবে! নাকি এই নাইট ল্যাম্পের আলোয় চেতনার অলিন্দ্যে ভাসতে ভাসতে ঘুমিয়ে পড়বে?

আজ আবার সেই দিনটা উস্কে দিল সম্মোহকে।সম্মোহ কি বুলির মা'কে বলবে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে! দু-গ্লাস মহুয়া খেয়ে একটা ফুরফুরে ভাব এসেছে! বুলির মা টেবিল পরিস্কার করে শুতে গেছে। সম্মোহ ভাবছে বুলির মা'কে ডাকবে কিনা! ডাকলেই ক্ষতি কি! পবন নেশায় অচেতন। আর তো কেউ নেই। কাউকে জবাব দিহি করার মতো কেউ নেই এখানে।



Tuesday, October 6, 2020

| বিশেষ সংখ্যা | তাসকবিতার ফর্ম | অনিন্দ্য রায় |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
তাসকবিতার ফর্ম নিয়ে বিশেষ সংখ্যা
অনিন্দ্য রায়



তাসকবিতা

(Cards Poem)

 

 ডেকে তাস থাকে বাহান্নটি।

 চার ধরণের: ইস্কাপন, হরতন, রুইতন, চিড়িতন। প্রতিটিতে তেরোটি করে: টেক্কা (১), দুরি (২), তিরি (৩), ৪ চৌকা (৪), পাঞ্জা (৫), ছক্কা (), ৭, ৮, নহলা (৯), দহলা (১০), গোলাম (১১), বিবি  (১২), সাহেব (১৩)

 

সেভাবেই তাসকবিতা:

বাহান্ন লাইনের, চার স্তবকের।

একটি স্তবকে তেরোটি করে লাইন, লাইনগুলির মাত্রাসংখ্যা ১ থেকে ১৩ (কলা বা দল যেকোনও একটি অনুসারে)।

একটি স্তবকের প্রতিটি লাইনের মাত্রাসংখ্যা আলাদা-আলাদা।

কবিতাটির কেন্দ্রীয় ভাবানা থাকলেও প্রতিটি স্তবকের ভাবনার, প্রক্ষিতের ভিন্নতা থাকবে।

অন্ত্যমিল থাকতে পারে, না থাকতেও পারে। অন্ত্যমিলবিন্যাস কবির ইচ্ছানুসারী।

শিরোনাম থাকবে।

 

মাত্রাগণনা হতে পারে ‘কলা’ (Mora) অনুসারে: 

 

আমাদের ভালোবাসার মতো

 

একটা পিঁপড়ে 

বইয়ে

খুলে-রাখা পৃষ্ঠায় 

বাঁদিকের মার্জিন বরাবর  

হেঁটে চলেছে  

ধীরে 

অথচ অক্ষরের সঙ্গে 

ছোঁয়াছুঁয়ি হচ্ছে 

না

বারবার টলে যাচ্ছে 

শব্দ ও যতিচিহ্নের    

নিশ্বাস

জোরসে ধাক্কা দিচ্ছে তার গায়ে  

 

কবিতা  

এতো ছোটছোটো   

হরফে ছাপা হয়

ইদানীং

তা

পড়ার মতো    

আতসকাচ আমাদের কাছে নেই    

আর তাকে বোঝার মতো  

নুন 

নেই আমাদের চোখে   

তবু পাতাটি ওলটাতে গিয়ে

প্রতিবার অভ্যাসবশত    

চশমাটা ঠিক করে নিতে হয়

 

কী

হয়   

কোনও বই  

শেষের মলাট অব্দি

না-পড়ে  

বন্ধ করে রাখলে  

অথবা ধরা যাক  

সমীকরণের মতো হালকা    

সম্পর্ক

একটা পাঁচিলের সামনে 

যদি দাঁড়িয়ে থাকে অনন্তকাল  

অথচ ভাঙতে পারে না কিছুতে 

ভেঙেও পড়ে না   

 

 

এই

যে

বইপত্তর 

ছাপা হয়    

বাঁধানো হয়  

আর মাঝেমধ্যে খুলে রাখা হয়   

একটা পিঁপড়ে হেঁটে যায় ধীরে   

কিন্তু পড়া হয় না

কয়েকদিন পর

ধুলো ঝেড়ে সেলফে রাখা হয়   

হয়তো

পরে কেউ পড়বে বলে   

আমাদের ভালোবাসার মতো     

 

অথবা হতে পারে ‘দল’ (Syllable) অনুসারে:

 

কেউ ঘুমোতে পারিনি

 

বাঁশপাতা  

রাতপোশাক যেন  

কাঁপছে

আর ভেতরের অন্ধকার

দেখা যাচ্ছে

বারোটা-পঁচিশের গোঙানি    

অভিসম্পাত হয়ে 

ধাক্কা দিচ্ছে নির্জনতায়

প্যাঁচার চোখে চাঁদ উজ্জ্বল হয়েছে

রাঢ়বঙ্গের বাতাস খামখেয়ালির মতো   

তাকে বুঝব বলে জানলা খুলে রেখেছি

কেউ

এখনও পর্যন্ত ঘুমোতে পারিনি  

       

গান

যদি

নৈঃশব্দ্যে

ভেঙে পড়ে

কাচের বাসনের মতো  

যদি রজনী  

নিজেকে রমণী ভেবে

চোখ মুজে অন্ধ সেজে থাকে

স্পর্শের ভেতরে আরও স্পর্শের খঞ্জর

যদি পুরুষের অহংবোধকে আঘাত করে

শুশ্রূষার জন্য কে   

হাত বাড়িয়ে দেবে বারোটা ছাব্বিশে

এখনও কেউ ঘুমোতে পারিনি    

 

আলো জ্বালার জন্য   

আমরা দেশলাইয়ের খোঁজ করি  

কিন্তু পাই না  

পরস্পরের শরীরে ঘষতে থাকি

আঙুল

মাথায় বারুদ নেই বলে

চামড়া ছুলে যায়

দীর্ঘশ্বাস

ছলকে ছড়িয়ে পড়ে ঘরে

কে

আড়াল থেকে হেসে ওঠে খিলখিলিয়ে  

বারোটা সাতাশ বাজল বাঁচোখে

এখনও পর্যন্ত কেউ ঘুমোতে পারিনি

 

একটি কুকুর  

কালপুরুষের দিকে 

মুখ তুলে

ডাকছে

আর তার সঙ্গীরা

শোকপালনের মতো ঘিরে আছে তাকে  

কোথাও মিনিট দুয়েক আগেই  

কি  

ঢং করে উঠল বিভাবরী  

আমরা দোষারোপে আর সান্ত্বনায় ভুল করি

সংশোধন করতে গিয়ে যে ঠকে যাই  

বারোটা আটাশ বাজল  

এখনও কেউ ঘুমোতে পারিনি             

 

 

তাসকবিতা

(Cards Poem)  

 

চারজন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৫২টি তাস সমানভাবে বণ্টন করা হয় (১৩ ×  = ৫২) একজন তার হাতের একটি তাস ফেলেনতারপর দ্বিতীয়জন একটিতারপর তৃতীয়জনতারপর চতুর্থজন এই হল একটি দান।

একটি খেলা ১৩ দানের।

 এইভাবে কবিতা।

 

১৩ স্তবকের, প্রতিটি স্তবক ৪ লাইনের।

লাইনগুলির শব্দসংখ্যা ১ থেকে ১৩

প্রতিটি লাইন হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

কবিতাটিতে অভিন্ন শব্দসংখ্যাবিশিষ্ট লাইন চারটি করে হবে।  

কোনও শব্দের পুনরাবৃত্তি হবে না।     

 

অন্ত্যমিল থাকতে পারে, না থাকতেও পারে। অন্ত্যমিলবিন্যাস কবির ইচ্ছানুসারী।

শিরোনাম থাকবে।

       

পাহাড়চূড়ায় বাড়ি

 

পাহাড়চূড়ায় বাড়ি এ

        দেয়ালের কাঠ খয়েরি হাওয়ার দাপটে  

        অদূরে পাথরকুচি পরিসীমা বরাবর পাহারায় রয়েছে দাঁড়িয়ে  

        তবুও সুযোগ পেলে ফাঁক গলে বাতাস, বিদ্যুৎ, মেঘ, পাঁচজোড়া পাখি জানলায় ঠোকরাতে জোটে     

 

ঢাল

        পুরুষের স্মৃতির মতো অনুকম্পাহীন  

ঘাস কয়েকগাছি রহস্যকে করেছে আড়াল   

কতিপয় লালচে প্ররোচনা, ছোটোছোটো, নিতান্ত সরল, অর্বাচীন     

 

দুটি মেষ  

চতুষ্পদ ওরে

একটি করে আনম্র ল্যাজ ছটফটে বেশ  

খুঁজে বেড়াচ্ছে অসংযত কোথায় শ্বাপদ  

 

তাদের খুরের আঘাতে ক্ষতগুলি বিশাল পুষ্প হয়ে ফুটেছে সামাজিকতার অগোচরে

এবং আশ্চর্য ঘ্রাণে অল্প ঘুমের মশলা মিশিয়েছে কেউ    

ঢলে পড়লে গা থেকে সমস্ত লোম কেটে নেবে ধরে   

দুধ দুইবে যতক্ষণ জেগে থাকবে শরীরের শেষতম ঢেউ

 

তরাইয়ের দীঘি শান্ত তারপরে   

লবণ উঠবে ভেসে ব্যাপ্ত জলতলে  

সেখানে আমার নাম লিখে রাখি নখের আঁচড়ে

যেন মনে পড়ে আবার বেড়াতে এলে গাঢ় কুহকের দলে     

 

সেবারও ঠান্ডা লাগলে কিনব ভেড়ার উলে বানানো গরম অভিলাষ  

কুসুমের মদ খেয়ে জড়িয়ে আসবে স্বর  

এলোমেলো শ্বাস  

অসতর্ক কথারা পড়বে হুড়মুড়িয়ে গানের ওপর   

 

এবার সংগীত শুরু

একসঙ্গে দুদিকে বাজানো যায় সে তো পাখোয়াজ  

চামড়ার মাঝখানে কালো বৃত্ত দেখেও অন্য চিন্তা করতে মানা করেছেন গুরু

স্পর্শ করলে প্রতিবার যে পানীয় উথলায় প্রথম চুমুকে আদিরসাত্মক ঝাঁঝ     

 

সংজ্ঞা হারিয়ে দেখি অন্ধকার ভেঙে রামধনু আকাশের প্রান্ত থেকে অপর খগোলে

সেই বাঁকা পথে উড়ছে আমাদের অচেনা রংবেরঙের অসংখ্য চাকতি   

ইচ্ছে করে বাংলা কবিতা ছেড়ে ওদের সঙ্গে যাই মান্দারিনে চলে        

পাঠকের সংখ্যা বাড়লে হরফের অদলবদলে প্রেম বা বিরহের, বলো, ভবিষ্যতে কতটুকু ক্ষতি      

 

ভাষার আয়না প্রতিবিম্ব নিয়মমাফিক সোজা ধরে রাখে চিরকাল

চড়াইয়ে যেমন ঘাম ঝরছে স্বতঃস্ফূর্ত উৎরাই বেশি উত্তেজক     

যারা অনায়াস সকলে রাখাল?

তাদের কৌমে তবে বাঘের মিথ্যে গল্পে নেশার চূড়ান্তে আজ মেলামেশা হোক  

 

আদর গড়িয়ে যাক    

জিহ্বার তলায় বারুদের বড়ি চেপে কে সহজে ফেটে পড়তে চায় মহামারীর সময়ে    

কামুকতা প্রকৃতপক্ষে বলিষ্ঠ ইয়াক 

স্তূপাকার বরফের দিকে কখনও যাবে না রোগা রমণীরা লোকহাসির ভয়ে    

 

প্রতিফলিত রোদের তির তাদের বিষণ্ণ চোখে গেঁথে অন্ধত্ব ঝরাবে অশ্রু ও রক্তে মাখামাখি  

কাঠি ছুঁইয়েছে যেই সুষুপ্তির ফুরিয়েছে দৃশ্য ও বিম্বের ভেদ দেখার প্রয়োজন    

লোভের চালাকি

এখানে একলা সন্ধ্যাবেলা এলোচুলে বেড়ানো বারণ?   

 

হয়তো বুঝতে পারছেন বলছি ভ্রমণ নিয়ে আড়ে রেখে দেহতত্ত্ব কিছু অপ্রচলিত গান  

চাষবাসের ব্রত  

শ্রীস্থান

প্রণামের বদলে যদি প্রগাঢ় চুম্বন পঞ্চমুখী ফুলের প্রতীক বলে নিরঙ্কুশ মেনে নেওয়া হত  

 

দুই বিরোধী স্রোতের ভেতর জেগেছে প্রবল ঘুর্নি কেন্দ্রাতিগ, দুর্দান্ত, চটুল, নিয়ন্ত্রণ অসম্ভবপ্রায় 

দ্বিধা হয়েছে বসুধা

নগ্নতা ছাপার কালি স্বচ্ছ, দারুণ গন্ধ, মুখ লাগলে স্বাদে মুহূর্তের মধ্যে চেতনা হারায় ১

সুধা  

 

  

তিনপাত্তি

(Three Cards)

 

তিনটি তাসের খেলাতিনতাসতিনপাত্তি

 

মুখোমুখি দুজনবেটে নেওয়ার পর প্রত্যেকের হাতে তিনটি করে তাস

প্রথমজন একটি তাস ফেলেউত্তরে বিপক্ষ একটি

আবার প্রথমজন একটিবিপক্ষ একটি

আবার প্রথমজন একটিবিপক্ষ শেষেরটি

দুজনের তাসের মান অনুসারে ফলাফল

এই তো খেলাআর এভাবেই তাসের কবিতাতিনপাত্তি

কবি একটি পঙ্ক্তি লেখেন

পরের পঙ্ক্তি লেখেন প্রথমটির বিপরীত ভাবনায়।

দুটি পঙ্ক্তি মিলে একটি স্তবক

প্রথম পঙ্ক্তি হতে পারে কোনও প্রশ্নদ্বিতীয়টি তার উত্তর

আবার প্রথমটিতে কোনও প্রস্তাবদ্বিতীয়টিতে তার প্রতিক্রিয়া এইভাবে থিসিস-অ্যান্টিথিসিসভাবনা-প্রতিভাবনাদৃশ্য-বিম্ব এইরকম বৈপরীত্যে লিখিত হবে পঙ্ক্তিদুটি।

একই নিয়মে আরও দুটি স্তবক।

 

তিনপাত্তি:

মোট ৬ লাইনের, ৩ স্তবকের কবিতা

লাইনগুলির সিলেবল-সংখ্যা তেরো বা তেরোর কম হবে

অন্ত্যমিল থাকতে পারে, না থাকতেও পারে। 

শিরোনাম থাকবে, যা হবে ভাবনাদুটির সিনথেসিস।  

 

জিজ্ঞাসাবাদ

 

: এক বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?  

শূন্য আর একের মধ্যে— যেখানে বাক্‌ জন্মায়    

 

: দশ বছর পর?

: শূন্যের পরিধিতে নিস্বন ঘুরছে যেখানে   

 

: একশো বছর হলে?   

: কেন্দ্রে নৈঃশব্দ্যে   

 

মানুষ চেনার উপায়  

 

: সামনে ঘুরছে, চতুষ্পদ, চেনো?

: ছাগল

 

: ওকে দেখে কী হয় লতাপাতাদের?     

: ভয়

 

: আর ওই ঝোপের আড়ালে বাঘের?

: লোভ

 

ঝগড়ার পরে

 

কলহের আঘাত বেগুনি

ফুলগুলি, ফুটেছে প্রহারে        

 

কান্না তো শুধু জলনুনই 

বরফকে টুকরো করতে পারে 

 

সে প্লাবনে ভিজেছে সারা গা 

ঝগড়ার পরে রাত জাগা

 

 

আগুনের পরশমণি

 

: ধ্বজা নীচু করো, রোদ লাগুক শরীরে

: তুমি আতসকাচ, যদি দাঁড়াও ফোকাসে   

 

: তোমার উদ্দেশে যাক তরঙ্গ সকল

: যা আসে তোমার থেকে গ্রহণ করি তা 

 

: উষ্ণ করি, জ্বলে ওঠো, জ্বলো

: তোমাকে চেয়েছিলাম, চাইনি ছাই হতে

 

লকডাউন

 

বন্ধুরা আসেনি কতদিন

চারটি দেয়াল, খাট, টেবিল, খাতাবই

 

ভালো লাগে না পড়তে, লিখতে

নিঃসঙ্গতাকে মনে হয় উপন্যাস   

 

শুয়ে থাকি, জানলা খুলি, লাগাই 

একা? না তো, নিজেরই সঙ্গে কথা বলি 

 

প্রেমের কবিতা

 

আলো পড়লে কনীনিকা বুজে আসে

অন্ধকারে ফাঁক হয়

 

ঘনিষ্টতা স্পষ্টতর করে   

দূরত্ব না হলে ঠিক প্রকাশ হয় না

 

আমরা তো বিম্ব দেখি  

চুম্বনের সময়ে চোখ বন্ধ রাখা রীতি