Friday, October 2, 2020

≈ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা ≈ চন্দ্রদীপা সেনশর্মা ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা
চন্দ্রদীপা সেনশর্মা


মুক্ত গদ্য~টবের তুলসী

প্রকৃতির প্রতিটি ফুটে ওঠাই পুষ্পসম।

নাগরিক জীবনের একচিলতে বারান্দায় প্রথম
শীতের রোদ পোহাতে চোদ্দবছর বাদে কলকাতায়।
রোদটুকু গায়ে নিতে নিতেই উল্টোদিকের বারান্দা
থেকে আধোবুলির ধ্বনি চোখ টেনে নেয়। ছোট্ট
শিশুটিকে খাওয়াতে ব্যস্ত মা। তার পরিশ্রম মুখের
হাসি মাতৃত্বের গর্ব সেও ফুটে ওঠা। বাচ্চাটি
বোধকরি আমার তাকানোর অপেক্ষায় ছিল। ছোট
হাত নেড়ে হেসে ওঠে। ঠোঁটে লেগে থাকা খাবার
তার মুখটিতে জীবনের যে প্রত্যয় আঁকে, তার মধ্যে
অদ্ভুত এক সততা আছে। আমিও হাত নাড়ি এবং
ভঙ্গিতে গুছিয়ে তুলি ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রা, তার আকর্ষণ
হেতু। আমাদের ত্রিশ ফুট দূরত্বের এই মুখোমুখি
ভাব বিনিময় বাচ্চাটির মায়ের পরিশ্রম সামান্য
হলেও সহজ করে তোলে।
খাওয়ানো শেষ হলে মা-মেয়ে ঘরে চলে যায়।
জানলার কার্নিশে অপেক্ষারত কয়েকটি কাক
নেমে আসে। খুঁটে খায় খাবারের কীর্ণ দানাগুলি।
আমি ঘরে ফিরতে উদ্যত হই, হঠাৎ চোখ পড়ে যায়
তুলসীর টবে। এত রোদ একটু বেশিই তার জন্য,
সরিয়ে নিয়ে আসি ছায়ার কাছাকাছি। ক্ষতিগ্রস্ত
পাতাগুলো আলগা করেনি। টবের মাটিতে মিশিয়ে
দিই সার মনে করে। খুব সুন্দর জীবন গাছেদের,
আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, হয়ে ওঠে নিজেদের বেঁচে
থাকার রসদ। একজন মহাপুরুষের কথা ভাবি।
একবেলা সামান্য আহার বাকিসময় তুলসী এবং
মধু গ্রহণ করেও দীর্ঘায়ু পেয়েছিলেন তিনি। গাছে
মানুষেও একরকম ভালোবাসা হয়। কলকাতার
বান্ধবীকে দেখি, নিজের থেকে গাছের পরিচর্যায়
বেশি ব্যস্ত। তার কথায় বারান্দা থেকে বাড়ির নীচে
মালির কাছে টবসমেত তুলসী আছে বছর দুয়েক।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রোদ ছায়ায়।
আমার সঙ্গে তুলসীর সখ্য বহুদিনের। পাটনা
লখনৌ দিল্লি পাটনা। শেষবার পাটনা বসবাসের
সময়ে খ্রিস্টান সেই বউটির কথা মনে পড়ে।
এয়ার হোস্টেসের চাকরি ছেড়ে সংসার বাচ্চা
সামলে চলেছে। কত যত্নে আমার তুলসীর ছবি
তুলেছিল ও। বলেছিল, আপনি খুব স্পিরিচ্যুয়াল।
টবে ওরকম মোটা কাণ্ডের তুলসী কমই হয়। সে
তুলসীকে পরের শীতে আর বাঁচানো গেল না।
আমিও পড়লাম দীর্ঘ এক অসুখে। দেড়বছর। সুস্থ
হয়েও কিছু না কিছু চলছে, কলকাতায় ফিরেও।
তিনবছরে প্রতিবেশী বাচ্চাটি একটু বড়ো, বহু
পাখি বারান্দায় তার বন্ধু। টবে নতুন তুলসী আর
পুরোনো গাছটির মতো সমৃদ্ধ হয়ে উঠল না।
আমিও অতএব।

≈ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা ≈ অভিজিৎ পালচৌধুরী ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা
অভিজিৎ পালচৌধুরী



জোনাকি আলো

সেই ধূসর-সবুজ অভিমান, 
জোনাকি আলো 
অন্ধকার যখন গাঢ়তর 
নিঝুম চারদিক, অন্তরীণ সময় 
বিস্মরণ ভাঙে বিমূর্ত ধূসর 

যে প্রবাহ নামে অতর্কিতে 
ভাসায় দু-কূল সবুজ ধূসরতায়
খড় কুটোর হদিশ আনে
নিরুদ্দেশের নৌকো 
নিমজ্জনের ছবি এঁকে  

সে প্রবাহে নিরন্তর উচ্ছেদের নোটিশ তর্জন-গর্জন মুখরিত কীট সভ্যতা 
কোথাও থিতু হওয়ার নেই 
নেই কি ভালবাসার সঞ্চয় 
বাধ্যতার বাতাসে গান বেজে উঠলে 
বিরুদ্ধতার আকাশ মেঘ জড়ো করে 

বিপরীত স্রোত 
দুলে ওঠে নৌকো, 
অবগাহন বিস্মৃত হয়, প্রবাহ কীট 
জোনাকি আলো হয়ে জ্বলে ।।

≈ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা ≈ মন্দিরা ঘোষ ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা
মন্দিরা ঘোষ


মুক্ত গদ্য~তুমিকথার বিকেল

আবার তুমিকথার মেঘ ফেরত এনেছে সবুজ পাখনার মফস্বল। 
ঘুমপাখিরা মহাকালের পোশাক ছেড়ে উঠে এসেছে রংচটা জমির আসরে।
আশ্বিনের আকাশ রোদ কুড়িয়ে আবার স্বাবলম্বী। 
বোধনের রং চুরি করে লুকিয়ে রাখছে শিউলি কাশ আর আলতাপাখির  ডানা।
নিষ্ঠার গায়ে বিষাদলিপিরা ফুটিয়ে তুলছে সমারোহ।
প্রদীপের আড়ালে  আজও দায়বদ্ধ প্রথার বানান।ভাঙা দেওয়ালের অন্ধকারে বাতিল গল্পের খাতা ভরিয়ে ফেলছে প্রাচীন বাদুড়ের দল। স্বীকারোক্তির ভোর  হিসেব চুকিয়ে সকাল মেলছে শিশিরমন্ত্রে।

শরত তবু আলোর গল্প বয়ে আনে। ঠোঁটে ঠোঁটে মিশুক আদর নিয়ে উড়ে যায় কাশফুলবিকেল।মেঠোঘামের নদীতে শালুকের আশনাই।
ঝিনুকবিলাসী চোখে এখনো  মোহরের ঘুম।ঠোঁটে  চোখে  মুদ্রার কাচ। 
মোমের শিখাজ্বরে রাতের রংমশাল। 

এখনো আগমনীরোদে লাজুক  বুকের ঢাল। তিল তিল বৃষ্টিফুলে ভরে ওঠে  নদীর পাড়।সন্ধের পয়ারে উসখুস কিশোরীফুল।
কেন যে আবার সকাল! 
কেন যে মগ্ন দুপুর গড়িয়ে গেলে একইভাবে বিকেল ফুরোয়!
সন্ধের আলোছায়ায়  সদ্য নাবালক রাত  যুবক হয়ে উঠলে আনচান হয় ভোরের পদ্মকুসুমে! 

একইভাবে  ফিরে ফিরে আসে বর্ষা শরত হেমন্ত এই অবেলার ঘামে!কেন যে আবার রাঙা ঠোঁটে  ডেকে ওঠে  কার্ণিশের পড়ন্ত রোদ! কেন যে আবার!

≈ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা ≈ অরণ্যা সরকার ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা
অরণ্যা সরকার


গল্প~মাংস
পাগুলো এখনও টলমল করে। গাঢ় বাদামী রঙ। মায়াদৃষ্টিতে বিস্ময়। চারপাশে খোপের মধ্যে ওর মত আরওঅনেকে। চোখ, কানের কিছু অংশ, গায়ের রঙের খানিক ঝলক ছাড়া কেউ কাউকে সম্পূর্ণ দেখতে পায় না। সামনে এগোতে গেলেই পা আটকে যায়। ইদানীং ওর পায়ের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। আসলে গতি তাড়া করে ওর পেশীকে। একটা দৌড়, যা বয়সের খুব স্বাভাবিক ক্রিয়া, একটা স্পর্শ, যা সে চেনে না, অথচ চায় সেই অচেনা ক্রিয়া ও প্রবণতা তো শরীরে নিয়েই সে জন্মেছে। শরীর ওকে ধাক্কা দিচ্ছে। উল্টো ধাক্কা দিচ্ছে ওর আকারের চেয়ে সামান্য বড় বাক্সটা। পেটভর্তি খাবার খেয়ে, শুয়ে আর দাঁড়িয়ে সে খানিকটা বড় হয়েছে। বাক্সটা তাই ওকে প্রায় জাপটে ধরে থাকে। ওর স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক স্কিম চলে, তার ব্যাবহারিক প্রয়োগ চলে। তাই লাবণ্য ছলকায় ওর শরীর থেকে। এই চার মাস বয়সেই বেশ ভরন্ত শরীর। নরম, পেশীবিহীন। দ্রুত বৃদ্ধির এই প্রকৌশলকে কেন ফেরাবে সভ্যতা ? ‘সময় কোথা সময় নষ্ট করবার ?’
এই প্রথম সে তার খোপ থেকে বের হল। বাইরের আলো প্রথমেই তার চোখ ঝলসে দিল। তারপর বিস্ময় বইতে বইতে সে চললো ট্রাকে চড়ে। মাংস কারখানা থেকে পথ ঢুকে গেল কসাইখানায়। তুলতুলে, দামী মাংস হয়ে সে শেষ করলো তার প্রথম ও শেষ পর্যটন। লোহার বড় গেট দিয়ে ঢোকার আগে তার গলা থেকে আচমকা বেড়িয়ে এসেছিল মত ধপধপে শাদা এক শব্দ, ‘হাম্বা’। একেই কি মুক্তকণ্ঠ বলে ?



 

≈ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা ≈ কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা
কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়


আঙুল

আমার ঘুম আসে না

যখন সারারাত জেগে জেগে

নিজেই দেখি নিজের পারলৌকিক ক্রিয়া


দেখি পৃথিবী ঘনীভূত হতে হতে

একসময় চোখের সামনে ধোঁয়া জমাট হয়ে ওঠে

অথচ কথা ছিল বদবায়ুস্তর

হেমন্তের অরণ্য ছেড়ে নতুন কোনো ঋতুতে চলে যাবে


মন্ত্রের ভেতর কারা কাঁসর ও ঘণ্টা বাজায়

আমার হাসি পায়, রাগ ধরে, শরীর টানটান হয়ে যায়


শুদ্ধ মন্ত্র কোনো জাতির একার সম্পত্তি নয়


তাল ও বাদ্য দিয়ে আমরা কেবলই

মানুষের দিকে আঙুল তুলেছি